সয়া বড়ির উপকারিতা ও অপকারিতা
আমরা ভোজ্য তেল হিসেবে যে সয়াবিন তেল ব্যবহার করে থাকি তার অবশিষ্টাংশ থেকেই সয়াবড়ি তৈরী হয়। আজকে সয়া বড়ির উপকারিতা ও অপকারিতা সহ বিভিন্ন বিষয়ে জানবো।
মূলত সয়াবড়ি একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, যেটি যে কোন তরকারির সাথেই খাওয়া যায়। তবে এই সয়া বড়ির উপকারিতা ও অপকারিতা সহ খাবার সংক্রান্ত কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমাদের সেই নিয়মগুলো জানতে হবে সর্বোপরি সয়া বড়ির উপকারিতা ও অপকারিতা বা ক্ষতিকর বিষয় কি সেটাও জানাটা জরুরী। চলুন জেনে নেয়া যাক-
পোস্ট সূচিপত্র: সয়া বড়ির উপকারিতা ও অপকারিতা (Benefits and harms of Soy Pills)
সয়া বড়ি কি?
সয়া বড়ির ভিটামিনসমূহ
সবচেয়ে বেশি সয়াবিন বড়ি উৎপাদনকারী দেশ?
সয়াবড়ি খাওয়ার উপকারিতা কি?
যাদের সয়া বড়ি খাওয়া উচিত নয়
নিয়মিত সয়া বড়ি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে
যেভাবে খেতে পারেন সয়াবড়ি
সয়া বড়ির উপকারিতা ও অপকারিতা-পরিশেষে
সয়া বড়ি কি?
সাধারণত আমরা ভোজ্য তেল হিসেবে সয়াবিন তেল ব্যবহার করে থাকি। অর্থাৎ সয়াবিন থেকে তেল আলাদা বা নিষ্কাষণ করার পর যে অবশিষ্ট অংশ থাকে তা থেকে তৈরি করা হয় সয়াবড়ি। অত্যন্ত উৎকৃষ্ট, ভেজাল বহির্ভূত একটি ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্য। যা নিরামিষভোজীরা বেশি খেয়ে থাকেন। এটি খেতে অনেকটাই মাংসের মতো লাগে। ছোট ছোট গোল গোল বড়ি যা বিভিন্ন ভাবে রান্না করে খাওয়া হয়ে থাকে।
সয়া বড়ির ভিটামিনসমূহ:
মূলত সয়া বড়িতে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, স্যাপোনিন, ভিটামিন, খনিজ ও আইসোফ্লাভোন। আসলে সয়া বড়ির উপকারিতা ও অপকারিতা এর মধ্যে সয়া বড়ি একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার।আরও পড়ুন: প্রতিদিন কতটুকু লবণ খাওয়া উচিত
সবচেয়ে বেশি সয়াবিন বড়ি উৎপাদনকারী দেশ?
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সয়াবিন উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম চীন, এরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও ভারত। মূলত সয়াবিন থেকে তৈরি হয় বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য, যেমন-সয়াবিল তেল, সয়াবিন প্রোটিন এবং সয়াবিন বড়ি। তবে সয়া বড়ি বা সয়াবিন ডাল উৎপাদনকারী দেশে হিসেবে ভিন্নতা দেখা যায়।
সয়াবড়ি খাওয়ার উপকারিতা কি?
যে কোন বিষয়ে দুইটি মত থাকে, ভালো/খারাপ। ঠিক তেমনি সয়া বড়ির উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে, তবে নিম্নে এর উপকারিতাসমূহ বর্ণিত হলো:
* সয়াবড়ি হাড় ক্ষয়রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।* নিয়মিত সয়া বড়ি খাওয়া হার্টের জন্য খুবই উপকারী।
* সয়াবড়িতে শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে।
* সয়াবড়িতে ডায়েটরি ফাইবার বেশি থাকায় তা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে থাকে।
* যে সমস্ত নারীদের ঋতুস্রাব বন্ধের পর হরমোনাল ভারসাম্যজনিত সমস্যা তৈরী হয়, সয়াবড়ি খাওয়াতে তা ভারসাম্য রক্ষা করে।
* শরীরের উপকারি চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে সয়াবড়ি।
* সয়া বড়ি খাওয়ার ফলে প্রোস্টেট ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোসহ মেনোপজের লক্ষণগুলি উপশম হয়ে থাকে।
* সয়াবড়িতে আইসোফ্ল্যাভেন ও লেসিথিন মানক দুটি জোরালো অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট থাকার কারলে এটি লো ডেনসিটি কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে থাকে।
* শরীরের উপকারি চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে সয়াবড়ি।
* সয়া বড়ি খাওয়ার ফলে প্রোস্টেট ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোসহ মেনোপজের লক্ষণগুলি উপশম হয়ে থাকে।
* সয়াবড়িতে আইসোফ্ল্যাভেন ও লেসিথিন মানক দুটি জোরালো অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট থাকার কারলে এটি লো ডেনসিটি কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে থাকে।
আরও পড়ুন: ভিটামিন ডি ও ই একসাথে খাওয়া যাবে কি
* সয়াবড়িতে থাকা লেসিথিন নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় তা রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে পাশপাশি মস্তিস্ককেও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে থাকে এবং এর ফলে অকাল বার্ধক্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।* সয়াবড়িতে থাকা ফাইটিক অ্যাসিড, স্যাপোনিন এবং আইসোফ্ল্যাভেন থাকায় তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
যাদের সয়া বড়ি খাওয়া উচিত নয়:
মূলত সয়া বড়ির উপকারিতা ও অপকারিতা এর মধ্যে সয়াবিনে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ বেশি থাকে। এই কারণে পুরুষরা যদি বেশি সয়াবিন বড়ি খায় তাহলে তাদের টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যেতে পারে এবং তার ফলে যৌন অক্ষমতার কারণ হতে পারে। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পুরুষদের অতিরিক্ত সবাবিন খাওয়া যাবে না বা এড়িয়ে চলতে হবে।
নিয়মিত সয়া বড়ি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে:
সয়া বড়ির উপকারিতা ও অপকারিতা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই সয়া বড়ি নিয়মিত খাওয়াটা একদম ঠিক নয়। কারণ নিয়মিত সয়াবড়ি খেলে হজমে সমস্যা তৈরী হয়, এ ছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। অতিরিক্ত সয়াবড়ি খাওয়ার ফলে অনেকের অ্যালার্জির সমস্যাও দেখা দিয়ে থাকে। এজন্য একজন পুরুষের জন্য প্রতিদিন ৭০ গ্রাম সয়াবড়ি খাওয়া যুক্তিযুক্ত। তেমনি একজন মহিলার ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৩ দিন অন্তত ৩০ থেকে ৫০ গ্রাম সয়াবড়ি খাওয়াটা যুক্তিযুক্ত এবং সঠিক। তবে যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে, অর্থাৎ দুধ খেলে হজমজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন, তারা অবশ্যই প্রতিদিন সয়া মিল্ক খেতে পারেন। সয়া মিল্ক বাচ্চাদের জন্যও অত্যন্ত পুষ্টিকর।
যেভাবে খেতে পারেন সয়াবড়ি:
সয়া বড়ির উপকারিতা ও অপকারিতা আলোচনায় সয়া বড়ি কিভাবে খাওয়া যায়। সাধারণত সয়াবড়ি ডালের মধ্যে দিয়ে খেতে পারেন, মাছের সাথে, ডিমের মধ্যে সয়াবড়ি দিয়ে রান্না করে খেতে পারেন, বিভিন্ন সবজির সাথে সয়াবড়ি, শুধু আলু দিয়ে সয়াবড়ি, লাউ এর মধ্যে সয়াবড়ি দিয়ে রান্না করে খেতে পারেন, প্রয়োজনে ভাজির সাথেও সয়াবড়ি ভেজে খেতে পারেন, আবার ইচ্ছে করলে সয়াবিন, সবজি এবং মসলা দিয়ে রোল তৈরি করেও খেতে পারেন, সয়া বড়ি, সবজি ও প্রয়োজনানুযায়ী মসলা দিয়ে স্যুপ তৈরি করে খেতে পারেন। এককথায় সয়া বড়ি আপনি ইচ্ছে করলে যে কোন তরকারির মধ্যে দিয়েই খাওয়া যায়। তবে যে কোন ভাবে রান্না করার আগে সয়া বড়িগুলি কিছুক্ষণ জলে ভিজিয়ে তারপরে তরকারি রান্না করবেন। সাধারণত খোলা সয়াবড়ি কখনোই কিনবেন না, প্যাকেটজাত সয়াবড়ি ক্রয় করবেন।
সয়া বড়ির উপকারিতা ও অপকারিতা-পরিশেষে:
উপরোক্ত বর্ণনা থেকে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন সয়া বড়ির উপকারিতা ও অপকারিতা সহ নানা বিষয়ে। তবে সয়া বড়ি যে কোন তরকারিতে দেয়ার আগে অবশ্যই তা বেশ কিছুক্ষণ পানিতে লবণ দিয়ে ভিজিয়ে রেখে তারপর যদি তরকারিতে দেন তাহলে খেতে ভালো লাগবে। আসলে সয়া বড়ি বিশেষ করে যারা নিরামিশভোগী সাধারণত তারাই বেশী খেয়ে থাকেন। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য হলো ভেজাল মুক্ত বা বিশুদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা, সেক্ষেত্রে সয়া বড়ি কিন্তু নির্ভেজাল একটি আইটেম।
আরও পড়ুন: স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার
যাইহোক, আজকে সয়া বড়ির উপকারিতা ও অপকারিতা সহ সয়া বড়ি কি, কিভাবে খাওয়া যাবে, অর্থাৎ রান্নার প্রক্রিয়াসমূহ, সয়া বড়িতে কি কি ভিটামিন থাকে, কাদের সয়াবড়ি খাওয়া উচিত ইত্যাদি এমন অনেক বিষয়েই আপনার ইতিমধ্যে জেনে গেছেন। পরিশেষে সয়া বড়ির উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়ত বর্ণনাতে দীর্ঘক্ষণ যুক্ত থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। ভালো থাকবেন নিজে, ভালো রাখবেন অপরকে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url