পিঠ ব্যথার কারণ ও প্রতিকার
ব্যথা শব্দটা যেন আমাদের পিছু ছাড়ছে না। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য ‘ব্যথা শব্দটি’ একটি অতি সাধারণ ব্যাপার। সুতরাং এমনি একটা বিষয়কে নিয়েই পিঠ ব্যথার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কিত আলোচনা:
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর অনেকেরই ঘাড়ে বা পিঠে ব্যথা করে। কেউ ডলাডলি করে আবার কেউবা মনে করে শোবার দোষে হয়েছে। মূল সমস্যাটা কোথায় জানার চেষ্টা করে না। তাই আজকে আমরা পিঠ ব্যথার কারণ ও প্রতিকার বিষয়ক আলোচনায় সবকিছু জানার চেষ্টা করবো।
পোস্ট সূচিপত্র: পিঠ ব্যথার কারণ ও প্রতিকার
ভূমিকা
কী কী কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে
পিঠের ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকার
এ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
পিঠ ব্যথার কারণ ও প্রতিকার - শেষ কথা
ভূমিকা:
মানুষের নির্দিষ্ট একটি সময়ের পর বোর্ন ডেনসিটি কমতে থাকে। যার ফলে শুরু হয় ব্যথাসহ নানা সমস্যাদি। আজকে পিঠে ব্যথা তো কালকে ঘাড়ে ব্যথা বা কোমর ব্যথা ইত্যাদি কোন না কোন ইস্যুতো লেগেই থাকছে। তবে, এই ব্যথা আজকাল কম বয়সীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে আয়োজিত পিঠ ব্যথার কারণ ও প্রতিকার কি হতে পারে, কেন পিঠে ব্যথা করে, কীভাবে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়, কীভাবে ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমে তা সারিয়ে তোলা যায় ইত্যাদি বিষয়গুলো আমাদের জানাটা একান্ত আবশ্যক। একটা বিষয় বলুন তো, জীবনে প্রতিষ্ঠা, অর্থ, যশ, প্রতিপত্তি ইত্যাদি বিষয়গুলোর দরকার আছে, কিন্তু কেউ কেউ আছেন, যারা নিজের শরীরের দিকে না তাকিয়ে অনবরত শুধু পরিশ্রম করেই যান, এবং এ ধরনের মানুষগুলো এক পর্যায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়। ফলাফলটা আপনারাই হয়তো জানেন। তাই জীবনে সবকিছুরই যেমন দরকার আছে, কিন্তু শরীর নামক যন্ত্রটিরও একটু আরাম-বিশ্রামের দরকার আছে। যাইহোক পিঠ ব্যথার কারণ ও প্রতিকার বিষয়ে জানতে নিচের লেখাগুলো খুব মনোযোগ সহকারে পড়তে পারেন।
কী কী কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে :
পিঠের ব্যথা নানা কারণে হয়ে থাকে। যেমন-হাঁটা, বসা, শোয়া, ভুল এক্সারসাইজ, অতিরিক্ত ধুমপান বা মদ্যপান ইত্যাদি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো সময়ে পিঠ ও কোমরের ব্যথায় ভোগেন। নিন্মে পিঠ ব্যথার কারণ ও প্রতিকার এর মধ্যে পিঠের ব্যথার কারণগুলি আলোচিত করা হলো :
আসলে পিঠ ব্যথার কারণ ও প্রতিকার বা উপায় হিসেবে বলা যেতে পারে, পিঠের ব্যথা সাধারণত পিঠের পেশি, লিগামেন্ট, মেরুদন্ড এবং কশেরুকার সমস্যা থেকে তৈরি হয়।
পিঠের পেশিতে চাপ : অর্থাৎ, দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে কাজ করলে পিঠের পেশিতে চাপ পড়ে এবং সেখান থেকেই পিঠের ব্যথার সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
কাঠামোগত সমস্যা : আমাদের মেরুদণ্ডতে যে চাকতি আকারের হাড়গুলো থাকে, তাকে বলে কশেরুকা। বলাই বাহুল্য, এ হাড়গুলো একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে এবং এই কশেরুকার মাঝের হাড়গুলোতে ডিস্ক নামের এক ধরণের টিস্যু দ্বারা আবৃত থাকে। অর্থাৎ, যদি কোন কারণে এই ডিস্কে আঘাত লাগে, তাহলে পিঠে ব্যথা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণ
রোগের কারণে : অর্থাৎ, ডিজেনারেটিভ স্পন্ডিলোলিস্থেসিস রোগ হলে পিঠে ব্যথা হতে পারে। আবার কাউডা ইকুইনা সিনড্রোমের ফলেও মেরুদন্ডের নিচের স্নায়ুর কার্যকারিত হ্রাস পাওয়ার ফলে পিঠে ব্যথা সৃষ্টি হয়। মেরুদন্ডে ক্যান্সার বা টিউমারের কারণেও পিঠে ব্যথা হতে পারে। এ ছাড়াও যাদের কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা আছে, যেমন-কিডনিতে পাথর বা কিডনির সমস্যা হলেও পিঠে ব্যথা হতে পারে।
বাত বা আর্থ্রাইটিস : স্পাইনাল অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগের কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে।
দুর্ঘটনা : অর্থাৎ, দূর্ঘটনাজনিত কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে।
ভারী জিনিস উত্তোলন : অনেক সময় হঠাৎ করে কোনো ভারী জিনিস তুলতে গেলেও পিঠে আঘাত লাগার কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে।
ভুল এক্সারসাইজ : অনেক সময় পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই জিমে গিয়ে ওজন তোলা কিংবা হাইপার এক্সটেনশন মুভমেন্টে পিঠের লিগামেন্ট এবং পেশির ওপর চাপ পড়ার কারণেও পিঠে ব্যথা হতে পারে।
দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানো : প্রয়োজনের তাগিদে অনেককে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়ে থাকে, এর ফলেও পিঠে ব্যথা হতে পারে।
ধুমপান ও অ্যালকোহল সেবন : অতিরিক্ত ধুমপান বা অ্যালকোহল সেবনের ফলে অল্প বয়সীদের মধ্যেও ব্যাক পেইন বা পিঠে ব্যথা হতে পারে।
ভিটামিন ডি : অর্থাৎ, শরীর থেকে ভিটামিন ডি এর অভাবে পিঠে ব্যথা হতে পারে।
আরও পড়ুন: হেঁচকি ওঠে কেন - হেঁচকি থামানোর ঘরোয়া উপায়গুলি কি কি
দীর্ঘক্ষণ বিছানায় থাকা : অনেকে আরাম-আয়েসের স্থান হিসেবে বিছানাতে দীর্ঘক্ষণ ধরে শুয়ে থাকেন, আবার শোবার অঙ্গ-ভঙ্গি পরিবর্তনেও পিঠে বা কোমরে ব্যথা হতে পারে।
পিঠের ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকার :
পিঠ ব্যথার কারণ ও প্রতিকার হিসেবে তা যদি খুব গুরুতর না হলে ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করেই এর সমাধান করা সম্ভব হয়। নিম্নে পিঠ ব্যথার কারণ ও প্রতিকার হিসেবে ঘরোয়া প্রতিকারগুলি বর্ণিত হলো:
গরম সেক : পিঠের ব্যথা হতে রিলিফ বা আরাম পেতে গরম সেক দেয়া যেতে পারে। যদিও এই পদ্ধতিটি আমাদের খুবই পরিচিত। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন হট ওয়াটার ব্যাগ আমাদের নাগালের মধ্যে থাকাই তা পিঠে বেধে রাখা যেতে পারে।
ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহণ : একটি গবেষণায় প্রতীয়মান হয় যে, ১৫-৫২ বছর বয়সীদের মধ্যে যারা দীর্ঘ সময় পিঠের ব্যথায় ভুগে থাকে, তাদের ৮০ শতাংশেরই ভিটামিন ডি এর অভাব রয়েছে। আসলে হাড়জনিত যে কোন সমস্যার মূল অন্তরায় হচ্ছে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি। সুতরাং সবসময় ঘরে বসে না থেকে, বিশেষ করে সকালের রোদটা গায়ে লাগানো যেতে পারে এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে।
সামুদ্রিক মাছ : যারা পিঠের ব্যথায় ভুগে থাকেন, তাদের সামুদ্রিক মাছ খেলে উপকার পাওয়া যাবে। এ ছাড়াও শস্যজাত খাবার, যেমন-বাদাম, আদা, চেরি ফল, সবুজ চা ইত্যাদি।
মানসিক চাপ : অর্থাৎ, অতিরিক্ত মেন্টাল স্ট্রেসের ফলে পেশীতে টান পড়ে। তবে এই ধরণের উত্তেজনার কারণে পিঠে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে।
স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ : অতিরিক্ত মশলাদার বা চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা যাবে না। কারণ এতে স্নায়ুতন্ত্রের ওপর চাপ পড়ে এবং সে কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে। তবে ফল, শাকসব্জি, প্রোটিন, আমিষ, দুগ্ধজাত খাবার এবং পর্যাপ্ত কার্বোহাইডেটসহ সুষম খাদ্য গ্রহণে হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়ে থাকে।
ব্যায়াম বা শরীর চর্চা : শরীরকে সচল রাখতে শরীরচর্চা বিকল্প নেই। অর্থাৎ নিয়মিত শরীরচর্চা একটি মানুষকে অনেক সুস্থ্য ও সবল রাখতে সাহায্য করে থাকে। যেমন-সকালে বা সন্ধ্যায় নিয়ম করে হাঁটা, প্রয়োজনে জিমে গিয়ে সঠিক ব্যায়াম করা অথবা বাড়িতেও কিছু শরীরচর্চা করার মাধ্যমে পিঠ বা ঘাড়ের ব্যথা এড়ানো যেতে পারে।
ধুমপান ত্যাগ করা : সিকোটিন মেরুদন্ডের রক্ত প্রবাহকে সীমাবদ্ধ করে এবং রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস করে ফেলে, এ ছাড়াও পেশিতে কম পুষ্টি পৌঁছিয়ে থাকে। তাই পিঠের ব্যথা এড়াতে অবশ্যই ধুমপান বা অ্যালকোহল ত্যাগ করতে হবে।
সাঁতার কাটা : যারা সাঁতার জানেন, তারা নিয়মিত সাঁতার কাটতে পারলে তা পিঠের ব্যথা উপশমে উপকার হয়।
আরও পড়ুন: শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিকসমূহ
দীর্ঘ সময় বসে কাজ না করা : দীর্ঘসময় ধরে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা, বসা বা শুয়ে থাকা পিঠের ব্যথার অন্যতম কারণ। তাই এ ধরণের কাজগুলিতে বিরতি দিয়ে করতে হবে, প্রয়োজনে মানসিক চাপ যাতে সৃষ্টি না হয়, এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
অতিরিক্ত কোন ভারী বহন না করা : অর্থাৎ, কাজের প্রয়োজনে যদি কোন ভারী জিনিস বহন করতে হয়, তবে তা ধীরে সুস্থ্যে শরীরের ভারসাম্য অনুযায়ী করতে হবে। যেন হঠাৎ করেই তা না তোলা, তবে অভিজ্ঞতা না থাকলে বা সম্ভব না হলে তা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
এ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী:
পিঠ ব্যথার কারণ ও প্রতিকার সমূহ আলোচনায় নিম্নোক্ত প্রশ্নাবলীগুলি উত্থাপন হয়ে থাকে।
- কী কী কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে
- পিঠে ব্যথা কিসের লক্ষণ
- গ্যাস্ট্রিক থেকে পিঠে ব্যথা
- পিঠ ব্যথার কারণ ও প্রতিকার
- পিঠের মাঝখানে ব্যথার ঔষধ
- উপরের পিঠে ব্যথার কারণ
- পিঠের মেরুদন্ডে ব্যথা কারণ
- পিঠের মাঝখানে ব্যথা কারণ
- পিঠের নিচের দিকে ব্যথা
- পিঠের ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকার
পিঠ ব্যথার কারণ ও প্রতিকার - শেষ কথা:
আশা করছি, পিঠ ব্যথার কারণ ও প্রতিকার ইত্যাদি যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। কারণ পিঠ ব্যথার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কিত আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন এবং পরবর্তীতে অন্য কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে সেটাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ আমাদের সাথে পিঠ ব্যথার কারণ ও প্রতিকার আলোচনায় থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
বিঃদ্রঃ-পিঠ ব্যথার কারণ ও প্রতিকার টপিকটি শুধুমাত্র সচেতনার জন্য প্রকাশিত, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসাপত্র সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনি আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে অবশ্যই পরামর্শ করবেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url