ইসবগুলের ভূসি কিভাবে খেলে উপকারিতা মেলে

ইসবগুলের ভূসির অনেক উপকারিতা রয়েছে, কিন্তু কিভাবে এই ইসবগুলের ভূসি কিভাবে খেলে উপকারিতা মেলে সেটা জানাটা জরুরী।
আসলে ইসবগুলের ভূসির সামান্য কয়েকটি ব্যবহার বা উপকারিতা সম্পর্কে আমরা জানি। কিন্তু এই উপাদানটির যে অন্যান্য গুণ বা পুষ্টিগুণ রয়েছে এবং ইসবগুলের ভূসি কিভাবে খেলে উপকারিতা মেলে সে সম্পর্কে আমাদের ধারণাটা খুব একটা পরিস্কার নয়। তাই আজকের আলোচনায় ইসবগুলের ভূসির সমস্ত বিষয়াদি সম্পর্কে জানতে নিচের লেখাগুলো পড়তে হবে।

পোস্ট সূচিপত্র: ইসবগুলের ভূসি কিভাবে খেলে উপকারিতা মেলে (How to consume Isabgol husk to get benefits)
ইসবগুলের ভূসি কী?
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কি ইসবগুলের ভূসি খাওয়া যেতে পারে?
ইসবগুলের ভূসির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাসমূহ
ইসবগুলের ভূসি খাওয়ার সঠিক নিয়ম
ইসবগুলের ভূসি কিভাবে খেলে উপকারিতা মেলে-শেষ কথা

ইসবগুলের ভূসি কী?

ইসবগুলের ভূসি আসলে সিলিয়াম হিসেবে পরিচিত বাইরের দেশে এবং এ সিলিয়াম আসলে (প্ল্যান্টাগো ওভাটা) বীজের খোসা। এই ইসবগুলের ভূসি দুটি ফরমে পাওয়া যেতে পারে। একটি হচ্ছে হাস্ক (তুষ বা ভূসি) আর অপরটি হলো পাউডার (গুঁড়া)। সাধারণত বাজার থেকে যেটি নরমালি নিয়ে আসা হয়, সেটি আসলে অর্গানিক অর্থাৎ হাস্ক ফরমে। এটিকে জাস্ট ক্লিনিং প্রসেস করা হয় এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা করে শুকিয়ে জারে ভরা হয়। অপরটি হলো পাউডার ফরমে. যা কমার্শিয়াল ভাবে তৈরি হয়ে থাকে। যেহেতু কমার্শিয়াল বা বাণিজ্যিকভাবে তৈরী করা হয়, সেজন্য তার মধ্যে কালার, ফ্লেভার অ্যাডসহ ডায়েট সুইটনারের কিছু উপাদান অ্যাড হয়ে থাকে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কি ইসবগুলের ভূসি খাওয়া যেতে পারে?

ইসবগুলের ভূসি কিভাবে খেলে উপকারিতা মেলে এর ক্ষেত্রে বলা যায়, বর্তমানে বিভিন্ন খাদ্যাভাসের কারণে অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগে থাকেন। শুধু কোষ্ঠকাঠিন্যই নয়, পেটের অনেক অসুখ নিরাময় হয় ইসবগুলের ভূসিতে। তাই অবশ্যই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভূসি খেতে পারেন নিঃসন্দেহে। মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে গোটা শরীরের উপর। আর এই ধরণের সমস্যাতে নির্দ্বিধায় খাওয়া যেতে পারে ইসবগুলের ভূসি। আসলে ইসবগুলের ভূসি প্রথমে পাকস্থলীতে যায় এবপর ফুলে ভেতরের সব বর্জ্য বের করে দিতে সাহায্য করে। প্রতি রাতে যদি ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস হালকা গরম দুধের সঙ্গে দুই চা-চামচ ইসবগুলের ভূসি গুলিয়ে খেতে পারেন তাহলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সমস্যা দূর হবে।

ইসবগুলের ভূসির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাসমূহ

ইসবগুলের ভূসির পুষ্টিগুণ:
এক চা-চামচ ইসবগুলের ভূসিতে রয়েছে ৫৪% ক্যালোরি, ০% ফ্যাট, ১৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১৫ গ্রাম শর্করা, ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ০.৯ মিলিগ্রাম আয়রন। তবে এক টেবিল চামচ করে এবং অবশ্যই পানিতে গুলিয়ে ৩ বার খেতে পারবেন। সেইসঙ্গে সারাদিন পর্যাপ্ত পানিও পান করতে হবে।

আরও পড়ুন: গ্যাস্ট্রিক কী ও কেন হয়? নিয়মিত গ্যাসের ওষুধ খেলে যেসব ক্ষতি হতে পারে - গ্যাসের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম

ইসবগুলের ভূসির উপকারিতা:
ইসবগুলের ভূসি কিভাবে খেলে উপকারিতা মেলে তার কিছু উদাহরণ নিম্নে বর্ণিত হলো:
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর হয়: যাদের প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া জনিত সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে এটি অসামান্য কাজ করে। অর্থাৎ আখের গুড়ের সাথে ইসবগুলের ভূসি মিশিয়ে এক সপ্তাহ যদি সকাল ও বিকালে খেতে পারেন তাহলে অনেক উপকার পাবেন।
ডায়রিয়া প্রতিরোধ: ডায়রিয়াজনিত সমস্যার ক্ষেত্রে এটি দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেতে পারলে ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ডায়রিয়া হলে ৩-টেবিল চামচ দই ও ২-টেবিল চামচ ইসবগুলের ভূসি মিশিয়ে দিনে দুইবার ভরা পেটে খেতে পারলে ডায়রিয়া ও আমাশয় থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
হার্ট ভালো রাখে: হার্টের সুস্থ্যতার জন্য নিয়মিত ইসবগুলের ভূসি খেতে পারেন। কারণ এতে থাকা খাদ্য আঁশ রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্র কমিয়ে হৃদরোগ থেকে দূরে রাখে।
ওজন কমায়: ইসবগুলের ভূসিতে ফাইবার থাকায় হজম প্রক্রিয়া অনেক ধীরগতিতে সম্পন্ন হয়, ফলে ক্ষুধা কম লাগে এবং শরীরের ওজন কমানো অনেক সহজ হয়।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ: আসলে ইসবগুলের ভূসিতে রয়েছে জিলাটিন নামক একটি উপাদান, যা দেহে গ্লুকোজের শোষণ ও ভাঙার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার ফলে রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়তে পারে না।

আরও পড়ুন: কীভাবে অফিসের কাজে মনোযোগ বাড়ানো যেতে পারে - কাজে মনোযোগ বাড়ানোর যত কৌশল

অ্যাসিডিটি কমে: ইসবগুলের ভূসিতে ফাইবার থাকায় তা পাকস্থলীতে একটি স্তুর তৈরি করে, যা আমাদের অ্যাসিডিটির হাত থেকে রক্ষা করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর: নিয়মিত ইসবগুলের ভূসি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর সহ পেটের যাবতীয় সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে।

ইসবগুরের ভূসি খাওয়ার সঠিক নিয়ম:

বেশকিছু গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণত ৫-১০ গ্রাম অর্থাৎ ১-২ চা-চামচ পর্যন্ত ইসবগুলের ভূসি সারাদিনে খাওয়া যেতে পারে, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে খাওয়াটাই সমীচিন বা যথোপযুক্ত।

আরও পড়ুন: আমরা কেন হাসি - মন খুলে হাসলে শরীরে যেসব পরিবর্তন সাধিত হয় - হাসির সাথে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের কতটা সম্পর্ক

তবে হ্যাঁ, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যারা খাচ্ছেন, তাদের জন্য ৫ গ্রাম বা এক চা-চামচই যথেষ্ট। সেক্ষেত্রে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে, ২৪০ মিলিলিটার (এমএল) পানি বা বড় এক গ্লাস পানির মধ্যে খুব ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে আপনাকে খেতে হবে। কোন অবস্থাতেই পানির সাথে মিশিয়ে তা রেখে দিবেন না, সঙ্গে সঙ্গে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

ইসবগুলের ভূসি কিভাবে খেলে উপকারিতা মেলে-শেষ কথা:

আশা করছি, ইসবগুলের ভূসি কিভাবে খেলে উপকারিতা মেলে তা যদি জেনে থাকেন, তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। অর্থাৎ, ইসবগুলের ভূসি কিভাবে খেলে উপকারিতা মেলে বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন এবং পরবর্তীতে অন্য কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে সেটাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম আরো ইসবগুলের ভূসি কিভাবে খেলে উপকারিতা মেলে সম্পর্কিত তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

আসলে ইসবগুলের ভূসির সামান্য কয়েকটি ব্যবহার বা উপকারিতা সম্পর্কে আমরা জানি। কিন্তু এই উপাদানটির যে অন্যান্য গুণ বা পুষ্টিগুণ আছে এবং কিভাবে বা কখন খাওয়া যেতে পারে, সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুব একটা পরিস্কার নয়। সেই অর্থে আমরা ইসবগুলের ভূসি কিভাবে খেলে উপকারিতা মেলে নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url