শীতের রাতে মোজা পরে ঘুমালে কি হয়?

শীতের রাতে মোজা পরে ঘুমালে কি হয়? ভালো না খারাপ, তা জানতে নিচের লেখাটি পড়তে হবে।

শীতের-রাতে-মোজা-পরে-ঘুমালে-কি-হয়?

শীতে পা ঢাকা থাকলে পুরো শরীরই গরম থাকে। তাই অনেকেই পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার ভয়ে রাতে মোজা পরে ঘুমিয়ে থাকেন।

পোস্ট সূচিপত্র: শীতের রাতে মোজা পরে ঘুমালে কি হয়? (What happens if you sleep with socks on in the winter?)
শীতের রাতে মোজা পরে ঘুমালে কি হয়?
মোজা ছাড়া পা গরম রাখার কৌশল
যে সকল বিষয়সমূহ খেয়াল রাখতে হবে
শীতের রাতে মোজা পরে ঘুমালে কি হয়? - শেষ কথা

শীতের রাতে মোজা পরে ঘুমালে কি হয়?

  • উপকারিতা:

  • সাধারণত শীতের রাতে মোজা পরে ঘুমালে শরীরের মূল তাপমাত্রা কমে আসে এবং যেটি মানুষের গভীর ঘুম আসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসলে গভীর ঘুম বা সঠিক ঘুমের জন্য শরীরের একটি তাপমাত্রা অত্যন্ত জরুরী। কারণ অনেক সময় আমরা ঘুমাতে গেলেও ঘুম আসে না, এর কারণগুলো হলো শরীরের তাপমাত্রার স্বাভাবিকতা।
  • পায়ে মোজা পরে ঘুমানোর কারণে পা উষ্ণ থাকে এবং রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়, যা হার্ট, ফুসফুস এবং শরীরের পেশীগুলোকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে থাকে। শরীরে যদি রক্ত সঞ্চালনের প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে, তাহলে 
  • এ ছাড়াও সাধারণত যাদের হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার কারণে শরীরের রক্ত সঞ্চালনে নানা ধরণের সমস্যা তৈরি হয়, তাদের ক্ষেত্রে মোজা পরে ঘুমালে তাদের এই সমস্যাগুলো দূর হয়ে যাবে। আসলে রায়নাউড সিনড্রোম নামক এক ধরণের উপসর্গের কারণে হাত ও পায়ের অসাড়তা সৃষ্টি হয়। তাই পা যদি উষ্ণ থাকে তাহলে এ ধরণের সমস্যা থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায়।

  • অপকারিতা:

  • যদিও রাতে মোজা পরে শোয়ার অভ্যাস আরামদায়ক হলেও তবে তা স্বাস্থ্যকর নয়। কারণ শীতের রাতে পায়ে মোজা পরে ঘুমালে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়, যার ফলে দেখা দিতে পারে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা। অর্থাৎ রক্ত সংবহন মাত্রা স্বাভাবিক থাকলে শরীর ভালো ও সুস্থ্য থাকবে।
  • ত্বকের জন্য উপযুক্ত নয় এমন কাপড়ের তৈরি মোজা যদি দীর্ঘক্ষণ পরে থাকা যায়, তাহলে ত্বকে নানারকম সমস্যা দেখা যায়। সুতরাং এরকম ক্ষেত্রে অবশ্যই সুতির মোজা ব্যবহার করতে হবে।তবে যারা বিশেষ করে শীতের রাত্রে মোজা পরে ঘুমাতে যান,  তাদের জন্য অবশ্যই সেই মোজাটা সুতির হতে হবে।

আরও পড়ুন : রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত

  • সারা রাত মোজা পরে থাকলে যেমন আমাদের ঘুমের ওপর প্রভাব পড়তে পারে, তেমনই হৃদস্পন্দনের তারতম্যও হতে পারে। অর্থাৎ মোজা খুব আঁটসাঁট হলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ঘুমের সময় অস্বস্তি হতে পারে এবং হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই ঘুমোনোর আগে মোজা খুলে রাখাই ভালো।
  • যদি কেউ দীর্ঘক্ষণ ধরে পায়ে মোজা পরে থাকে, তাহলে তার পায়ের চামড়া ঘেমে গিয়ে ত্বকে সংক্রমণ হতে পারে। আর একজন মানুষ যদি সারা রাত্রি পায়ে মোজা পরে ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে এটি একটি দীর্ঘ সময় এবং এক্ষেত্রে সংক্রমণের মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে।
  • বিশেষ করে যদি সেই মোজা নাইলনের হয়, তা হলে ক্ষতি আশঙ্কা অনেকটাই বেশি। ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিশেষজ্ঞরা সব সময়ে সুতির জিনিস পরার পরামর্শ দেন। এ ছাড়া দীর্ঘক্ষণ মোজা পরে থাকলে ত্বকে র‌্যাশ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

মোজা ছাড়া পা গরম রাখার কৌশল:

  • সাধারণত মোজা পরে ঘুমালে শরীরে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই এক্ষেত্রে ঘুমানোর আগে অবশ্যই সরিষার তেল বা অলিভ অয়েল হালকা গরম করে যদি পায়ের তালুতে ম্যাসাজ করা যায়, তাহলে পা গরম থাকে এবং ঘুমও ভালো হয়ে থাকে।
  • অনেকেই আছেন, যাদের শীতকালে ঘুমানোর সময় পায়ে ঠান্ডা লাগে, ফলে সুগভীর ঘুম থেকে তারা বঞ্চিত হন। এক্ষেত্রে ঘুমানোর আগে শরীরের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী গরম পানিতে পা ধুয়ে বা কিছুক্ষণ গরম পানিতে পা রেখে তারপর কম্বলের নিচে শীত কাটাতে পারেন।
  • উপরোক্ত পরামর্শগুলি মনপুতঃ না হয়, তাহলে ঘুমানোর সময় লেপের ভেতর হট ওয়াটারের বোতল নিয়ে নিন এবং যে স্থানে আপনার পায়ের তালু অবস্থান করবে, ঠিক সেই জায়গায় হট ওয়াটারের বোতল রাখতে পারেন অথবা লেপের মধ্যেই তা পায়ে ব্যবহার করে পা গরম রাখতে পারেন।

আরও পড়ুন : কোমর ব্যথা হলে কি করণীয় - নিরাময় পদ্ধতিগুলি কি কি

  • ঘুমানোর আগে পা গরম করার আরেকটি সহজ উপায় হলো, আপনার ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে পা গরম হয় এমন একটি জুতা পরতে পারেন এবং বিছানায় যাওয়ার আগে তা খুলে রেখে বিছানায় ঘুমাতে যেতে পারেন।
  • অনেক সময় খুব টাইট মোজা পরলে ঘুমের সময় অস্বস্তি হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ত্বক সংবেদনশীল হলে ডাক্তারের পরামর্শ মাফিক ঘুমানোর সময় মোজা ব্যবহার করা উচিত। কারণ খারাপ মানের মোজা পরলে ত্বকে অস্বস্তি হতে পারে।
  • সাধারণত রাত্রে ঘুমানোর সময় আমরা যে পোশাকটি পরি, তা অবশ্যই ঢিলেঢালা থাকে। এক্ষেত্রে পায়ে ঠান্ডা লাগার নিমিত্তে আমরা যদি মোজা পরে ঘুমাতে থাকি, তাহলে অবশ্যই সেই মোজাটাও যেন আরাম দায়ক হয়। তা না হলে ঘুমের ব্যাঘাতসহ শরীরের অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে। 

যে সকল বিষয়সমূহ খেয়াল রাখতে হবে:

শীতকালে শরীরকে উষ্ণতা রাখতে আমরা নানা উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করি এবং ঘুমানোর সময়ও যেন তার ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য পায়ে মোজা পড়ে ঘুমিয়ে থাকি। কিন্তু আমরা এটা কি জানি যে, শীতের রাতে মোজা পরে ঘুমালে কি হয়? মূলত: শীতের সময়ই আমরা বেশী পায়ে মোজা ব্যবহার করে থাকি, আর এ থেকে রাত্রে ঘুমানোর সময়ই পায়ে মোজা ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু শীতের রাতে মোজা পরে ঘুমালে কি হয়? এ ক্ষেত্রে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে মোজা যেন সঠিক মাপের হয় এবং খুব বেশি আঁটসাঁট না হয়। সাধারণত সুতি বা উলের তৈরি মোজা ব্যবহার করা সবচেয়ে বেশী ভালো। পরিষ্কার এবং শুকনো মোজা ব্যবহার করতে হবে, যাতে ছত্রাক কিংবা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ না ঘটাতে পারে। রাতে মোজা পরার আগে পায়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নেওয়াটা ভালো। অর্থাৎ ঘুমানোর আগে আমাদের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত হতে হবে।

শীতের রাতে মোজা পরে ঘুমালে কি হয়?-শেষ কথা:

শিশুরাও মোজা পরে ঘুমাতে পারে। তবে নরম, প্রাকৃতিক, বাতাস চলাচল করতে পারার মতো উপাদান যেমন তুলার ঢিলেঢালা মোজা দিতে হবে। টাইট ইলাস্টিক টপসসহ মোজা এড়িয়ে চলাই শ্রেয়, যেহেতু এটি শিশুর শরীরের রক্ত ​​প্রবাহকে সীমাবদ্ধ করতে পারে। যদি শরীরে রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা বা পা ফুলে যাওয়া অথবা পায়ে রক্ত প্রবাহ সীমিত করে দেওয়ার মতো শারীরিক সমস্যা থাকে তবে মোজা পরে ঘুমানোর বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াটা অনেক জরুরি। খেয়াল রাখতে হবে, যাদের পায়ে ঘষা লাগা, চোট বা খোলা ক্ষত আছে, তাদের রাতে মোজা না পরাই ভালো। রক্ত ​​সঞ্চালনের সমস্যা, যেমন-ধমনী বা শিরার ব্যাধি থাকলে ঘুমানোর সময় মোজা ব্যবহার করা উচিত নয়। যারা গরম আবহাওয়ায় থাকেন তাদের মোজা পরা এড়িয়ে চলা উচিত। সুতরাং আজকের বিষয়গুলি আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে এবং শীতের রাতে মোজা পরে ঘুমালে কি হয়? তা বুঝতে পেরেছেন।

আরও পড়ুন : কানে হেডফোন ব্যবহারের ক্ষতিসমূহ

এ ছাড়াও পরবর্তীতে অন্য কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে সেটাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ আমাদের সাথে শীতের রাতে মোজা পরে ঘুমালে কি হয়? আলোচ্য বিষয়ে যুক্ত থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

বি.দ্র: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, বিস্তারিত জানতে হলে সব সময়েই বিশেষজ্ঞ/চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url