শীতকালে যে ফুলের গাছগুলো টবে লাগাতে পারেন

শীতকালে যে ফুলের গাছগুলো টবে লাগাতে পারেন এবং সেইসাথে টবে গাছ লাগাতে হলে কি কি করতে হয়, এতে সার কতটুকু দিতে হবে, কিভাবে বেশি ফুল ফোটানো যায় ইত্যাদি বিষয়ে জানতে নিচের লেখাগুলো অবশ্যই পড়ুন।
শীতকালে-যে-ফুলের-গাছগুলো-টবে-লাগাতে-পারেন
প্রকৃতির নিয়মে শীতের মৌসুমে বেশি ফুল ফোটে। তাই আপনি বিভিন্ন রকমের দেশি-বিদেশি বাহারি ফুল দিয়ে আপনার ঘর-বারান্দা বা ব্যালকনি সাজিয়ে ফেলতে পারেন।

পেজ সূচিপত্রঃ শীতকালে যে ফুলের গাছগুলো টবে লাগাতে পারেন

শীতে যে সকল ফুল টবে লাগাতে পারেন
টবে গাছ লাগাতে যা করতে হবে
কোন সার কতটুকু দিবেন
বেশি ফুল ফোটাবেন যেভাবে
ছাদে লাগানোর জন্য ছোট ফুলের গাছ
ছাগ বাগানের জন্য রঙিন ফুল গাছ
ছাদের জন্য অসাধারণ কিছু ফুলগাছ
শীতকালে যে ফুলের গাছগুলো টবে লাগাতে পারেন-পরিশেষে

শীতে যে সকল ফুল টবে লাগাতে পারেনঃ

শীত প্রায় এসেই গেলো, তাই দেরী না করে এবং সবাইকে চমকে দিতে ফুরের গাছ লাগানোর গোপন প্রস্তুতিগুলো এখনই সম্পন্ন করে ফেলুন। যেমন-টব যোগাড়, টবের মাটি সংগ্রহ, সার যোগাড় ইত্যাদি। আসলে গাছ লাগানোর পূর্বে বিভিন্ন ধরণের কাজগুলি যদি আগে সেরে ফেলতে পারেন, তাহলে আপনার ছাদবাগানে, বারান্দায় বা গ্রীলে সবথেকে আগে ফুটে যাবে নানারকম সব বাহারী ফুলের গাছ। 

সাধারণত শীতকালে যে ফুলের গাছগুলো টবে লাগাতে পারেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো গাঁদা। আর এই গাঁদার আবার নানা ধরনের জাত রয়েছে। যেমন-বড় ইনকা গাঁদা, ছোট ছোট চায়না গাঁদা, দেশি গাঁদা, রক্ত গাঁদা, হলুদ লাল মিশানো জাম্বো গাঁদা, রাজ গাঁদা, সাদা গাঁদা, কমলা গাঁদা ইত্যাদি। অর্থাৎ যে গাঁদা ফুলগুলো আপনার ভালো লাগে, সেগুলো অনায়াসে লাগাতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ বাংলা ও ইংরেজিতে ১০০টি ফুলের নামের তালিকা এবং কোন কোন ফুলগুলো দেশি ও বিদেশি

গাঁদা ফুল বাদ দিয়েও টবে লাগানোর জন্য ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, কারনেশান, ক্যানেনডুলা, অ্যাস্টার, প্যানজি, ক্যামেলিয়া, স্যালভিয়া, জারবেরা, এজালিয়া, কসমস, গোলাপ ইত্যাদি নানা ধরণের গাছ রয়েছে। যা শীতকালে টবে লাগানোর জন্য উপযোগী।

যদি আপনার বারান্দা বা গ্রিলে অথবা ঝুলানো টবে ফুলের গাছ লাগাতে চান, তাহলে ন্যাস্টারশিয়াম, পিটুনিয়া, ভারবেনা, অ্যাস্টার ইত্যাদি ধরনের গাছগুলো লাগাতে পারেন। আর যদি গ্রিলে লতিয়ে দেওয়ার জন্য গাছ লাগাতে চান, তাহলে মর্নিং গ্লোরি, নীলমণি লতা, সুইট পি, রেল লতা ইত্যাদি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং দৃষ্টিনন্দন গাছগুলি লাগাতে পারেন। তবে আপনি ইচ্ছে করলে মাটিতেও উপরোক্ত বিভিন্ন রকমারী ফুলের গাছগুলো অনায়াসে লাগাতে পারেন।

শীতকালে যে ফুলের গাছগুলো টবে লাগাতে পারেন এর ক্ষেত্রে অর্কিড ফুল একটি ব্যতিক্রমধর্মী। অর্থাৎ শীতকালের নানা ফুলের গাছের মধ্যে অবশ্যই অর্কিড গাছ রাখতে পারেন, যা একটি বাড়তি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে এবং সর্বোপরি আপনার বাগানকে উজ্জ্বল রাখতে সহায়ক হয়ে উঠবে।

টবে গাছ লাগাতে যা করতে হবেঃ

সর্বপ্রথম আপনাকে গাছের সঙ্গে মানানসই টব যোগাড় করতে হবে। কারণ বড় কোন গাছের জন্য অবশ্যই যেন টব ছোট না হয়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। কিন্তু ছোট গাছের জন্য যদি বড় টব ব্যবহার করেন, তাহলে সেটা সমস্যা হয়না।

এরপর দ্বিতীয় কাজ হলো দোঁ-আশ মাটি যোগাড় করা। যখন মাটি যোগাড় হয়ে গেরে পরের কাজ হলো আপনার টবের পরিমাণ মাটির তিন ভাগের এক ভাগ জৈব সার অথবা পচা গোবর ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর একমুঠো হাড়ের গুড়ো, ২ চা-চামচ চুন এবং সেইসঙ্গে ছাই দুই মুঠ মেশাতে পারলে ভালো হয়। সুতরাং উপরোক্ত কাজগুলো তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে সম্পন্ন করুন।

খেয়াল রাখবেন, যেসব ফুলগুলি মৌসুমী বা সিজিন্যাল ধরণের হয়, সেই ফুলগুলোর চারার বয়স কমপক্ষে এক মাস হতে হবে। অর্থাৎ, মাসখানেক বয়সের চারা লাগালে আপনার ফুল ও গাছ দুটোই ভালো হবে। তবে মৌসুমী বা সিজিন্যাল ফুলের চারা বাদে অন্য চারাগুলো অল্পবয়সী হলে সমস্যা নাই, তবে চারা কিনবেন তরতাজা দেখে।

আরও পড়ুনঃ ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে ঘর সাজানো

আপনার পছন্দের ফুলের চারাটি টবে রোপণ করার পর আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে ফুলের গোড়ার মাটি শক্ত করে দিতে হবে। আর তা না হলে যখন পানি দিবেন, তখন চারাটি যে কোন একদিকে হেলিয়ে পড়তে পারে। তবে চারা লাগানোর পর অবশ্যই পানি দিতে হবে।

যখন ফুলের গাছটি টবে রোপণ করবেন, ঠিক তখনই একটি বাঁশের কঞ্চি বা শক্ত কোন কাঠি ফুলের গাছের সাথেই পুঁতে দিবেন। এতে করে আপনার ফুলের গাছটি খাড়া বা সোজা হয়ে থাকবে। না হলে যদি পরে কঞ্চি বা কাঠি গাছের পাশে বেঁধে দেন, তাহলে তা উক্ত গাছের শিঁকড়কে আঘাত করতে পারে।

সাধারণত টবে গাছের গোড়ার মাটি যেন একেবারে গুঁড়ো না করে, তা চাকা চাকা করে খুঁচে দেওয়াই ভালো। অবশ্য এক্ষেত্রে মাটি খোঁচানোর গভীরতা হবে ১ ইঞ্চি থেকে ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত। সম্ভব হলে এ কাজটি অন্তত দশ দিনে একবার করতে পারেন।

কোন সার কতটুকু দিবেনঃ

নিয়মিত ফুলের গাছের পরিচর্যা কিন্তু আপনাকে অব্যাহত রাখতে হবে। পানি দেয়া, মরা পাতা ফেলে দেয়া, গাছের পাতায় কোন পোকামাকড় লাগল কিনা ইত্যাদি নানাভাবে গাছের সুনিবিড় পরিচর্যা করতে হবে। এবার আসা যাক কোন সার কতটুকু দিবেন? গাছে কুঁড়ি আসা শুরু করলে ৫০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ২৫ গ্রাম এমওপি একসাথে মিশিয়ে প্রতি গাছে গাছে এক চা-চামচ করে ১০ দিন অন্তর অন্তর দিতে হবে। মনে রাখবেন, এক মৌসুমে কিন্তু এ ধরণের রাসায়নিক সারগুলি ৩ বারের বেশী গাছে দেয়ার দরকার নাই। আর অবশ্যই খেয়াল করবেন, যখন গাছে সার দিবেন তা যেন কোনমতেই গাছের শিকড়ের ওপর না পড়ে। কারণ সার কিন্তু সবসময় গাছের চারিপাশ দিয়েই দিতে হয়।

বেশি ফুল ফোটাবেন যেভাবেঃ

সাধারণত গাছে ফুল বেশি ফোটাতে চাইলে অবশ্যই ফুল শুকাতে না দেওয়াই উচিত। অর্থাৎ গাছে যখনই শুকনো ফুল দেখতে পাবেন অথবা ফুল শুকনো হতে শুরু করলেই তা কেটে দিতে হবে। যদি গাঁদা, অ্যাস্টার, চন্দ্রমল্লিকা ইত্যাদি গাছগুলো থেকে বেশি ফুল পেতে চান, তাহলে অবশ্যই প্রথম দিকের কিছু কুঁড়ি চিমটি দিয়ে ছেঁটে দিবেন। তাতে এই ধরণের গাছে বেশি ফুল ফুটে থাকবে। সর্বোপরি, গাছে বেশি ফুল ফোটাতে চাইলে গাছের নিবিড় পরিচর্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা জিনিস অবশ্যই মনে রাখবেন, গাছকে আপনি যদি সময় দেন, তাহলে গাছও আপনাকে নিরাশ করবে না।

ছাদে লাগানোর জন্য ছোট ফুলের গাছঃ

সাধারণত ছাদ বাগানে লাগানোর জন্য নিম্নে বর্ণিত ছোট ফুল গাছগুলি লাগানো যেতে পারে। এতে জায়গা কম লাগে এবং ফুলগুলো ছোট টবে ভালো বাড়ে। তবে ছাদে লাগাতে  শীতকালের জন্য বিশেষ কিছু ফুলগাছ রয়েছে। যেমন-প্যানজি, আলিসাম, ডেইজি আর সারা বছরের জন্য লাগানো যেতে পারে ভিন্কা ইত্যাদি।

ছাগ বাগানের জন্য রঙিন ফুল গাছঃ

আসলে ছাদ বাগানের জন্য যদি রঙিন ধরণের ফুল গাছগুলো লাগানো যায়, তাহলে তা সৌন্দর্য বর্ধন হয় তেমনি দেখতেও ভালো লাগে। কারণ রকমারি ফুলের রয়েছে আলাদা আকর্ষণ। যাইহোক বিভিন্ন প্রজাতির এবং বিভিন্ন রঙের ফুল গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে-গোলাপ, ডালিয়া, জিনিয়া, পিটুনিয়া ইত্যাদি।

ছাদের জন্য অসাধারণ কিছু ফুলগাছঃ

অনেকে ছাদ বাগানের জন্য কিছু দৃষ্টিনন্দন বা অসাধারণ সব ফুলের গাছ লাগিয়ে থাকে। অর্থাৎ ছাদ বাগানকে আরও আকর্ষণীয় এবং ষ্ট্যান্ডার্ড করার ক্ষেত্রে কিছু ফুল গাছ আছে,যেমন-অর্কিড, পিওনি, লিলি বা ডালিয়া। এই ফুলগুলো অত্যন্ত সুন্দর আপনার ছাদবাগানকে আরও মোহনীয় করে তুলতে এদের জুরি মেলা ভার।

শীতকালে যে ফুলের গাছগুলো টবে লাগাতে পারেন-পরিশেষেঃ

আসলে শীতকালে বেশির ভাগ ফুলই ফুটে থাকে। আর এ কারণে জ্ঞানী ব্যক্তিরা ভ্রমণ বা অবকাশ যাপনে শীতকালকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কারণ শীতকালে প্রকৃতি যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যে নিজেকে সাজিয়ে রাখে। আর সবথেকে বড় বিষয় হলো এ সময় প্রকৃতি অত্যন্ত শান্ত থাকে এবং চারিদিকে থাকে এর নান্দনিক নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী। তবে যারা গাছপ্রেমী তারা কিন্তু শীতকালে যে ফুলের গাছগুলো টবে লাগাতে পারেন এর ক্ষেত্রে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকেন। অনেকেেই আছেন, যারা অনেক সময় শখ করে টবে ফুল গাছ লাগানোর দেখেন, তা মরে গেছে। আবার অনেক সময় ফুলই আসেনা। এক্ষেত্রে মূল বিষয়গুলো হলো যেখানে আপনি ফুল গাছটি রেখেছেন, সেখানে কি রোদ লাগে, না হলে অন্তত সপ্তাহে ২-৩ দিন গাছগুলোকে ছাদে বা বাইরে রোদে দিন।

আরও পড়ুনঃ চিকুনগুনিয়ার ব্যথা কিভাবে কমানো যায়

যাইহোক শীতকালে যে ফুলের গাছগুলো টবে লাগাতে পারেন বিষয়ে বর্ণিত পরামর্শ আপনার যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই তা অন্যদের শেয়ার করতে পারেন। অনেক সময় অনেকজন গাছের পুষ্টির জন্য সরিষার খৈল ভিজিয়ে রেখে পরে তা গুলে অন্তত মাসে দুবার গাছের গোড়ায় দিয়ে থাকে। আসলে শীতকালে যে ফুলের গাছগুলো টবে লাগাতে পারেন বিষয়ক আলোচনায় যদি কোন মন্তব্র/পরামর্শ প্রদান করতে চান, তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারে। ফুলের গাছের পরিচর্যার মধ্যে অনেক সময় যদি দেখেন যে, গাচের গোড়া ভেজা আছে, তাহলে সেক্ষেত্রে পানি দেওয়ার দরকার নেই। পরিশেষে শীতকালে যে ফুলের গাছগুলো টবে লাগাতে পারেন বিষয়ে আপনার দীর্ঘক্ষণ সম্পৃক্ত এবং অংশগ্রহণের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।