ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে ঘর সাজানো
আজকাল অনেকেই ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে ঘর সাজানো পছন্দ করেন। নিজের শোবার ঘরসহ প্রয়োজনীয় ফাঁকা জায়গাগুলোতে তৈরি হয় এক নান্দনিক ছোঁয়া।
গৃহসজ্জা, মানসিক প্রশান্তি, বিশুদ্ধ বাতাস, আধুনিক যন্ত্রচালিত জীবনাভ্যাস এবং সর্বোপরি প্রকৃতির ছোঁয়া সব মিলিয়েই ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে ঘর সাজানো এক আলাদা শান্তি ও নির্মলতারই অভিপ্রায়।
পোস্ট সূচিপত্র: ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে ঘর সাজানো (Decorating the house with Indoor Plants)
ইনডোর প্ল্যান্ট আসলে কি?
বিশুদ্ধ বাতাস
গৃহসজ্জায় নতুনত্বের ছোঁয়া
মানসিক প্রশান্তি
অর্থের অপচয় রোধ
কিছু জনপ্রিয় ইনডোর প্ল্যান্টের নামসমূহ
ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে ঘর সাজানো-শেষ কথা
ইনডোর প্ল্যান্ট আসলে কি?
মূলত যে সমস্ত গাছ ঘরে রাখলে তা বৃদ্ধিতে কোনরকম বাধাপ্রাপ্ত হয় না, সাধারণত সেগুলোকে ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আরও বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে, একটি গাছ লাগানোর পর তাতে পানি, রৌদ্র, সার, পরিচর্যা ইত্যাদি অনেক ধরনের শ্রম দিতে হয়। কিন্তু ইনডোর প্ল্যান্টের সুবিধা হলো এর তেমন রৌদ্রের দরকার হয়না, যখন তখন সার, মাটি এমনকি পানিও দিতে হয়না এবং সর্বোপরি ঘটা করে পরিচর্যাও করতে হয় না।
আরও পড়ুন: সারা বছর কোন কোন ফুল ফোটে - বারোমাসি ফুলের নামের তালিকা - কিভাবে টবে ফুল গাছ লাগানো যায়
যাইহোক ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে ঘর সাজানো এর ক্ষেত্রে কি কি সুবিধা বা ভালো দিক রয়েছে তা নিম্নের বিষয়গুলি থেকে জানা যাবে।
বিশুদ্ধ বাতাস:
আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা) গবেষণা করে দেখেছেন যে, ইনডোর প্ল্যান্ট বাস্তবায়নের ফলে সেখান হতে বেশ কিছু, যেমন-কার্বন মনোক্সাইড, ফর্মালডিহাইড, অ্যামোনিয়া, কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর ক্ষতিকারক পদার্থগুলি নিঃসৃত হয়ে থাকে। মূলত এই ক্ষতিকারক পদার্থের কারণে সাধারণত মাথাব্যথা, ক্লান্তি, অসুস্থতা এবং অ্যালার্জিজনিত সমস্যাগুলো তৈরি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনার ঘরের মধ্যে কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট যুক্ত থাকলে তা বাতাসের গুণমান বাড়াতে এবং বাতাস আরও পরিস্কার করতে সহায়তা করে থাকে।
গৃহসজ্জায় নতুনত্বের ছোঁয়া:
ঘরের একঘেয়েমি দূর করতে ইনডোর প্ল্যান্টের জুড়ি মেলা ভার। কারণ ঘরের অব্যবহৃত ফাঁকা জায়গাগুলিতে যদি কোন ইনডোর প্ল্যান্ট লাগানো যায় তাহলে তা ঘরের সৌন্দর্যই বদলে যাবে। এক্ষেত্রে ঘরের কোণা বা বুক সেলফ বা ড্রেসিং টেবিলের কোন স্থানে ছোট ধরণের ক্যাকটাস বা একটি ছোট জাতীয় পামগাছ টব রাখতে পারেন। এতে করে ঘরের সৌন্দর্য যেমন বদলে যাবে, তেমনি পরিবেশেও আনবে বৈচিত্রতা।
মানসিক প্রশান্তি:
ইনডোর প্ল্যান্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো তা মানসিক চাপ কমায়। অর্থাৎ চারপাশে সবুজ গাছপালা থাকায় তা দেহ ও মনে প্রশান্তির খোরাক দেয়। কারণ সবুজ রঙ সাধারণত দেহ ও মনে এবং সর্বোপরি চোখের জন্য অনেক উপকারি। এছাড়াও মনের চাপ কমানোসহ রক্তচাপও কমাতে সাহায্য করে থাকে।
অর্থের অপচয় রোধ:
অর্থাৎ গাছপালা অনেক সময় ছোট খাট অর্থ বাঁচাতে পারে। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, চুলের যত্নের জন্য ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা, মশা-মাছি তাড়ানোর জন্য সিট্রোনেলা আবার এয়ার ফ্রেশনারের বদলে ল্যাভেন্ডার লাগাতে পারেন। এসব উদ্ভিদ সৌন্দর্য বর্ধনও করে আবার আমাদের উপকারও করে থাকে।
কিছু জনপ্রিয় ইনডোর প্ল্যান্টের নামসমূহ:
স্পাইডার প্ল্যান্ট : ইনডোর প্ল্যান্টের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই স্পাইডার প্ল্যান্ট। নাসার তথ্যানুযায়ী সাধারণত এই গাছটি ঘরের ৯০ শতাংশ দূষিত বাতাস বিশুদ্ধ করে থাকে। এই গাছটি আর্দ্রতা পচ্ছন্দ করে, তাই স্পাইডার প্ল্যান্ট কখনই খুব শুষ্ক বা ভেজা স্থানে রাখবেন না। উজ্জ্বল থেকে মাঝারি পরোক্ষ সূর্যের আলোয় রাখতে হয়, তবে কিন্তু খুব বেশি গরম পছন্দ করে এই গাছ।
মানি প্ল্যান্ট : মানি প্ল্যান্ট হচ্ছে বাতাস বিশুদ্ধকারক গাছ। আবার একে লাকি প্ল্যান্ট হিসেবে অনেকেই জানে। এই মানি প্ল্যান্টের বেশ কয়েকটি জাত রয়েছে, যেমন-স্নো হোয়াইট, পেরু, মার্বেল কুইন, নিয়ন ইত্যাদি। এটি আপনার ঘরের টেবিল, ব্যালকনিতে বা ঝুলন্ত অবস্থায়ও রাখতে পারেন।
আরও পড়ুন: বর্ষাকালে কি কি ফুল ফুটে থাকে
স্নেক প্ল্যান্ট : এই উদ্ভিদটি সাধারণত বেডরুমের জন্য সিলেক্ট করতে পারেন। কারণ এটি ঘরের ভিতরের বাতাস পরিশুদ্ধ করে, অর্থাত ট্রাইক্লোরোইথিলিন, ফর্মালিডিহাইড, টলুইন, বেনজিন ও জাইলিনসহ সমস্ত ধরণের অপসারণে পটু এই গাছটি।
অ্যালোভেরা : সাধারণত অ্যালোভেরা ত্বকে মসৃণ ও ময়েশ্চারাইজ করতে সর্বোপরি রোদে পোড়া দাগ দূরসহ নানা বিষয়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে এই উদ্ভিদটির জন্য প্রয়োজন হয় উজ্জ্বল আলোর, তাই আপনার জানালার পাশে অথবা এমন কোন স্থানে রাখুন যেখানে সূর্যের আলো পায়।
লাকি ব্যাম্বো : সাধারণত এই উদ্ভিদটি ঘরের বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখতে সহায়তা করে থাকে। বাংলা ভাষায় একে চাইনিজ বাঁশ বা লাকি ব্যাম্বু বলে আখ্যায়িত করা হয়। বর্তমানে এর অনেকগড়ুলো প্রজাতি রয়েছে। তবে এর মধ্যে চায়নিজ ব্যাম্বুই আকারে ছোট হয়ে থাকে। এই গাছগুলো খুব সহজেই কম পরিশ্রমে এবং পরিচর্যাতে ঘরে রাখতে পারেন
গোল্ডেন পেথোস : এই গাছটি বাতাস থেকে ট্রাইক্লোরোমিথাইলের মতো রাসায়নিক পদার্থ অপসারণ করে সক্ষম। সাধারণত আঠা, পেইন্ট বা ডিটারজেন্টে পাওয়া যায় এই ধরণের রাসায়নিক। এই গাছের পরিচর্যা করা খুবই সহজ। যদি এই গাছ উজ্জ্বল এবং পরোখ্ষ সূর্যারোক পছন্দ করে, তথাপি মাঝারি বা কম আলোর মতো পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে।
রাবার প্ল্যান্ট : এই গাছটি বাতাস থেকে সমস্ত খারাপ পদার্থ শোষণ করে, তাই এই গাছের পাতা থেকে ধুলো মুছতে ভুলবেন না। যদিও এই গাছ উজ্জ্বল আলো পছন্দ করে, কিন্তু সরাসরি রোদ্রে রাখা যাবেনা। সম্ভব হলে জানালার পাশে রাখতে পারেন।
অ্যারিকা পাম : সাধারণত বসার ঘরে একটি অ্যারিকা প্যামের টব রাখতে পারেন। এটি ঘর ঠান্ডা রাখে আবার দেখতে সুন্দর লাগে।
মনষ্টেরা : বর্তমানে সবথেকে জনপ্রিয় এবং ইন্টেরিওর ডিজাইনারদের প্রথম পছন্দ এই মনষ্টেরা গাছটি। অত্যন্ত সুন্দর প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে এর বড় পাতা। তবে এই গাছ বড় হতে কিছুটা সময় লাগে।
ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে ঘর সাজানো-শেষ কথা:
আসলে ঘরের মধ্যে অথবা নিজের থাকার স্থানগুলো একটি নান্দনিক প্রকৃতির ছোঁয়ায় পরিবেশ ভারসাম্য বজায় রাখার নিমিত্তেই মূলত এই ইনডোর প্ল্যান্ট। অর্থাৎ ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে ঘর সাজানো এর ক্ষেত্রে আপনি উপরোক্ত গাছগুলি বেছে নিতে পারেন। এ ছাড়াও যেমন-অ্যাগলোনেমা, ফিলোডেনড্রেন, পথস ইত্যাদির টবও রাখতে পারেন।
আরও পড়ুন: খেজুর না ডার্ক চকলেট, কোনটি খাওয়া বেশি উপকারী?
মোট কথা আপনার প্রয়োজন, ইচ্ছা এবং সর্বোপরি প্রকৃতি প্রদত্ত বিশুদ্ধ বাতাস অথবা নিজে ও পরিবারের সকলকে সুস্থ্য রাখতে বাড়ির বিভিন্ন ফাঁকা স্থানগুলোতে করতে পারেন ইনডোর প্ল্যান্ট। যাইহোক আজকের ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে ঘর সাজানো আলোচনাটি আপনার যদি ভালো লেগে থাকে, তাহলে অন্যদের শেয়ার করতে পারেন এবং কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকলে তাও কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। পরিশেষে ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে ঘর সাজানো বিষয়ে দীর্ঘক্ষণ আপনার সম্পৃক্ততায় অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url