চিকুনগুনিয়ার ব্যথা কিভাবে কমানো যায়

চিকুনগুনিয়ার ব্যথা কিভাবে কমানো যায় তা জানতে নিচের লেখাটি পড়তে হবে।
চিকুনগুনিয়ার-ব্যথা-কিভাবে-কমানো-যায়
মুলত চিকুনগুনিয়া রোগের প্রধান লক্ষণ হলো জ্বর, কিন্তু তার থেকেও আরও কষ্টদায়ক বিষয় হলো বিভিন্ন জয়েন্টের গিঁটে ব্যথা এবং মাংসপেশির তীব্র ব্যথা।

পেজ সূচিপত্র: চিকুনগুনিয়ার ব্যথা কিভাবে কমানো যায় (How to reduce the pain of Chikungunya)
চিকুনগুনিয়ার ব্যথা কমানোর কৌশলসমূহ
ঘরোয়া উপায়ে ব্যথা কমানো
চিকুনগুনিয়ার লক্ষণসমূহ
চিকুনগুনিয়ার ব্যথা কিভাবে কমানো যায়-পরিশেষে

চিকুনগুনিয়ার ব্যথা কমানোর কৌশলসমূহ:

আসলে চিকুনগুনিয়া রোগের জন্য নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টি-ভাইরাল ঔষধ নেই, আর এই রোগের চিকিৎসা হচ্ছে লক্ষণভিত্তিক। অর্থাৎ চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে কি কি উপসর্গ দেখা দিচ্ছে মূলত তারই উপর নির্ভর করে এর চিকিৎসা পদ্ধতি বা ঔষধ। তবে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, চিকুনগুনিয়া রোগের ফলে যে ব্যথা সৃষ্ট হয়, তা কিন্তু সাধারণ ব্যথার ঔষুধে কমে না। যদিও এই সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত ক্লিনিক্যাল কোন ট্রায়াল পাওয়া যায় না, প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ প্রদাহবিরোধ হিসেবে কাজ করে। আর অন্যান্য ঔষুধের মধ্যে যেমন-ন্যাপ্রোক্সেন বা ডাইক্লোফেনাকের মতোই বা তার চেয়ে ভালো কাজ করে। তবে এই সময়টাতে প্রচুর পরিমাণে তরল খেতে হয়, যেমন-ডাবের পানি বা ফলের জুস ইত্যাদি, যা মাংসপেশির সংকোচন কমাতে সহায়তা করে থাকে।

আরও পড়ুন: সজনে পাতার ২০টি উপকারিতা ও অপকারিতা, ভিটামিন এবং সতর্কতাগুলি কি কি?

বলাবাহুল্য যে, যাদের আগে থেকেই বাত, কোমর বা ঘাড়ের ব্যথার সমস্যা আছে, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হলে সেইসব ব্যথা বহুগুণে বেড়ে যেতে পারে। তাই চিকুনগুনিয়া হয়েছে কি না তা নিশ্চয়করণে চিকুনগুনিয়া অ্যান্টিজেন, আইজিএম এবং আইজিজি অ্যান্টিবডির রক্ত পরীক্ষা করে তা নিশ্চিত হতে হয়।

সাধারণত চিকুনগুনিয়ার ব্যথায় ফিজিওতেরাপি খুবই ধীর গতিতে কাজ করে থাকে। এসব ক্ষেত্রে ইলেকট্রোথেরাপির মাধ্যমে ব্যথা নিরাময় করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখবেন, যখন চিকুনগুনিয়ার ইনফেকশন অ্যাক্টিভ থাকবে, তখন কিন্তু ম্যানিপুলেশন ও হাই ইনটেনসিটি এক্সারসাইজ করা মোটেও উচিত নয়। আসলে এই রোগে যেহেতু শরীরে উচ্চমাত্রার প্রদাহ বা ব্যথা থাকে, সেক্ষেত্রে যদি ম্যানিপুলেশন এবং এক্সারসাইজ শরীরের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে সাধারণত এ ধরণের ক্ষেত্রে রোগীর সহ্য ক্ষমতা অনুযায়ী বরফের সেক দিতে পারেন। কোন কোন ক্ষেত্রে আবার হালকা গরম সেকও কাজ করে থাকে।

ঘরোয়া উপায়ে ব্যথা কমানো:

চিকুনগুনিয়ার ব্যথা কিভাবে কমানো যায় বলতে তা ঘরোয়া উপায়েও কমানো যেতে পারে। যেমন-
ম্যাসাজ করে: অর্থাৎ সরিষার বা যে কোন তেল হালকা গরম করে আক্রান্ত স্থানে ম্যাসাজ করুন। তবে ম্যাসাজের সময় আক্রান্ত স্থানগুলোতে আস্তে আস্তে চাপ দিতে পারেন। কয়েক মিনিট এভাবে ম্যাসাজ করুন। আর ব্যথা থাকরে অবশ্যই এটি কয়েকবার করতে পারেন।

আদা তেল বা চা: অর্থাৎ আদার মধ্যে রয়েছে প্রদাহরোধী এবং ব্যথারোধী উপাদানসমূহ। তাই এ ধরনের রোগে আপনি দিনে তিন বেলায় আদা চা পান করতে পারেন। এ ছাড়াও আদার তেল দিয়ে ব্যথার স্থানগুলোতে ম্যাসাজ করতে পারেন।

হলুদ ব্যবহার: সাধারণত আমরা জানি যে, হলুদের মধ্যে রয়েছে কারকিউমিন। অর্থাৎ এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও প্রদাহবিরোধী উপাদানসমূহ। সুতরাং এক্ষেত্রে আধা চা-চামজ হলুদ এক গ্লাস গরম দুধে ভালো করে মিশিয়ে দিনে দুই বার খেতে পারেন।

হালকা ফিজিওথেরাপি: এই সময়ে পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে এবং মাঝে মধ্যে হাত ও পা ঘোরানো এবং হাঁটু ভাজ করার মতো হালকা ব্যায়াম ব্যথা কমাতে খুবই সহায়তা করে থাকে।

বিশ্রাম: অর্থাৎ যখন বেশি ব্যথা হয় বা বেড়ে যাবে, তখন বিশ্রাম নেওয়াটা খুবই জরুরী। কারণ অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন: কানে যে সমস্যাগুলো অল্প বয়সে হতে পারে - সমাধান লুকিয়ে আছে এইসব খাবারে

খাদ্যাভাস সমূহ: চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে তরল খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, যেমন-ডাবের পানি বা ফলে জুস ইত্যাদি।

মশারি ব্যবহার: অর্থাৎ মশা থেকে সুরক্ষিত থাকতে হলে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে।

চিকুনগুনিয়ার লক্ষণসমূহ:

চিকুনগুনিয়ার ব্যথা কিভাবে কমানো যায় এর আলোচনায় অবশ্যই এই রোগের লক্ষণগুলো জানা অতি অত্যাবশ্যক। যেমন-

মাথা ব্যথা হয়ে থাকে: অর্থাৎ চিকুনগুনিয়া হলে এর সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে মাথাব্যথা একটি অন্যতম লক্ষণ। এটি তীব্র ও ঘন ঘন মাথাব্যথা হয়ে থাকে, যা কয়েকদিন ধরে চলতে থাকে।

জয়েন্টে এবং শরীরে ব্যথা: সাধারণত চিকুনগুনিয়া রোগ হলে শরীরের জয়েন্টগুলো ফুলে যায় এবং তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে থাকে। এ ছাড়াও ব্যথা ঘন ঘন হয় এবং যতো দিন যায় ততই ব্যথা বাড়তে থাকে।

শরীরের ফুসকুড়ির উপস্থিতি: অর্থাৎ এই রোগে আক্রান্ত হলে তার প্রাথমিক লক্ষণের মধ্যে সারা শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দিয়ে থাকে এবং সেটা বার বার ফিরে আসতে থাকে।

রক্তপাতে উচ্চ ঝুঁকি: অর্থাৎ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তপাতের উচ্চ ঝুঁকি থাকে। অর্থাৎ হঠাৎ করেই যদি উচ্চ রক্তচাপের বৃদ্ধি ঘটে এবং এটা যদি ঘন ঘন হতে থাকে, তাহলে তা চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

জ্বরের লক্ষণ: চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সাধারণত ১০০ থেকে ১০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত জ্বর থাকে। অর্থাৎ প্রচন্ড জ্বরের ফলে নানাবিধ সমস্যা সহ শরীরে অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়।

বমি বমি ভাব: অর্থাৎ চিকুনগুনিয়া রোগ হলে বমি বমি ভাব বা বমি হয়ে থাকে। এ ছাড়াও ঠান্ডা লাগে অর্থাৎ এ ধরণের উপসর্গ দেখা দিলে তা চিকুনগুনিয়ার উপসর্গ হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে।

ফুসকুড়ির উপস্থিতি: অর্থাৎ চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ হিসেবে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফুসকুড়ি বিশেষ করে মুখে-হাতে বিভিন্ন ফুসকুড়ির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

চিকুনগুনিয়ার ব্যথা কিভাবে কমানো যায়-পরিশেষে:

মূলত চিকুনগুনিয়া জ্বর হল একটি ভাইরালজনিত রোগ। যা সংক্রামিত মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। আজকের আলোচনায় চিকুনগুনিয়ার ব্যথা কিভাবে কমানো যায় হিসেবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী অর্থাৎ প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে ভুগতে হয়। আর এই অসুখটি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো মশারি না টাঙিয়ে ঘুমানো। সাধারণত চিকুনগুনিয়া বছরের যে কোন মাসেই ছড়িয়ে পড়তে পারে, তবে বর্ষাকাল এবং পরবর্তী সময়ে এটার প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।

আরও পড়ুন: কালীপূজা ২০২৫: কবে কালীপূজো, দীপাবলী ও ভাইফোঁটা

তবে বেশির ভাগ সমস্যা বা যন্ত্রণার কারণ হয় চিকুনগুনিয়ার ব্যথা কিভাবে কমানো যায় এর জন্য। কারণ চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে সবথেকে জটিল এবং কষ্টদায়ক সমস্যা হলো ব্যথা। অর্থাৎ শরীরের বিভিন্ন গিঁটে ব্যথা, মাংসপেশীর মধ্যে ব্যথা, চোখ-মুখ ফুলে যাওয়া, ফুসকুড়ি ওঠা ইত্যাদি নানান ধরণের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। আরেকটি মজার বিষয় হলো চিকুনগুনিয়া কিন্তু শহরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষদের হয়ে থাকে। তাই আজকের চিকুনগুনিয়ার ব্যথা কিভাবে কমানো যায় বিষয়ক আর্টিকেলটি যদি আপনাদের নিকট ভালো লাগে তাহলে তা অবশ্যই অন্যদেরও শেয়ার করবেন। সাধারণত যাদের চিকুনগুনিয়া হয়েছে, তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্তত এক মাস থেকে দেড় মাস পর্যন্ত ভুক্তভোগী হয়েছে এই অসুখে। সুতরাং চিকুনগুনিয়ার ব্যথা কিভাবে কমানো যায় বিষয়ে আপনার যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে তাহলে তা অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আসলে যে কোন জিনিসের বিষয়ে মূল সমস্যা হলো আমাদের সচেতনতার অভাব। তাই যতটুকু সম্ভব সচেতন থাকতে হবে নিজের জন্য, অপরের জন্য। পরিশেষে উপরোক্ত চিকুনগুনিয়ার ব্যথা কিভাবে কমানো যায় বিষয়ক আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ অংশগ্রহণ ও সম্পৃক্ততার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url