চিকুনগুনিয়ার ব্যথা ঘরোয়া উপায়ে কমানোর কৌশল

চিকুনগুনিয়ার ব্যথা ঘরোয়া উপায়ে কমানোর কৌশল, চিকুনগুনিয়া হলে যে ঔষধগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে, চিকুনগুনিয়ার লক্ষণসমূহ এবং চিকুনগুনিয়ার ব্যথা কতদিন থাকে এসব জানতে নিচের লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
চিকুনগুনিয়ার-ব্যথা-ঘরোয়া-উপায়ে-কমানোর-কৌশল
মুলত চিকুনগুনিয়া রোগের প্রধান লক্ষণ হলো জ্বর, কিন্তু তার থেকেও আরও কষ্টদায়ক বিষয় হলো বিভিন্ন জয়েন্টের গিঁটে ব্যথা এবং মাংসপেশির তীব্র ব্যথা।

পেজ সূচিপত্রঃ চিকুনগুনিয়ার ব্যথা ঘরোয়া উপায়ে কমানোর কৌশল

চিকুনগুনিয়ার ব্যথা ঘরোয়া উপায়ে কমানোর কৌশল
চিকুনগুনিয়া হলে যে ঔষধগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে
চিকুনগুনিয়ার লক্ষণসমূহ
চিকুনগুনিয়ার ব্যথা কতদিন থাকে
পরিশেষে

চিকুনগুনিয়ার ব্যথা ঘরোয়া উপায়ে কমানোর কৌশলঃ

ম্যাসাজ করেঃ অর্থাৎ সরিষার বা যে কোন তেল হালকা গরম করে আক্রান্ত স্থানে ম্যাসাজ করুন। তবে ম্যাসাজের সময় আক্রান্ত স্থানগুলোতে আস্তে আস্তে চাপ দিতে পারেন। কয়েক মিনিট এভাবে ম্যাসাজ করুন। আর ব্যথা থাকরে অবশ্যই এটি কয়েকবার করতে পারেন।

আদা তেল বা চাঃ অর্থাৎ আদার মধ্যে রয়েছে প্রদাহরোধী এবং ব্যথারোধী উপাদানসমূহ। তাই এ ধরনের রোগে আপনি দিনে তিন বেলায় আদা চা পান করতে পারেন। এ ছাড়াও আদার তেল দিয়ে ব্যথার স্থানগুলোতে ম্যাসাজ করতে পারেন।

হলুদ ব্যবহারঃ সাধারণত আমরা জানি যে, হলুদের মধ্যে রয়েছে কারকিউমিন। অর্থাৎ এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও প্রদাহবিরোধী উপাদানসমূহ। সুতরাং এক্ষেত্রে আধা চা-চামজ হলুদ এক গ্লাস গরম দুধে ভালো করে মিশিয়ে দিনে দুই বার খেতে পারেন।

হালকা ফিজিওথেরাপিঃ এই সময়ে পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে এবং মাঝে মধ্যে হাত ও পা ঘোরানো এবং হাঁটু ভাজ করার মতো হালকা ব্যায়াম করতে হবে, যা ব্যথা কমাতে খুবই সহায়ত হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই সময়ে শরীরে প্রচন্ড ব্যথা থাকে, তারপরেও হালকা ফিজিওথেরাপির প্রয়োগ করতে পারলে তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হওয়ার সম্ভাবনা জেগে ওঠে।

বিশ্রামঃ চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই বিশ্রামে থাকাটাই জরুরী। অর্থাৎ যখন বেশি ব্যথা হবে বা বেড়ে যাবে, তখন বিশ্রাম নেওয়াটা খুবই জরুরী। কারণ এ সময়ে অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে হিতে বিপরীত হয়ে থাকে মানে  ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ কানে যে সমস্যাগুলো অল্প বয়সে হতে পারে - সমাধান লুকিয়ে আছে এইসব খাবারে

খাদ্যাভাস সমূহঃ চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই খাদ্যাভাসেও পরিবর্তন আনতে হবে। অর্থাৎ এ সময়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, যেমন-ডাবের পানি বা ফলের জুস ইত্যাদি।

মশারি ব্যবহারঃ সাধারণত ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া সৃষ্ট রোগগুলি অসতর্কতার ফলে অনেকাংশে হয়ে থাকে। তাই ঘুমানোর আগে অবশ্যই মশারি টাঙানো উচিত। কেননা মশা থেকে সুরক্ষিত থাকতে হলে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে।

চিকুনগুনিয়া হলে যে ঔষধগুলি ব্যবহার করা যেতে পারেঃ

চিকুনগুনিয়ার ব্যথা ঘরোয়া উপায়ে কমানোর কৌশল বিষয়ক আলোচনায় মূলত চিকুনগুনিয়া রোগের জন্য নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টি-ভাইরাল ঔষধ নেই, আর এই রোগের চিকিৎসা হচ্ছে লক্ষণভিত্তিক। অর্থাৎ চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে কি কি উপসর্গ দেখা দিচ্ছে মূলত তারই উপর নির্ভর করে এর চিকিৎসা পদ্ধতি বা ঔষধ। তবে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, চিকুনগুনিয়া রোগের ফলে যে ব্যথা সৃষ্ট হয়, তা কিন্তু সাধারণ ব্যথার ঔষুধে কমে না। যদিও এই সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত ক্লিনিক্যাল কোন ট্রায়াল পাওয়া যায় না, প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ প্রদাহবিরোধ হিসেবে কাজ করে। আর অন্যান্য ঔষুধের মধ্যে যেমন-ন্যাপ্রোক্সেন বা ডাইক্লোফেনাকের মতোই বা তার চেয়ে ভালো কাজ করে। তবে এই সময়টাতে প্রচুর পরিমাণে তরল খেতে হয়, যেমন-ডাবের পানি বা ফলের জুস ইত্যাদি, যা মাংসপেশির সংকোচন কমাতে সহায়তা করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ সজনে পাতার ২০টি উপকারিতা ও অপকারিতা, ভিটামিন এবং সতর্কতাগুলি কি কি?

বলাবাহুল্য যে, যাদের আগে থেকেই বাত, কোমর বা ঘাড়ের ব্যথার সমস্যা আছে, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হলে সেইসব ব্যথা বহুগুণে বেড়ে যেতে পারে। তাই চিকুনগুনিয়া হয়েছে কি না তা নিশ্চয়করণে চিকুনগুনিয়া অ্যান্টিজেন, আইজিএম এবং আইজিজি অ্যান্টিবডির রক্ত পরীক্ষা করে তা নিশ্চিত হতে হয়।

সাধারণত চিকুনগুনিয়ার ব্যথায় ফিজিওথেরাপি খুবই ধীর গতিতে কাজ করে থাকে। এসব ক্ষেত্রে ইলেকট্রোথেরাপির মাধ্যমে ব্যথা নিরাময় করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখবেন, যখন চিকুনগুনিয়ার ইনফেকশন অ্যাক্টিভ থাকবে, তখন কিন্তু ম্যানিপুলেশন ও হাই ইনটেনসিটি এক্সারসাইজ করা মোটেও উচিত নয়। আসলে এই রোগে যেহেতু শরীরে উচ্চমাত্রার প্রদাহ বা ব্যথা থাকে, সেক্ষেত্রে যদি ম্যানিপুলেশন এবং এক্সারসাইজ শরীরের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে সাধারণত এ ধরণের ক্ষেত্রে রোগীর সহ্য ক্ষমতা অনুযায়ী বরফের সেক দিতে পারেন। কোন কোন ক্ষেত্রে আবার হালকা গরম সেকও কাজ করে থাকে।

চিকুনগুনিয়ার লক্ষণসমূহঃ

মাথা ব্যথা হয়ে থাকেঃ আসলে চিকুনগুনিয়া হলে এর সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে মাথাব্যথা একটি অন্যতম লক্ষণ। অর্থাৎ চিকুনগুনিয়া হলে তার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তীব্র ও ঘন ঘন মাথাব্যথা হয়ে থাকে এবং যা কয়েকদিন ধরে চলতে থাকে।

জয়েন্টে এবং শরীরে ব্যথাঃ চিকুনগুনিয়া রোগের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো শরীরের প্রতিটি জয়েন্টগুলো ফুলে যায় এবং তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে থাকে। তবে কারও যদি কোন পূর্বজনিত ব্যথা থাকে বিশেষ করে হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার মত কোন ঘটনা থাকে, তাহলে চিকুনগুনিয়া হওয়ার সেইস্থানগুলি

শরীরের ফুসকুড়ির উপস্থিতিঃ অর্থাৎ এই রোগে আক্রান্ত হলে তার প্রাথমিক লক্ষণের মধ্যে সারা শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দিয়ে থাকে এবং সেটা বার বার ফিরে আসতে থাকে। আসলে শরীরে ফুসকুড়ি হলে তার ব্যথা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

রক্তপাতে উচ্চ ঝুঁকিঃ অর্থাৎ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তপাতের উচ্চ ঝুঁকি থাকে। অর্থাৎ হঠাৎ করেই যদি উচ্চ রক্তচাপের বৃদ্ধি ঘটে এবং এটা যদি ঘন ঘন হতে থাকে, তাহলে তা চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

জ্বরের লক্ষণঃ চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাধারণত ১০০ থেকে ১০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত জ্বর থাকে। অর্থাৎ প্রচন্ড জ্বরের ফলে নানাবিধ সমস্যা সহ শরীরে অস্থিরতা বৃদ্ধি পায় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি  অত্যন্ত কষ্টদায়ক অবস্থার মধ্যে ভুগতে হয়ে থাকে।

বমি বমি ভাবঃ সাধারণত চিকুনগুনিয়া রোগ হলে বমি বমি ভাব বা বমি হয়ে থাকে। এ ছাড়াও ঠান্ডা লাগে অর্থাৎ এ ধরণের উপসর্গ দেখা দিলে তা চিকুনগুনিয়ার উপসর্গ হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে। কারণ চিকুনগুনিয়া হলে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে বমি বমি ভাব বা বমি হয়ে থাকে।

চিকুনগুনিয়ার ব্যথা কতদিন থাকেঃ

সাধারণত চিকুনগুনিয়ার ব্যথা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে আবার অনেক সময় এটি কয়েক মাস বা তারও বেশি সময় ধরে চলতে পারে। মোট কথা রোগের তীব্রতার উপর নির্ভর করে যে এটি কতদিন পর্যন্ত চলমান থাকবে। তবে চিকুনগুনিয়া রোগের তীব্রতা থাকে ৭-১০ দিন, কিন্তু এর প্রভাবে জ্বর ও বিভিন্ন জয়েন্টে যে ব্যথা এবং শরীরে ক্লান্তি আসে, তা পরবর্তীতে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। সবথেকে বড় বিষয় হলো বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের আগে থেকেই শরীরে অন্য কোন রোগ আছে, তাদের কিন্তু এই ব্যথা বেশিদিন পর্যন্ত খাকতে পারে। সাধারণত চিকুনগুনিয়া হলে তিনটি পর্যায়ে এই রোগের কষ্ট বা যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। অর্থাৎ ১) প্রথম ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত এই রোগের তীব্র পর্যায় ধরা হয় এবং এ সময় শরীরে প্রচণ্ড জ্বর ও ব্যথা শুরু হয়। ২) দ্বিতীয় ধাপে যদিও এর জ্বর সেরে যায়, কিন্তু শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা কয়েক সপ্তাহ, মাস বা বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। এবং ৩) চিকুনগুনিয়া হওয়ার ফলে শরীরে এতই পরিমাণে ব্যথার তীব্রতা বাড়ে যে স্বাভাবিক হাঁটাচলা বা হাত দিয়ে কিছু ধরাও অসম্ভব হয়ে পড়ে, যেটি বেশিরভাগ আক্রান্ত রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়ে। আর শুধুমাত্র এই কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাভাবিক হয়ে ওটা দেরি হয়।

চিকুনগুনিয়ার ব্যথা ঘরোয়া উপায়ে কমানোর কৌশল-পরিশেষেঃ

মূলত চিকুনগুনিয়া জ্বর হল একটি ভাইরালজনিত রোগ। যা সংক্রামিত মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। আজকের আলোচনায় চিকুনগুনিয়ার ব্যথা ঘরোয়া উপায়ে কমানোর কৌশল হিসেবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী অর্থাৎ প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে ভুগতে হয়। আর এই অসুখটি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো মশারি না টাঙিয়ে ঘুমানো। সাধারণত চিকুনগুনিয়া বছরের যে কোন মাসেই ছড়িয়ে পড়তে পারে, তবে বর্ষাকাল এবং পরবর্তী সময়ে এটার প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।

আরও পড়ুনঃ শীতে সুস্থ্য থাকতে হলে কি করবেন, কি করবেন না

চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে সবথেকে জটিল এবং কষ্টদায়ক সমস্যা হলো ব্যথা। অর্থাৎ শরীরের বিভিন্ন গিঁটে ব্যথা, মাংসপেশীর মধ্যে ব্যথা, চোখ-মুখ ফুলে যাওয়া, ফুসকুড়ি ওঠা ইত্যাদি নানান ধরণের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। আরেকটি মজার বিষয় হলো চিকুনগুনিয়া কিন্তু শহরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষদের হয়ে থাকে। তাই আজকের চিকুনগুনিয়ার ব্যথা ঘরোয়া উপায়ে কমানোর কৌশল বিষয়ক আর্টিকেলটি যদি আপনাদের নিকট ভালো লাগে তাহলে তা অবশ্যই অন্যদেরও শেয়ার করবেন। সাধারণত যাদের চিকুনগুনিয়া হয়েছে, তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্তত এক মাস থেকে দেড় মাস পর্যন্ত ভুক্তভোগী হয়েছে এই অসুখে। সুতরাং চিকুনগুনিয়ার ব্যথা ঘরোয়া উপায়ে কমানোর কৌশল বিষয়ে আপনার যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে তাহলে তা অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আসলে যে কোন জিনিসের বিষয়ে মূল সমস্যা হলো আমাদের সচেতনতার অভাব। তাই যতটুকু সম্ভব সচেতন থাকতে হবে নিজের জন্য, অপরের জন্য। পরিশেষে উপরোক্ত চিকুনগুনিয়ার ব্যথা ঘরোয়া উপায়ে কমানোর কৌশলবিষয়ক আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ অংশগ্রহণ ও সম্পৃক্ততার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।