আসন্ন এই শীতে কুসুম গরম পানি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী, বিভিন্ন শারীরিক সমস্যাদি, শীতকালে কতটুকু পানি ও কোন ফল খাওয়া যেতে পারে, পানি কিভাবে গরম করা যায় ইত্যাদি বিষয়ে জানতে নিচের লেখাগুলো পড়তে হবে।
শীতে সব থেকে বড় সমস্যা হলো গোসল করা বা ঠান্ডা পানি পান করা। আবার যাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা আছে, তাদেরতো আরও বেশি সমস্যা।
পেজ কর্মসূচিঃ শীতে কুসুম গরম পানি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী
শীতে কুসুম গরম পানি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী
শীতকালে যে শারীরিক সমস্যাগুলি দেখা দিয়ে থাকে
শীতে কতটুকু পানি পান করা যেতে পারে
শীতের মধ্যে যে ফলগুলো খেতে পারেন
কীভাবে পানি গরম করা যেতে পারে
শীতে কুসুম গরম পানি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী - শেষ কথা
শীতে কুসুম গরম পানি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারীঃ
শীতকালে কুসুম গরম পানি শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সকালে খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি হজমে সহায়তা করে থাকে এবং সেইসাথে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সমস্যা আছে, তাদের উক্ত সমস্যা দূর করে।
বলাবাহুল্য যে, কুসুম গরম পানি শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজন কমাতে দারুণ কার্যকরী। এ ছাড়াও কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুলে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হতে পারে। আবার কুসুম গরম পানি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্যও করে থাকে।
আরও পড়ুনঃ দাঁড়িয়ে পানি পান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
ত্বক সুস্থ রাখতে গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। এর ফলে ত্বক থেকে মরা কোষ বেরিয়ে যায়। আবার দাড়ি সেভ করার পর যদি কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলা যায় অথবা পানিতে ভিজিয়েও যদি তা মুখে দেয়া যায়, তাহলে মুকের ব্রণ জাতীয় সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে থাকে।
বিশেষ করে ঠাণ্ডা প্রধান অঞ্চলগুলিতে অথবা যখন প্রচণ্ড শীত পড়ে, তখন পানির তৃষ্ণা মেটাতে কুসুম গরম পানি পান করা যেতে পারে। আর এতে করে ঠাণ্ডা লাগার ঝুঁকিও অনেকটা কমে যায়। সাধারণত যাদের ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা আছে, তাদের শীতের মধ্যে গরম পানি খাওয়া একপ্রকার বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়।
শীতকালে দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রেও বাড়তি সুবিধা দেয় কুসুম গরম পানি। সাধারণত যারা বেশি সময় ধরে পানির কাজ করে, যেমন-থালাবাসন, কাপড় চোপড় ধোয়া ইত্যাদি। এ ধরণের কাজ করার জন্য ঠাণ্ডা পানি ঘাটাঘাটি করলে সর্দি-কাশির ঝুঁকি বাড়ে। তাই এসব ক্ষেত্রে কুসুম গরম পানি অত্যন্ত উপকারী ও সহায়ক হয়ে থাকে।
সাধারণত গরম পানি শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, ক্লান্তি দূর করে এবং পেশিগুলোকে আরাম দেয়। স্ট্রেস কমাতে, বাতের ব্যথা এবং দ্রুত ঘুমাতেও গরম পানির জুড়ি নেই। তাই শীতের মধ্যে কুসম রগম পানি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
অনেকেই আছেন, যারা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করে থাকে এবং সঠিক সময়ে ঘুমাতে পারেন না। এই রকম সমস্যার ক্ষেত্রে নিয়মিত গরম পানি খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়াও যাদের মুখে ব্রণের সমস্যা আছে এবং কোনভাবেই তা সারাতে না পারলে নিয়মিত গরম বা উষ্ণ পানি পান করতে পারেন। অর্থাৎ এ ধরণের অভ্যস অন্ততপক্ষে ১ মাস প্রয়োগ করতে পারেন।
যারা সাধারণত চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে চাই অথবা মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত চমৎকার কাজ করে উষ্ণ বা কুসুম গরম পানি পান করা। সাধারণত বছরের অন্যান্য সময়ে ঋতুর পরিবর্তনজনিত আবহাওয়ার কারণে চুলের সৌন্দর্য বর্ধন করা যায়, তাদের এই শীতের মধ্যে নিয়মিত উষ্ণ বা কুসুম গরম পানি পান করা যেতে পারে।
শীতকালে যে শারীরিক সমস্যাগুলি দেখা দিয়ে থাকেঃ
সাধারণত যাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ভুক্তভোগী তাদের কিন্তু শীতকালে ভাইরাস সংক্রমণের কারণে ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশি ও জ্বর বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। কারণ শীতকালে অনেকের বিশেষ করে বয়োজৈষ্ঠ ব্যক্তিদের নানাবিধ সমস্যা উদিত হয়ে থাকে।
শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা থাকায় ত্বক শুষ্ক হয়ে ফেটে যেতে পারে। এ ছাড়া একজিমা কিংবা সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের সমস্যা খারাপ হতে পারে। অর্থাৎ যে সময় ত্বকের ব্যাপারে বিশেষ যত্ন নেয়াটা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত।
শীতকালে হাঁপানিজনিত সমস্যাগুলি বেশী আকারে বেড়ে যায়। সাধারণত যাদের শ্বাসকষ্ট হাঁপানি আছে, তাদের, তাদের শীতকালে অত্যন্ত সতর্ককার সাথে চলতে হয়। আর তা না হলে একটু যদি ঠাণ্ডা লাগে তাহলে তার ভোগান্তিগুলো একেবারে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
আরও পড়ুনঃ কাঁচা আদা খেলে কি হয়
যখন প্রচুর ঠান্ডা পড়ে তখন অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে শরীরের তাপমাত্রা কমে গিয়ে হাইপোথার্মিয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে পূর্ব সচেতনতা এবং এ রকম ধরণের অবস্থায় কী করণীয় তা যদি আগে থেকে জানা থাকে, তাহলে সমস্যার সমাধান করা খুবই সহজ হয়ে ওঠে।
তীব্র শীতের কারণে অনেকের রেনোডস ডিজিজ হতে পারে। এ রোগে হাতের আঙুল নীল হয়ে যায়। অর্থাৎ যখন দেখবেন শীত ক্রমাগত তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, তখন অবশ্যই পূর্ব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখতে হবে। তবে প্রচুর শীত পড়লে উক্ত কারণটি হতে পারে।
অতিরিক্ত শীতের কারণে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়াও যাদের ঠান্ডাজনিত রোগ আছে, তাদের ক্ষেত্রে শীতকালে বিশেষ সচেতনতা অবলম্বন করতে হয়। তবে অনেকেই খামখেয়ালী বশতঃ েএ ধরণের পদক্ষেপ নিয়ে থাকলে তা বিপদ বাড়াতে পারে।
শীতে কতটুকু পানি পান করা যেতে পারেঃ
সাধারণত শীতকালে মানুষ কম পানি খেয়ে থাকে। তবে কেউ কেউ ঘন ঘন ঠান্ডা পানি পান বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে একেবারেই পানি পান করা কমিয়ে দেয়। এতে করে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা সৃষ্ট হয়। তবে খুব কম করে হলেও দিনে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা উচিত। তবে ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী এই পরিমাণ কমবেশি হতে পারে।
সাধারণত শারীরিক পরিশ্রমের পর কুসুম গরম পানি পান করলে শক্তি পাওয়া যায়। সারাদিনে প্রতি আধা ঘন্টা পর পর এ পানি পান করলে শরীরে পানির ভারসাম্য ঠিক থাকবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। আসলে প্রতিটা মানুষেরই শরীরের জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ পানির দরকার হয়, কারণ পরিচিত পানি পান না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আরম্ভ করে মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা, কিডনি, লিভার, হজমের সমস্যা ইত্যাদি নানা ধরণের সমস্যা আবর্তিত হতে থাকে। তাই সাধারণত যাদের শীতকালে ঠান্ডা পানি পান করতে সমস্যা হয়, তাদের হালকা উষ্ণ বা কুসুম গরম পানি পান করতে হবে এবং সেটা শরীরের চাহিদার ভিত্তিতেই, না হলে একদিকে ঠিক করতে অন্যদিকে সমস্যা তৈরি হয়ে যাবে।
শীতের মধ্যে যে ফলগুলো খেতে পারেনঃ
শীতের মধ্যে ভিটামিন সি জাতীয় ফল, যেমন-কমলালেবু, লেবু, আমলকী, পেয়ারা ইত্যাদি ফলগুলো খাওয়া যেতে পারে, কারণ প্রচুর শীতের কারণে এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে পা ও ঠোঁট ফেটে যায় এবং সর্বোপরি ত্বকে নানা ধরণের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। তাই শীতে অবশ্যই ভিটামিন সি জাতীয় ফলগুলো খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে অবশ্যই নিয়মিত হাত ধুতে হবে।
কীভাবে পানি গরম করা যেতে পারেঃ
শীতে কুসুম গরম পানি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী বা তার জন্য পানি গরম করার ক্ষেত্রে বাজারে পাওয়া যায় গিজার, ইলেকট্রিক কেটলির মতো আধুনিক হোম অ্যাপ্লায়েন্স। যা দিয়ে সহজেই করতে পারেন গরম পানি। তবে গোসলের জন্য গরম পানি করতে গিজার হতে পারে আপনার আদর্শ সঙ্গী। আর চায়ের জন্য ইলেকট্রিক কেটলি। এসব ইলেকট্রিক পণ্য বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এবং ব্যবহারও বেশ সহজ। এ ছাড়াও সস্তায় প্লাষ্টিকের বিভিন্ন জগ পাওয়া যায়, আপনি ইচ্ছে করলেও তাতে পানি গরম করতে পারেন।
শীতে কুসুম গরম পানি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী - শেষ কথাঃ
আসলে অন্যান্য ঋতুর তুলনায় শীতকাল একটি ভিন্ন আমেজে আমাদের কাছে ধরা দেয়। আমরা জানি, শীতকালে সবথেকে বেশী ভুক্তভোগী হোন বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুরা। এ বাদেও পথচারী যারা ফুটপাতে বা অন্যের সাহায্যের উপর বেঁচে থাকে, তাদের জীবনও হয় দুর্বিষহ। শরীরকে একটু উষ্ণতা দেবার লক্ষ্যে তারা অনেক সময় আগুন জ্বালিয়ে তাপ নেয়ার চেষ্টা করে। যাইহোক, শীতকালে গোসল করতে অনেকেই গরম পানি ব্যবহার করে, কিন্তু কীভাবে তা ব্যবহার করা যাবে, কতটুকুই বা ব্যবহার করা যাবে, কীভাবে পানি গরম করা যেতে পারে, এর কোন ক্ষতিকারক দিক আছে কি না ইত্যাদি বিষয়গুলিই নিয়ে আজকের আমাদের মূল প্রতিপাদ্য। আশা করছি, এগুলো যদি জেনে থাকলে আপনাদের উপকারে আসবে।
আরও পড়ুনঃ কী কী কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে - পিঠের ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকার
শীতকালে অনেক অসুখের মধ্যে যেমন ঠান্ডা লাগা, কাশি, সর্দি-জ্বর, গলা ব্যথাসহ বিভিন্ন এলার্জিজনিত সমস্যার প্রকোপ দেখা দিয়ে থাকে। যার কারণে আমাদের অবশ্যই জানতে হবে, শীতে কুসুম গরম পানি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী। এ
ছাড়াও পরবর্তীতে অন্য কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে সেটাও কমেন্ট করে জানাতে
পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে
পারেন। এতোক্ষণ আমাদের সাথে থেকে অবশ্যই জেনে গিয়েছেন, শীতে কুসুম গরম পানি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী ইত্যাদি বিষয়ে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url