শীতকালে হাঁপানি রোগ বেড়ে যায় কেন - শীতে হাঁপানি রোগীরা কীভাবে সতর্ক থাকবেন
শীতকালে হাঁপানি রোগ বেড়ে যায় কেন এবং শীতে হাঁপানি রোগীরা কীভাবে সতর্ক থাকবেন, কি খাওয়া যেতে পারে, কখন ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা যাবে ইত্যাদি সমস্ত বিষয়গুলি আজকের আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন।
আসলে শীতকালে শুষ্ক বাতাসের কারণে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় এবং সেইসঙ্গে অ্যালার্জি সৃষ্টি হয়, শীতে ধোয়া এবং অন্যান্য দূষণের মাত্রাও অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।
পেজ সূচিপত্র: শীতকালে হাঁপানি রোগ বেড়ে যায় কেন - শীতে হাঁপানি রোগীরা কীভাবে সতর্ক থাকবেন
শীতকালে হাঁপানি রোগ বেড়ে যায় কেন
শীতে হাঁপানি রোগীরা কীভাবে সতর্ক থাকবেন
হাঁপানি রোগীদের সহায়ক খাদ্যসমূহ
কখন ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন
পরিশেষে যা বলা যায়
শীতকালে হাঁপানি রোগ বেড়ে যায় কেন ঃ
শীতকালে হাঁপানি রোগ বেড়ে যায় কেন তার কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে ঠান্ডা এবং শুষ্ক বাতাসের প্রভাব। মূলত এই শুষ্ক বাতাসের কারণেই শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। আর এর সাথে আছে আবার ধুলোবালি যা অ্যালার্জি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। মজার ব্যাপার হলো আমরা বাইরে গেলে মুখে মাস্ক পরে বেড়াতে পারি, কিন্তু ঘরের ভেতরে যে ধুলোবালি জমে থাকে তাতে আরও বেশি অ্যালার্জির সৃষ্টি হয়ে থাকে। কারণ আমরা তো ঘরে আর মাস্ক পরিনা। এ ছাড়াও সাধারণত শীতকালে ধোয়া এবং অন্যান্য দূষণের মাত্রাও ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পায় এবং এইসব কারণে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়ে থাকে। এ ছাড়াও শখে অথবা খামখেয়ালীভাবে ঠান্ডা যে কোন খাবার এবং পানীয়ও কিন্তু শ্বাসনালী সংকুচিত করতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এইসব কারণে শীতকালে সর্দি, কাশি বা ভাইরাস সংক্রমণগুলি হাঁপানির উপসর্গকে আরও গুরুত্বর করে তোলে। এক কথায় বলা যেতে পারে, অ্যাজমা বা হাঁপানী রোগীদের শীতের সময় অনেক সাবধানতা ও সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হবে।
শীতে হাঁপানি রোগীরা কীভাবে সতর্ক থাকবেন ঃ
শীতে হাঁপানি রোগীরা কীভাবে সতর্ক থাকবেন এমন ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলা বাধ্যতামূলক, কেননা হাঁপানি যেহেতু ঠান্ডাজনিত রোগ, তাই সুস্থ্য থাকতে চাইলে অবশ্যই বেশকিছু নিয়ম বা প্রকৌকল মানতে হবে। যেমন-বাইরে বের হওয়ার সময় অবশ্যই মাস্ক পরে বের হতে হবে। যাতে করে বাইরের দূষিত ধুলোবালি বা বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য মাস্কের বিকল্প নাই।
আরও পড়ুন ঃ নারীদের কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকিটা বেশি কেন?
বাহির থেকে এসে সরাসরি ঘরের মধ্যে প্রবেশ না করে প্রথমেই সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাগে একটি স্যানিটাইজার রাখতে পারেন। যাতে করে যে কোন সময়ই হাত ধোয়া যেতে পারে। অনেকেই আছেন, যারা বাহির থেকে এসে বাড়ির একটি নির্দিষ্ট স্থানে জামা-প্যান্ট এবং জুতো জুড়া খুলে রেখে তবেই বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেন। আসলে বাহিরে বের হলে জামা-কাপড়ে বিভিন্ন ধুলাবালিসহ নানারকস জীবাণু লেগে থাকতে পারে, হাঁপানি রোগীদের সমস্যা কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সাধারণত শীতের সময় হাঁপানি রোগীদের খাবারে প্রোটিন নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ প্রতিদিন খাবারে সবজি বা ফলমূল রাখতে হবে, যাতে করে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ঘটে এবং সেইসাথে ফুসফুসের জোরও বাড়াতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্য খাবারে মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ, বাদাম ও শাক রাখা যেতে পারে। সর্বোপরি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
শীতের প্রকোপে সবথেকে বেশী ভুক্তভোগী হন, বয়স্ক ব্যক্তি এবং শিশুরা। অর্থাৎ যে সব বয়স্ক ব্যক্তির হাঁপানি আছে, তাদের প্রত্যেকের জন্য নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা বাধ্যতামূলক করা। এ ছাড়াও সঙ্গে অবশ্যই ইনহেলার রাখা, যাতে করে জরুরী মুহুর্তে তা ব্যবহার করা যেতে পারে।
অনেকেই আছে, যারা ঘন ঘন দুধ চা এবং কফি খেয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ বাহিরে বের হলেই ঠান্ডা পানীয়, ঠান্ডা শরবত বা আইসক্রিমও খেয়ে থাকে। কিন্তু ভুলেও এই ধরণের জিনিস খাওয়া যাবেনা। একান্তই যদি শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির টান উঠে তাহলে উষ্ণ বা কুসুম গরম পানির মধ্যে এক চিমটে নুন ফেলে খেতে পারলে অনেক আরাম পাবেন।
সাধারণত হাঁপানি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি অথবা ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্য প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে আমলকি অত্যন্ত উপকারী বা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই আমলকী খেতে পারেন। কারণ আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় তা ফুসফুস থেকে দূষিত পদার্থ বা টক্সিন বের করে দেয়।
শীতে হাঁপানি রোগীদেরকে তুলসি পাতার রস নিয়মিত খাওয়ানো যেতে পারে। কারণ তুলসি পাতার রসে সর্দি-কাশি এবং কফ জমতে বাধা দান করে। আবার ইচ্ছে করলে তুলসি পাতা চায়ের মধ্যে দিয়ে চা করেও খাওয়া যেতে পারেন। মূলত এটি একটি বহু প্রাচীন প্রাকৃতিক পদ্ধতি যা দীর্ঘদিন ধরে চলমান রয়েছে।
সাধারণত ফুসফুস ভালো রাখার জন্য বেশকিছু যোগাসন রয়েছে, যা আপনি বাড়িতে বসেই করতে পারেন। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কোন প্রশিক্ষকের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন। এ ছাড়াও শ্বাসনালি ও ফুসফুস ভালো রাখতে নিয়ম করে ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে পারেন।
আরও পড়ুন ঃ কানে যে সমস্যাগুলো অল্প বয়সে হতে পারে - সমাধান লুকিয়ে আছে এইসব খাবারে
শীতকালে হাঁপানি রোগীদের অতিরিক্ত সচেতন থাকতে হয়। বিশেষ করে নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত এবং নিজের প্রতি যত্নশীল থেকে সুস্থ্য থাকার প্রচেষ্টা করতে হবে। সর্বোপরি যে কোন ধরণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা গেলে অবশ্যই চিকিসকের পরামর্শ গ্রহণ করাটা যুক্তিযুক্ত। কারণ বিশেষ করে হাঁপানী রোগীদের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ বা বাতাসে জলীয় বাষ্প এরকম বিষয়গুলো যাতে নাকে না ঢুকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখবেন, একজন হাঁপানী রোগী তখনই সুস্থ্য থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজেকে সচেতন ও সতর্ক অবস্থায় চলাফেরা করতে পারবে।
হাঁপানি রোগীদের সহায়ক খাদ্যসমূহ ঃ
শীতকালে হাঁপানি রোগ বেড়ে যায় কেন এর অন্যতম কারণ হতে পারে খাদ্যাভ্যাস। বিশেষ করে শীতের মধ্যে যে কোন খাবারই গরম খেতে হবে। বিশেষ করে পর্যাপ্ত পানি, গরম স্যুপ, টমেটো বা কমলার জুস, চা এবং কফি ইত্যাদি। এ ছাড়াও হাঁপানি রোগীদের হলুদ, আদা ও লেবু খাওয়াও যুক্তিযুক্ত। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে সেইসব খাবারের প্রতি যেগুলো থেকে অ্যালার্জিক সিম্পটোন সৃষ্টি হতে পারে। যেমন-বাদাম, সয়া, গম, ডিম বা চিংড়ি মাছসহ প্রক্রিয়াজাতযুক্ত কিছু খাদ্যপণ্যসমূহে।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন ঃ
সাধারণত হাঁপানি রোগীদের শীতকালে এমন কিছু সমস্যা তৈরি হয়, যার ফলে তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হয়ে থাকে। বিশেষ করে যদি শ্বাস নিতে বা ছাড়তে কষ্ট দ্রুত বেড়ে গেলে, একবার যদি কাশি শুরু হয়ে তা অনেকক্ষণ পর্যন্ত চলমান থাকলে, অনেক সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের নেয়ার ক্ষেত্রে বুকের ভিতর বাঁশির শব্দের মত সাঁ সাঁ করলে, হাঁটার সময় বা কোন সাধারণ কাজ-কর্মের সময় যদি বুকে চাপ অনুভূত হয়, অতিরিক্ত হাঁপানির কারণে রাতে ঘুম না হওয়া, আবার হঠাৎ করেই শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে, শরীরে অক্সিজেন স্বল্পতার অভাব পরিলক্ষিত হলে এবং সর্বোপরি ইনহেলার ব্যবহারের করার পরও যদি শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক না হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
শীতকালে হাঁপানি রোগ বেড়ে যায় কেন - শীতে হাঁপানি রোগীরা কীভাবে সতর্ক থাকবেন-পরিশেষে ঃ
শীতকালে হাঁপানি রোগ বেড়ে যায় কেন তা বলতে আসলে শীতে হাঁপানি রোগীদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হয়, বিশেষ করে বাইরে বের হলে নাক ও মুখ ভালো করে ঢেকে রাখতে হবে। তবে শীতে হাঁপানি রোগীরা কীভাবে সতর্ক থাকবেন বলতে বিশেষ করে খুব সকালে ও রাত্রে বাইরে না যাওয়াই ভালো। আর ঠান্ডা পানি বা ঠান্ডা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। আশাকরি আজকের আর্টিকেল থেকে হাঁপানি রোগ বেড়ে যাওয়া এবং কি কি নিয়ম মানতে হয়, কখন ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে, কি কি খাদ্য গ্রহণ করা যেতে পারে ইত্যাদি বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছেন।
আরও পড়ুন ঃ শীতকালে যে ফুলের গাছগুলো টবে লাগাতে পারেন
অর্থাৎ শীতে হাঁপানি রোগীরা কীভাবে সতর্ক থাকবেন এবং শীতকালে হাঁপানি রোগ বেড়ে যায় কেন বিষয়ক আর্টিকেলটি যদি আপনাদের নিকট ভালো লাগে তাহলে তা অন্যদের শেয়ার করতে পারেন। আসলে হাঁপানি রোগীদের বিশেষ কিছু নিয়ম মানতেই হয়। যেমন-ঠান্ডা লাগানো যাবেনা, ধুলোবালি এড়িয়ে চলতে হবে, বালিশ, কম্বল এবং বিছানার চারদ নিয়মিত ধুয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে তারপর তা ব্যবহার করতে হবে। মূলত শীতকালে হাঁপানি রোগ বেড়ে যায় কেন এবং শীতে হাঁপানি রোগীরা কীভাবে সতর্ক থাকবেন বিষয়ে আপনার যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। তবে শীতে পশমের কম্বল বা ধুলো জমতে পারে এমন জিনিস ব্যবহার না করাই শ্রেয়। সবসময় নিজের নিকট ইনহেলার রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ। তবে অতিরিক্ত সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। যাইহোক পরিশেষে শীতে হাঁপানি রোগীরা কীভাবে সতর্ক থাকবেন এর ক্ষেত্রে উপরোক্ত পরামর্শগুলি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে এবং সর্বেোপরি সচেতন থাকতে হবে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url