পেয়ারা পাতার অসাধারণ ৭টি উপকারিতা ও অপকারিতা - পেয়ারা পাতার পুষ্টিগুণ কি


পেয়ারা পাতার অসাধারণ ৭টি উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি এবং সেইসাথে পেয়ারা পাতার পুষ্টিগুণ কি, কোন সময় পেয়ারা পাতা খাওয়া উপকারি ইত্যাদি সমস্ত বিষয়ে জানতে চাইলে নিচের লেখাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পেয়ারা-পাতার-অসাধারণ-৭টি-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-পেয়ারা-পাতার-পুষ্টিগুণ-কি
মূলত পেয়ারা পাতার মধ্যেও যে অসাধারণ গুণাবলী রয়েছে, যেমন-ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি, লিভার, হৃদযন্ত্র, রক্তের শর্করা ও ওজন নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। 

পেজ সূচিপত্র: পেয়ারা পাতার অসাধারণ ৭টি উপকারিতা ও অপকারিতা - পেয়ারা পাতার পুষ্টিগুণ কি 

পেয়ারা পাতার অসাধারণ ৭টি উপকারিতা
পেয়ারা পাতার ৭টি অপকারিতা
পেয়ারা পাতার পুষ্টিগুণ কি
কোন সময় পেয়ারা পাতা খাওয়া উপকারি
পেয়ারা পাতার অসাধারণ ৭টি উপকারিতা ও অপকারিতা - পেয়ারা পাতার পুষ্টিগুণ কি- শেষ কথা

পেয়ারা পাতার অসাধারণ ৭টি উপকারিতা ও অপকারিতাঃ

পেয়ারা পাতায় রয়েছে অসাধারণ সব উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ। অর্থাৎ এতে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণকারী উপাদান, হজমশক্তি বৃদ্ধি, হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসে সহায়তা, চুল পড়া রোধসহ নানাপ্রকার উপকারিতা। মূলত সুনির্দিষ্ট ভাবে পড়ার সুবিধার্থে নিম্নে পেয়ারা পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতাগুলি আলাদা আলাদা করে বর্ণিত হলোঃ

পেয়ারা পাতার ৭টি উপকারিতাঃ

চা তৈরীর রেসিপিঃ
যদি ৩ থেকে ৪টি পেয়ারা পাতা পরিস্কার পানিতে ধুয়ে নিয়ে একটি পাত্রে পানি ও পেয়ারা পাতাগুলো ছেড়ে দিন। অন্তত ১০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর এবং খেয়াল করুন পানির রং পরিবর্তন হয়েছে কি না? এবার পরিমাণ মতো অথবা বা অল্প পরিমাণে চা পাতা দিন। আপনার চুলা বা গ্যাস বন্ধ করে চা তৈরীর পাত্রটির ঢাকনা বন্ধ করে রাখুন কিছুক্ষণ। সাধারণত কোনরকম মিষ্টি ছাড়াই এই চা খেতে পারলে ভালো, তবে সমস্যা হলে গুড় বা মধু মেশাতে পারেন। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ১ লিটার পানি ৪-৫/৫-৬টি পাতাও ফুটিয়ে নিতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ কাঁচা আদা খেলে কি হয়

আপনি যদি নিয়ম করে এই পেয়ারা পাতার রস খেতে পারেন, তাহলে আপনার ব্রঙ্কাইটিস, দাঁতের ব্যথা, অ্যালার্জি, ক্ষত, গলা ব্যথা ও দুর্বল দৃষ্টি ইত্যাদি ধরণের নানা সমস্যা থেকে খুব সহজেই উপকৃত হতে পারেন।

আবার যদি এক লিটার পানির চা তৈরী করতে চান তাহলে, ৫ থেকে ৬টি পেয়ারা পাতা ধুয়ে ১ লিটার পাত্রের মধ্যে দিয়ে তা ফুটিয়ে নিন। পাতা সেদ্ধ হয়ে গেলে ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিন এবং চায়ের মতো পান করতে পারেন। যদি দিনে দুইবার এই চা পান করতে পারেন, তাহলে আপনার উপরোক্ত অনেক সমস্যারই সমাধান ঘটবে।

সাধারণত চুলের সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন, বিশেষ করে নারীরা। আপনার চুল বড় বা দীর্ঘ করতে বিভিন্ন হেয়ার মাস্কের সাথে পেয়ারা পাতা মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার চুল বড় ও দীর্ঘ হবে এবং মাথার স্ক্যাল্পে প্রয়োজনীয় ভিটামিন সরবরাহ ঘটবে।

পেয়ারা পাতা ব্যথা উপশমের জন্য অনেক উপকারি। অর্থাৎ ব্যথাজাতীয় সমস্যায় তাৎক্ষণিক ফল পেতে পেয়ারা পাতা থেকে রস বের করে তা যে কোনো তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যথার স্থানে লাগাতে পারেন। এতে করে আপনার তাৎক্ষণিক ব্যথা দূর হবে।

প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নত করেঃ

পেয়ারা পাতা পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়াতে এবং নারীদের ক্ষেত্রে তা মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে থাকে। আসলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুরুষদের শুক্রাণুর পরিমাণ  কমতে থাকে। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে উপরোক্ত লক্ষ পূরণ করতে হলে পেয়ারা পাতার রস খেতে হবে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিঃ

পেয়ারা পাতার চা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এটি সাধারণত ব্রণ দূর করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়য় এবং মুখের দাগ কমাতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে ঠান্ডা পেয়ারা পাতার চা টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারলে ত্বক ডিটক্স হয় ও প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।

হৃদযন্ত্র ভালো থাকেঃ

পেয়ারা পাতার চা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল অর্থাৎ ট্রাইগ্লিসারাইড কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সহযোগিতা করে থাকে এবং এটি হৃদযন্ত্রকেও সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে। অর্থাৎ পেয়ারা পাতার রসের অনেক গুণাবলী বা উপকারিতার মধ্যে হৃদযন্ত্র সুস্থ্য এবং ভালো রাখতে সহায়তা করে থাকে।

লিভারের জন্য উপকারীঃ

জেনে অবাক হবেন যে, পেয়ারা পাতার রসের অনেক গুণাবলীর মধ্যে একটি হচ্ছে তা ইনসুলিন প্রতিরোধ কমায় এবং লিভারে যে অতিরিক্ত চর্বি জমা হতে থাকে, পেয়ারা পাতার রস সেবনে তা প্রতিহত করে এবং অ্যাডিপোনেক্ট্রিন রিসেপ্টর জিনের প্রকাশ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও এটি শরীরের ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি কমাতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ জেনে নিন কাঁচা ছোলা খাওয়ার যত উপকারিতা

রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ ঘটেঃ

পেয়ারা পাতার রসে কয়েরসেটিন ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকায় তা শরীরে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং শরীরের অন্ত্রে শর্করা কমাতে সাহায্য করে থাকে। সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিনজনিত সমস্যা থাকে, এক্ষেত্রে পেয়ারা পাতার রস তাদের জন্য উপকৃত হতে পারে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে পেয়ারা পাতাঃ

পেয়ারা পাতার রস সরাসরি শরীরের মেদ ঝরায় না, তবে এটি মেটাবলিজম বাড়ায় এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। অর্থাৎ পেয়ারা পাতার রস শরীরে ক্ষুধামন্দাভাব তৈরি করে এবং তার ফলে শরীরে ক্ষুধা কমে যাওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই তা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। 

পেয়ারা পাতার ৭টি অপকারিতাঃ

পেয়ারা পাতার অসাধারণ ৭টি উপকারিতা ও অপকারিতা এর মধ্যে নিম্নে অপকারিতা বর্ণিত হলোঃ

সাধারণত পেয়ারা পাতায় হাইপোগ্লাইসেমিক নামক এক উপদানের প্রভাব রয়েছে, যা উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে থাকে। অর্থাৎ পেয়ারা পাতা খাওয়া যাবে তবে তা পরিমিত, আবার অনেকেই আছেন, যারা শরীরের প্রেসার সম্পর্কে না জেনেই খেয়ে ফেলেন এতে করে রক্তচাপ হ্রাস হয়ে গেলে দেখা দিতে পারে নানারকম শারীরিক সমস্যা। তাই প্রতিদিন না খেয়ে তা পরিমিত ভাবে খেতে পারেন।

বিশেষ করে গর্ভবর্তী বা স্তন্য দানকারী মহিলাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শক্রমে পেয়ারা পাতা খাওয়া যেতে পারে। কারণ চিকিৎসকের সুনির্দিষ্ট কোন পরামর্শ ছাড়া গর্ভবতী মহিলাদের পেয়ারা পাতা না খাওয়াই যুক্তিযুক্ত।

যদি পেয়ারা পাতার রস নিয়মিত খেতে থাকেন, তাহলে তা মাথাব্যথাজনিত কারণ হতে পারে। সুতরাং এক্ষেত্রে পেয়ারা পাতার রস নিয়মিত না খেয়ে তা বিরতি দিয়ে খেতে থাকলে অবশ্যই তা শরীরের জন্য নানা উপকার বয়ে আনে।

পেয়ারা পাতার রস অধিক পরিমাণে খেলে তা কিডনির জন্য সমস্যা হতে পারে। যাদের কিডনিজনিত সসম্যা রয়েছে, তাদেরতো একেবারেই পেয়ারা পাতার রস খাওয়া যাবে না। তবে শারীরিক সমস্যাগুলো খুব তাড়াতাড়ি সেরে ফেলবো এই মানসিকতা না পোষণ করে তা ধীরে ধীরে সারাই উত্তম।

অনেক সময় পেয়ারা পাতার নির্যাস ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে থাকে। আবার যাদের একজিমাজনিত সমস্যা আছে, অর্থাৎ ঠান্ডাজনিত সমস্যা বিদ্যমান, তাদের পেয়ারা পাতার রস নিয়মিত না খাওয়াই ভালো। মূলত পেয়ারা পাতার রস ঠান্ডা, তাই নিয়মিত খেলে একজিমার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।

যদি কেউ ঘন ঘন বা খুব বেশি বেশি করে পেয়ারা পাতার রস সেবন করে, তাহলে সেক্ষেত্রে তাদের বমি বমি ভাব উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই পেয়ারা পাতার রস বিরতি দিয়ে সেবন করাই উত্তম। কারণ প্রতিদিন তা না খাওয়াই ভালো।

পেয়ারা পাতার পুষ্টিগুণ কিঃ

পেয়ারা পাতার পুষ্টিগুণ কি বিষয়ক আলোচনায় অবশ্যই পেয়ারা ফল ও পাতায়  অনেক গুণাবলী রয়েছে, যার মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল. ভিটামিন ও ফাইবার। বলাবাহুল্য পেয়ারা পাতায় মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ঘটে, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ হয়, হজমশক্তি এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটে এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে থাকে।

কোন সময় পেয়ারা পাতা খাওয়া উপকারিঃ

যদিও পেয়ারা পাতার রস খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা নেই, তথাপি তা যদি সকালে খালি পেটে খাওয়া যায় তাহলে তা বেশ উপকারে আসে। এ ছাড়াও আপনি বিসেকে হালকা নাস্মার সঙ্গেও পেয়ারা পাতা দিয়ে চা তৈরি করে খেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, যদি সকালেই পেয়ারা পাতার রস খালিপেটে খেতে পারেন, তাহলে তা হজমশক্তি উন্নত করবে, আপনার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা ঘটবে এবং সেইসাথে পেয়ারা পাতার রস ডিটক্সিফিকেশনেও সহায়তা করে থাকে। আবার যদি পেয়ারা পাতা দিয়ে চা তৈরি করে, তা যদি খাওয়ার পরে পান করেন, তাহলে তা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এবং আপনার হজমশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে থাকে। তা বাদেও পেয়ারা পাতার রস পেট ফাঁপাজনিত সমস্যা দেখা দিলে তা পেয়ারা পাতার রসে পেটের মধ্যে জমে থাকা গ্যাস দূর করতে সহায়তা করে থাকে।

পেয়ারা পাতার অসাধারণ ৭টি উপকারিতা ও অপকারিতা - পেয়ারা পাতার পুষ্টিগুণ কি-শেষ কথাঃ

আজকের পেয়ারা পাতার অসাধারণ ৭টি উপকারিতা ও অপকারিতা - পেয়ারা পাতার পুষ্টিগুণ কি বিষয়ক আর্টিকেল থেকে আপনারা পেয়ারা পাতার যে অনেক রকম উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে তা জানতে পারলেন। আশাকরি এই জ্ঞানগুলি আপনাদের পরবর্তী সময়ে অনেক উপকারে আসবে। আসলে আমরা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পেয়ারা খেয়ে থাকি, কিন্তু পেয়ারা পাতার যে এতো উপকারিতা ও গুণাবলী রয়েছে, হয়তা বা আমাদের অনেকেরই অজানা ছিল।

আরও পড়ুনঃ কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার

একটা বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীতে অনেক কিছু জানার আছে, শুধু চেষ্টা করতে হবে। আবার অস্কার জয়ী সম্মানীয় পরিচালক সত্যজিত রায়ের বিখ্যাত ছবি হীরক রাজার দেশে বর্ণিত ‘জানার কোন শেষ নাই জানার চেষ্টা বৃথা তাই’, সেটাও করা যেতে পারে। যাইহোক আজকের পেয়ারা পাতার অসাধারণ ৭টি উপকারিতা ও অপকারিতা এবং পেয়ারা পাতার পুষ্টিগুণ কি বিষয়ক পরামর্শগুলি ভালো লাগলে অবশ্যই তা শেয়ার করতে পারেন। সবশেষে এতোক্ষণ দীর্ঘ সময় ধরে পেয়ারা পাতার অসাধারণ ৭টি উপকারিতা ও অপকারিতা - পেয়ারা পাতার পুষ্টিগুণ কি বিষয়ক আর্টিকেলে যুক্ত থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।