মানুষ কিভাবে পানিতে ডুবে যায়
প্রায়ই দেখা যায় পানিতে ডুবে শিশু মারা গেছে। আমরা পত্র-পত্রিকায়, টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া সব জায়গাতেই এই খবরটি দেখে থাকি। আজকে মানুষ কিভাবে পানিতে ডুবে যায় এর বিষয়ে বিস্তারিত জানতে নিচের লেখাটি পড়ুন।
মানুষ কিভাবে পানিতে ডুবে যায় বা পানিতে ডুবে কেউ মারা গেলে আমরা বলি সাঁতার জানেনা বলেই ডুবে গেছে। কথাটি ১০০ ভাগ সত্য। তবে আমরা কেউ কি কখনো ভাবি যে, কেন শিশুটি বা মানুষটি পানিতে ডুবে মারা গেল? কারণগুলি জানতে হলে নিচের লেখাটি পড়তে হবে।
পোস্ট সূচিপত্র: মানুষ কিভাবে পানিতে ডুবে যায় (How do people drown in water?)
বৈজ্ঞানিক ব্যাখায় যা বলে:
বিখ্যাত আর্কিমিডিসের সূত্র অনুযায়ী কোন বস্তু আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে যদি পানিতে নিমজ্জিত হয় তাহলে সেই বস্তু তার সম আয়তনের পানি অপসারণ করে থাকে। অর্থাৎ কোন বস্তু তখনই ভাসে, যখন তার ওজন সম আয়তন পানির ওজন থেকে কম হয়ে থাকে। তবে বস্তুর ওজন যদি তার সম আয়তন পানির ওজনের সমান হয়, তাহলে সেই বস্তুটি নিমজ্জিত অবস্থায়ও ভাসতে থাকে। অর্থাৎ সেই বস্তুটি পানির মধ্যে যেখানেই থাক বা রাখা যাক না কেন সেখানেই স্থির অবস্থায় থাকে।
আরও পড়ুন: হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণ
সুতরাং এক্ষেত্রে আমরা পরিস্কার হচ্ছি যে, কোন বস্তুর ওজন যদি তার সমআয়তন পানির ওজন থেকে বেশি হলে বস্তুটি ডুবে যাবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়-কাঠ, কর্ক, প্লাষ্টিক বোতল, লতাগুল্ম ইত্যাদি। এবার আসা যাক মানুষের ক্ষেত্রে, অর্থাৎ মানব শরীরের ঘনত্ব সাধারণত পানির ঘনত্ব থেকে কম। আর সে কারণেই যখন কেউ পানিতে ডুবে বা পতিত হলে কয়েক মাত্র কয়েক সেকেন্ট সে পানিতে ভেসে থাকে। যখন আস্তে আস্তে তার শরীরের মধ্যে পানি ঢুকে যায় তখন তার শরীরের ঘনত্ব বাড়ে।
সচেতনতার অভাব:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর পানিতে ডুবে মারা যায় ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৪০০ জন মানুষ। এর মধ্যে ৫ বছর বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। মানুষ কিভাবে পানিতে ডুবে যায় বলতে সাধারণত বর্ষার সময়কালে এ ধরণের ঘটনার হার বেশি দেখা যায়। এর অন্যতম কারণগুলো বলতে জলাবদ্ধতা, বন্যা এবং সর্বোপরি আমাদের চারিদিকে রয়েছে অসংখ্য পুকুর, নদী, খাল-বিল ইত্যাদি। তবে একটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, সাধারণত শহরের চেয়ে গ্রামে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর হার বেশী। আর এই ধরণের ঘটনাগুলি সচেতনতার অভাবে ঘটে থাকে। তাই সচেতনতার জন্য নজরদারি বাড়াতে হবে, অর্থাৎ একটি শিশুর যাবতীয় দেখভাল বহন করেন মায়েরা। তাই মায়েদেরকেই এ ক্ষেত্রে শিশুর প্রতি নজরদারি বা খেয়াল করতে হবে, বিশেষ করে বাড়ির আশে-পাশে পুকুর, নদী, ডোবা ইত্যাদি থাকলে। বাচ্চারা বাইরে খেলতে গেলে, নদী বা পুকুরে গোসল করতে গেলে, পুকুর বা জলাশয় সংলগ্ন স্থানে খেলাধুলা করতে তা খেয়াল করা ইত্যাদি।
এক. শিশুদের সাঁতার শেখার উপর গুরুত্ব দেয়া বা সাঁতার শেখানো। অর্থাৎ ৫ বছরের বেশী বয়সী শিশুদের সাঁতার শেখাতে হবে।
দুই. পুকুর পাড়গুলোতে বেড়া দেওয়া।
তিন. শিশুদের পর্যবেক্ষণে রাখা বা নজরদারি করা।
চার. তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা। অর্থাৎ পানিতে ডুবলে সেইখান হতে শিশুটিকে উঠিয়ে কী করা উচিৎ সে সম্পর্কে অনেকেই জানেনা। বিশেষ করে হার্ট ও শ্বাস প্রশ্বাস চালু করার প্রাথমিক চেষ্টা থাকে না।
প্রতিরোধে করণীয় ব্যবস্থাসমূহ:
দুর্ঘটনা আসলে দুর্ঘটনায়, যেটা বলে কয়ে আসে না। তবে এটি প্রতিরোধ করার অন্যতম উপায় হচ্ছে জনসতেচনতা সৃষ্টি। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, অধিকাংশ শিশুই বাড়ি থেকে ২০ মিটার এবং কম বয়সী শিশুরা ১০ মিটার দূরত্বের কোন পুকুর বা জলাশয়ে ডুবে মারা যায়। অর্থাৎ আমাদের নিজে যেমন বুঝতে হবে আবার অন্যদেরও তা বোঝাতে হবে। নিম্নে মানুষ কিভাবে পানিতে ডুবে যায় তা প্রতিরোধে কিছু পদক্ষেপ বর্ণিত হলো:এক. শিশুদের সাঁতার শেখার উপর গুরুত্ব দেয়া বা সাঁতার শেখানো। অর্থাৎ ৫ বছরের বেশী বয়সী শিশুদের সাঁতার শেখাতে হবে।
দুই. পুকুর পাড়গুলোতে বেড়া দেওয়া।
তিন. শিশুদের পর্যবেক্ষণে রাখা বা নজরদারি করা।
চার. তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা। অর্থাৎ পানিতে ডুবলে সেইখান হতে শিশুটিকে উঠিয়ে কী করা উচিৎ সে সম্পর্কে অনেকেই জানেনা। বিশেষ করে হার্ট ও শ্বাস প্রশ্বাস চালু করার প্রাথমিক চেষ্টা থাকে না।
আরও পড়ুন: রক্তের গ্রুপ কি পরিবর্তন হতে পারে
পাঁচ. শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে সাঁতার শেখার গুরুত্ব বিষয়ক অধ্যায় সংযুক্ত করা।ছয়. পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি বা তৈরী করা।
সাত. বর্ষার সময়গুলোতে শিশুদের প্রতি অতিরিক্ত সচেতন থাকা।
আট. প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে শিশুদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র চালু করা।
নয়. অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন শিশু একা পানিতে না নামে।
দশ. পানির কাছাকাছি শিশুকে কোনমতেই একা ছাড়া যাবে না।
এগার. কুসংস্কারজনিত সমস্যা, অর্থাৎ পানি থেকে তুলে শিশুটিকে মাকে ধরতে না দেওয়া বা অনেক সময় শিশুটির পা ধরে বা মাথায় তুলে চারিদিকে ঘোরানো। এ রকম কুসংস্কার সম্পর্কিত সমস্যা থেকে দূরে থাকতে হবে।
বার. অনেক ক্ষেত্রে ডুবে যাওয়া শিশুকে কী করা হবে বা ফাস্ট রেসপন্স সম্পর্কে প্রশিক্ষিত ব্যক্তি কর্তৃক তাৎক্ষণিক সেবাদান বিষয়ে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমস্যা। অর্থাৎ এ বিষয়গুলো মাথায় নিয়েই শিশুর প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হবে।
মানুষ কিভাবে পানিতে ডুবে যায় - শেষ কথা:
মূলত মানুষ কিভাবে পানিতে ডুবে যায় বা পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু বিশেষ করে ৫ বছরের শিশুরাই বেশি ভুক্তভোগী। উপরকোক্ত আলোচনা থেকে আপনারা নিশ্চয়ই একটা বিষয় খেয়াল করেছেন, তা হলো সচেতনতার সমস্যা। অর্থাৎ পরিবারে বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীদের সচেতনতাজনিত সমস্যার কারণেই মূলত শিশুরা পানিতে ডুবে মারা যাচেছ। বিশ্বের মধ্যে সবথেকে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর হার বেশি বাংলাদেশে এবং সেটা ১ থেকে চার বছর বয়সীদের মধ্যে ঘটে থাকে। আর এই মৃত্যুজনিত সমস্যাগুলি বেশিরভাগ সংঘটিত হয় বর্ষাকালে।
আরও পড়ুন: কোন সব খাবারে শিশুর উচ্চতা বাড়ে - শিশু দ্রুত লম্বা হবে কোন খাবারগুলো খেলে
একটা বিষয় চিন্তা করে দেখবেন, সত্তর, আশি বা নব্বই দশকের দিকেও এত শিশু মৃত্যু ছিলনা, কিন্তু ধীরে ধীরে শিশুদের পানিতে ডুবে গিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কিন্তু বাড়ছে, আমার মনে হয়, অনেকগুলো কারণের মধ্যে আর একটি কারণ হলো অতিরিক্ত আরাম-আয়েস, ভোগ-বিলাসিতা, নিজেকে ব্যস্ততাকে প্রাধান্য ইত্যাদি কারণগুলোও অনেকাংশে দায়ী। খেয়াল করে দেখবেন, শহরে বড় হওয়া ছেলেমেয়েরা কিন্তু অধিকাংশই সাঁতার জানে না। যদিও মানুষের ভোগ বিলাসিতা অথবা উন্নত জীবনযাত্রার জন্য অনেক পুকুর, জলাশয়গুলো বন্ধ করে বাড়ী বা ইমারত নির্মাণ অন্যতম কারণ। তারপরেও বাবা-মা নিজে যেসব জায়গায় সাঁতার কাটা হয় সেখানে নিয়ে গিয়েও সাঁতার শেখাতে পারেন, কিন্তু এ বিষয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের উদাসীনতা কাজ করে।
যাইহোক আজকের মানুষ কিভাবে পানিতে ডুবে যায় বিষয়ক আর্টিকেলটি পদে যদি উপকৃত হোন তাহলে তা অন্যদের শেয়ার করতে পারেন। উপরোক্ত বিষয়ে যদি কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের মন্তব্য বক্সে তা জানাতে পারেন। পরিশেষে দীর্ঘক্ষণ মানুষ কিভাবে পানিতে ডুবে যায় বিষয়ের বর্ণনায় যুক্ত থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url