রক্তের গ্রুপ কি পরিবর্তন হতে পারে

রক্তের গ্রুপ পরিবর্তন সম্পর্কিত বিষয়টি নিয়ে অনেকেরই মনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে। আসলেই তো রক্তের গ্রুপ কি পরিবর্তন হতে পারে। এ বিষয়টি নিয়ে মতানৈক্যগুলি চলুন পর্যালোচনা করি।

রক্তের গ্রুপ নির্ধারিত হয় শরীরে অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি, যা আমরা মাতা-পিতার কাছ থেকে পেয়ে থাকি। আর এই অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি দিয়েই নির্ধারিত হয় রক্তের গ্রুপ। তাই রক্তের গ্রুপ কি পরিবর্তন হতে পারে প্রশ্নের উত্তর হলো ‘হয় ন ‘। তবে তা দুর্লভ কিছু ঘটনার কারণ হতে পারে, যা আজকের আলোচনা থেকে জানতে পারবেন।

সাধারণত রক্তের চারটি প্রধান গ্রুপ, A, B, AB এবং O গ্রুপ।

সাধারণত রক্তের গ্রুপ রক্তকণিকার মধ্যে নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনের উপস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। তাই কোন অ্যান্টিজেন আছে বা নেই তার নির্ভর করে রক্তের গ্রুপ নির্ধারিত হয়ে থাকে। আর গ্রুপ নির্ধারণের এ পদ্ধতিকে বলে এবিও (ABO) পদ্ধতি। রক্তকণিকার পৃষ্ঠে যদি A অ্যান্টিজেন থাকে তাহলে সেটাকে বলে A গ্রুপ, আর যদি B অ্যান্টিজেন থাকে, তাহলে সেটাকে বলে B গ্রুপ। আবার যদি দুটোই একসঙ্গে তাকে, তাহলে বলে AB গ্রুপ। যদি দুটো অ্যান্টিজেন অর্থাৎ A এবং B না থাকে তাহলে সেটা O গ্রুপ হয়। আসলে ব্রিটিশরা শূন্যকে O বলে থাকে, ফলে 0 মানে A বা B কোন অ্যান্টিজেনই থাকেনা।

রেসাস বা (Rh) আরএইচ হচ্ছে এক বিশেষ ধরণের প্রোটিন। অর্থাৎ রক্তের মধ্যে এই প্রোটিন থাকলে হয় পজিটিভ (আছে), আর না থাকলে সেটাকে বলা হয় নেগেটিভ (নেই)।

আমরা সবাই জানি যে, রক্ত দেয়া-নেয়ার আগে অবশ্যই রক্তের গ্রুপ জানাটা অত্যাবশ্যক। রক্তের গ্রুপ নির্ধারণ করা থাকলে প্রয়োজনের সময় তা দেয়া-নেয়া সহজ হয়। অর্থাৎ যাদের রক্তের গ্রুপ বি তিনি নির্দ্বিধায় বি গ্রুপের কাছ হতে রক্ত গ্রহণ করতে পারবেন, কিন্তু তিনি অবশ্যই এ গ্রুপের কারও কাছ থেকে রক্ত নিতে বা দিতে পারবেন না। অর্থাৎ রক্তের সাথে রক্ত্রের গ্রুপ ম্যাচ করেই রক্ত দেয়া-নেয়া বা শরীরে গ্রহণ করা যায়।

আমরা অনেকে অনেক সময় ভেবে থাকি বা মনে করি রক্তের গ্রুপ পরিবতৃন হয়। আসলেই কি তায়? এরকম প্রশ্নের উত্তর হলো-অবশ্যই না। বা কোনমতেই না। তবে মুখের কথায় বিশ্বাস বা অযথা যুক্তিতর্ক না করে চলুন জেনে নিই এ প্রশ্নের উত্তরে বিজ্ঞান কি বলছে বা কি যুক্তি দিচ্ছে যা আমরা মানতে পারি।

বিজ্ঞান বলছে, রক্তের গ্রুপ পরিবর্তন একটা দুর্লভ ঘটনা। তবে একজন ব্যক্তির দুটি ভিন্ন রক্তের গ্রুপ থাকা সম্ভব এবং এটাকে কাইমেরিজম বলে বা নামে পরিচিত। প্রকৃত পক্ষে একজন ব্যক্তির রক্ত বা অস্থিমজ্জা অন্য দুজন দাতা থেকে প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে এ ধরণের ক্ষেত্রে রক্তের গ্রুপ সেই ব্যক্তির মধ্যে কোন সমস্যা সৃষ্টি না করেই সহাবস্থান করতে পারে।

আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়,রক্তের গ্রুপ পজিটিভ থেকে নেগেটিভ হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে রক্তের গ্রুপ যাচাইয়ের পরীক্ষার ভুলের কারণে তা হতে পারে। কিন্তু পজিটিভ রক্তের গ্রুপ থেকে নেগেটিভ রক্তের গ্রুপ হয়ে গিয়েছে এমন কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ কিন্তু নেই।

সাধারণত আমাদের অস্থিমজ্জা থেকে তৈরি হয় লোহিত রক্তকণিকা, অণুচক্রিকা ও শ্বেতি রক্তকণিকা। তবে লিউকেমিয়ার মতো কিছু রোগের চিসিৎসার ক্ষেত্রে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে যদি রোগী এবং দাতার রক্তের ধরণ ভিন্ন হয়, কিন্তু তা সফলভাবে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের কারণে রক্তের গ্রুপ পরিবর্তিত হতে পারে। তবে একটি খুবই ভিন্ন কেস বা দুর্লভ ঘটনা।

আবার A গ্রুপের রক্তের বাহকের অন্ত্রে যদি একটি ব্যাকটেরিয়া যার বৈজ্ঞানিক নাম হলো: ‘Akkermansia muciniphila' এর সংক্রমণ ঘটিয়ে এক বিশেষ ধরণের এনজাইম তৈরি করে। পরবর্তীতে এই এনজাইমই A রক্তের গ্রুপের অণুকে B গ্রুপের রক্তের অণুর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ করে তোলে। এক্ষেত্রে বলা যায়, যেমন-কোলন ক্যান্সার, অন্ত্রে সংক্রমণ বা সেপসিসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এ ধরণের ঘটনা ঘটে থাকে।

আজকের রক্তের গ্রুপ কি পরিবর্তন হতে পারে বিষয়টি নিয়ে অনেক সময়ই দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরী হয়ে থাকে। যদিও আমরা জানি রক্তের গ্রুপ কখনোই পরিবর্তন সম্ভব নয়। তারপরেও নিজের জানা, বোঝা এবং সর্বোপরি বিজ্ঞানের অখণ্ড সত্যির দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা জানার চেষ্টা করবো এটাই স্বাভাবিক। বিজ্ঞানের ভাষায় রক্তের গ্রুপ কোনদিনই পরিবর্তন সম্ভব নয়, তবে ক্ষেত্র বিশেষে যৎসামান্য দুর্লভ কিছু ঘটনার সৃষ্টি হয়।

একটা বিষয় সবসময় মনে রাখবেন, যদি কখনো বা কোন সময় এইরকম জটিলতায় পড়েন, তাহলে যেখানে রক্তের ক্রস ম্যাচিং হয় অথবা রক্তের গ্রুপ যখন ম্যাচিং করা হয়, সাধারণত সেইসব স্থানেই খামখেয়ালী ভাবে ভুল রিপোর্ট তৈরি করে। সাধারণত একটি শিশু জন্ম নেয়ার সময় সে হয় বাবা না হয় মায়ের বৈশিষ্ট্য থেকেই রক্তের গ্রুপ পেয়ে থাকে। অর্থাৎ বাবা যদি হয় A পজিটিভ আর মা যদি হয় O পজেটিভ, তাহলে শিশুটির রক্তের গ্রুপ নিশ্চয়ই হবে A অথবা O।

যাইহোক আজকের আর্টিকেল রক্তের গ্রুপ কি পরিবর্তন হতে পারে বিষয় থেকে আপনার রক্ত সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় জানতে পেরেছেন, যদি তা আপনাদের নিকট গ্রহণযোগ্য বা ভালো লাগে তাহলে তা অবশ্যই অন্যদের শেয়ার করতে পারেন এবং সেই সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আমাদের সাথে যুক্ত থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।