মজাদার হাওয়াই মিঠাই

বর্তমানে বিনোদন স্পটগুলোতে, নদীর ধারে, পার্কে, মেলাতে ঘুরতে গেলেই চোখে পড়ে এই মজাদার হাওয়াই মিঠাই।
বলাবাহুল্য রং বেরঙের এই হাওয়াই মিঠাই বাচ্চাদের কাছে একটি আকর্ষণীয় ও মজাদার খাদ্যসামগ্রী। মজাদার হাওয়াই মিঠাই খায়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। চলুন জেনে নিই এই মজাদার হাওয়াই মিঠাই-এর খুঁটিনাটি।

পোস্ট সূচিপত্র: মজাদার হাওয়াই মিঠাই (Delicious Hawaiian Sweets)
মজাদার হাওয়াই মিঠাই এর ইতিহাস
হাওয়াই মিঠাই-এর বিভিন্ন নামকরণ
হাওয়াই মিঠাই তৈরী পদ্ধতি
হাওয়াই মিঠাই মূল্য
মজাদার হাওয়াই মিঠাই-পরিশেষে

মজাদার হাওয়াই মিঠাই এর ইতিহাস:

৭০ বা ৮০’র দশকে আমাদের দেশে এই মজাদার হাওয়াই মিঠাই এর প্রচলন ছিল, তবে তখন কিন্তু তা হাওয়াই মিঠাই নামে পরিচিত ছিল না। তখন এটিকে মতিমালা নামে অনেকেই চিনতো। আর সেই সময় রাজশাহীতে একজন ব্যক্তি ছিলেন মতিলাল সেখ, যিনি এই মতিমালা একটি বাঁশের উপরে গোলাপী রংয়ের দলা করে রাখতেন। যখন কোন শিশু মতিমালা চাইতো, তখন তিনি দাম অনুযায়ী কিসের আকৃতি নিবে সেটা বানিয়ে দিতো। (যেমন-ঘড়ি, আংটি, মালা ইত্যাদি)।

আরও পড়ুন: ফ্রিজে মাংস সংরক্ষণের সঠিক উপায়

ইতিহাস প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মজাদার হাওয়াই মিঠাই এর প্রচলন ঘটে ইতালিতে। সেই সময়ে এই খাদ্যটি পরিচিত না হলেও তা ঘরোয়াভাবে চিনির ঘন রসকে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে সুতার মতো করে এটি বানানো হতো। উল্লেখ্য, ১৮৯৭ সালে উইলিয়াম মরিসন ও জন সি. ওয়াটসর প্রথমবার এই হাওয়াই মিঠাই তৈরির যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। তবে আধুনিক পদ্ধতিতে এই হাওয়াই মিঠাই তৈরি করা হলেও সেই সময় কিন্তু এর জনপ্রিয়তা ছিলনা। এরপর ১৯০৪ সালে সেন্টলুইসে অনুষ্ঠিত বিশ্বমেলায় যখন এই খাবারটি প্রদর্শন করা হয়, তারপর থেকেই এই হাওয়াই মিঠাইটি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। আর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে।

হাওয়াই মিঠাই-এর বিভিন্ন নামকরণ:

মজাদার হাওয়াই মিঠাই-কে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। যেমন-কটন ক্যান্ডি, ক্যান্ডি ফ্লস বা স্পুন সুগার ইত্যাদি। তবে এই হাওয়াই মিঠাই দেখতে অনেকটা তুলার মতো বলে ১৯২০ সালে মার্কিনরা এই খাদ্যটির নামকরণ করেছে কটন ক্যান্ডি। আরও অবাক বিস্ময় হলো, এই মজাদার হাওয়াই মিঠাই এর ওপর তারা এতোটাই উন্মত্ত যে, প্রতি বছরের ৭ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তারা ‘জাতীয় কটন ক্যান্ডি ডে’ হিসাবে পালন করে থাকে।

হাওয়াই মিঠাই তৈরী পদ্ধতি:

হাওয়াই মিঠাই তৈরি করা যন্ত্রের নিচের অংশে একটি মোটরচালিত চুলো থাকে। মূলত এখানেই সাদা চিনিকে তাপ দিয়ে গলিয়ে তা ঘন ক্যারোমেলে পরিণত করে থাকে। পরবর্তীতে এর সঙ্গে মেশানো হয় বিভিন্ন ফুড কালার। আবার গন্ধ ও স্বাদের জন্য ব্যবহার করা হয় নানা সুগন্ধি। হাওয়াই মিঠাং তৈরি করা যন্ত্রের উপরের অংশে থাকে মোটরের একটি চাকা, যা তীব্র বেগে ঘুরতে থাকে।

আরও পড়ুন: পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল খেজুর - খেজুরের উপকারিতা ও গুণাবলি

এই চাকাটিকে আবৃত করে থাকে একটি অতি সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত পাতলা ষ্টিলের পাত, এতে তীব্র গরম ঘন ক্যারোমেলগুলি ছিদ্রযুক্ত সেই লোহার পাত দিয়ে অত্যন্ত তীব্র গতিতে সূক্ষ্ম সুতার মতো বের হয়ে আসে এবং বাইরের সংস্পর্শে আসলেই তা ঠান্ডা হয়ে যায়। পরবর্তীতে একটি সরু কাঠি দিয়ে তা সুন্দর করে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে সংগ্রহ করা হয় হাওয়াই মিঠাই। জানলে অবাক হবেন যে, এক কাঠিতে হাওয়াই মিঠাই থাকে মাত্র ৩০ গ্রাম আর বাদ বাকী অর্থাৎ ৭০ গ্রাম থাকে হাওয়া বা বাতাস।

হাওয়াই মিঠাই মূল্য:

আমাদের দেশে সাধারণত হাওয়াই মিঠাই খুবই সস্তা কিনতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। তবে বাইরের দেশগুলোতে কিন্তু এর অনেক দাম। আসলে বেশি দামের কারণ হলো এর স্বাদ ও গন্ধের ভিন্নতা। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য বা কানাডার মত দেশগুলোতে এই হাওয়াই মিঠাই পাওয়া যায় স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ম্যাপল, আপেল, আম, গোলাপ ফুল, লেভেন্ডার সহ নানা গন্ধ আর স্বাদের হাওয়াই মিঠাই। মূলত এসব দেশগুলোতে হাওয়াই মিঠাইয়ের নাম নির্ধারণ হয় ফ্লেভারের উপর নির্ভর করে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবথেকে দামি হাওয়াই মিঠাইয়ের নাম হলো কটন ক্যান্ডি, যেটি সেফরন ফ্লেভারে তৈরী।

মজাদার হাওয়াই মিঠাই-পরিশেষে:

আসলে হাওয়াই মিঠাই মূলত মুখের মধ্যে দিতেই হারিয়ে যায় বলেই এর নামকরণ হয়েছে হাওয়াই মিঠাই। সুতরাং মজাদার হাওয়াই মিঠাই যে শুধু শিশুদের পছন্দ তা কিন্তু নয়, বিশেষ কিছু দিনে বা বিশেষ কারও সাথে সময় কাটানোরও একটি রোমান্টিক মাধ্যম। সভ্যতার অগ্রগতিতে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী থেকে অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্যগুলো দিনকেদিন হারিয়ে যাচ্ছে। এভাবে বলা যায়, আমি যা দেখেছি বা খেয়েছি, কিন্তু আমার সন্তানেরা তা দেখেনি, অথবা আমি যা খেয়েছিলাম, সেই স্বাদ বা স্বাদের ভিন্নতা তৈরী হয়েছে। প্রতিনিয়ত এভাবে কিছু না কিছু পরিবর্তন/হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের কাছে থেকে।

আরও পড়ুন: স্ট্রবেরি ফলের পুষ্টিগুণ ও এর উপকারিতা

একটা বিষয় হচ্ছে প্রযুক্তি উন্নত হয় আমাদের জীবনযাত্রার মান সহজ করার জন্যে, কিন্তু আমরা অনেকেই সেই প্রযুক্তিটি সঠিক অর্থে ব্যবহার করিনা। যাইহোক, আজকের মজাদার হাওয়াই মিঠাই বিষয়ক আলোচনা আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন এবং সেইসঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে মজাদার হাওয়াই মিঠাই বিষয়ক আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। যদি ভালো লেগে থাকে, তাহলে তা শেয়ার করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url