শিশুর রাগ ও জেদ নিয়ন্ত্রণে যা করতে হবে

শিশুর রাগ ও জেদ নিয়ন্ত্রণে যা করতে হবে তা হলো-নিজেকে শান্ত রাখতে হবে, শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ানো, প্রয়োজনে শিশুর সাথে সরাসরি কথা বলা, নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয়ের বিকাশ এবং সর্বোপরি শিশুর জন্য সঠিক পরিবেশ নির্বাচন সহ আরও বিস্তারিত জানতে হলে নিচের লেখাটি পড়তে হবে।
শিশুর-রাগ-ও-জেদ-নিয়ন্ত্রণে-যা-করতে-হবে
জেনে রাখা ভালো যে, দেড় থেকে দুই বছর বয়স থেকেই শিশুরা রাগ বা অন্য আবেগ প্রকাশ করতে শুরু করে।

পেজ সূচিপত্রঃ শিশুর রাগ ও জেদ নিয়ন্ত্রণে যা করতে হবে

শিশুর রাগ ও জেদ নিয়ন্ত্রণে যা করতে হবে
শিশুর কান্না থামাতে জোর না করাই ভালো
শিশুকে স্পর্শ করা বা কাছে টেনে নেয়া
নিজেকে শান্ত রাখতে হবে
শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়তা করা
শিশুকে সব জায়গায় ঘুরতে না নিয়ে যাওয়া
শিশুর রাগকে গুরুত্ব না দেয়া
শিশুর লক্ষ্য স্থির করে দিতে হবে
অন্যদের সাথে মেশার সুযোগ করে দিতে হবে
শিশুর সাথে সরাসরি কথা বলা
শিশুর সামনে নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিন
শিশুর জন্য সঠিক পরিবেশ নির্বাচন করতে হবে
থেরাপিস্টের সহায়তা নিতে পারেন
পরিশেষে

শিশুর রাগ ও জেদ নিয়ন্ত্রণে যা করতে হবেঃ

সাধারণত শিশুরা খুব সহজেই রেগে যেতে পারে। তবে সব শিশু কিন্তু একরকম হয় না। মূলত একেক শিশুদের আবেগ ও সংবেদনশীলতা একেক রকম হয়ে থাকে। আর এক্ষেত্রে শিশুর অভিভাবক হিসেবে বিশেষ করে বাবা-মাকেই শিশুদের রাগের ধরণ এবং কারণ বুঝে ব্যবস্থা নিতে হয়। সাধারণত আমরা জানি যে, মস্তিস্কের একটি বিশেষ অংশ এই আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আবার কিছু শিশুর রাগের ভাষা বোঝাতে হাত-পা অর্থাৎ শরীরী ভাষার সাহায্য নেয়। এর কারণ হলো শিশুদের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে অনুভূতি প্রকাশে সমস্যা থাকে, ফলে সে তার আবেগ প্রকাশ করতে শরীরী ভাষার সাহায্য নিয়ে থাকে।

আরও পড়ুনঃ গরমকালে শিশুর যত্ন কিভাবে নিতে হয়

আবার অনেক শিশু কিন্তু রেগে গেলে চিৎকার করে বা এমন কিছু কাজ করে যা দৃষ্টিকটু বা অনেক সময় লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ধরণের সমস্যা হওয়ার প্রকৃত কারণ হলো শিশুটি তার রাগ প্রকাশের সঠিক পন্থা জানে না। সুতরাং শিশুর রাগ ও জেদ নিয়ন্ত্রণে যেটি করতে হবে তা হলো-নিজেকে শান্ত রাখতে হবে, শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে, অনেক সময় কাছে টেনে নিয়ে বা আদর করেও শিশুর রাগ বা জেদ কমানো যেতে পারে, শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়তা করা, শিশুর সাথে সরাসরি কথা বলতে হবে যে সে কি চাই, নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে, প্রয়োজনে শিশুর জন্য সঠিক বা উপযুক্ত পরিবেশ নির্বাচন করতে হবে, শিশুকে সব জায়গায় নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার মানসিকতা, আপনার শিশুটিকে যাতে অন্যদের সাথে মেশার সুযোগ পায় সে ব্যবস্থা করে দিতে হবে, অনেক সময় শিশুর রাগকে গুরুত্ব না দেয়া আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিশুর কান্না থামাতে জোর না করা এবং সর্বোপরি শিশুর রাগ যদি নিয়মিত বা একঘেয়েমি মনে হয়, তাহলে থেরাপিস্টের সহায়তা নিতে পারেন। অর্থাৎ শিশুর রাগ ও জেদ নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত সময় ব্যয় করতে হবে, আর নিম্নে উপরোক্ত পরামর্শগুলি আরও বিস্তারিত ভাবে জানার জন্য বর্ণিত হলোঃ

শিশুর কান্না থামাতে জোর না করাই ভালোঃ

শিশুর রাগ ও জেদ নিয়ন্ত্রণে যা করতে হবে, তা হলো কিছু সময়ে শিশুরা জেদ করে, সেটা পরিবারের অন্যান্যদের সাথে অথবা বাইরে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে তার চাওয়া-পাওয়া না মেটানোর ফলে সে প্রচন্ড চিৎকার-চেঁচামেচি করছে। এ ধরণের পরিস্থিতিতে তাকে কান্না থামাতে জোর না করাই ভালো। কারণ যতই কান্না থামানোর চেষ্টা করবেন, আপনার শিশুটি ততই আরো বেশি করে কান্নাকাটি করবে। তাই তাকে একা থাকতে দিন, দেখবেন কিছুক্ষণ পর সে নিজে থেকেই শান্ত হয়ে যাবে।

শিশুকে স্পর্শ করা বা কাছে টেনে নেয়াঃ

খেয়াল করে দেখবেন যে, শিশুরা অনেক সময় কান্নাকাটি, জেদ বা চিৎকার করছে। এক্ষেত্রে আপনাকে কখনোই ধৈর্য্য হারানো চলবে না। এই রকম সময়গুলিতে অবশ্যই আপনাকে শিশুর মাতায় হাত বুলিয়ে তাকে কোলে তুলে নিতে হবে, প্রয়োজনে তাকে আপনার স্পর্শ অনুভব করতে দিন, দেখবেন শিশুরা শান্ত হয় যাবে। আসলে একজন নিকটতম আপনজন হিসেবে শিশুদের ছোট্ট মনে আপনার পরশ পেতে চাই, নির্ভারতা পেতে চাই, আপনার স্পর্শ অনুভব করতে চাই। তাই শিশুদেরেএ ধরণের জেদ, কান্নাকাটি বা চিৎকার করে থাকলে, চেষ্টা করবেন, তাকে কোলে নিয়ে আদর করতে, সে কেন এরকম করছে, তার কি দরকার, সে কি চাচ্ছে বা তার কোন শরীর খারাপের জন্যই কি সে এরকম করছে ইত্যাদি বিষয়গুলি শিশুর মা হিসেবে আপনাকেই খেয়াল করতে হবে।

নিজেকে শান্ত রাখতে হবেঃ

শিশুদের রাগের মুহুর্তে আপনি তার পাশে বসুন, নিজেকে শান্ত-স্বাভাবিক রেখে তার অভিযোগগুলি ধৈর্য্য সহকারে শুনুন, নরম সুরে তার সাথে কথা বলুন এবং তার মতামতকে গুরুত্ব দিন। পাশাপাশি তাকে বিভিন্ন উদাহরণ বা কোন কিছুর ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করুন। এতে করে শিশুরা বুঝতে পারবে যে, আপনি তার পাশে বা সাথে আছেন রাগ করলেও আপনি বিরক্ত হচ্ছেন না।

শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়তা করাঃ

আপনার সন্তানের আত্মবিশ্বাস এবং দৃঢ়তা তৈরি করতে সহায়তা করুন। শিশুকে শেখাতে হবে যে আক্রমণাত্মক না হয়ে তাদের অধিকার এবং পছন্দ-অপছন্দের বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করুন। এতে শিশুটি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং পরিস্থিতি মোকাবেলা করার দক্ষতা অর্জন করতে পারে। আর এতে করে শিশুটির অসহায়ত্ব বা হতাশার অনুভূতি থেকে ধীরে ধীরে রাগের সম্ভাবনাটি অনেকাংশে কমে যাবে।

শিশুকে সব জায়গায় ঘুরতে না নিয়ে যাওয়াঃ

অনেক শিশু আছে, যারা যে কোন জিনিসের জন্য আবদার করতে পারে। তাই আপনার শিশুকে এমন কোন জায়গায় নিয়ে যাবেন না, যেখানে সে কোন বিষয়ে আবদার করতে পারে। আসলে এ ধরনের বিষয়গুলোর জন্য বেশীর ভাগই অভিভাবকই দায়ী থাকে। কারণ সে তার সন্তানকে অতিরিক্ত ভালোবাসার জন্য এটা-ওটা দিয়ে অভ্যস্ত করে ফেলেছে। তাই সে শিশুটিকে যে কোন জায়গায় বিশেষ করে দোকানে বা নিত্য প্রয়োজনীয় কোন জিনিস ক্রয়ের ক্ষেত্রে যদি সে শিশুটিকে সেই জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে সে তখন কিছু নেয়ার জন্য বায়না ধরে, যা সামাল দেয়া অনেকটাই জটিল হয়ে পড়ে।

শিশুর রাগকে গুরুত্ব না দেয়াঃ

সাধারণত শিশুরা রাগ কররে তা খেয়াল করুন যে, সে ইচ্ছাকৃতভাবে চিৎকার-চেঁচামেচি করছে কিনা। যদি দেখেন যে, সে ইচ্ছাকৃতভাবে এসব করছে, তাহলে তাতে গুরুত্ব দেবেন না, অর্থাৎ তা এড়িয়ে যান। আপনার শিশুটি যদি দেখে যে সে গুরুত্ব পাচ্ছেনা, তাহলে একসময় নিজেই কান্নাকাটি বন্ধ করে দিবে।

শিশুর লক্ষ্য স্থির করে দিতে হবেঃ

অর্থাৎ আপনার শিশুটি যদি কোন কিছু চাওয়া মাত্রই পেয়ে যায়, তাহলে শিশুরা যে কোন জিনিসই চেয়ে বসে। আর যদি সে তা না পায় তাহলেই জেদ, চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে।

আরও পড়ুনঃ ছেলে ও মেয়ে শিশুর ৩০০+ নাম বাংলায় অর্থসহ

তাই অবশ্যই চাওয়া মাত্র তার আবদার সাথে সাথেই পুরণ করবেন না। এক্ষেত্রে আপনি তাকে শর্তপূরণ হিসেবে কয়েকটি লক্ষ্য স্থির করে দিন। অর্থাৎ আপনার শর্ত পূরণ হলেই তাকে সে জিনিসটি দিবেন।

অন্যদের সাথে মেশার সুযোগ করে দিতে হবেঃ

শিশুর পিছনে সবসময় না লেগে তাকে নানা কাজে ব্যস্ত রাখুন। হতে পারে তা ছবি আঁকা বা খেলাধুলা ইত্যাদি। উন্নত জীবনযাত্রাহেতু বর্তমানে শিশুরা অন্যান্য শিশুদের মেলামেশার সুযোগ পায়না। যার ফলে অন্য শিশুদের সাথে মেলামেশা করলে তার যে মানসিক স্বাস্থ্যের বৃদ্ধি ঘটবে এটা থেকে সে বঞ্চিত হয়।

শিশুর সাথে সরাসরি কথা বলাঃ

সরাসরি বা খোলামেলা আপনার সন্তানের সাথে কথা বলার মাধ্যমে তার রাগ নিয়ন্ত্রণে শব্দের শক্তি শেখান। অন্যের দোষারোপ করার পরিবর্তে নিজের অনুভূতি শান্ত ও দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করতে তাকে উৎসাহিত করতে পারেন। আবার তাকে সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠার জন্য তাকে ভালো ভালো কাজ করতে দিন।

শিশুর সামনে নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিনঃ

আজকাল এমন অনেক বাবা-মা আছেন, যারা শিশুকে শান্ত রাখার হাতিয়ার হিসেবে মোবাইল ফোন/টিভিতে কার্টুন ছেড়ে বসিয়ে রাখেন। এটা করা যাবে না, কারণ এতে করে শিশুটির আসক্তিতে মোবাইল বা কার্টুন অগ্রাধিকার পাবে এবং যখন কোন পরিস্থিতিতে সে এটি পাবে না, তখন সে প্রচন্ড জেদী মনোভাবের প্রদর্শন করবে। তাই শিশুর সামনে কখনোই মোবাইল ঘাটাঘাঁটি করা যাবে না, যখন তখন টিভি দেখা যাবে না।

শিশুর জন্য সঠিক পরিবেশ নির্বাচন করতে হবেঃ

অর্থাৎ শিশুদের যদি একটি সঠিক পরিবেশ দেওয়া না হয়, তাহলে সেই শিশুর মধ্যে নানা নেগেটিভ উপসর্গতা তৈরি হতে পারে। আসলে শিশুর জন্য একটি সঠিক এবং ভালো ও খোলামেলা পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ যদি তারা ভালোবাসা, সঠিক যত্ন এবং নিরাপদ পরিবেশ পায়, তাহলে তাদের আবেগ প্রকাশও তুলনামূলকভাবে কম হয়।

থেরাপিস্টের সহায়তা নিতে পারেনঃ

সাধারণত শিশুদের রাগ কমাতে বিভিন্ন ধরনের থেরাপির প্রয়োগ করে থাকে অনেকেই। যেমন-সেনসরি ইন্টিগ্রেশন থেরাপি এবং হাইড্রো তেরাপি। আসলে এই থেরাপিগুলো কিন্তু শিশুদের অনুভূতি ও আচরণের উন্নতির ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ থেরাপিষ্টের সাহায্য নিতে পারেন।

শিশুর রাগ ও জেদ নিয়ন্ত্রণে যা করতে হবে-পরিশেষেঃ

আসলে শিশুর আবেগ নিয়ন্ত্রণ শেখানোর ক্ষেত্রে তার মা-বাবার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একজন মা-বাবাই হচ্ছেন শিশুর প্রকৃত এবং একমাত্র কাছের মানুষ। মা-বাবার দায়িত্ব হলো সন্তানের বিকাশের পর্যায়গুলি নজরে রাখা। আজকের শিশুর রাগ ও জেদ নিয়ন্ত্রণে যা করতে হবে বিষয়ের আলোচনা/পরামর্শগুলি আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। কিছু কিছু মুহুর্তে শিশুদের রাগ এমনই হয়ে ওঠে যা সামলানো বাবা-মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই চাপের কারণ হয়ে দেখা দেয়।

আরও পড়ুনঃ ভেজানো চিনা বাদামের পুষ্টি গুণাবলী সমূহ

সুতরাং আজকের শিশুর রাগ ও জেদ নিয়ন্ত্রণে যা করতে হবে বিষয়ক আলোচনা যদি আপনার নিকট গ্রহণযোগ্য/সঠিক মনে হয়, তাহলে তা অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আসলে শিশুরা সবথেকে বেশি তার বাবা-মাকে ফলো করে থাকে। অর্থাৎ একজন পরিপূর্ণ শিশুর জন্য নিজের ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা, পরিবেশ এবং সর্বোপরি দায়িত্ববোধ থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। যাইহোক, আজকের শিশুর রাগ ও জেদ নিয়ন্ত্রণে যা করতে হবে বিষয়ক আর্টিকেলটিতে আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।