প্রতিদিন কয় ঘন্টা ঘুমানো উচিত?
সাধারণত একজন ব্যক্তির প্রতিদিন কয় ঘন্টা ঘুমানো উচিত? পরিপূর্ণ ঘুমের উপকারিতা কি বা কম ঘুমালে কি কি সমস্যা হতে পারে, বাচ্চাদের কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত এবং একজন সুস্থ ব্যক্তির দৈনিক কত ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন? ইত্যাদি সমস্ত বিষয়ে জানতে নিচের লেখাগুলো পড়ুন।
মানুষের শরীরের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘুমের প্রয়োজন হয়, কারণ পরিপূর্ণ ঘুম হলেই শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে।
পেজ সূচিপত্রঃ প্রতিদিন কয় ঘন্টা ঘুমানো উচিত?
প্রতিদিন কয় ঘন্টা ঘুমানো উচিত?
পরিপূর্ণ ঘুমের উপকারিতা কি?
কম ঘুমালে কি কি সমস্যা হয়?
বাচ্চাদের কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত?
একজন সুস্থ ব্যক্তির দৈনিক কত ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন?
৬ ঘন্টা ঘুম কি যথেষ্ট?
দিনে ঘুমানো কি ভালো?
রাতে কয়টার সময় ঘুমানো উচিত?
ভালো ঘুমের জন্য কি কি করা উচিত?
জাপানিরা কত ঘন্টা ঘুমায়?
পরিশেষে
প্রতিদিন কয় ঘন্টা ঘুমানো উচিত?
মূলত ঘুম হচ্ছে আমাদের শরীর ও মনের সুস্থ্যতার জন্য অন্যতম মাধ্যম। কারণ পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর ও মন যেমন ঠিকমত কাজ করে না, তেমনি শরীরে দেখা দেয় নানাপ্রকার সমস্যা বা অসুখ-বিসুখ। আসলে শরীরের জন্য পরিশ্রম, সঠিক খাদ্যাভাস এবং ঘুম দুটোই দরকার। প্রতিদিন কয় ঘন্টা ঘুমানো উচিত? এমন প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই বলে দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা ঘুমালেই যথেষ্ট, আবার কেউ কেউ বলে ৬-৭ ঘন্টা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কাদের জন্য বা কোন বয়সের ব্যক্তির জন্য দৈনিক ৭-৮ বা ৬-৭ ঘন্টা ঘুমানো উচিত? সুতরাং এ রকম দ্বিধাদ্বন্দ্বের কারণে বিজ্ঞানীরা ঘুমের প্রয়োজনীয়তা বা কোন বয়সে কতটুকু ঘুমানো উচিত ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে একটি নির্দেশিকা তৈরি করেছেন, যেমন- ১ থেকে ২ বছর বয়সী শিশুর জন্য প্রতিদিন ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন;
আরও পড়ুন: লেবু চা কিভাবে খেলে এর উপকারিতা মিলবে
আবার ৩ থেকে ৫ বছর বয়সের শিশুর জন্য ১০ থেকে ১৩ ঘন্টা ঘুমানোর প্রয়োজন; ৬ ধেতে ১৩ বছরের শিশুর জন্য ৯ থেকে ১১ ঘন্টা; ১৪ থেকে ১৭ বছরের কিশোরের জন্য ৮ থেকে ১০ ঘন্টা; ১৮ থেকে ২৫ বছরের যুবকের জন্য ৭ থেকে ৯ ঘন্টা; ২৬ তেকে ৬৪ বছরের প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৭ থেকে ৯ ঘন্টা এবং ৬৫ বছরের উপরে বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। আসলে সঠিক ঘুমের উপর নির্ভর করে নানাবিধ ক্রিয়াকলাপ, যেমন-হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখা, মস্তিস্কের তথ্য প্রক্রিয়াকরণে সহায়তা, শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, শরীরের নানা প্রকার কোষগুলো মেরামত ইত্যাদি সহ নানাবিধ উপকারিতা নির্ভর করে ঘুমের উপর।
পরিপূর্ণ ঘুমের উপকারিতা কি?
পরিপূর্ণ ঘুম হলে আমাদের মন শান্ত থাকে এবং মানসিক চাপ কমে, সঠিক হজমও এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীরে একটি এনার্জি তৈরি হয়। আমানের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ঘুম কিন্তু স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ায়। এক্ষেত্রে এটি প্রমাণিত যে, যারা যথাযথ বা পর্যাপ্ত ঘুমান, তারা কিন্তু তথ্য শিখতে বা মনে রাখতে বেশি সক্ষম হয়ে থাকে। কারণ সঠিক বা পরিপূর্ণ ঘুমের মাধ্যমে আমাদের ক্ষুধা, ওজন নিয়ন্ত্রণ সর্বোপরি শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
কম ঘুমালে কি কি সমস্যা হয়?
একজন ব্যক্তি সারাদিন পরিশ্রম করার পর বিশেষ করে রাত্রে যদি পরিপূর্ণ বা পর্যাপ্ত ঘুম না হয়, তাহলে তার প্রভাব সারাদিনের কাজের মধ্যে প্রভাব পড়ে। যেমন কোন কাজে মনোনিবেশে সমস্যা হয়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, শরীরের ক্লান্তিবোধ সৃষ্টি, হজমে সমস্যা, অরুচি, ঘন ঘন হাম তোলা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ স্থুলতা তৈরির মতো নানাবিধ স্বাস্থ্যজুঁকি বাড়তে পারে। সর্বোপরি শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং সেইসঙ্গে চোখে শুষ্কতা দেখা দেয়ার মত নানাবিধ সমস্যাও সৃষ্টি হয়ে থাকে।
বাচ্চাদের কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত?
সাধারণত বাচ্চাদের বয়স অনুযায়ী ঘুমের ভিন্নতা রয়েছে। কারণ একেক বয়সী বাচ্চাদের জন্য ঘুমের পরিমাণ হয় একেক রকম। যেমস-যেমন- ১ থেকে ২ বছর বয়সী শিশুর জন্য প্রতিদিন ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন; আবার ৩ থেকে ৫ বছর বয়সের শিশুর জন্য ১০ থেকে ১৩ ঘন্টা ঘুমানোর প্রয়োজন; ৬ ধেতে ১৩ বছরের শিশুর জন্য ৯ থেকে ১১ ঘন্টা; ১৪ থেকে ১৭ বছরের কিশোরের জন্য ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে যে, প্রতিটা শিশুরই খাওয়ার অভ্যাস আলাদা বা ভিন্ন হতে পারে কিন্তু বয়স অনুযায়ী তাদের পরিপূর্ণ বা পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা শিশুর বিকাশের জন্য অত্যন্ত জরুরী।
একজন সুস্থ ব্যক্তির দৈনিক কত ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন?
আসলে একজন ব্যক্তি যদি পরিপূর্ণ সুস্থ্য ও সবল থাকে, তাহলে তার জন্য প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘুমানো উচিত। এক্ষেত্রে যেমন- ১৮ থেকে ২৫ বছরের যুবকের জন্য ৭ থেকে ৯ ঘন্টা; ২৬ তেকে ৬৪ বছরের প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৭ থেকে ৯ ঘন্টা এবং ৬৫ বছরের উপরে বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো খুবই জরুরী এবং শরীরের জন্য তা একান্ত প্রয়োজন।
৬ ঘন্টা ঘুম কি যথেষ্ট?
মোটেও না। কারণ একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির জন্য প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এর থেকে যদি কম ঘুম হয়, তাহলে নানারকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। যেমন-ক্লান্তিভাব, মন খারাপ বা মেজাজ খিটখিটে স্বভাবের হয়ে যায় এবং যার ফলে বিরক্তি তৈরি হয়, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকি বাড়ে, হজম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দেয়, স্থুলতার বৃদ্ধি ঘটে, স্মৃতিশক্তির হ্রাস ঘটে ইত্যাদি।
দিনে ঘুমানো কি ভালো?
আমাদের উপমহাদেশের বেশ কিছু অঞ্চলে দুপুরে ভাত খাওয়ার পর একটু গড়াগড়ি অর্থাৎ ঘুমিয়ে নিয়ে থাকে। এটি একটি ভালো অভ্যাস বলা যেতে পারে। কারণ এতে করে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শরীরের বিরতি এবং সেইসাথে মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি এবং মেজাজ উন্নত করতে এই ভাত ঘুমটি অত্যন্ত উপকারী।
আরও পড়ুনঃ লেবুপানি খেলে পাবেন যেসব সুফলতা
কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, দিনের বেলায় যেন বেশি ঘুমিয়ে না থাকা হয়, কারণ দিনের বেলায় বেশি ঘুমালে তাতে রাত্রে ঘুম কম হবে, আর সেটা শরীরের জন্য খুবই খারাপ বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অর্থাৎ রাত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত না ঘুমাতে পারলে তা শরীরের নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাই দিনের বেলায় ঘুমানো যাবে তবে সেটা ৩০ মিনিট বা তার কিছু বেশি সময়।
রাতে কয়টার সময় ঘুমানো উচিত?
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণার তথ্য মতে, সাধারণত একজন ব্যক্তির রাত্রি ১০টার মধ্যে ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য সবচয়ে উপকারী। কিন্তু পরবর্তীতে আরও কিছু গবেষণার তথ্য অনুযায়ী দেখা গেছে যে, আসলে ১০ থেকে ১১ টার মধ্যে যদি ঘুমাতে যাওযা হয়, তাহলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে। অর্থাৎ এই অভ্যাসের ব্যতায় ঘটলে তা অনিদ্রায় পরিণত হবে এবং তার ফলে শরীরে নানাবিধ সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই সময়মত রাত্রের খাবার শেষ করে সঠিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়াটা শাররিক সুস্থ্যতার লক্ষণ হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
ভালো ঘুমের জন্য কি কি করা উচিত?
অনেকেই আছে, যারা নির্দিষ্ট সময়ে বিছানায় ঘুমাতে গিয়ে টিভি ছেড়ে দেখতে থাকেন। আবার অনেকে বিছানায় উঠে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আসলে এগুলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। অথবা আপনার নির্ধারিত ঘুমের সময় কমিয়ে দিয়ে থাকে। খেয়াল করে দেখবেন, সকালে উঠতে অনেক সময় দেরী হয়ে যায়, অর্থাৎ সঠিক মাত্রায় ঘুম সম্পন্ন না হওয়ার কারণে। তাই ভালো ঘুমের জন্য আপনার দরকার হলো-প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন; বিছানায় ঘুমাতে যাওয়ার অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট আগে মোবাইল এবং টিভির স্ক্রিন দেখা এড়িয়ে চলুন; চেষ্টা করবেন শান্ত পরিবেশে ঘুমাতে; অবশ্যই ঘুমের আগে কোন প্রকার ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান করবেন না এবং সর্বোপরি প্রতিদিন একই সময়ে রাত্রের খাওয়া ও পানি পান করুন।
জাপানিরা কত ঘন্টা ঘুমায়?
বিভিন্ন সমীক্ষা বা জরিপের সূত্র অনুযায়ী বলা যেতে পারে যে, সাধারণত জাপানিরা অন্যান্য দেশের তুলনায় কম ঘুমিয়ে থাকে। যেমন-সেখানে পুরুষরা সাধারণত ৬ ঘন্টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ঘুমায় আর নারীরা ঘুমায় ৬ ঘন্টা ২৬ মিনিট পর্যন্ত।
প্রতিদিন কয় ঘন্টা ঘুমানো উচিত?-পরিশেষেঃ
আসলে একজন মানুষ প্রতিদিন কয় ঘন্টা ঘুমাবে এটা নির্ভর করে অনেকটা ব্যক্তির চিন্তা-ভাবনা, সচেতনতা বা দূরদর্শিতার উপর। কারণ এমন অনেক বিষয়ই আছে, যেগুলো আমরা খুব সহজেই এড়িয়ে যায় অথবা উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে থাকি। মানুষের ব্যক্তি জীবনে অনেক নিয়মই মেনে চলতে হয়, কিন্তু আমরা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তা দেখেও না দেখে থাকি। ঠিক তেমনই একজন মানুষের প্রতিদিন কয় ঘন্টা ঘুমানো উচিত? সে বিষয়টিও দেখা যেতে পারে। আর সবথেকে বড় বিষয় হলো ব্যক্তি জীবনের জন্য একটা নির্দিষ্ট গন্ডি তৈরি করা, যদি তা অন্যের ইচ্ছা বা অনিচ্ছার উপরে ছেড়ে দেয়া হয়, তাহলে ফলাফল কি হতে পারে, আশাকরি তা বুঝতে পারছেন? যাইহোক আজকের আর্টিকেলে উপরে বর্ণিত পরামর্শগুলি আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।
আরও পড়ুনঃ শীতে সুস্থ্য থাকতে হলে কি করবেন, কি করবেন না
সুতরাং যদি কোন কারণে আজকের প্রতিদিন কয় ঘন্টা ঘুমানো উচিত? বিষয়টি আপনার ভালো লেগে থাকে বা এর থেকে প্রাপ্ত কোন পরামর্শে যদি উপকৃত মনে করেন, তাহলে তা অবশ্যই অন্যদের শেয়ার করতে পারেন। এ ছাড়াও যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে তাও কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। পরিশেষে আজকের আর্টিকেলে প্রতিদিন কয় ঘন্টা ঘুমানো উচিত? আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ ধরে সম্পৃক্ততার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url