লেবু চা কিভাবে খেলে এর উপকারিতা মিলবে

লেবু চা কিভাবে খেলে এর উপকারিতা মিলবে, দিনে কতবার লেবু চা পান করা উটিত? লেবু চা কেন খাবেন, লেবু চা এর অপকারিতাসমূহ এবং সর্বোপরি লেবু চা কিভাবে বানানো যায় ইত্যাদি সমস্ত বিষয়াদি জানতে নিচের লেখাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
লেবু-চা-কিভাবে-খেলে-এর-উপকারিতা-মিলবে
মূলত লেবু চা শরীরের জন্য অত্যন্ত ‍উপকারী, তবে তা নিয়মিত গ্রহণ করলে। ঘন ঘন বা অতিরিক্ত লেবু চা শরীরে নানরকম ক্ষতি সাধিত হতে পারে।

পেজ সূজিপত্রঃ লেবু চা কিভাবে খেলে এর উপকারিতা মিলবে

লেবু চা কিভাবে খেলে এর উপকারিতা মিলবে
দিনে কতবার লেবু চা পান করা উটিত?
লেবু চা কেন খাবেন
লেবু চা এর অপকারিতাসমূহ
লেবু চা কিভাবে বানানো যায়
পরিশেষে

লেবু চা কিভাবে খেলে এর উপকারিতা মিলবেঃ

সাধারণত লেবু চা সকলেই খালি পেটে পান করা উত্তম। আবার শরীরের হজম শক্তি উন্নত করতে এই লেবু চা কিন্তু সকালের নাস্তার পরেও পান করতে পারেন। এক্ষেত্রে একটি বিষয় আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো চায়ের সাথে লেবুর রস মেশানোর সময় অবশ্যই চা যেন গরম থাকে, অর্থাৎ গরম চায়ের মধ্যেই লেবুর রস মিশ্রিত করলে তার গুণাগুণ বৃদ্ধি ঘটে থাকে এবং সেইসাথে স্বাস্থ্যসম্মতও হয়। অর্থাৎ কখনোই লেবু চা খেলে তা একেবারেই ঠান্ডা না খাওয়াটা উত্তম। তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, চা পাতা ফুটানোর পর তা ছেঁকে তারপর সেই চায়ে লেবুর রস মিশ্রিত করবেন, কখনোই ফুটানো চায়ের মধ্যে লেবুর রস দিয়ে চা পাতা ফুটাবেন না, এতে করে হিতে বিপরীত ঘটতে পারে।

দিনে কতবার লেবু চা পান করা উটিত?

লেবু চা দিনে অন্তত এক কাপ থেকে দুই কাপ পর্যন্ত পান করা স্বাস্থ্যজনক ভাবে ভালো। সাধারণত যাদের সকালে খালি পেটে বা ঘুম থেকে উঠে বিছানায় চা খাওয়ার অভ্যাস নেই, সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের খালি পেটে লেবু চা না খাওয়াই উচিত। কারণ তাতে খারাপ লাগা তৈরি হতে পারে। আবার অনেকের ঘন ঘন চা পান করা অভ্যাস আছে, সেক্ষেত্রে সেই সমস্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই ঘন ঘন বা অতিরিক্ত লেবু চা পান করা উচিত নয়। কারণ এতে করে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে এবং সেইসাথে অ্যাসিডিটির সমস্যাও বাড়তে পারে। সুতরাং লেবু চা পরিমিত পান করাই স্বাস্থ্যসম্মত।

লেবু চা কেন খাবেনঃ

বর্তমানে আমরা অনেকেই চায়ের সাথে নানাভাবে জড়িয়ে আছি। অর্থাৎ কেউ লাল চা, লিকার চা, দুধ চা, কেউ বা লেবু, আদা চা, মসলা চা, দারুচিনি দিয়ে চা ইত্যাদি। অর্থাৎ এই চা আমরা বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন উপাদান দিয়ে পান করে থাকি। আবার এমনও হয় যে, যে লাল চা পান করেন, তিনি যে লেবু চা পান করেন না, ব্যাপারটা ঠিক তেমনটা নয়। যাইহোক, এই লেবু চা আমরা কেন খাবো তার কারণগুলো নিম্নোক্ত আলোচনা থেকে জেনে নিই।

আরও পড়ুনঃ প্রতিদিন গ্রিন টি খেলে কি হয়? গ্রিন টি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

সাধারণত যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি অথবা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের লেবু চা থেকে বিরত থাকাই উত্তম। কেননা, লেবু চা পান করলে তাতে শরীরের উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায় পাশাপাশি আবার ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রাও রাখে নিয়েন্ত্রণে।

জেনে রাখা ভালো যে, লেবু হচ্ছে সাইট্রাস পরিবারভুক্ত একটি উপাদন এবং এতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম। আর এই ভিটামিন সি এবং পটাশিয়াম শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। এ ছাড়াও লেবুতে পটাশিয়াম থাকার কারণে এটি হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

সাধারণত যাদের দাঁতের ব্যথাজনিত সমস্যা আছে বা মাড়ি থেকে রক্ত পড়া ছাড়াও মুখের প্রচণ্ড দুর্গন্ধ বের হয়, সাধারণত তাদের ক্ষেত্রে লেবু চা পান করা অত্যন্ত উপকারী। এ ছাড়াও বিভিন্ন কারণে অনেকের দাঁতে অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত দাগ পড়ে, সেক্ষেত্রে তাদের লেবু চা পানে এই ধরণের দাগ দূর করতে সহায়তা করবে।

অনেকেই আছেন, যারা অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তায় ভুগে থাকেন। অর্থাৎ এমন ক্ষেত্রে আপনি যদি লেবু চান পান করেন, তাহলে আপনার মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে যাবে, মন হয়ে উঠবে চাঙ্গা। কারণ লেবুর রসে ভিটামিন সি থাকায় তা শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

অনেক সময় গলা ব্যথা, মুখের ঘা এবং টনসিলের সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকে। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যে, লেবুর রসে আছে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী উপদানসমুহ। যার ফলে নিয়মিত লেবু চা পান করলে এসব সমস্যা থেকে ঘরোয়া বা প্রাকৃতিক ভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

অসাবধানতার কারণে অনেক সময় ত্বকে বিভিন্ন ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে থাকে, আবার ত্বকের উজ্জ্বলতার কারণেও লেবু চা অত্যন্ত উপকারী হিসেবে কাজ করে থাকে। কারণ লেবু চা পান করলে ত্বকে কোলাজনের মাত্রা বেড়ে যায়, আর এ কারণে ত্বকের ক্ষত ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে লেবু চা।

আরও পড়ুনঃ কিশমিশ ভেজানো পানি কখন খাওয়া সঠিক

অনেকেই আছে, যাদের চোখের নীচে কালদাগ দেখা যায়। আবার যে কোন কারণেই হোক না কেন ত্বকে অনেক সময় পোড়াভাহ দেখা দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে এসব সমস্যাগুলি দূর করতে লেবু চা অত্যন্ত উপকারী হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। অর্থাৎ লেবু চা পানে ত্বকের কোলাজন মাত্রা বৃদ্ধি হওয়ার ফলে এসব সমস্যা ঘরোয়া বা প্রাকৃতিকভাবে নিরায়ম করা সম্ভব হয়।

লেবু চা এর অপকারিতাসমূহঃ

ইতিমধ্যেই আমার জেনেছি যে, লেবু চা পানে স্বাস্থ্যগত নানান উপকারিতা পাওয়া যায়। কিন্তু প্রতিটা খাদ্যেরই দুইটা দিক থাকে, উপকারী ও অপকারী বা ভালো/খারাপ এবং সেটাও আমরা খুব ভালোভাবে জানি ও বুঝি। তাই যেহেতু আলোচনার বিষয়বস্তু লেবু চা, সেক্ষেত্রে এর অপকারিতাগুলিও আমাদের জানাটা খুবই জরুরী। যেমন-অতিরিক্ত লেবু চা পান করলে তাতে দাঁতের ক্ষয় হয়, হজমজনিত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, অর্থাৎ এর মধ্যে যেমন-বুক জ্বালাপোড়া বা অ্যাসিডিটির বৃদ্ধি। এ ছাড়াও চায়ে থাকা থিওফাইলিন নামক যৌগটি কিন্তু হজম প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়। আবার চায়ে ক্যাফেইন থাকার কারণেও ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি হয় বা অনিদ্রা হতে পারে। অনেকের আবার অতিরিক্ত চা পান করার ফলে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে শরীরে পানির ঘাটতি বা ডিহাইড্রেশন শুরু হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত লেবু চা পানের কারণে গর্ভপাতের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই লেবু চায়ের স্বাস্থ্যগত উপকার পেতে চাইলে অবশ্যই তা পরিমিত গ্রহণ করাই যুক্তিযুক্ত।

লেবু চা কিভাবে বানানো যায়ঃ

বিষয়টি যদিও আমরা অনেকেই জানি, তারপরেও কিছু বিষয় জেনে রাখা ভালো। যেমন-লেবু চা বানাতে প্রথমে পানি ফুটিয়ে নিতে হবে, এরপর তাতে চা-পাতা যোগ করে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে। এরপর পাত্র থেকে চা ছেঁকে নেওয়ার পরই তাতে লেবুর রস মেশাতে হবে। অনেকেই করেন কি, চা পাতা দেয়ার পরপরই লেবুর রস দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে তা ছেঁকে পান করে থাকেন। এক্ষেত্রে এটি কখনোই করা যাবে না, কারণ লেবুর রস দিয়ে চা ফুটিয়ে খেলে তা তেতো হয়ে যাবে। তবে আপনি ইচ্ছে করলে অবশ্যই অন্যান্য উপদান দিয়েও চায়ের স্বাদ ও রং আলাদা করে তা পান করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে পানি ফুটানোর সময় আদা কুচি, এলাচ বা দারুচিনি অথবা লবঙ্গ দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে তাতে চা পাতা দিয়ে ২-৩ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এরপর তা ছেঁকে নিয়ে পরিবেশন করতে পারেন।

লেবু চা কিভাবে খেলে এর উপকারিতা মিলবে-পরিশেষেঃ

আসলে প্রকৃতি সৃষ্ট যে কোন খাদ্যের মধ্যেই কোন না কোন গুণ বিদ্যমান। কিন্তু আমরা এর প্রয়োগ বিধি না জানার কারণে প্রকৃত উপকার থেকে বঞ্চিত হয়। সুতরাং আজকের লেবু চা কিভাবে খেলে এর উপকারিতা মিলবে সে সম্পর্কে উপরোক্ত পরামর্শগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবং আশাকরি তা আপনারা বুঝতে পেরেছেন। একটা প্রশ্ন আপনাদের মাথায় আসতেই পারে যে, শুধু লেবু খেলেই তো হয়, তাতেই তো সব উপকারিতা। কিন্তু লেবু এর সাথে আবার চা যোগ করা হচ্ছে কেন? আসলে চায়ের মধ্যে যে গুণাবলীগুলো আছে তা না হয় বাদই দিলাম, কিন্তু চা শরীরকে সতেজ ও উদ্যমী রাখতে সহায়তা করে থাকে এবং সেইসঙ্গে এতে থাকা বিভিন্ন উপাদানগুলি ইনসুলিনকে সঠিকভাবে কাজ করতেও সহায়তা করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ শীতে সুস্থ্য থাকতে হলে কি করবেন, কি করবেন না

যাইহোক লেবু চা কিভাবে খেলে এর উপকারিতা মিলবে সম্পর্কিত আলোচনায় যদি আপনার কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে, তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। লেবু চা খেতে হবে আসলে পরিমিত, কোনমতেই বেশী না খাওয়াই স্বাস্ব্যগত ভাবে ভালো। অনেকেই আছে, যারা চা খায় না, আবার অনেকেই লেবু খাই না। সুতরাং আজকের লেবু চা কিভাবে খেলে এর উপকারিতা মিলবে বিষয়ক আর্টিকেলটি আপনার নিকট গ্রহণযোগ্য বা যুক্তিযুক্ত মনে হয়, তাহলে অবশ্যই তা অন্যদের শেয়ার করতে পারেন। পরিশেষে লেবু চা কিভাবে খেলে এর উপকারিতা মিলবে বিষয়ক আর্টিকেল আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতি এবং সম্পৃক্ত থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।