চুল ঘন ও কালো করতে চান, জেনে নিন সহজ ১০টি উপায়

ঘন ও কালো চুল সবারই পছন্দ। তাই চুল ঘন ও কালো করতে চান তহেল জেনে নিন সহজ ১০টি উপায় সম্পর্কে।
চুল-ঘন-ও-কালো-করতে-চান, জেনে-নিন-সহজ-১০টি-উপায়
মূলত ঘন ও কালো চুলের মধ্যে ঘন চুল নির্ভর করে মাথার স্ক্যাল্পের উপর আর কালো চুল নির্ভর করে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান, খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্য সচেতনতা ইত্যাদি বিষয়ের উপর।

পেজ সূচিপত্র: চুল ঘন ও কালো করতে চান, জেনে নিন সহজ ১০টি উপায় (Want to make your hair thicker and blacker, know 10 easy ways)
চুল ঘন ও কালো করার ধাপসমূহ
পাতলা চুল ঘন করার উপায়সমূহ
বাচ্চাদের পাতলা চুল ঘন করার উপায়
চুল ঘন ও কালো করতে চান, জেনে নিন সহজ ১০টি উপায়-পরিশেষে

চুল ঘন ও কালো করার ধাপসমূহ:

আসলে চুল ঘন ও কালো করতে চান, তাহলে জেনে নিন সহজ ১০টি উপায় বিষয়ক নিম্নোক্ত আর্টিকেলটি আপনাকে পড়তে হবে।

পেঁয়াজের রস:
আপনার মাথার যেসব স্থানে চুল বেশি পাতলা, সেইসব স্থানে পেঁয়াজ কেটে ঘষতে পারেন। এতে করে সেখানকার ব্লাড সার্কুলেশন বাড়বে এবং নতুন চুল গজাতেও সহায়তা করে থাকে। অর্থাৎ হেয়ার ফলিকলের কোন অংশ যদি ক্ষতিগ্রস্ত থাকে, তাহলে তা নিয়মিত ব্যবহারে সেরে যায়। সাধারণত যাদের চুল পাতলা হয়ে থাকে, তাদের সপ্তাহে অন্তত ২ থেকে ৩ দিন এবং ১০-১২ মিনিট পর্যন্ত মাথার তালুতে পেঁয়াজ ঘষতে পারলে কিছুদিনের মধ্যে অবশ্যই ভালো ফল পাবেন।

আরও পড়ুন: সৌন্দর্যচর্চায় তিলের তেলের ১০টি গুণাবলী সম্পর্কে জেনে নিন

ডিমের ব্যবহার:
চুলকে ঘন করতে চাইলে একটি আস্ত ডিমের শুধুমাত্র সাদা অংশটি ভালোভাবে ফেটিয়ে নিতে হবে। এরপর তা পরিস্কার চুলে সরাসরি হাত অথবা ব্রাশের সাহায্যে উপর থেকে নীচ পর্যন্ত ভালোভাবে লাগাতে হবে। তবে এই পদ্ধতিটি অনেকে ঝামেলা মনে করে থাকেন, কেননা চুলে ডিম দিতে গেলে চুল জট বেঁধে এলোমেলো হয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে সাবধানে চুল আঁচড়ে নিতে পারেন। এরপর সম্ভব হলে ঝুটি করে অথবা শাওয়ার ক্যাপ পরে ২০-৩০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর নরমাল পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। তবে মনে রাখবেন, চুলে ডিম দিলে কখনও আলাদা করে কন্ডিশনার ব্যবহার করার দরকার হয়না।

অ্যালোভেরা জেল:
চুল ঘন করার ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা থেকে জেল তৈরি করুন, এরপর তাতে ৪ চামচ মধু ভালোভাবে মিশ্রিত করে তা সরাসরি চুল এবং মাথার তালুতে লাগাতে পারেন। এরপর ১০-১২ মিনিট অপেক্ষা করার পর তা কন্ডিশনার দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে পারেন।

আমলকী খাওয়া:
আমলকী ফ্ল্যাভোনয়েড ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা চুলের কোষগুলোকে প্রতিদিনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে থাকে। অর্থাৎ নিয়মিত আমলকী সেবন করলে পাকা চুল রোধ করতে এবং তা প্রাকৃতিকভাবে কালো রাখতে সহায়তা করে থাকে। কারণ আমলকিতে প্রদাহ-বিরোধী এবং শীতলকারী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা চুলকানি, খুশকি এবং মাথার ত্বকের সাধারণ জ্বালাপোড়া মোকাবেলায় সহায়তা করে থাকে।

কারি পাতা ব্যবহার:
সাধারণত কারিপাতায় প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন ও অ্যামিনো এসিড থাকায় তা চুল পড়া রোধ এবং চুলের ঘনত্ব ভালো করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মূলত চুল এক ধরনের ক্যারোটিন দিয়ে তৈরি, যা এক ধরনের প্রোটিন। অর্থাৎ নিয়মিত কারিপাতা খাওয়ার ফলে তা শরীরকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও এনজাইম সরবরাহ করে ক্যারোটিন উৎপাদনে সহায়তা করে থাকে। আবার কারিপাতায় থাকা ভিটামিন এ, বি, সি এবং ই থাকায় তা নিয়মিত খেতে পারলে অল্প সময়ের মধ্যেই চুল মসৃণ, চুলের গঠন উন্নত ও রেশমি করে তুলবে।

নিয়মিত চুল আঁচড়ানো:
চুল ঘন করতে চাইলে নিয়মিত চুল আঁচড়াতে হবে। কারণ প্রতিদিন চুল আঁচড়ানোর পরে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ার সাথে সাথে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং এর ফলে চুল লম্বা ও ঘন হয়ে থাকে। কিন্তু অনেকেই আছেন, যারা অলসতার কারণে প্রতিদিন চুল আঁচড়ান না। আবার অনেকেই আছেন, যারা অনেকদিন চুল না আঁচড়ানোর ফলে চুলের মধ্যে জটলা বাধা সত্ত্বেও জোরে জোরে চিরুনি আঁচড়ান। এতে চুল ভেঙে চিরুনির সাথে চলে আসে। তাই চুল আঁচড়ানোর সময় ধীরে ধীরে এবং বদ দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করা উচিত।

স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করা:
চুলের বৃদ্ধি হওয়া এবং সুন্দর চুল রাখার অন্যতম শর্ত হচ্ছে নিয়মিত স্ক্যাল্প ম্যাসাজ। অর্থাৎ নিয়মিত ম্যাসাজ স্ক্যাল্পে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে, যার ফলে চুলের বৃদ্ধি ঘটে এবং স্ট্রং হয়। সাধারণত নারিকেল তেল অথবা অলিভ অয়েলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা পেপারমিন্ট অ্যাসেনশিয়াল অয়েল মিক্সড করে নিন। এরপর একটি বাটিতে গরম পানি নিয়ে তার ভেতরে তেলের বাটিটি রেখে গরম করে নিতে হবে। এবারে এই তেলটি স্ক্যাল্পে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে। এবং ৩০ মিনিট মাথায় উক্ত প্যাকটি মাথায় রেখে তারপর তা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

আরও পড়ুন: কখন চুলে সরিষার তেল ব্যবহার করবো - সরিষার তেলের নানান উপকারিতা

ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ:
শরীরে আয়রনের অভাবজনিত কারণে চুল পড়ে। তাই নিয়মিত ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। কারণ ভিটামিন সি শরীরে আয়রন শোষণ করার ফলে তা চুল পড়া কমাতে সহায়তা করে থাকে।

বায়োটিন গ্রহণ:
চুল ঘন ও চুল পড়া রোধ করতে বায়োটিন গ্রহণ করতে পারেন। অর্থাৎ বায়োটিন হলো এমন একটি ভিটামিন যা চুলের বৃদ্ধি এবং চুল পড়া রোধ করতে সহায়তা করে থাকে। সাধারণত গরুর কলিজা, শাক-সবজি, সয়াবিনে বায়োটিন বেশি থাকে। এ ছাড়াও চুলের যত্নে বায়োটিনযুক্ত শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।

পর্যাপ্ত পানি পান:
আসলে কম পানি পান করলে শরীরে দেখা দেয় নানা উপসর্গ। অর্থাৎ কম পানি পান করলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিয়ে থাকে, যার ফলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। আর শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে গেলে বা পানিশূন্যতা দেখা দেয়ার কারণে চুল পড়া বেড়ে যায়। তাই একজন মানুষের প্রতিদিন অন্তত ২-৩ লিটার পানি পান করা উচিত।

পাতলা চুল ঘন করার উপায়সমূহ:

পাতলা চুল ঘন ও কালো করতে চান তাহলে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করাই শ্রেয়। যেমন-মেথি (পাতলা চুল ঘন করার ক্ষেত্রে মেথি পেস্ট করে তা চুলের গোড়ায় লাগাতে হবে), আমলকী, অ্যালোভেরা জেল (চুলের গোড়ায় যদি অ্যালোভেরার জেল ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে চুল শক্তিশালী হয়ে থাকে), সবুজ চা ব্যাগ (গ্রিন-টি চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে), পর্যাপ্ত ঘুম (চুলকে ভালো রাখতে আপনাকে অবশ্যই পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে), ত্বকের ম্যাসাজ (যে কোন তেল অর্থাৎ নারিকেল, রোজমেরি তেল বা ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে নিয়মিত ত্বকে ম্যাসাজ করতে পারেন), নিয়মিত শরীরচর্চা, কেমিকেলযুক্ত পণ্য এড়িয়ে চলা, সুষম খাদ্যাভ্যাস, ভিটামিন ও মিনারেল জাতীয় খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদি।

বাচ্চাদের পাতলা চুল ঘন করার উপায়:

বাচ্চাদের চুল সাধারণত জন্ম থেকেই পাতলা হয়ে থাকে। তবে অবশ্যই বাচ্চাদের চুল ঘন করতে হলে প্রাকৃতিক উপদান ব্যবহার করাই যুক্তিযুক্ত। যেমন-নারিকেল তেল, কাঠবাদামের তেল, ক্যাস্টর অয়েল ইত্যাদি তেলগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে। অর্থাৎ এই তেলগুলি ব্যবহারের ফলে তা ত্বকের সংক্রমণ এবং প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে থাকে। এ ছাড়াও প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে মেথি বীজ, পেঁয়াজের রস, অ্যালোভেরা জেল, আমলকির গুঁড়া বা দই ব্যবহার করা যেতে পারে। সর্বোপরি বাচ্চাদের স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন-ভিটামিন, খনিজ সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করাতে হবে।

চুল ঘন ও কালো করতে চান, জেনে নিন সহজ ১০টি উপায়-পরিশেষে:

আসলে একটা বিষয় সবসময় মনে রাখবেন, আমরা শরীরের যে কোন সমস্যা তৈরি হওয়ার পর তা নিয়ে রীতিমত ছোটাছুটি বা ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে থাকি। কিন্তু একটি বিষয় কখনো কি ভেবেছেন যে, শারীরিক যে কোন সমস্যাই হঠাৎ করে সৃষ্টি হয় না। তা দীর্ঘদিনের অনিয়মের বহিঃপ্রকাশ ঘটে মাত্র, আর ঠিক তখনই আমরা ছোটাছুটি বা ডাক্তারের নিকট গিয়ে থাকি। যেমন-চুল পড়ে যাচ্চে, চুর পাতলা হয়ে যাচ্ছে অথবা আজকের আর্টিকেলে চুল ঘন ও কালো করতে চান, জেনে নিন সহজ ১০টি উপায় বিষয়ক আলোচনার মূল বিষয় হলো আমরা কেউই নিয়ম অনুযায়ী শারীরিক কর্তব্য ও দায়িত্বগুলি পালন করিনা।

আরও পড়ুন: চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার এবং চুল লম্বা করতে মেথির ব্যবহার বা মেথির কাজ কি

যাইহোক, আজকের চুল ঘন ও কালো করতে চান, জেনে নিন সহজ ১০টি উপায় বিষয়গুলি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই তা শেয়ার করতে পারেন। সর্বেূাপরি এতদ বিষয়ে যদি কোন মন্তন্য/পরামর্শ থাকে তাহলেও তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। পরিশেষে আজকের চুল ঘন ও কালো করতে চান, জেনে নিন সহজ ১০টি উপায় বিষয়ক আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ অংশগ্রহণ ও সম্পৃক্ততার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url