চিরতরে খুশকি দূর করতে মাথায় কি ব্যবহার করবেন

চিরতরে খুশকি দূর করতে মাথায় কি ব্যবহার করবেন তা জানতে নিম্নের আলোচনাগুলি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

চিরতরে-খুশকি-দূর-করতে-মাথায়-কি-ব্যবহার-করবেন

খুশকি হলো মাথার ত্বকের সমস্যা, যা বেশীর ভাগ মানুষের হয়ে থাকে। তবে কিছু প্রতিকারের মাধ্যমে মাথার খুশকি নিরাময় করা যেতে পারে।

সূচিপত্রঃ চিরতরে খুশকি দূর করতে মাথায় কি ব্যবহার করবেন

চিরতরে খুশকি দূর করতে মাথায় কি ব্যবহার করবেন
খুশকি কিভাবে নিরাময়যোগ্য?
আপেল সিডার ভিনেগার
তেঁতুল পানিতে গুলিয়ে ব্যবহার করুন
টকদই এর ব্যবহার
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
শেষ কথা

চিরতরে খুশকি দূর করতে মাথায় কি ব্যবহার করবেন:

  • মূলত চিরতরে খুশকি দূর করতে মাথায় কি ব্যবহার করবেন তার আলোকে বলা যেতে পারে যে, সারারাত মেথি ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে সবগুলো মেথি বেটে নিয়ে পেস্ট করে নিন। এরপর উক্ত পেস্টের সঙ্গে টক দই মিশিয়ে ভালোভাবে তা মিশ্রিত করে চুলে ভালোভাবে লাগান। অন্তত ৩০ মিনিট পর তা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • ৩ টেবিল চামচ পেঁয়াজের রস এবং দেড় টেবিল চামচ অলিভ অয়েল একসাথে ভালোভাবে মিশ্রণ করুন। এরপর এই প্যাকটি মাথার স্ক্যাল্পে বৃত্তাকার গতিতে আলতো হাতে ম্যাসাজ করুন। অন্তত ২ ঘন্টা পর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন।
  • ৪ টেবিল চামচ আদা বাটার সঙ্গে ৩ টেবিল চামচ টক দই ভালোভাবে মিশ্রিত করুন। এই হেয়ার প্যাকটি চুল এবং মাথার স্ক্যাল্পে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন এবং ২ ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন।

আরো পড়ুনঃ বিয়ের আগে যে কাজগুলো অবশ্যই করবেন

  • ঘরোয়া কিছু প্রতিকার রয়েছে খুশকির চিকিত্সার জন্য ভাল কাজ করতে পারে যদি অবস্থা গুরুতর না হয় তাহলে। যদি খুশকি গুরুতর হয় তাহলে আপনাকে এই সমস্যা সমাধানে ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে হতে পারে। কখনও কখনও আপনি যে শ্যাম্পুগুলি ব্যবহার করেন তা কোনও ভাল কাজ করে না এবং তখনই চিকিত্সার জন্য আপনাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হতে পারে। তাহলে চিরতরে খুশকি দূর করতে মাথায় কি ব্যবহার করবেন তা দেখে নিন।
  • চুলে শ্যাম্পু করার ৩০ মিনিট আগে চুলের গোড়ায় অ্যালোভেরা জেল ঘষে ঘষে লাগাতে হবে। এ পদ্ধতিটি নিয়মিত ব্যবহার করতে পারলে থীরে ধীরে কমে আসবে খুশকির প্রকোপ।
  • নারিকেল তেল ও লেবুর রস সম পরিমাণ নিয়ে একসঙ্গে মিশ্রিত করে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। এরপর ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিতে হবে।
  • ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল ও ২ টেবিল চামচ পেঁয়াজের রস একসঙ্গে ভালো করে মিশ্রিত করে নিন। এরপর তা স্ক্যার্পে লাগিয়ে কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করুন। অন্তত ১ ঘন্টা পর তা মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন।
  • ৪ টেবিল চামচ নিমপাতার রস, ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল এবং নারিকেল তেল একসাথে মিশ্রিত করে মাথার স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন যাতে চুলের গোড়ায় উক্ত মিশ্রণটি পৌঁছায়। অন্তত ১ ঘন্টা অপেক্ষা করার পর কন্ডিশনার শ্যাম্পু দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন।

খুশকি কিভাবে নিরাময়যোগ্য?

খুশকি সারাজীবনের জন্য নিরাময় করা যায় না তবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। জিঙ্ক পাইরিথিওন বা সেলেনিয়াম সালফাইডযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। এই অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ উপাদানগুলি আপনার ত্বকের কোষগুলি মরে যাওয়ার সময় ধীর করে দেয়। খুশকি যখন খুব বিরক্তিকর হয় তখন এই ধরনের শ্যাম্পু গুলো ব্যবহার করলে আরাম পাওয়া যায়।

খুশকি এমন একটি রোগ যা সবার হতে পারে। এটা শরীরের তেমন কোনো সমস্যা করেনা শুধু খুশকি হলে মাথায় চিটচিট করে এবং চুলকানি হয়। তাই খুশকি বিরক্তিকর হতে পারে। কিন্তু খুশকি অনেক চিকিৎসার পরেও একবারে ভালো করতে পারবেন না। কারণ যে চিকিৎসা খুশকির জন্য করা হয় তা যদি আপনি পরে বাদ দেন তাহলে আপনার আবার খুশকি হতে পারে। 

আপেল সিডার ভিনেগার:

বাড়িতে খুশকির চিকিত্সা করার জন্য এমন একটি উপায় প্রয়োজন খুশকি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এর জন্য আপেল সিডার ভিনেগার হল গুরুতর খুশকির চিকিৎসার জন্য সেরা প্রাকৃতিক প্রতিকারগুলির মধ্যে একটি বলা হয়। যাইহোক এটি ব্যবহার করতে কিছু নিয়ম মেনে একটা পেস্ট তৈরি করে তা মাথায় লাগাতে হবে। আপনি যদি এই পেস্ট নিয়ম করে সারাজীবন মাথায় লাগান তাহলে চিরতরে খুশকি দূর করতে পারবেন, প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপ:

  • পানিতে কিছু আপেল সিডার ভিনেগার যোগ করতে হবে, তবে পানি আর আপেল সিডার ভিনেগার সমান ভাবে নিতে হবে।
  • এরপর চুল ধুয়ে ফেলে মিশ্রণটি আপনার ভেজা চুলে লাগাতে হবে।
  • সেই সাথে তৈরীকৃত মিশ্রণটি চুলে খুব হালকাভাবে ম্যাসাজ করতে হবে।
  • সর্বোপরি ১৫ মিনিটের জন্য শুকিয়ে নিন এবং তারপরে ধুয়ে ফেলুন।

সাবধানতাঃ আপনি প্রতিবার মাথা গোসল করার সময় এটি করতে পারেন। এছাড়াও মনে রাখবেন যে আপনি আপনার চুলে অতিরিক্তভাবে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারবেন না এবং এর মানে হল যে এটি প্রতিদিন ব্যবহার করবেন না। কোনো সমস্যা যেন না হয় তাই দুই দিনে একবার এটা ব্যবহার করুন।

তেঁতুল পানিতে গুলিয়ে ব্যবহার করুন:

তেঁতুল যা এমন একটি উপাদান সব বাড়িতেই পাওয়া যায়। আপনি কি জানেন এই তেঁতুল দিয়ে খুশকির চিকিৎসা করার হয়। এটা নিয়মিত ভাবে আপনার মাথায় লাগালে খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটা যেভাবে ব্যবহার করবেন তা হল তেঁতুল পানিতে গুলিয়ে নিয়ে সেই পেস্ট মাথার চুলের গোঁড়ায় লাগিয়ে নিন। এটা লাগানোর পর ১০-১২ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

আরো পড়ুনঃ ভিটামিন ডি ও ই একসাথে খাওয়া যাবে কি

ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য কমপক্ষে সপ্তাহে দুইদিন এই পেস্ট ব্যবহার করুন। এতে আপনার মাথার খুশকি তো দূর হবেই সাথে সাথে মাথার চুলকানিও ভালো হয়ে যাবে। তবে মনে রাখবেন কোনো কিছুই খুব বেশি ভালো না। তাই সপ্তাহে দুইদিনের বেশি ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ খুব বেশি ব্যবহারে মাথায় জ্বালা হতে পারে।

টকদই এর ব্যবহার:

টকদই আমাদের জন্য খুবই উপকারি। টকদই চুল থেকে খুশকি দূর করতে এবং চুল কালো ও ঝলমলে করতে সাহায্য করে। শুধু চুলই নয় টকদই আমাদের শরীরের অনেক উপকারের সাথে সাথে পেটের চর্বি ও কমিয়ে দেয়। তাই টকদই খাওয়া আমাদের জন্যে খুব অনেক রোগের চিকিৎসা হিসেবে কাজ করে। 

যেভাবে টকদই ব্যবহার করবেনঃ এর একটি প্যাক হল ৬ টেবিল চামচ টকদই ভালোভাবে ফেটিয়ে নিতে হবে। এর সাথে ১ টেবিল চামচ বাটা মেহেদি মেশাতে হবে। এই পেস্টটি চুলের গোড়া সহ পুরো চুলে লাগিয়ে ৩০-৪০ মিনিট শুকিয়ে নেওয়ার পর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য সপ্তাহে ১ বার লাগান। এতে আপনার চুল খুশকি মুক্ত ঝলমলে ও রেসমি কালো হয়ে উঠবে।

এর আরেকটি প্যাক হল একটি ডিমের সাদা অংশের সাথে ৪ টেবিল চামচ টকদই ভালোভাবে ফেটিয়ে নিয়ে তাতে লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এই পেস্টটি মাথায় লাগিয়ে ২০মিনিট শুকিয়ে নিন। শুকানোর পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে ১ বার ব্যবহার করুন। চিরতরে খুশকি দূর করতে মাথায় কি ব্যবহার করবেন তা হল এটা নিয়মিত এক সপ্তাহ পর পর ব্যবহার করতে থাকুন।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড:

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আপনার শরীরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলি আপনার হার্ট, ইমিউন সিস্টেম এবং ফুসফুসের কার্যকারিতার জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও ওমেগা -৩ ত্বকের জন্য খুব ভালো কাজ করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মাথার ত্বক হাইড্রেশন রাখে, ক্ষত নিরাময় করে এবং অকাল বার্ধক্য রোধ করে।

আরো পড়ুনঃ মাথার স্ক্যাল্পে সমস্যা, সমাধানে কি পদক্ষেপ নেয়া যায়

ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি হল শুষ্ক চুল, শুষ্ক ত্বক এবং এমনকি খুশকি সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ কমাতে পারে যা জ্বালা এবং খুশকি ভালো করে। স্যামন, ট্রাউট এবং ম্যাকেরেলের মতো সামুদ্রিক মাছে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়। এছাড়াও অন্যান্য ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার যেমন ফ্ল্যাক্সসিড, চিয়া বীজ এবং আখরোট এসব খাওয়ার পরিমাণ বাড়ীয়ে আপনি খুশকি থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে পারেন।

চিরতরে খুশকি দূর করতে মাথায় কি ব্যবহার করবেন - শেষ কথা:

খুশকি সবার হতে পারে কিন্তু এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিন্তু চিরতরে একবারে ভালো করা যায়। আপনি খুশকির জন্য চিকিৎসা নিলে তখন তা ভালো হবে পরে যদি আপনি চুলের যত্ন নেওয়া বা খুশকির জন্য চিকিৎসা করা ছেড়ে দেন তাহলে আবার ফিরে আসতে পারে। তাই বলা যায় খুশকি একবারে ভালো করা না গেলেও কিছু নিয়ম বা কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চললে খুশকি নয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে যদি ঘরোয়া চিকিৎসায় ভালো না হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। উপরে আমরা চিরতরে খুশকি দূর করতে মাথায় কি ব্যবহার করবেন তার কিছু উপায় আলোচনা করেছি। আশা করি উপকৃত হবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url