পায়ের তালুতে ব্যথা উপশমের ঘরোয়া উপায়
পোস্ট সূচিপত্র: পায়ের তালুতে ব্যথা উপশমের ঘরোয়া উপায় (Home Remedies To Relieve Foot Pain)
কী কী কারণে পারে ব্যথা হতে পারে :
- সাধারণত প্রতিদিন যারা ৮-১০ ঘণ্টা টানা দাঁড়িয়ে কাজ করে থাকেন, তাদের মধ্যে পায়ের পাতায় তীব্র ব্যথা ও যন্ত্রণার লক্ষণ বেশি দেখা দেয়। এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিশ্রমের ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলি নিম্নরূপ হতে পারে, যেমন :
- শিরদাড়ার উপরে খুব চাপ পড়ে। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, লাম্বার স্পাইনে ক্রনিক ব্যথা হচ্ছে এবং ওই ব্যথা ক্রমশ পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
- অনেক সময় পায়ের তলার স্নায়ুগুলোর উপর চাপ পড়ার কারণে পায়ের পাতায় তীব্র ব্যথা শুরু হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভালো মানের জুতো না পরলে এই সমস্যা আরও বাড়ে।
আরও পড়ুন: কোমর ব্যথা হলে কি করণীয় - নিরাময় পদ্ধতিগুলি কি কি
- পায়ের পাতায় যে কার্ভ আছে, তাকে বলা হয় আর্চ অব দ্য ফুট। যারা সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন, তাদের ওই আর্চের উপরে অসম্ভব চাপ পড়ে। আর এর থেকে পায়ের তলায় নার্ভের উপর চাপ পড়ে ক্রনিক যন্ত্রণা শুরু হয়। সাধারণত যাদের ফ্ল্যাট ফুট অর্থাৎ আর্চ নেই, তাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা আরও বেশি।
- দীর্ঘক্ষণ সময় ধরে দাঁড়িয়ে কাজ করলে ভ্যারিকোস স্নায়ুর মতো সমস্যাও দেখা দেয়। এক্ষেত্রে পায়ের ধমনির ভাল্ভগুলো অকেজো হয়ে যায় এবং এতে রক্ত পায়ের শিরায় এসে জমতে থাকে এবং একপর্যায়ে শিরাগুলো দড়ির মতো ফুলে যায়।
- অনেক সময় সাইটিক নার্ভের কারণেও কোমর থেকে পা পর্যন্ত ব্যথা হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করলে তা স্নায়ুর উপরেও চাপ পড়ে এবং পেশি শক্ত হয়ে গেলেই ব্যথা শুরু হয়ে যায়। এক্ষেত্রে স্ট্রেচিং ব্যায়াম করলে অবশ্য এই সমস্যা থেকে মুক্তি পরিত্রাণ হয়ে থাকে।
- আবার পায়ের তালুতে ব্যথার অনেক কারণগুলোর মধ্যে প্লান্টার ফ্যাসাইটিস একটি অন্যতম। কেননা এটি খুবই বিরক্তিকর এবং বেদনাদায়ক, যা একজন মানুষের দৈনন্দিন চলাফেরায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে।
পায়ের ব্যথার নির্দিষ্ট কিছু কারণসমূহ:
- হঠাৎ খেলাধুলার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে।
- দীর্ঘ সময় একটানা দাঁড়িয়ে কাজ করল।
- অনেকেই পায়ে খুব শক্ত সোলের ভারী জুতা পরে, ফলে সে কারণেও ব্যথা হতে পারে।
- অনেক সময় যখন উঁচু-নিচু স্থানে হাঁটাচলা বা দৌড়াদৌড়ি করলেও পায়ে ব্যথা হতে পারে।
- বেশ কিছু রোগ যেমন- গাউট, এনকাইলোসিং স্পন্ডেলাইটিস, রেইটার্স ডিজিজ ইত্যাদি কারণে এ রোগ হতে পারে।
- হঠাৎ করেই পরিশ্রম বাড়িয়ে দিলে ইত্যাদি
চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শসমূহ:
- রোগ নির্ণয়ের জন্য এর ইতিহাসই যথেষ্ট। তেমন কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দরকার হয় না। তবে এ সংক্রান্ত অন্যান্য রোগ থেকে আলাদা করার জন্য এক্স-রে করা হয়।
- চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে জীবনযাত্রার পরিবর্তন, ওষুধ, ব্যায়াম ও ফিজিক্যাল থেরাপি। জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে ওজন বেশি থাকলে কমানো, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকা, নরম সোলের ফিট জুতা পরা, খালি পায়ে না হাঁটা, বিছানা থেকে নামার সময় নরম সোলের জুতা বা স্যান্ডেল পরে নামা, পায়ের তালুর ওপর অত্যধিক ভর না দেয়া ইত্যাদি।
- অতিরিক্ত ব্যথা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ব্যথানাশক ওষুধ অথবা ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে।
- প্লান্টার ফ্যাসা স্ট্রেস, ফুট সার্কল ও টো কার্ল ইত্যাদি ব্যায়াম করলে উপকার পাওয়া যায়।
- পায়ের তালুতে কিছু ম্যাসাজ করা যেতে পারে।
- ব্যায়ামের আগে ব্যথার জায়গায় বরফ ব্যবহার করা ভালো।
- ফিজিওথেরাপির মধ্যে আলট্রাসাউন্ড থেরাপি দেয়ার দরকার হয়।
- এ ছাড়া রাতের বেলা পায়ের তালুর অবস্থান ঠিক রাখার জন্য রেস্টিং প্যাডে স্পিন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
- সর্বোপরি, একজন ফিজিয়াট্রিস্ট বা ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে এ রোগের সমন্বিত চিকিৎসা নেয়া একান্ত প্রয়োজন।
পায়ে ব্যথার উপশমে করণীয় দিকগুলি:
- পায়ের তালুতে ব্যথা উপশমের ঘরোয়া উপায় বলতে ব্যথা উপশম বা লাঘব করার জন্য নিম্নেবর্ণিত কারণগুলি তুলে ধরা হলো:সব সময় নরম জুতা ব্যবহার করুন। জুতার মধ্যে নরম হিল কুশন ব্যবহার করতে পারেন।
- খালি পায়ে শক্ত স্থানে কখনো হাঁটাহাঁটি করবেন না।
- সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় ধীরে ধীরে হাতে সাপোর্ট দিয়ে উঠতে হবে, যাতে গোড়ালিতে বেশি চাপ না পড়ে।
- ব্যথার সময় কয়েক দিন ব্যায়াম করা যাবে না। ব্যথা কমে গেলে ব্যায়াম করবেন।
- দেহের সঠিক ওজন বজায় রাখতে হবে।
- ঘুম থেকে ওঠার পর অন্ততপক্ষে ১০ মিনিট গোড়ালি হাত দিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। এরপর বিছানা থেকে নামুন।
- অন্তত দিনে দুবার কুসুম গরম পানিতে ১০ মিনিট করে গোড়ালি ডুবিয়ে ব্যায়াম করুন।
- স্ট্রেচিং করুন। এতে প্ল্যান্টার ফ্যাসিয়া লিগামেন্টের নমনীয়তা, শক্তি ও প্রসারিত করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
- ব্যথা উপশমে আপনি যখন চেয়ারে বসে থাকবেন, তখন পায়ের নীচে অর্থাৎ পায়ের হিলে বলের মতো গরম পানির একটি নিন এবং বোতলটি অন্তত ১০ বার ঘোরাতে থাকেন। পরবর্তীতে পায়ের পাশ পরিবর্তন করুন এবং ধীরে ধীরে তাতে চাপ দিন।
পায়ে অসাড়তার সম্ভাব্য কারণগুলি কী?
- যখন আপনার পায়ে পর্যাপ্ত রক্ত না যায়, তখন এটি অসাড় বোধ করতে পারে।
- ডায়াবেটিসজনিত কারণে বা নার্ভ ড্যামেজ থাকলে বা আপনার স্নায়ু আঘাত প্রাপ্ত হলে, পা অসাড় যেতে পারে.
- অতিরিক্ত শক্ত জুতা যেগুলি পা চেপে ধরে সেগুলি কিন্তু স্নায়ুতে চাপ দিতে পারে এবং এর ফলে অসাড়তা সৃষ্টি করতে পারে।
- আপনি যদি আপনার পায়ে আঘাত করেন বা পেয়ে থাকেন, তবে এটি স্নায়ুর ক্ষতি করতে পারে এবং এটি পা অসাড় বোধ করতে পারে।
- অনেক সময় মেরুদণ্ডের সমস্যা, স্লিপড ডিস্কের মতো, যা আপনার পা অসাড় করে দিতে পারে।
- আপনার শরীরে যদি ভিটামিনের ঘাটতি থাকে অথবা পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন গ্রহণ করছেন না, যেমন B12, সেক্ষেত্রে আপনি আপনার পায়ে অসাড়তা অনুভব করতে পারেন।
- কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে আপনার পা অসাড় করে দিতে পারে।
- ভুলভাবে বসা বা দাঁড়ানো স্নায়ুর উপর চাপ দিতে পারে এবং আপনার পা অসাড় করে দিতে পারে।
পায়ের তালুতে ব্যথা উপশমের ঘরোয়া উপায় - শেষ কথা
পায়ের তালুতে ব্যথা উপশমের ঘরোয়া উপায় বলতে মূলত আমাদের শরীরটাকে বহন করে আমাদের পা দুটি। তাই সর্বাগ্রে আমাদের উচিত পায়ের প্রতি যত্নশীল হওয়া। আর সবথেকে বেশী সমস্যায় পড়ে থাকেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা। যেমন ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিকিৎসকগণ নরম সোলের স্নিকার্স জুতো পরার পরমর্শ দেন। আর সিলিকন সোল কিনতে পাওয়া যায়। সেটি খুব সহজেই জুতার মধ্যে ফিট করে নিতে পারেন। এছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে এবং সেইসঙ্গে পায়ের রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখতে হস্ট্রেচিং, সাইক্লিং এর মতো ব্যায়ামের অভ্যাস করতে হবে। তবে পায়ে যদি অসহ্য যন্ত্রণা করে তাহলে হালকা গরম পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে পা ডুবিয়ে রাখুন। ক্লান্তিও কাটবে আর পায়ের পাতার পেশিগুলোও আরাম পাবে।
আরও পড়ুন: মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
আজকের পায়ের তালুতে ব্যথা উপশমের ঘরোয়া উপায় সংক্রান্ত আলোচনাগুলি আপনাদের উপকারে আসবে বলে মনে করি এবং পরামর্শগুলিও যথেষ্ট সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি। এ ছাড়াও পরবর্তীতে অন্য কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে সেটাও কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। সর্বোপরি এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। পরিশেষে, এতোক্ষণ আমাদের সাথে পায়ের তালুতে ব্যথা উপশমের ঘরোয়া উপায় বিষয়ক আলোচ্য বিষয়ে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url