হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় যে সব পুষ্টি উপাদান
আমাদের দেহকে সঠিক ভাবে চালানোর জন্য দরকার মজবুত হাড়ের। আর এই হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় যে সব পুষ্টি উপাদান তা জানার দরকার।
প্রকৃতপক্ষে আমাদের সম্পূর্ণ দেহটাকে সার্বক্ষণিক চলাফেরায় সহায়তা করে আমাদেরই দুটি পা। কিন্তু এরও তো একটা ক্ষয় আছে। সুতরাং এই ক্ষয়রোধে আমাদের হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় যে সব পুষ্টি উপাদান সেগুলি বেশি পরিমানে খেতে হবে। তো চলুন জেনে নিই পুষ্টির নামগুলি:
পোস্ট সূচিপত্র: হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় যে সব পুষ্টি উপাদান (Nutrients that increase bone density)
ভূমিকা
ক্যালসিয়াম
ফসফরাস
ম্যাগনেসিয়াম
ভিটামিন ডি
জিংক
হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় যে সব পুষ্টি উপাদান-শেষ কথা
ভূমিকা:
মূলত মানুষের শরীর চালিত হয় খাদ্যের গুণে। আর এই খাদ্য গ্রহণ নির্বাচনে আমাদের হয় যতো বিপত্তি। এর মধ্যে হাড় ক্ষয় বা হাড় নরম হয়ে যাওয়া মোটামুটিভাবে একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসলে আমাদের শরীরের এই হাড়ের গঠন ও সুস্থতার জন্য দরকার বেশ কয়েকটি পুষ্টি উপাদান। বলাবাহুল্য যে, শৈশবকাল থেকেই এসব পুষ্টি উপাদানগুলি যদি যথেষ্ট পরিমাণে গ্রহণ করতে পারা যায়, তাহলে হাড় হবে মজবুত ও ঘন। বিশেষ করে হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় যে সব পুষ্টি উপাদান সেইগুলি অত্যন্ত জরুরি। হাড়ের মজবুতের জন্য ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন ডি, সি ও কে এবং জিংক সমৃদ্ধ খাবার।
ক্যালসিয়াম:
শরীরে হাড়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান উপাদানই হচ্ছে ক্যালসিয়াম। কারণ এই ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের হাড়ের ঘনত্বের ৭০% বহন করে।
আরও পড়ুন: ভিটামিন ডি ও ই একসাথে খাওয়া যাবে কি
এক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, যেমন-দুগ্দজাত দ্রব্য, সবুজ শাকসবজি, শুকনো বরই, মটরশুটি, মাছ, মাংস, কাজুবাদাম, অ্যাভোকাডো ইত্যাদি খাবারগুলো বেশি বেশি করে খেতে হবে।
ফসফরাস:
ফসফরাসও শরীরে ক্যালসিয়ামের সঙ্গে যু্ক্ত হয়ে হাইড্রক্সি এপেটাইট গঠনের মাধ্যমে তা হাড়ের ম্যাট্রিক্স তৈরিতে সাহায্য করে থাকে। তাই এক্ষেত্রে আপনি ফসফরাস সমৃদ্ধ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন। যেমন-লস্সি (দুগ্ধজাত খাবার), মাছ, মাংস, মুরগির মাংস, ডিম, বিনস, মটরশুটি, শাক, দুধ, পনির, দই ইত্যাদি।
ম্যাগনেসিয়াম:
ম্যাগনেসিয়াম হলো ক্যালসিয়ামের বিপাক প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে সাহায্য করে থাকে। এ ছাড়াও তা ভিটামিন-ডি ও ভিটামিন-কে, কে সক্রিয় ও শরীরের উপযোগী করার ক্ষেত্রে ম্যাগনেসিয়ামের গুরুত্ব অনেক। অর্থাৎ ম্যাগনেসিয়াম সম্পর্কযুক্ত খাবারগুলি হলো-সবুজ শাকসবজি (পালংশাক, কলমি শাক, সরিষার শাক), বাদাম ও বীজ (কুমড়ার বীজ, সূর্যমূখী বীজ, বাদাম, কাজুবাদাম, চীনাবাদাম), শস্য ও ডাল (ভুট্টা, মটরশুঁটি, ছোলা, সয়াবিন), অ্যাভোকাডো ইত্যাদি।
ভিটামিন ডি:
সাধারণত ভিটামিন ডি শরীরের অন্ত্রনালি থেকে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস শোষণ করতে সহায়তা করে থাকে। যার ফলে শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং তা হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সহায়তা করে। সাধারণত ভিটামিন ডি এর অভাবে শরীরে দেখা দেয় বিভিন্ন অসুখ, যেমন-অস্টিওম্যালসিয়া (হাড় ভঙ্গুর হয়ে ফ্যাকচার হয়ে যাওয়া), শিশুদের রিকেটস ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়
এক্ষেত্রে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারগুলি যেমন- ডিম বা ডিমের কুসুম, মাশরুম, অ্যাভোকাডো, দুগ্ধজাত পণ্য (দুধ, পনির, দই), সাইট্রাস জাতীয় ফল (কমলা, জাম্বুরা, লেবু), সবুজ শাকসবজি (সুইস চার্ড, কলার্ড গ্রিনস, শালগম শাক, কেল ইত্যাদি), মাছের তেল, আটা, রুটি, বার্লি ইত্যাদি।
জিংক:
জিংক আমাদের শরীরের হাড়ের কোষগুলি নতুন করে পুনর্গঠন করে। এ বাদে জিংক হাড়ের ক্ষত হওয়া বিভিন্ন কোষকে আগের অবস্থায় নেওয়ার ক্ষেত্রেও জিংক শরীরে কাজ করে। বিশেষ করে কোলাজেন হাড়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা তৈরিতে সাহায্য করে থাকে জিংক। তাই এক্ষেত্রে জিংক সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যেমন-লাল মাংস, ঝিনুক, সবজি, কাজু বাদাম, ওট, মাশরুম, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, দুদ্ঘজাত খাবার. ডার্ক চকোলেট ইত্যাদি।
হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় যে সব পুষ্টি উপাদান-শেষ কথা:
মূলত আজকের আর্টিকেলে হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় যে সব পুষ্টি উপাদান বিষয়ে আমরা উপরোক্ত বর্ণনাতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু একটি প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আর তাহলো, আমরা হাড়ের ক্ষয়রোধে অথবা শরীরকে শক্ত ও মজবুত রাখতে উপরোক্ত খাবারগুলি গ্রহণ করতেই পারি, কিন্তু তাতেই কি আমাদের সব সমস্যার সমাধান হবে। উত্তরটা কি হবে বলুন? ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’। আমার মতে ‘না’। কারণ উপরোক্ত খাদ্যগুলি গ্রহণ করার পাশাপাশি আমাকে বয়সের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, আমার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে খেয়াল রাখতে হবে, আমি কি খুব বেশি শারিরীক পরিশ্রম করি, আমি কি ভারি বোঝা এক স্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যাওয়া-আসা করি, আমি কি কখনো শরীরে আঘাত পেয়েছিলাম ইত্যাদি বিষয়গুলিও আপনার শক্ত মজবুত হাড় তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আরও পড়ুন: পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে ঘুমালে উপকার না অপকার
যাইহোক আজকের আর্টিকেলে হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় যে সব পুষ্টি উপাদান বিষয়ক আলোচনাটি আপনাদের উপকারে আসে তাহলে তা অন্যদের নিকট শেয়ার করতে পারেন। এ ছাড়াও যদি কোন পরামর্শ/মন্তব্য প্রদান করতে চান, তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। সর্বোপরি হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় যে সব পুষ্টি উপাদান বিষয়ক আলোচনায় দীর্ঘক্ষণ আপনার সম্পৃক্ততা আমাদের অনুপ্রাণিত করবে এবং সেইসঙ্গে আপনাকে জানাচ্ছি অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url