লিভার সিরোসিস কেন হয় - লিভার সিরোসিস থেকে ঘরোয়া উপায়ে মুক্তি
লিভার সিরোসিস কেন হয় - লিভার সিরোসিস থেকে ঘরোয়া উপায়ে মুক্তি কি কি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে, লিভার সিরোসিসের উল্লেখযোগ্য কারণ, লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায় এবং লিভার সিরোসিসের ঝুঁকিসমূহ ইত্যাদি বিষয়ে জানতে নীচের লেখাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
লিভার আমাদের শরীরের মধ্যে অনেক ধরণের কাজ করে থাকে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো হজমে সহায়তা, রক্ত পরিশোধনে সহায়তা এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলি নিঃসৃত করে থাকে।
পেজ সূচিপত্রঃ লিভার সিরোসিস কেন হয় - লিভার সিরোসিস থেকে ঘরোয়া উপায়ে মুক্তি
লিভার সিরোসিস কেন হয়?
লিভার সিরোসিস থেকে ঘরোয়া উপায়ে মুক্তি
লিভার সিরোসিসের উল্লেখযোগ্য কারণ
লিভার সিরোসিসের লক্ষণসমূহ
লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায়
লিভার সিরোসিসের ঝুঁকিসমূহ
পরিশেষে
লিভার সিরোসিস কেন হয়?
মূলত লিভার সিরোসিস লিভারের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণে হয়ে থাকে। আর এই ক্ষতির ফলে লিভারের সুস্থ্য টিস্যুগুলি ধীরে ধীরে দাগযুক্ত টিস্যুরূপে প্রতিস্থাপিত হয়, আর তার ফলে লিভারের স্বাভাবিক টিস্যুগুলি তার স্বাভাবিক কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় এবং মানব শরীরে গুরুত্বর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
লিভার সিরোসিস থেকে ঘরোয়া উপায়ে মুক্তিঃ
শুদুমাত্র ওষুধের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বেশ কিছু ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমেও লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তি মিলতে পারে। অর্থাৎ চলমান জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভাসে পরিবর্তনের মাধ্যমে লিভার সিরোসিস থেকে পরিত্রাণ হতে পারে। যেমন-
খাদ্যাভাসে পরিবর্তনঃ অর্থাৎ আমরা প্রতিনিয়তই যে খাদ্যগুলি গ্রহণ করি সেটি পুষ্টিকর কিনা, বা তার মধ্যে শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন পরিপূরক কিনা সেটা আমরা অনেকেই ভাবিনা। আসলে যে খাবারটি আমরা সাধারণত গ্রহণ করি তা পুষ্টিসমৃদ্ধ কিনা, অর্থাৎ খাবারটি কি সুষম, পুষ্টিসমৃদ্ধ, ফাইবার বেশি এবং তাতে সোডিয়ামের পরিমাণ কম আছে কিনা ঠিক এমন ধরণের খাদ্যই শরীরের লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধিত হতে পারে। এক্ষেত্রে আমার ফলমূল, শাকসবজি, গোটা শস্য ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় অনায়াসে সংযুক্ত করতে পারি।
শারীরিক পরিশ্রমঃ নিয়মিত এবং মাঝারি ধরণের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে, বিশেষ করে প্রদাহ কমাতে এবং শরীরকে সার্বিক সুস্থ্যতার জন্য নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম অত্যন্ত জরুরী।
ভেষজ পরিপূরকঃ অর্থাৎ লিভারকে সুস্থ্য রাখতে দুধের থিসল, হলুদ বা রসুনের মতো ভেষজ উপাদানগুলি খাদ্যাভাসে রাখাটা অত্যন্ত জরুরী। অর্থাৎ এইগুলি লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য প্রভূত সহায়তা এবং সেইসঙ্গে প্রদাহ কমাতেও দারুণ কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
ধুমপান ত্যাগ করাঃ লিভার সিরোসিসের ক্ষতি প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে ধুমপান ত্যাগ করতে হবে। অর্থাৎ এতে করে লিভার সিরোসিসের ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস পাবে।
অ্যালকোহল সেবনঃ লিভারকে সুস্থ্য রাখতে অবশ্যই অ্যালকোহল পরিত্যাগ করতে হবে। অর্থাৎ নিয়মিত অ্যালকোহল সেবনে তা লিভারের উপর নানারূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়ে থাকে, তাই লিভার সিরোসিস এড়াতে অবশ্যই অ্যালকোহল পরিত্যাগ করতে হবে।
মানসিক স্ট্রেসঃ সাধারণত যাদের মানসিক চাপ অত্যধিক বেশি হয়ে থাকে বা বিভিন্ন কারণে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়ে থাকে, এক্ষেত্রে তাদের মানসিক চাপ কমানোর উপায় হিসেবে বিভিন্ন যোগ ব্যায়াম, গভীর শ্বাস অথবা নানারকম শিথিলকরণ ব্যায়াম আছে, যা করতে পারলে লিভার সুস্থ্য থাকার নিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাবে।
লিভার সিরোসিসের উল্লেখযোগ্য কারণঃ
অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে তা সরাসরি লিভারের উপর প্রভাব পড়ে। অর্থাৎ নিয়মিত বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের কারনে লিভারের কোষ ধ্বংস হয়ে যায় এবং এভাবেই ধীরে ধীরে সিরোসিস তৈরি হয়।
আরও পড়ুনঃ অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি পেতে কি খাওয়া যেতে পারে
শরীরে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসসমূহ লিভাবে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করলে তা দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণের সৃষ্টি করে, আর এ রকম সমস্যা থেকে তা সিরোসিসের দিকে ধাবিত হতে থাকে।
দীর্ঘমেয়াদী ওষুধের ব্যবহারঃ
কিছু কিছু ওষুধের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের কারণে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে আর এর ফলে সিরোসিস হতে পারে।
অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণঃ
অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ এবং অনিয়মিত খাদ্যাভাসের কারণে লিভারে চর্বি জমে থাকে। আর এই প্রক্রিয়া যদি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে তাহলে তা সিরোসিসে রূপ নিতে থাকে।
রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শে থাকাঃ
সাধারণত যে সমস্ত ব্যক্তি রং, দ্রাবক, গ্যাস এবং রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শে কাজ করে থাকেন, তাদের লিভার কিন্তু ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং ফলাফল হলো লিভার সিরোসিস।
অতিরিক্ত স্থুলতাঃ
সাধারণত অতিরিক্ত স্থূলতা, ডায়াবেটিস বা উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হতে পারে, যা লিভারের প্রদাহ বাড়ানোর ফলে তা সিরোসিসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
জেনেটিক্যালি রোগঃ
অনেক সময় বংশগত কারণেও লিভার সিরোসিস হতে পারে। অর্থাৎ হেমোক্রোমাটোসিস বা উইলসন রোগের মত কিছু জেনেটিক্যালি রোগও লিভার সিরোসিসের কারণ হতে পারে।
লিভার সিরোসিসের লক্ষণসমূহঃ
সাধারণত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লিভার সিরোসিসের লক্ষণগুলি ব্যাপক পরিবর্তন হতে পারে বিশেষ করে এর তীব্রতার উপর। তবে প্রাথমিক ভাবে লিভার সিরোসিস হলে এর লক্ষণগুলি অনেকেই অনুভব করতে পারে না। নিম্নে কিছু লক্ষণসমূহ বর্ণিত হলো, যেমন-ক্লান্তি বা দুর্বলতা বোধ করা, খিদে কম লাগা বা ক্ষুধামন্দা ভাব, শরীরের ওজন ধীরে ধীরে হ্রাস পাওয়া, পেট ব্যথা বা অস্বস্তি ভাব সৃষ্টি, অনেক সময় পা ও পেট ফুলে যাওয়া (এডিমা), আবার অনেকের জন্ডিস দেখা দেয় (অর্থাৎ ত্বক বা চোখের হলুদ হওয়া), বমি বমি ভাব সৃষ্টি হওয়া বা বমি হওয়া, প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন অর্থাৎ গাঢ় রঙের প্রসাব হওয়া এবং সেইসঙ্গে হালকা রঙের মলত্যাগ করা, ত্বক ও চোখের পাতায় ছোট নুডলস তৈরি হওয়া সহ অন্যান্য সমস্যা তৈরি হয়।
লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায়ঃ
আসলে লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে, হেপাটাইটিস ভাইরাসের সংক্রমণ যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং সর্বোপরি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়া, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াও নিজেদের সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা।
আরও পড়ুনঃ মাথার স্ক্যাল্পে সমস্যা, সমাধানে কি পদক্ষেপ নেয়া যায়
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়াঃ
অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়া বলতে নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, ওজন নিয়ন্ত্রণের রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি করা এবং অতিরিক্ত ফাস্টফুড জাতীয় খাদ্য ও চর্বিযুক্ত খাদ্য পরিহার করা।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষুধ সেবনঃ
বর্তমানে আমরা সবাই ডাক্তার এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ অনেক সময় শরীরে নানারকম ব্যাথাজনিত সমস্যা (গ্যাসের ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, গা ব্যাথা, বমি বমি ভাব, সর্দি-কাশি, জ্বর ইত্যাদি) শুরু হলে আমরা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই নিজেই যে ঔষধটা ভালো মনে হয় তা খেয়ে ফেলি। এটা একদমই করা যাবে না। কারণ কোন ঔষধের কি সাইড ইফেক্ট আছে তা একমাত্র চিকিৎসকই বলতে পারেন। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষুধই সেবন করা ঠিক নয়।
হেপাটাইটিস রোগের সংক্রমণ থেকে দূরে থাকাঃ
অর্থাৎ হেপাটাইটিস বি ও সি আসলে ভাইরাস জাতীয় অসুখ, যা লিভার সিরোসিসের জন্য অন্যতম কারণ। তাই এই ধরণের সংক্রমণগুলি থেকে রক্ষা পেতে হলে নিরাপদ যৌন সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে (প্রয়োজনে কনডম ব্যবহার) এবং যে কোন টিকা বা ইনজেকশন বা রক্ত নেয়া থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাঃ
অর্থাৎ যাদের লিভার রোগের ঝুঁকি আছে বা যাদের লিভার রোগ আছে তাদের অবশ্যই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
লিভার সিরোসিসের ঝুঁকিসমূহঃ
লিভার সিরোসিসের ঝুঁকির বেশকিছু কারণ রয়েছে, চলুন জেনে নেয়ার চেষ্টা করি ঝুঁকিসমূহ কি কি হতে পারেঃ অনেকেই আছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে অ্যালকোহল সেবন করে থাকেন এবং অনেকেই সেটি আবার নিম্নমানেরও সেবন করে থাকে এক্ষেত্রে এটি লিভারের অন্যতম ঝূঁকি। যাদের দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি এর মত ভাইরাল সংক্রমণগুলি যদি সময়মত চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে এটিও লিভারের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি কারণ হতে পারে। শারীরিক অতিরিক্ত ওজন এবং ফ্যাটি লিভার ডিজিজও কিন্তু লিভার সিরোসিসের ঝুঁকি বাড়াতে সহায়তা করে থাকে। সবথেকে বড় বিষয় হচ্ছে লিভারের ক্ষতি হতে পারে এমন যে কোন রোগ বা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সময়োচিত জ্ঞান বা সচেতনতা দ্বারা তা প্রতিহত করা গেলে তা লিভারের ঝুঁকি হ্রাসে অনেকটা সহায়তা করবে।
লিভার সিরোসিস কেন হয় - লিভার সিরোসিস থেকে ঘরোয়া উপায়ে মুক্তি-পরিশেষেঃ
আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত একটি অঙ্গ হলো লিভার। তাই লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায় বা লিভারকে সুস্থ্য রাখতে বিভিন্ন ধরণের সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, যেমন-সবুজ শাকসবজি (পালংশাক, আরগুলা ইত্যাদি) এবং ক্রসিফেরাস সবজি যেমন-ব্রুকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, সরিষার শাক ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। এতে করে লিভারের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। এ ছাড়াও বিট, গাজর, পেঁয়াজ ও রসুন বেশী বেশী করে খেতে হবে। আশাকরি লিভার সিরোসিস কেন হয় - লিভার সিরোসিস থেকে ঘরোয়া উপায়ে মুক্তি কি তা উপরের আলোচনা থেকে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন।
আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক খাদ্যগুলি কী কী?
যাইহোক লিভারকে ভালো রাখতে আমরা লেবু, আদা, হলুদ, পুদিনা পাতা, শসা ইত্যাদি উপাদানগুলি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি এবং সেইসঙ্গে পর্যাপ্ত পানি পানের অভ্যাস, সঠিক সময়ে খাদ্য গ্রহণ ও পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস ইত্যাদি। আজকের লিভার সিরোসিস কেন হয় - লিভার সিরোসিস থেকে ঘরোয়া উপায়ে মুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। বর্ণিত আজকের লিভার সিরোসিস কেন হয় - লিভার সিরোসিস থেকে ঘরোয়া উপায়ে মুক্তি বিষয়ে আপনাদের দীর্ঘক্ষণ অংশগ্রহণ/উপস্থিতির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
বি.দ্র.: উপরে বর্ণিত লিভার সিরোসিস কেন হয় - লিভার সিরোসিস থেকে ঘরোয়া উপায়ে মুক্তি বিষয়ক আর্টিকেলটি সচেতনতা ও পরামর্শমূলক, কোন চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নই।

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url