স্ট্রোক প্রতিরোধে যা যা খাবেন
স্ট্রোকের ঝুঁকি হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই প্রাণ হারাচ্ছে নানা বয়সে। তাই স্ট্রোক প্রতিরোধে যা যা খাবেন তা জানতে এবং সেইসঙ্গে স্ট্রোক আসলে কীভাবে হয়, স্ট্রোক কয় ধরণের, স্ট্রোক হওয়ার প্রধান কারণ কি? স্ট্রোকের লক্ষণসমূহ ইত্যাদি বিষয়সমূহ জানতে নিচের লেখাটি অবশ্যই পড়ুন।
বর্তমানে সভ্যতার উৎকর্ষতায় বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত মানুষদের ৩০ বছর পেরোনোর আগেই স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মৃত্যুও হচ্ছে অনেকের।
পোস্ট সূচিপত্র: স্ট্রোক প্রতিরোধে যা যা খাবেন
স্ট্রোক প্রতিরোধে যা যা খাবেন
স্ট্রোক আসলে কীভাবে হয়
স্ট্রোক কয় ধরণের
স্ট্রোক হওয়ার প্রধান কারণ কি?
স্ট্রোকের লক্ষণসমূহ
পরিশেষে
স্ট্রোক প্রতিরোধে যা যা খাবেনঃ
শাকসবজিঃ স্ট্রোক প্রতিরোধে যা যা খাবেন এর মধ্যে অন্যতম পালং শাক, পুঁইশাক, লাউশাক, ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং প্রচুর ফাইবার থাকে। এ ছাড়াও ব্রুকলি, ফুলকপি ইত্যাদি ক্রুসিফেরাস সবজি, যা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখতে পারলে হৃদরোগের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে থাকে।
মাছঃ মাছে ওমেগা-৩ ও প্রোটিন থাকে, যা শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরলগুলো কমিয়ে হার্ট এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখে। যেহেতু মাছের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত কম থাকায় তা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে।
সাইট্রাসজাতীয় ফলঃ সাধারণত যে সমস্ত ফলগুলোতে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ রয়েছে, যেমন-লেবু, কমলা, জাম্বুরা ইত্যাদি খেতে পারলে তা শরীরের ফ্রি র্যাডিকেল দূর করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন: মাথার স্ক্যাল্পে সমস্যা, সমাধানে কি পদক্ষেপ নেয়া যায়
আখরোটঃ শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও দেহের প্রদাহ কমাতে আখরোট খাওয়া যেতে পারে, কেননা আখরোটে ওগেমা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা হৃদযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী। অর্থাৎ নিয়মিত যদি আখরোট খাওয়া হয়, তাহলে তা স্ট্রোক প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালনে সহায়তা করে থাকে।
টক দইঃ টক দই শরীরের রক্তনালীর স্বাস্থ্য বজায়সহ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং পেটের সমস্যা কমাতে অত্যন্ত সহায়ক। কারণ টক দইয়ে আছে ভিটামিন ডি, প্রোটিন এবং পটাশিয়ামের মত গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা।
অ্যাভোকাডোঃ অ্যাভোকাডোতে প্রচুর পরিমাণে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যেটি আমাদের শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে এবং সেইসঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাদাম ও বীজঃ বাদাম, তিসির বীজ, চিয়া বীজে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফাইবারসহ নানা উপদানসমূহ হৃদরোগের জন্য খুবই উপকারী। অর্থাৎ নিয়মিত খাদ্য তালিকায় উপরোক্ত খাদ্যগুলি রাখা যেতে পারে। কারণ স্ট্রোক প্রতিরোধের ক্ষেত্রে খাদ্যাভাস একটি অতিব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
গ্রিন-টিঃ স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে গ্রিন-টি খাওয়া যেতে পারে। কারণ গ্রিন-টিতে ক্যাটেচিন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান থাকায় তা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে থাকে। তবে অবশ্যই তা অতিরিক্ত পরিমাণে নয়, নিয়ম অনুযায়ী তবে তা নিয়মিত আপনার খাদ্য তালিকায় গ্রিন-টি পানের অভ্যস করে পারেন।
টমেটোঃ সাধারণত টমেটোতে থাকে লাইকোপিন নামক উপাদান, যা শরীরের জন্য একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। মূলত টমেটো শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে এবং সেইসঙ্গে স্ট্রোক প্রতিরোধে এটি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। সাধারণত টমেটো আমরা অনেকেই তাজা খেয়ে থাকি, সস দিয়ে আবার সালাদ বা করেও খাওয়া যেতে পারে, তবে অনেকেই টমেটোর টক বা চাটনি করেও খেয়ে থাকে। খেয়াল রাখবেন, টমেটোর প্রকৃত ভিটামিন পেতে হলে এটি যে কোন ভাবেই হোক,কাঁচা খাওয়াই ভালো।
ডার্ক চকোলেটঃ শরীরে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে ডার্ক চকোরেট এবং বেরির মতো ফ্ল্যাভোনয়েড সমৃদ্ধ খাবার সংযুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ এই খাদ্যগুলি রক্ত জমাট বাঁধা রোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। জেনে রাখা ভালো যে, স্ট্রোক হওয়ার অন্যতম কারণ কিন্তু শরীরের রক্ত সঞ্চালনে বাধাগ্রস্ততা।
ওজন নিয়ন্ত্রণঃ স্ট্রোক প্রতিরোধে আপনাকে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার উচ্চ অনুযায়ী কত ওজন হতে পারে, সেই অনুযায়ী আপনার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর পাশাপাশি সঠিক সময়ে খাদ্যাভাসের অভ্যাস। মূলত এই খাদ্যাভাসের অনিয়মের কারণেই শরীরে দেখা দেয় নানাবিধ সমস্যা এবং অসুস্থতা।
পানি পানঃ স্ট্রোক প্রতিরোধের অন্যতম একটি উপাদান হলো পর্যাপ্ত পানি পান করা। অর্থাৎ আপনার শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে হাইড্রেটেড থাকা অপরিহার্য। কারণ পানি শরীরের রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতিকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে থাকে।
সুষম খাদ্যঃ আপনার শরীরকে সুস্থ্য ও স্ট্রোক প্রতিরোধ প্রতিদিন আপনার খাদ্য তালিকাটি সুষম খাদ্য থাকা অত্যন্ত জরুরী। অর্থাৎ খাদ্য তালিকায় ভিটামিন, খনিজ পদার্থসহ অন্যান্য সব প্রয়োজনীয় উপাদান থাকতে হবে, যা আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অবদান রাখবে এবং সেইসঙ্গে স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে যাবে।
স্ট্রোক আসলে কীভাবে হয়ঃ
সাধারণত নানা অনিয়ম এবং বদভ্যাসের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা কোন সমস্যার বহিঃপ্রকাশই হচ্ছে স্ট্রোক। অর্থাৎ এর ফলে মস্তিস্কে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায় এবং মস্তিস্কের কোষগুলো দ্রুত পরিমাণে অক্সিজেন ও পুষ্টি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে থাকে। আর এ ধরণের বহিঃপ্রকাশ হওয়ার কারণে স্ট্রোক করে থাকে।
স্ট্রোক কয় ধরণেরঃ
সাধারণত স্ট্রোক ২ ধরণের হয়ে থাকে, যথা-১) ইস্কেমিক স্ট্রোক এবং ২) হেমোরেজিক স্ট্রোক। অর্থাৎ ইস্কেমিক স্ট্রোক ঘটে থাকে, যখন মানুষের মস্তিস্কের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাধে এবং তার ফলে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ লিভার সিরোসিস কেন হয় - লিভার সিরোসিস থেকে ঘরোয়া উপায়ে মুক্তি
তবে এই জমাট বাধার অন্যতম কারণ হলো হৃদরোগ। অপরদিকে হেমোরেজিক স্ট্রোক ঘটে, যখন মানুষের মস্তিস্কের রক্তনালী ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তবে এটি সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ বা অন্যান্য রক্তনালীর সমস্যার কারণে ঘটে থাকে।
ট্রানজিয়েন্ট ইস্কেমিক অ্যাটাকঃ এই স্ট্রোকটি ‘মিনি স্ট্রোক’ নামে বেশি পরিচিত। সাধারণত এই স্ট্রোকটিও উপরের ইস্কেমিক স্ট্রোকের মতই রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে বা হয়, কিন্তু এটি স্থায়ী হয় না। সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই স্ট্রোকটি কিন্তু মস্তিস্কের বৃহৎ কোন ক্ষতি করে না। আর এই ধরণের স্ট্রোক সাধারণত কয়েক মিনিট স্থায়ী হয় আবার ২৪ ঘন্টার মধ্যে তা বিবর্ণ হয়ে যায়। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, স্ট্রোক হওয়া কিন্তু শরীরের জন্য ভালো নয়, অর্থাৎ যার একবার স্ট্রোক হয়েছে, পরবর্তীতে তা স্ট্রোকের ঝুঁকি ৪ গুণ বেড়ে যায়।
স্ট্রোক হওয়ার প্রধান কারণ কি?
যদিও নানা অনিয়ম ও বদভ্যাসের কারণে স্ট্রোক হয়ে থাকে, তবে স্ট্রোক হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণগুলির মধ্যে যেমন-উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, নিয়মিত শরীর চর্চার অভাব, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জীবনযাপন, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি বিষয়গুলোকে দায়ী করা হয়ে থাকে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে বিষয়টা ঠিক এরকম যে, আমি শুধু ভালোমন্দ খেয়েই যাব, কিন্তু কোন পরিশ্রম করবো না, আবার খাবারের যে একটি নির্দিষ্ট সময় আছে, অনেকেই সেটাও মানে না, তার উপরে নানা ধরণের মানসিক চাপ ইত্যাদিও বিষয়গুলোও একজন মানুষের স্ট্রোক হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবেও চিহ্নিত করা যেতে পারে।
স্ট্রোকের লক্ষণসমূহঃ
হঠাৎ করেই শরীরের একপাশে অসাড়তা সৃষ্টি, যেমন-হতে পারে মুখ, হাত, পা ইত্যাদি। অনেকেই বাকশক্তি হারিয়ে ফেলে, অনেকেই হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যায়, ভারসাম্য বা সমন্বয়ের ক্ষতি হয়ে থাকে, অনেক সময় স্বাভাবিক চলাচলে বাধাগ্রস্ততা সৃষ্টি হয়ে থাকে, আবার অনেক সময় দৃষ্টিরও সমস্যা তৈরি হয়। অর্থাৎ স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করতে করতে হঠাৎ করেই সাময়িক সমস্যা তৈরি হলে অবশ্যই সহেচনতা অবলম্বন করা এবং সেইসাথে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করাটা অত্যন্ত জরুরী এবং সঠিক কাজ।
স্ট্রোক প্রতিরোধে যা যা খাবেন-পরিশেষেঃ
স্ট্রোক প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সতেচনতা বৃদ্ধি। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাদ্য, তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাদ্য, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন, অতিরিক্ত ধুমপান করা, অত্যধিক মানসিক চাপ, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস, অনিয়ন্ত্রিত ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি নানাবিধ কারণে স্ট্রোক হয়ে থাকে। তাই স্ট্রোক প্রতিরোধে যা যা খাবেন তা গ্রহণের মাধ্যমে তা হ্রাস করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ কাজু বাদাম যেভাবে খেলে মিলবে উপকারিতা
অর্থাৎ আজকের স্ট্রোক প্রতিরোধে যা যা খাবেন বিষয়ক আলোচনায় শুধুমাত্র স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য যে সমস্ত খাদ্য সহায়ক তার বিবরণাদিই তুলে ধরা হয়েছে। আশাকরি আপনারা তা বুঝতে ও জানতে পেরেছেন। মূল কথা হলো, স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের লক্ষ্যে, সাধারণত আমরা যে সমস্ত খাদ্যগুলি গ্রহণ করি তার প্রতি মনোযোগ দেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সবশেষে স্ট্রোক প্রতিরোধে যা যা খাবেন বিষয়ে আপনার যদি কোন মন্তব্য বা পরামর্শ প্রদান করতে চান, তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন এবং সেইসঙ্গে উপরোক্ত বর্ণিত বিবরণে আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতি ও অংশগ্রহণের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
___________________________________________________________________________________
বি.দ্র.: মূলত এই ব্লকে প্রদত্ত তথ্যগুলি শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞান এবং তথ্যের উদ্দেশ্যে প্রণীত, এটি কোন চিকিৎসা পরামর্শ নয়। তবে চিকিৎসা সংক্রান্ত যে কোন উদ্বেগের জন্য অবশ্যই একজন যোগ্যতাসম্পন্ন এবং স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন।

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url