ধুন্দলের উপকারিতা, ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন

ধুন্দল অনেকের নিকট একটি পরিচিত সবজি হলেও মূলত বর্ষাকালেই এই সবজিটি বেশি উৎপন্ন হয়ে থাকে। আজকে এই ধুন্দলের উপকারিতা, ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন তা জানার চেষ্টা করবো।
ধুন্দলের বৈজ্ঞানিক নাম Luffa Cylindrica। মূলত ধুন্দল একটি লম্বা ও সবুজ রঙের সবজি, যার স্বাদ হালকা এবং রান্না করলেই তা নরম হয়ে যায়। আসলে এই ধুন্দলের রয়েছে নানান পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা। তাই আজকে এই ধুন্দলের উপকারিতা, ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন ইত্যাদি বিষয়গুলো নিম্নোক্ত আলোচনা থেকে জানতে পারবেন।

পোস্ট সূচিপত্র: ধুন্দলের উপকারিতা, ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন (Benefits of Dhundal, why should you include Dhundal in your diet?)
ধুন্দলের পুষ্টিগুণাবলীসমূহ
ধুন্দলের উপকারিতাসমূহ
ধুন্দল কখন খাওয়া উচিত
ধুন্দলের রান্না প্রক্রিয়াসমূহ
ধুন্দলের উপকারিতা, ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন-পরিশেষে

ধুন্দলের পুষ্টিগুণাবলীসমূহ:

মূলত ধুন্দলের উপকারিতা, ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন তার অন্যতম কারণ হলো এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, ভিটামিন সি ও এ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফোলেটসহ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য, হার্ট সুস্থ্য রাখে এবং ত্বক ও চুলকে সতেজ করে থাকে। অর্থাৎ এভাবে যদি ব্যাখ্যা করা যায়, তাহলে ধারণাটা আরও পরিস্কার হয়ে উঠবে আপনাদের কাছে। যেমন-

আরও পড়ুন: ছোট মাছ খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায়

১০০ গ্রাম একটি ধুন্দল সবজিতে যা রয়েছে-
জলীয় অংশ হচ্ছে ৯৩.৯৫ শতাংশ, এতে শক্তি আছে-১৪-২০ কিলো ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট আছে-৩.০ গ্রাম, প্রোটিন পাওয়া যাবে ০.৬ গ্রাম, ফ্যাট-০.১ গ্রাম, ফাইবার অংশ রয়েছে-০.৮ গ্রাম, এতে ভিটামিন সি রয়েছে ১০.১৩ মিলিগ্রাম, বিটা ক্যারোটিন আছে-১০০-১৫০ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম আছে-২০-২৫ মিলিগ্রাম, আয়রন বা লোহা রয়েছে-০.৩ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম রয়েছে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম।

ধুন্দলের উপকারিতাসমূহ:

মূলত ধুন্দলের অনেক উপকারিতা রয়েছে, অর্থাৎ ধুন্দলের উপকারিতা, ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন তা নিচের বর্ণনাগুলি থেকে জানতে পারবেন।

ওজন কমাতে সহায়তা:
সাধারণত ধুন্দল একটি ক্যালোরি সমৃদ্ধ সবজি। কারণ ধুন্দল খাওয়ার ফলে পেট দীর্ঘ সময় ধরে ভরাট থাকে, ফলে তা খাওয়ার প্রবণতাকে কমিয়ে দেয় ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা:
আসলে ধুন্দলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ রয়েছে, যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে থাকে। অর্থাৎ নিয়মিত ধুন্দল খেলে তা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং পরিপাকতন্ত্র সুস্থ্য থাকে।

ত্বক ও চুলের গোড়া মবজুত করে:
কারণ ধুন্দলে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদানটি ত্বকের কোষ সজীব রাখতে সহয়েতা করে থাকে এবং ভিটামিন সি ও বিটা ক্যারোটিন ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিসহ বার্ধক্যজনিত রেখা প্রতিরোধ করে। এ ছাড়াও এটি চুলের গোড়া মজবুতে সহায়তা করে থাকে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সহায়তা:
প্রকৃতপক্ষে ধুন্দলে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম। যার ফলে এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণসহ হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখতে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে থাকে।

রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:
সাধারণত সর্দি-কাশি, সাধারণ ঠান্ডা এবং যে কোন সংক্রমণ প্রতিরোধে ধুন্দল অত্যন্ত চমৎকার কাজ করে থাকে। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন সি, যা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে থাকে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা:
মূলত ধুন্দল রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায় না হঠাৎ করে, তাই ডায়াবেটিস রোগের জন্য এটি একটি নিরাপদ খাদ্য। কারণ ধুন্দলে রয়েছে শর্করা, যা ধীরে ধীরে রক্তে মিশে রক্তে গ্লুকোজ কমিয়ে দিয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: ডেউয়া ফল খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

গরমের সময় শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা:
অর্থাৎ গরমকালে ধুন্দল খেতে পারলে তা শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা এবং ক্লান্তিভাব ও হিট স্ট্রোকের আশংকাও কমে যায়।

ধুন্দল কিডনি ও লিভারে কার্যক্ষমতা বাড়ায়:
ধুন্দলে ডিটক্সিফাইং উপাদান রয়েছে, যার ফলে দেহের মধ্যে জমে থাকা দুষিত পদার্থগুলি ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে লিভার ও কিডনি সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে থাকে।

বাত ও জয়েন্টজনিত ব্যথায় দারুণ কার্যকরী:
সাধারণত প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসেবে এর পাতা, শিকড় ও রস ব্যবহারের মাধ্যমে অস্থিসন্ধির ব্যথা, ফোলাভাব কমাতে সহায়তা করে থাকে।

ধুন্দল কখন খাওয়া উচিত:

ধুন্দল দিনে বা রাতের খাবারের সাথে খাওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ দিনে খাবারের সাথে খেলে পেট ভরা থাকে আর রাত্রে খেলে হজম প্রক্রিয়া সহজ হয়।
ধুন্দল একটি জলীয় সবজি হওয়ায় এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে, যা গরমের সময় শরীরকে ঠান্ডা রাখতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

ধুন্দলের রান্না প্রক্রিয়াসমূহ:

ধুন্দল অনেকেই অনেক ভাবে রান্না করে থাকে। কেউ ভাজি করে, আবার কেউ কেউ মসুর ডালের মধ্যে গোল গোল করে ধুন্দল দিয়ে তা খেয়ে থাকে, অনেকেই ধুন্দল দিয়ে চিংড়ি, ধুন্দল ও পেঁয়াজের ভর্তা বানিয়েও খেয়ে থাকে, আবার অনেকে ধুন্দল দিয়ে সবজি খিঁচুড়ি বা স্যুপ তৈরি করেও খেয়ে থাকে। আবার অনেকে বিভিন্ন সবজির সাথে ধুন্দল দিয়েও তরকারি করে খেয়ে থাকে। কেউ কেউ ধুন্দল দিয়ে মাছের তরকারি রান্নাও করে থাকেন। তবে খেয়াল রাখবেন, ধুন্দল রান্না করার সময় যেন অতিরিক্ত তেল বা মশলা ব্যবহার না করা, রান্নাই অনেক সময় ধরে করা। কারণে এতে ধুন্দলের পুষ্টিগুণ কমে যেতে পারে।

ধুন্দলের উপকারিতা, ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন-পরিশেষে:

আসলে ধুন্দল যদিও আমাদের অনেকের নিকট নিরাপদ একটি সবজি, তথাপি যাদের পেটে গ্যাসের সমস্যা অথবা অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি রয়েছে, বিশেষ করে তাদের ক্ষেত্রে ধুন্দল সিদ্ধ অথবা ডালের সাথে খাওয়াই উত্তম। সুতরাং ধুন্দলের উপকারিতা, ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন আশাকরি তা উপেরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছেন।

আরও পড়ুন: যে কৌশলে চ্যাটজিপিটি হবে আপনার ব্যক্তিগত সহকারী

আবার যাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা আছে, তাদের এটি বেশি না খাওয়াই ভালো। বিশেষ করে শীতকালে বা ঠান্ডা আবহওয়ায় ধুন্দল না খাওয়াই ভালো। যাইহোক আজকের ধুন্দলের উপকারিতা, ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন বিষয়ে যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ প্রদান করতে চান, তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আসলে ধুন্দল শুধু পুষ্টিকর নয়, বরং এটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সবজি। পরিশেষে ধুন্দলের উপকারিতা, ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন বিষয়ক আলোচনা আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url