জেনে নিন, দারুচিনির যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

দারুচিনি একটি সুগন্ধি মসলা যা আমাদের সকলের নিকট অতি পরিচিত। তাই আজকে আমরা এই দারুচিনির যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
মূলত দারুচিনি খাবারে স্বাদ ও গন্ধ বাড়ানো সহ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আজকের আলোচনায় আমরা জানবো এই দারুচিনির পুষ্টিগুণ, উপকারিতা এবং এর ক্ষতিকর নানা দিক প্রসঙ্গে। সুতরাং জেনে নিন, দারুচিনির যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের লেখাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

পোস্ট সূচিপত্র: জেনে নিন, দারুচিনির যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ (Know all the benefits and nutritional properties of Cinnamon)
দারুচিনির পুষ্টিগুণাবলীসমূহ
দারুচিনির উপকারিতা সমুহ
দারুচিনির অপকারিতাসমূহ
জেনে নিন, দারুচিনির যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ-পরিশেষে

দারুচিনির পুষ্টিগুণাবলীসমূহ:

সাধারণত দারুচিনির যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ-এর মধ্যে রয়েছে:
যেমন-১০০ গ্রাম দারুচিনিতে রয়েছে-
  • জলের পরিমাণ: ১০.৫৮ গ্রাম
  • প্রোটিন রয়েছে: ৩.৯৯ গ্রাম
  • ফ্যাট আছে: ১.২৪ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট রয়েছে: ৮০.৫৯ গ্রাম
  • শর্করা রয়েছে: ২১৭ গ্রাম
  • এনার্জি রয়েছে: ২৪৭ কিলো ক্যালরী

আরও পড়ুন: সকালের নাস্তা না করলে শরীরের যে ক্ষতি হতে পারে

  • এ ছাড়াও রয়েছে ক্যালসিয়াম; ভিটামিন সি ও কে; ম্যাঙ্গানিজ; আয়রন; পটাশিয়াম এবং রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যার্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান সমূহ।

দারুচিনির উপকারিতা সমুহ:

  • মধু ও দারুচিনি মিশিয়ে চুলকানি, এলার্জি এবং ফোঁড়ার ক্ষতস্থানে লাগালে তা ভালো হয়ে যায়।
  • দারুচিনির যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ-এর মধ্যে যেমন-দারুচিনি হজমশক্তিকে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে। অর্থাৎ এর মধ্যে থাকা এনজাইমগুলিকে সক্রিয় করে তোলে। ফলে বদহজম, পেটফাঁপা এবং গ্যাসের সমস্যাও কমাতে সহায়তা করে থাকে।
  • অনেক সময়ই শরীরের ভেতরে জ্বালা-যন্ত্রণা ও ব্যথা করে থাকে। নিয়মিত দারুচিনি খেলে তা এই সমস্ত সমস্যাগুলি থেকে পরিত্রাণ মেলে, কারণ দারুচিনিতে রয়েছে বিভিন্ন প্রদাহরোধী উপাদানসমূহ।
  • নিয়মিত দারুচিনি খেলে অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় থাকে এবং হজমের সমস্যা দূর হয়। কারণ দারুচিনিতে রয়েছে প্রিবায়োটিক উপাদান।
  • দারুচিনিতে সিনামালডিহাইড নামক একটি উপাদান থাকায় তা ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • সাধারণত দারুচিনির যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ-এর ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যে, দারুচিনি মস্তিস্কের বুদ্ধি বৃত্তিক কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে থাকে। মূলত এটি স্নায়ুক্ষয়জনিত নানা রোগসমূহ, যেমন-আলঝেইমার প্রতিরোধ করে। সর্বোপরি বিশেষজ্ঞগণের মতামত অনুযায়ী, যদি কেউ নিয়মিত দারুচিনি মেশানো পানি খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ঘটে।
  • দারুচিনি ওজন কমাতে সহায়তা করে থাকে। অর্থাৎ দারুচিনি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের কারণে ক্ষুধা কমে যায়। আর তাছাড়া দারুচিনি পানি ওজন কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সর্বোপরি এটি বিকাপক্রিয়ার গতি বাড়িয়ে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি গলাতেও যথেষ্ট সহায়তা করে থাকে।
  • আসলে দারুচিনির যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধতা অনেক, যেমন-দারুচিনি নারীদের মাসিকের সময় ব্যথা কমাতে সহায়তা করে থাকে। আবার এটি প্রজনন ও হরমোনজনিত পলিসিষ্টিক ওভারি সিনড্রোমের বিভিন্ন লক্ষণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে।
  • দারুচিনির সুমিষ্ট সুগন্ধ মুহুর্তে যে কারও মেজাজ ভালো করে দিতে পারে। আবার এর পানীয় মানসিক অবসাদ কমিয়ে শরীরকে তরতাজা করতে পারে খুবই দ্রুত।

আরও পড়ুন: যে কৌশলে চ্যাটজিপিটি হবে আপনার ব্যক্তিগত সহকারী

  • সাধারণত দারুচিনির মধ্যে প্রদাহরোধী এবং জীবাণুনাশক দুইটি উপাদান বিদ্যমান থাকায় তা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। মূলত এই দুই উপাদানের কারণে ত্বকে ব্রণ উঠতে বাধা পায় এবং বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমণ হতে দেয় না। এক কথায় বলা যায, দারুচিনি মেশানো পানি ত্বককে পরিস্কার রাখে।
  • ঠান্ডাজনিত সমস্যায় বিশেষ করে সর্দি-কাশি হলে দারুচিনি আর মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • দারুচিনিতে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় তা দেহের কোষকে ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিক্যাল থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে থাকে।
  • সাধারণত দারুচিনি উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। আবার এটি হৃদযন্ত্রের জন্যও অত্যন্ত ভালো সহায়তা করে থাকে।
  • দারুচিনির যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ বলতে দারুচিনি মেশানো পানিতে মানসিক চাপ কমে এবং ঘুম ভালো হয়। অর্থাৎ ঘুমের আগে দারুচিনি মেশানো এক গ্লাস দুধ পান করলে ভালো ঘুম হয় এবং মানসিক চাপও কমে যায়।]
  • দারুচিনি সাধারণত দাঁতের ব্যথা এবং মুখে ব্যাকটেরিয়ার অতিরিক্ত বৃদ্ধি বা নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধসহ অন্যান্য দাঁতের সমস্যা দূর করতে দারুচিনি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • দারুচিনি ট্রাইগ্লিসারাইডের পাশাপাশি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এর ফলে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকিও অনেকাংশে কমে যায়।

দারুচিনির অপকারিতাসমূহ:

  • সাধারণত গর্ভবতী নারীদের কোনমতেই দারুচিনি না খাওয়াটা উত্তম, কেননা এটি তাদের গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।
  • অতিরিক্ত দারুচিনি খাওয়ার ফলে তা পাকস্থলীতে জ্বলুনি সৃষ্টি হতে পারে।
  • আবার অতিরিক্ত দারুচিনি খাওয়ার ফলে তা লিভারেরও ক্ষতি করতে পারে।
  • সাধারণত যাদের সদ্য অস্ত্রোপচার হয়ে বা হবে এমন ব্যক্তিদের দারুচিনি না খাওয়াই ভালো।
  • দারুচিনিতে এ্যালার্জি আছে এমন ব্যক্তিদের দারুচিনি না খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এমন ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
  • অতিরিক্ত দারুচিনি খাওয়ার ফলে কারও কারও হজম না হওয়ার কারণে পেটের সমস্যা, বমি বমি ভাব বা ডায়রিয়াও হতে পারে।
  • যেহেতু দারুচিনি রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে, তাই ডায়াবেটিকস রোগীদের এই পানীয় খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

জেনে নিন, দারুচিনির যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ-পরিশেষে:

আসলে দারুচিনি পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করাই উচিত। অর্থাৎ এককথায় বলতে গেলে, সব খাবারই খাওয়া যাবে, তবে তা পরিমাণ মত। তবে সাধারণত দিনে ১-২ গ্রাম দারুচিনি খাওয়া নিরাপদ। যাইহোক আজকের জেনে নিন, দারুচিনির যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। তবে এ বিষয়ে যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।

আরও পড়ুন: ধুন্দলের উপকারিতা, ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন

মূলত দারুচিনি বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা হয়। আবার গরম জলে দারুচিনি ও মধু এবং লেবুর মিশিয়ে খেলে তা বাতের ব্যথা হ্রাস করতে সহায়তা করে থাকে। আবার দারুচিনি দিয়ে চা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। পরিশেষে জেনে নিন, দারুচিনির যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ বিষয়ক আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষন উপস্থিতি ও সম্পৃক্ততার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।