কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে যে ১০টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
আজকে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে যে ১০টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে,সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের ক্ষতিকর ও উপকারিতার দিকসমূহও রয়েছে অনেক। আর এসব বিষয়ে জানতে নিচের লেখাগুলো পড়তে হবে।
আজকাল চশমা ছেড়ে অনেকেই কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করে থাকে। অথচ সামান্য অসাবধানতার কারণে হতে পারে মারাত্মক কোন ক্ষতি।
পেজ সূচিপত্র: কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে যে ১০টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে যে ১০টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকসমূহ
কন্ট্রাক্ট লেন্স ব্যবহারের উপকারিতা
কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে যে ১০টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে-পরিশেষে
কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে যে ১০টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবেঃ
নির্দিষ্ট সময়ের বেশি ব্যবহারঃ
অর্থাৎ প্রতিটা লেন্সেরই একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। কোনোটা একদিন তো আবার কোনোটা সাপ্তাহিক বা মাসিক। ইংরেজীতে লেখা থাকে Expire Date। অর্থাৎ এই Expire Date হওয়ার পরে ব্যবহার করলে নানা সমস্যা তৈরি হয়। যেমন-চোখে অস্বস্তি, জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে এবং সর্বোপরি চোখের কর্ণিয়ায় আঘাতও লাগতে পারে। তাই Expire Date হওয়ার সাথে সাথে তা ফেলে দিন।
আরও পড়ুনঃ যেসব খাবারের কারণে মানসিক চাপ বাড়ে
লেন্স পরে ঘুমানোঃ
অনেকে চোখে লেন্স পরেই ঘুমাতে যান। এটা অত্যন্ত খারাপ একটি বিষয়। কেননা এতে করে চোখে অক্সিজেন প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হয়ে থাকে, যার ফলে হতে পারে চোখের কর্ণিয়ায় মাইক্রোবিয়াল কেরাটাইটিস এর মত জটিল কোন রোগ।
ভালোভাবে হাত না ধোয়াঃ
লেন্স ব্যবহারের আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। যদিও অনেকেই জানেন যে, সাবান দিয়ে অন্তত ৩০ সেকেণ্ড পর্যন্ত হাত ঘুষতে হয়। এরপর হাত ভালো করে শুকিয়ে লেন্স ব্যবহার করতে হবে। আর তা না হলে আপনার হাতে থাকা জীবাণুগুলো সরাসরি চোখে প্রবেশ করে চোখের মারাত্মক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
ভুলভাবে পরিস্কার করাঃ
সাধারণত লেন্স পরিস্কার করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। কারণ অনেকেই ট্যাপের পানি এবং মেয়াদোত্তীর্ণ সল্যুশন দিয়ে লেন্স পরিস্কার করে থাকে, যা কখনোই উচিত নয়। কারণ এই ধরণের সমস্যাগুলো থেকে এক ধরণের ক্ষতিকারক জীবাণু ‘অ্যাক্যানথামিবা’ এর সংক্রমণ ঘটে থাকে, যা চোখে ঢুকে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
লেন্স রাখার পাত্র পরিবর্তনঃ
যে পাত্রটিতে লেন্স রাখা হয়, সাধারণত তা ৩ মাস পর পর বদলাতে হয়। অর্থাৎ কন্টাক্ট লেন্স সবসময়ের জন্যই স্টেরয়েল সল্যুউশনে ভিজিয়ে নিয়ে তারপর তা সঠিক লেন্স কেসে রাখতে হয়। তাছাড়াও লেন্স কেসটি সুল্যুউশন দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে নিয়ে তারপরে তাতে লেন্স রাখা উচিত।
কমদামী সল্যুউশন ব্যবহারঃ
অনেকেই আছে যারা লেন্স পরিস্কার করার জন্য কমদামী বা সস্তা সল্যুউশন ব্যবহার করে থাকে, যা চোখের জন্য কখনোই উপযোগী নয়। কারণ এ ধরণের সল্যুউশনগুলি প্রকৃত জীবাণু নষ্ট করতে সক্ষম নয়। অর্থাৎ এ ধরণের অবহেলা বা উদাসীনতার কারণে চোখে যে কোন ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
যেখানে সেখানে লেন্স ব্যবহারঃ
অনেকেই আছেন, যারা যে কোন স্থানেই লেন্স পরে থাকতে চায়। যেমন-গোসলের সময়, সাঁতারের সময়, শুষ্ক বা বদ্ধ গরমে লেন্স পরে থাকা ইত্যাদি। সাধারণত এই রকম ভিন্ন পরিবেশে লেন্স ব্যবহারের কারণে এবং আর্দ্র পরিবেশে খুব সহজেই জীবাণু লেন্সে আটকে যায় এবং তা চোখে প্রবেশ করতে পারে।
প্রেশার দিয়ে মেকআপ করাঃ
লেন্স পরা অবস্থায় মেকআপ নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় অজান্তেই বেশী প্রেশার পরে যায়। অর্থাৎ অতিরিক্ত প্রেশার দিয়ে কখনোই মেকআপ করা ঠিক নয়। এতে চোখের কর্ণিয়া বা আশেপাশে আঘাত লাগতে পারে। এক্ষেত্রে খুবই সতর্কতার সাথে সবকিছু ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিয়ে তারপরে মেকআপ করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ চোখের শুষ্কতা এবং ক্লান্তি দূর করা যায় কিভাবে
মেকআপের আগে লেন্স পরাঃ
সাধারণত মেকআপ শুরু করার আগেই কন্টাক্ট লেন্স পরে নিতে হবে। এক্ষেত্রে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে পরিস্কার শুকনো টাওয়েল দিয়ে হাত ও মুখ ভালোভাবে মুছে নিয়ে অর্থাৎ ড্রাই করে তবেই লেন্স পরতে হবে। অর্থাৎ মেকআপের আগে লেন্স পরে নিলে তা ড্যামেজ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
উন্নতমানের মেকআপ ব্যবহারঃ
সাধারণত খেয়াল রাখতে হবে যে, চোখের মেকআপের জন্য অবশ্যই ভালো কোয়ালিটির মেকআপ ব্যবহার করতে হবে। তবে সেটা যদি অয়েল ফ্রি হয় তাহলে আরও ভালো। কারণ কমদামী, সস্তা বা ভালো গুণসম্পন্ন চোখের মেকআপ প্রোডাক্ট না হলে তা চোখের জন্য ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।
কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকসমূহঃ
কন্টাক্ট লেন্স দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করলে জ্বালা থেকে শুরু করে চোখের সংক্রমণের মত অনেক সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাকে অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়।
সাধারণত কন্টাক্ট লেন্সগুলির উপরে এক ধরণের রং করে রঙিন কন্টাক্ট লেন্স তৈরি করা হয়। অর্থাৎ কেমিক্যাল জাতীয় রঙিন পদার্থের কারণে অনেকের চোখ এলার্জি বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ ছাড়াও লেন্স পরিস্কার করার তরলের মধ্যে সাধারণত যে ধরণের রাসায়নিক পদার্থ থাকে, অনেক সময় তা থেকেও চোখে এলার্জি হতে পারে। আবার চোখের কালো মণিতে অনেক সময় পানি জমে ঘা হতে পারে।
লেন্স ব্যবহারের পর তা খুলে না রাখলে ইনফেকশন হতে পারে। বিশেষ করে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই লেন্স খুলে রাখতে হবে। এ ছাড়াও মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া লেন্স ব্যবহার করলে এবং সর্বোপরি লেন্সের সঠিক যত্নের অভাবেও চোখে ইনফেকশন হতে পারে।
সাধারণত লেন্স পড়া অবস্থায় কোনমতেই যেন চোখে ময়লা, বা আঘাত না লাগে সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। এ ছাড়াও অতিরিক্ত রৌদ্র এবং তাপের নিকট থাকলেও চোখে দেখা দিতে পারে নানারকম জটিলতা।
কন্টাক্ট লেন্স দীর্ঘ সময় চোখে পরে থাকলে তাতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যেতে পারে, এতে করে চোখে রক্তনালীর বৃদ্ধি ঘটতে পারে এবং দৃষ্টিশক্তি হ্রাস্রেরও সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
লেন্স ব্যবহারের ফলে অনেক সময় চোখে অস্বস্তি অথবা ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে, তবে এ ধরনের সমস্যাগুলি দেখা দেয় প্রথমবার লেন্স ব্যবহারের সময়কালে।
আবার অনেক সময় দূষিত বা জীবাণুযুক্ত লেন্স চোখে পড়লে তা থেকে বিভিন্ন সংক্রামক অর্থাৎ ছত্রাকজনিত সমস্যা তৈরি হয়ে থাকে। অর্থাৎ লেন্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক থাকাটা খুবই জরুরী।
কন্ট্রাক্ট লেন্স ব্যবহারের উপকারিতাঃ
মূলত কন্ট্রাক্ট লেন্স ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনি এর রযেছে নানান উপকারিতা। যেমন-
কন্ট্রাক্ট লেন্স চশমার চেয়ে চোখের দৃষ্টি বিস্তৃত করে থাকে। সাধারণত চশমা পড়লে তার একটা বাইন্ডিং থাকে, কিন্তু কন্ট্রাক্ট লেন্স ব্যবহারের ফলে এর কোন নির্দিষ্ট সীমানা থাকে না। অর্থাৎ যেদিকে আপনি তাকাবেন, সেদিকেই পরিস্কার দেখতে পাবেন।
কন্ট্রাক্ট লেন্স ব্যবহারের আরেকটি সুবিধা বা উপকারিতা হলো এটি পড়ে যে কোন শারীরিক কার্যক্রম খুব অনায়াসেই বা সাবলীলভাবে সম্পন্ন করা যায়। যেমন-চশমা পড়লে খুব জোরে দৌড়ানো সম্ভব হয় না, কিন্তু কন্ট্রাক্ট লেন্সে তা খুব সহজেই করা যায়।
কন্ট্রাক্ট লেন্স ব্যবহারের সবথেকে বেশি সুবিধা যেটি প্রায়ই মানুষ গ্রহণ করে থাকে, তা হলো সৌন্দর্যগত সুবিধা। বেশিরভাগ মানুষই সৌন্দর্য বা একটু স্টাইলিশ হওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের সানগ্রাস/চশমা ব্যবহার করে থাকে, কিন্তু কন্ট্রাক্ট লেন্স ব্যবহারের ফলে এ ধরণের ঝামেলা পুরোপুরি মুক্ত থাকা যায়।
কন্ট্রাক্ট লেন্স ব্যবহারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো এটি ঝাপসা বা কম দৃষ্টিসম্পন্ন হয় না। অর্থাৎ চশমা পরে অনেক সময় এসি হতে বের হওয়ার তা ঝাপসা হয়ে যায়, আবার বৃষ্টিতে চশমা ভিজে গেলে তা ঝাপসা হয়ে যায়। কিন্তু কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে এ ধরণের ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকা যায় অনায়াসেই।
কন্ট্রাক্ট লেন্স ব্যবহারের ফলে চোখের কিছু নির্দিষ্ট সমস্যা সংশোধন করা খুব সহজেই করা যায়। আসলে কেরাটোকোনাস এবং অ্যানিসিকোনিয়ার দুটি চোখের নানাবিধ সমস্যা তৈরি করে থাকে। সুতরাং এ ধরণের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে অথবা সমাধান করতে চাইলে কন্টাক্ট লেন্সই হচ্ছে সর্বোত্তম।
কন্ট্রাক্ট লেন্স ব্যবহারের সুবিধা হলো এটি মাল্টিফোকাল লেন্সের সুবিধা প্রদান করে। সাধারণত চশমা পরলে যেমন কাছের ও দূরের তা এডযাস্ট করতেই অনেক সময় লাগে।
কন্ট্রাক্ট লেন্স ব্যবহারে যে ১০টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে-পরিশেষেঃ
মূলত কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে উপরোক্ত পরামর্শগুলি আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। অর্থাৎ কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে যে ১০টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তার প্রকৃত অর্থ হলো সচেতনতা। আসলে যে কোন জিনিসেরই সচেতনতা প্রয়োজন।
আরও পড়ুনঃ হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কেন হয়? হাঁটুর ব্যথা সারানোর ঘরোয়া উপায়
যাইহোক, আজকের কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে যে ১০টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে বিষয়ক আলোচনাটি যদি আপনার নিকট গ্রহণযোগ্য বা ভালো লাগে তাহলে তা অবশ্যই শেয়ার করতে পারেন এবং উক্ত বিষয়ে কোন পরামর্শ বা মন্তব্য থাকলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। পরিশেষে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে যে ১০টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা যদি সঠিক ভাবে বিবেচনায় রাখেন, তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই এর থেকে ছোটখাট বিভিন্ন সমস্যার হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন। সবশেষে আজকের আলোচ্য কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে যে ১০টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে বিষয়ে আপনার সংযুক্ত থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url