যেসব খাবারের কারণে মানসিক চাপ বাড়ে

কাজের চাপের বাইরেও যেসব খাবারের কারণে মানসিক চাপ বাড়ে তা জানতে নিচের লেখাটা পড়া জরুরী।
আমাদের সকলেরই একটি বদ্ধমূল ধারণা যে, অতিরিক্ত কাজের লোডের কারণে মানসিক সমস্যা ঘটে। কিন্তু খাবারের কারণেও যে মানসিক চাপ বাড়ে এই বিষয়ে জানতে হবে। তাই যেসব খাবারের কারণে মানসিক চাপ বাড়ে এর বিস্তারিত নিম্নে বর্ণিত হলো।

পোস্ট সূচিপত্র: যেসব খাবারের কারণে মানসিক চাপ বাড়ে (Foods that increase stress)
ভুমিকা
বাসি তেলের তৈরী খাবার
কোমলজাতীয় পানীয়
ফাস্ট ফুড
কড়া করে চা বা কফি
অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ
অ্যালকোহল
রাসায়নিক মিশ্রিত খাদ্য
রিফাইন্ডযুক্ত খাদ্য গ্রহণ
যেসব খাদ্য গ্রহণে মানসিক চাপ কমে
যেসব খাবারে মানসিক চাপ বাড়ে-পরিশেষে

ভুমিকা:

সাধারণত মানুষ সাময়িক মানসিক প্রশান্তি পেতে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন, ছুটি কাটান কোন প্রকৃতির মাঝে, আবার অনেকেই ধ্যান বা যোগ ব্যায়াম বা শরীর চর্চাও করেন। কিন্তু এতোসব করেও মনের প্রশান্তি মেলেনা। মূলত মানসিক চাপ কমানোর জন্য ভ্রমণ যেমন জরুরী ঠিক তেমনই জরুরী হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস। চিকিৎসা ভাষায়, যেসব হরমোন বা নিউরোট্রান্সমিটারের প্রভাবের কারনে আমাদের মন ভালো থাকে, তাদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ হরমোন হলো সেরোটোনিন। অর্থাৎ এই সেরোটোনিন-এর সিংহভাগই কিন্তু আসে আমাদের পরিপাকতন্ত্র থেকে।

আরও পড়ুন: ঘন ঘন মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার কারণসমূহ

কাজেই বুঝতেই পারছেন যে, মস্তিস্কের সঙ্গে পরিপাকতন্ত্রের একটি সুনিবিড় যোগাযোগ আছে, যাকে বলা হয় গাট-ব্রেন অ্যাক্সিস। তবে এটা ঠিক যে, আধুনিক জীবনে আমরা প্রতিনিয়তই বিভিন্ন খাবার খেয়ে থাকি, কিন্তু এই খাবারগুলির মধ্যে অনেক খাবারই আছে যা আমাদের মানসিক চাপ বাড়াতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ ভূমিকা পালন করে থাকে। সুতরাং এ সম্পর্কে জানতে নিম্নে যেসব খাবারের কারণে মানসিক চাপ বাড়ে তার কারণগুলি বর্ত হলো:

বাসি তেলের তৈরী খাবার:

যেসব খাবারের কারণে মানসিক চাপ বাড়ে এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাসি তেলযুক্ত খাদ্য। অর্থাৎ খোলা বা উন্মুক্ত জায়গার ভাজা-পোড়া, বাড়িতে অথবা কোন রেস্তোরায় তৈরিকৃত খাবার একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। কারণ বাসি তেলের মধ্যে এমন কিছু পদার্ থাকে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অর্থাৎ এই ধরনের বিষাক্ত খাদ্যের প্রভাবে বাড়ে মানসিক চাপ।

কোমলজাতীয় পানীয়:

আমরা প্রচন্ড গরমের কারণে অথবা একটু তৃপ্তির জন্য কোমল পানীয় সেবন করে থাকি। কিন্তু এই ধরনের কোমল পানীয়তে শরীরে প্রদাহের সৃষ্টি হয়, যার কারণে মানসিক চাপ বাড়তে পারে। তাই কোমল জাতীয় পানীয় সেবন পরিহার করতে হবে।

ফাস্ট ফুড:

উন্নত জীবনযাত্রা এবং খুব সহজেই বা তাড়াতাড়ি খেয়ে নেয়া যায় এমন ধরণের ফাস্টফুড খাওয়া পরিহার করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, যেমন-প্যাটিস,স্যান্ডউইচ, বার্ার, হটডগ ইত্যাদি। আসলে ফাস্টফুডগুলোতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও চিনি বেশি থাকে। সুতরাং এ ধরণের খাবার গ্রহণের ফলে শরীরের মধ্যে অন্ত্রে থাকা উপকারী জীবাণুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং প্রদাহের ঝুঁকিও বাড়ে। যার ফলে শরীরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আমাদের স্নায়ুতে এবং ফলাফলে বাড়ে মানসিক চাপ।

কড়া করে চা বা কফি:

অনেকেই আছে, যারা বিশেষ করে সকালে কড়া করে চা খেয়ে থাকে, কেউ কেউ আবার কফি। অর্থাৎ এ জাতীয় অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত খাবার গ্রহণের ফলে তা স্নায়ুর ওপর চাপ বাড়ায়।

আরও পড়ুন: জ্বর থেকে দ্রুত সেরে উঠতে কি কি খাওয়া উচিত?

যার ফলে, ঘুমের ব্যাঘাত, উদ্বেগ বা মনোযোগে ঘাটতি অথবা হৃদস্পন্দন বেড়ে শরীরে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে দিনে ১-২ কাপের বেশি তা খাওয়াই ভালো।

অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ:

আমরা জানি যে, অতিরিক্ত চিনি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং এতে করে তা মস্তিস্কে প্রভাব ফেলে, দেখা দেয় সুগার ক্র্যাশ। ফলাফল হয় মেজাজ খিটখিটে, মন খারাপ বা উদ্বেগ বেড়ে যায়।

অ্যালকোহল:

অনেকেই মনে করেন, অ্যালকোহল পান করলে তা মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে থাকে। এটি আসলে ঠিক নয়, কারণ অ্যালকোহল সেবনে তা শরীরের হ্যাপি হরমোন অর্থাৎ সেরোটোনিন ও ডোপামিন এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। যার ফলে পর্যাপ্ত ঘুন না হওয়া এবং সেইসঙ্গে মেজাজও খিটখিটে হয়ে যায়, যার প্রভাব পরেরদিন দেখা দিয়ে থাকে।

রাসায়নিক মিশ্রিত খাদ্য:

আজকাল ফল বা সবজিতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর প্রিজারভেটিভ ব্যবহৃত হয়ে থাকে, বিশেষ করে তা দীর্ঘদিন রাখা বা তাড়াতাড়ি পাকানোর জন্য। আর এই ধরণের পদার্গুলি স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ, ঠিক তেমনি এতে মানসিক চাপও বেড়ে থাকে। তাই ফল বা সবজি ক্রয়ের আগে একটু দেখে নিয়ে বা ফ্রেশ জিনিসটা খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

রিফাইন্ডযুক্ত খাদ্য গ্রহণ:

সময়াভাবের কারণে আমরা প্রতিনিয়তই বিভিন্ন রিফাইন্ড বা পরিশোধিত খাদ্য গ্রহণ করে আসছি। যেমন-মসৃণ চাল, আটা, ময়দা, মাংস ইত্যাদি। আসলে এ জাতীয় খাদ্যেও প্রদাহের ঝুঁকি বাড়ে এবং তাতে মানসিক চাপও বেড়ে থাকে।

যেসব খাদ্য গ্রহণে মানসিক চাপ কমে:

মানসিক চাপ কমানোর ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। এক্ষেত্রে টক দই, আঁশযুক্ত খাদ্য, প্রয়োজনে গোটা শস্যের খাবারও খাওয়া যেতে পারে। যেমন-লাল চাল, ছোলা, লাল আটা, ওটমিল, তাজা শাক-সবজি, মৌসুমী ফল ইত্যাদি। আবার ডার্ক চকোলেট মনের জন্য ভালো, তাও খেতে পারেন। হালকা তেলে কম মশলাযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। মোট কথা হলো, যে খাবারই খান না কেন, অবশ্যই তা পরিমিত গ্রহণ করবেন। আবার দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকলেও কিন্তু মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।

যেসব খাবারে মানসিক চাপ বাড়ে-পরিশেষে:

যেসব খাবারে মানসিক চাপ বাড়ে এর বিষয়ে বলতে গেলে মূলত আমরা মুখের স্বাদের জন্য অতিরিক্ত তেল, মশলাযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করে থাকি। আবার সময়ভাবে অথবা অতিরিক্ত স্মার্টনেস দেখানোর জন্য হোটেল বা ফাস্টফুডের তৈরিকৃত খাদ্য গ্রহণ করে থাকি। আমাদের শরীরটা এমন যে, একটা সময় লোহা খেলে হজম হয়ে যায় (কথার কথা), কিন্তু কালের আবর্তে বা সময়ের পট পরিক্রমায় কিন্তু তা দুর্বোধ্য হয়ে যায়। তাই সময় থাকতেই আমাদের সচেতন হতে হবে। নিজের জন্য না হলেও অপরের জন্য, পরিবারের জন্য যতটা সম্ভব সচেতন হতে হবে। কারণ অনাকাঙ্খিত ভবিষ্যত জীবন কারোরই কাম্য নয়।

আরও পড়ুন: আনারসে আছে যে সমস্ত উপকার

যাইহোক আজকের আলোচনায় যেসব খাবারে মানসিক চাপ বাড়ে এর বিষয়ে আশাকরি বুঝতে এবং জানতে পেরেছেন। সুতরাং এতদ বিষয়ে যদি কোন মন্তব্য বা পরামর্শ থাকে তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন। পরিশেষে যেসব খাবারে মানসিক চাপ বাড়ে বিষয়ক আর্টিকেলে আপনার দীর্ক্ষণ সম্পৃক্ততা ও উপস্থিতির জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। তাই আজকের যেসব খাবারে মানসিক চাপ বাড়ে বিষয়ক আলোচনা থেকে আপনি উপকৃত হলে অবশ্যই তা অন্যদের দেখার জন্য শেয়ার করতে পারেন।


বি,দ্র.: যেসব খাবারে মানসিক চাপ বাড়ে বিষয়ক আলোচনাটি ডাক্তারের কোন চিকিৎসাপত্র নয়, এটি একটি পরামর্শমূলক আলোচনা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url