শীতকালে শিশুর ত্বকের যত্ন কিভাবে নেবেন

শীতকালে শিশুর ত্বকের যত্ন কিভাবে নেবেন তার জন্য খেয়াল রাখতে হয় অনেকগুলো বিষয়। যেমন-উষ্ণ গরম পানিতে গোসল করানো, সুতি কাপড় ব্যবহার, ময়েশ্চারাইজিং করা, অ্যালোভেরা জেল ও লোশন ব্যবহার, পুষ্টিকর খাদ্যসহ নিয়মিত তেল মালিশ এবং ভিজা জামা বা ডায়াপার পরিবর্তন করাটা অত্যন্ত জরুরী।
শীতকালে-শিশুর-ত্বকের-যত্ন-কিভাবে-নেবেন
শীতকালে শিশুর ত্বকের যত্ন নেয়াটা একটু ভাবনারই শামিল। কারণ শীতকালে শিশুদের সংবেদনশীল ও কোমল ত্বক আরও রুক্ষ হয়ে ওঠে। আর এ সময়টাতে নিয়ম মেনে শিশুদের ত্বকের যত্ন নেয়াটা অত্যন্ত জরুরী।

পেজ সূচিপত্রঃ শীতকালে শিশুর ত্বকের যত্ন কিভাবে নেবেন

উষ্ণ গরম পানিতে গোসল করানো
সুতি কাপড় ব্যবহার
ময়েশ্চারাইজ করা
অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার
লোশন ব্যবহার
ভ্যাসলিন বা লিপবাম ব্যবহার
পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ানো
নিয়মিত তেল মালিশ
ভিজা জামা বা ডায়াপার পরিবর্তন
পর্যাপ্ত পানি পান করা
শীতকালে শিশুর ত্বকের যত্ন কিভাবে নেবেন-পরিশেষে

উষ্ণ গরম পানিতে গোসল করানো ঃ

সাধারণত শীতে অনেক মা-ই তার সন্তানকে গোসল করাতে চান না। মূলত শীতকালে প্রতিদিনই যে শিশুকে গোসল করাতে হবে, বিষয়টি আসলে এমন নয়। এমনিতেই শিশুদের বেশি ঘাম হয় না। তাই ঘন ঘন গোসল করানোরও দরকার হয় না। গোসল করালে শরীরে ধুলোবালি ও ময়লা দূর হয়। আর উষ্ণ গরম পানিতে শিশুদের গোসল করানোর ফলে ত্বক আর্দ্র ও নরম হয়।

আরও পড়ুন ঃ শীতে কুসুম গরম পানি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী

তবে গোসলের সময় হালকা নন-গ্রেসি শ্যাম্পু দিয়ে শিশুর মাথার ত্বক পরিস্কার করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন, বড়দের ব্যবহৃত সাবান যেন না লাগানো হয়। শিশুদের গোসলের জন্য সর্বোচ্চ ১০ মিনিটের বেশি সময় না নেয়াই উচিত। গোসল শেষে অবশ্যই দ্রুত শরীর এবং মাথা ভালোভাবে মুছে ফেলতে হবে।

ময়েশ্চারাইজ করা ঃ

গোসল করানোর পর শিশুর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার মালিশ করতে পারেন। সাধারণত ত্বক ভেজা থাকতেই ময়েশ্চারাইজিং লোশন লাগানিই বেশি উপকারী। তবে আপনি ইচ্ছে করলে বেবি লোশন লাগাতে পারেন। কারণ গোসল করানোর পর যদি শিশুর ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং করা যায়, তাহলে এতে করে শিশুর ত্বক সারাদিনের জন্য নরম, কোমল এবং আর্দ্র থাকবে। তবে সাধারণত শিশুর ত্বকে অলিভ অয়েল বা ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ তেল ব্যবহার করতে পারেন।

সুতি কাপড় ব্যবহার ঃ

শিশুদের সাধারণত সুতি কাপড় পরিধান করা স্বাস্থ্যগতভাবে ভালো। কারণ শিশুদের ত্বক এমনিতেই অত্যন্ত নরম হয়ে থাকে, তাই যে কোন কাপড় পড়ালে তা শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতি হতে পারে। এ ছাড়াও অনেক সময় শিশুরা ঘেমেও যায়, সেক্ষেত্রে সুতি কাপড় হলে তা সমস্যা হয়না। সর্বোপরি সুতি কাপড়ে বাতাস চলাচল করতে পারে এবং তা নরম প্রকৃতিক হয়ে থাকে। তাই শিশুদের সুতি কাপড়ের পোশাক পরিধান করাটাই উত্তম ও যুক্তিসঙ্গত।

অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার ঃ

শীতকালে শিশুর ত্বকের সুরক্ষার জন্য অ্যালোভেরা জেলা ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে অ্যালোভেরা কান্ড ভেঙে এবং সেখান থেকে জেল নিয়ে ত্বকের শুষ্ক স্থানে লাগালে ত্বক নরম ও কোমল থাকবে। আসলে এটি হবে একটি প্রাকৃতিক উপায়। তবে আপনি অ্যালোভেরা যোগাড় করতে না পারলে বাজারে শিশুর ত্বকের যত্নের জন্য কেমন প্রসাধনী দরকার তা ক্রয় করতে পারেন।

লোশন ব্যবহার ঃ

শীতকালে বাচ্চাদের ত্বকের যত্নে নিয়মিত বেবি লোশন বা বডি লোশন বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। তবে বডি লোশন ব্যবহারের পূর্বে নিশ্চিত হয়ে নিবেন যে, সেটা বাচ্চাদের জন্য বডি লোশন কিনা। অর্থাৎ কোনমতেই বড়দের লোশন ব্যবহার করা যাবে না। কারণ এতে করে শিশুর হাত ও পা ফাটা দূর হবে এবং ত্বক কোমল ও নরম থাকবে। তবে খেয়াল রাখবেন যেন শিশুকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় অবশ্যই ক্রিম ও লোশন লাগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

ভ্যাসলিন বা লিপবাম ব্যবহার ঃ

সাধারণত শীতকারে শিশুদের ঠোঁট ফাটা প্রতিরোধ করতে ঠোঁটে ভ্যাসলিন বা লিপবাম ব্যবহার করতে পারেন। কারণ শিশুরা অনেক সময় বলতে পারেনা যে, তাদের ঠোঁট শুকিয়ে যাচ্ছে বা ঠোঁট ফেটে যাচ্চে। তাই এক্ষেত্রে তার নিকটতম ব্যক্তি অর্থাৎ তার মাকেই এসব বিষয়ে খেয়াল করতে হবে এবং ঠোঁট ফাটা প্রতিরোধে লিপবাম বা প্রয়োজনে ভ্যাসলিন লাগিয়ে দিতে হবে।

পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ানো ঃ

শিশুদের ত্বকের যত্নের জন্য অবশ্যই পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ানো উচিত। কারণ শীতকালে শিশুদের খাবারের আগ্রহ কম হয়ে থাকে। যার কারণে এ সময়ে তাদের ঘন ঘন পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো যেতে পারে। মোট কথা শিশুর পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের ফলে ত্বক ভালো থাকবে এবং ত্বকের মসৃণতা ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।

আরও পড়ুন ঃ শীতকালে কেন গ্লিসারিন ব্যবহার করবেন, এর উপকারিতা কি

বিশেষ করে, ডিমের কুসুম, সবজির স্যুপ, ফলের রস ইত্যাদি খাওয়ানো যেতে পারে। তবে যে সমস্ত ফল ও সবজি দাঁত দিয়ে চিবিয়ে খাওয়া যায়, সে সমস্ত খাবারে অভ্যস্ত করুন। কারণ দাঁত দিয়ে চিবিয়ে খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী এমন ফল ও সবজি খেতে শিশুকে উৎসাহিত করতে পারেন।

নিয়মিত তেল মালিশ ঃ

শিশুদের ত্বক ভালো রাখতে প্রতিদিন তেল মালিশ করা খুবই জরুরী। অর্থাৎ হালকা গরম তেল দিয়ে প্রতিদিন বাচ্চার হাত-পা মালিশ করলে ত্বকের আর্দ্রতা যেমন বজায় থাকে, তেমনি দেহে রক্ত সঞ্চালনও ভালো হয়। সর্বোপরি শীতকালে শিশুদের তেল মাখা অত্যন্ত স্বাস্থ্যগত উপকারী। একটা সময় ছিল যখন, লোশন, বডি লোশন বা নানাপ্রকার প্রসাধনী ছিলনা, তখন কিন্তু একটি শিশুকে তেল দিয়ে মালিশ করা হতো এবং শিশুটিও সুস্থ্য সবল হয়ে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতো। তাই শিশুদের তেল মালিশ করাটা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং স্বাস্থ্যগত ভাবে ভালো।

ভিজা জামা বা ডায়াপার পরিবর্তন ঃ

শীতকালে শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর রাখতে হয় ভিজা কাপড় বা ডায়াপার পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে। কারণ দীর্ঘক্ষণ ধরে শিশু যদি ভিজা কাপড় বা ভিজা ডায়াপার পরে থাকলে তা ত্বকের জন্য নানান সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন-বিভিন্ন ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটে থাকে। তাই শীতকালে শিশুর অভিভাবককে অত্যন্ত সজাগ ও সতর্ক থাকতে হয় ভিজা কাপড় বা ডায়াপার ব্যবহারের ক্ষেত্রে। শীতকালে ঘন ঘন গরম পোশাক পরাতে হয়। একটা বিষয় লক্ষ্য করে দেখবেন যে, ডায়াপার বা ভিজা কাপড়গুলি উপর থেকে চট করে বোঝা যায় না যে, পোশাকটি ভিজে রয়েছে, তবে ভিজে জামা-কাপড় বেশিক্ষণ ব্যবহার করলে ঠান্ডা লাগার আশঙ্কাও বেড়ে যেতে পারে।

পর্যাপ্ত পানি পান করা ঃ

অন্যান্য ঋতুর তুলনায় শীতকালে মানুষের পানি তৃষ্ণা একটু কম লাগে। তবে এক্ষেত্রে শরীরের চাহিদা অনুযায়ী যদি পানি পান না করা হয়, তাহলে তা নানা ক্ষতির কারণ হয়ে উঠে। আর শীতে শিশুদের পানি পানে অনাগ্রহ বা অবহেলা দেখা দেয়। তাই অভিভাবক হিসেবে আপনার পরম দায়িত্ব হলো শিশুকে পর্যাপ্ত পানি পানের ব্যবস্থা করা। খেয়াল রাখতে হবে যেন, কোনমতেই শিশু যেন কম পরিমাণে পানি পান না করে।

শীতকালে শিশুর ত্বকের যত্ন কিভাবে নেবেন-পরিশেষে ঃ

যদিও আমরা জানি যে, শিশুদের ত্বক অত্যন্ত নরম কোমল প্রকৃতির হয়, তাই শীতকালে শিশুর ত্বকের যত্ন কিভাবে নেবেন এর ক্ষেত্রে অবশ্যই শিশুদের ত্বকের যত্নে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হয়। বিশেষ করে শিশুদের রাতে ঘুমানোর সময় পাশে অবশ্যই বেবি ওয়াইপস রাখাটা যুক্তিসংগত। কারণ এতে করে যখনই প্রয়োজন পড়তে তখনই ওয়াইপস দিয়ে শরীর মুছে পোশাক বদলে দেয়া খুবই সহজ হয়। সাধারণত শীতকালে বেশির ভাগ শিশুরই ঠান্ডাজনিত অসুখ হয়ে থাকে। যেমন-সর্দি, জ্বর, কাশি, নিমুনিয়া ইত্যাদি। তাই শীতকালে শিশুর ত্বকের যত্ন কিভাবে নেবেন বলতে সম্ভব হলে বাচ্চাদের নিয়ম করে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মিনিট রোদ পোহাতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন, রোদ পোহানোর সময় বাচ্চা যেন ঠান্ডা না হয়ে যায়।

আরও পড়ুন ঃ শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায়সমূহ - শীতকালে ত্বকের যত্নে কোন প্রসাধনীগুলি ব্যবহার করবেন

যাইহোক, শীতে শিশুদের ত্বকের যত্নে সুগন্ধিযুক্ত বা অ্যালকোহলযুক্ত ময়েশ্চারাইজার এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ শীতকালে শিশুর ত্বকের যত্ন কিভাবে নেবেন হিসেবে এই সুগন্ধিযুক্ত বা অ্যালকোহলযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে তা শিশুর ত্বকের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। অনেকে ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করে থাকে। আসলে ট্যালকম পাউডার শিশুদের জন্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়াও শীতকালে শিশুর ত্বকের যত্নে কেমন প্রসাধনী দরকার সেটাও বিশেষ ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সুতরাং আজকের শীতকালে শিশুর ত্বকের যত্ন কিভাবে নেবেন বিষয়ক আটিকেলটির পরামর্শগুলি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে তা অবশ্যই অন্যদের শেয়ার করতেই পারেন। এ ছাড়াও উপরোক্ত বিষয়গুলিতে আপনার যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে, তাহলে তা-ও আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। পরিশেষে, শীতকালে শিশুর ত্বকের যত্ন কিভাবে নেবেন বিষয়ে আপনার দীর্ঘক্ষণ সম্পৃক্ততা ও অংশগ্রহণের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
দাবিত্যাগঃ এই ব্লগে প্রদত্ত তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞান এবং তথ্যের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে, এবং এটি চিকিৎসা পরামর্শ নয়। যে কোনো চিকিৎসা সংক্রান্ত উদ্বেগের জন্য বা শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সর্বদা একজন যোগ্যতাসম্পন্ন শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।