আমরা অনেকেই জানি শীতে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় অনেকেই ইনহেলার ব্যবহার করে থাকে, কিন্তু এই ইনহেলার কতদিন ব্যবহার করতে হয়, সে সম্পর্কে অনেকের ধারণা পরিস্কার নয়।
সাধারণত শিশুদের হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের জন্য ইনহেলার ব্যবহার করা কি ভালো অ্যাজমার চিকিৎসায় ইনহেলারের সঠিক ব্যবহারবিধি জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই ইনহেলার ব্যবহার কতটা নিরাপদ বা এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী তা জানতে নিচে বর্ণিত বিষয়গুলি পড়তে হবে:
পোস্ট সূচিপত্র: ইনহেলার কতদিন ব্যবহার করতে হয় (How long should you use the inhaler?)
ইনহেলার ব্যবহার করা কী নিরাপদ
এ্যালার্জি জনিত অসুখের সম্ভাব্য কারণসসূহ
ইনহেলার নেয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কী কী
সঠিক ইনহেলার প্রয়োগের পদ্ধতি কোনটি
ইনহেলার কতদিন ব্যবহার করতে হয়
ইনহেলার কতদিন ব্যবহার করতে হয় : শেষ কথা
ইনহেলার ব্যবহার করা কী নিরাপদ
সাধারণত যাদের অ্যাজমা রয়েছে তাদের নিতে হয় ইনহেলার। তবে অনেকেই ভাবেন একবার ইনহেলার ব্যবহার করা মানেই তা বন্ধ করা যাবে না।
ইনহেলার ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ বলেন, ইনহেলার ব্যবহার করা খুবই নিরাপদ। তবে, ইনহেলারে যে ঔষধ যায়, সেটার প্রভাব সরাসরি ফুসফুসে গিয়ে পড়ে। যার কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। আর যদি তা চিকিৎসকের পরামর্শমতো নেওয়া হয়, তাতে কোন সমস্যা হয় না।
এ্যালার্জি জনিত অসুখের সম্ভাব্য কারণসসূহ
ঋতু পরিবর্তনের কারণে অনেক সময়ে বাতাসে ফুলের রেণু ভেসে বেড়ানোর ফলে তা অনেক সময় আমাদের নাকের ছিদ্র দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে এ ছাড়াও ঘন কুয়াশাও কিন্তু আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, ফলে তখন অনেকের হাঁপানির সমস্যা হয়।আবার হাঁপানি রোগটি কিন্তু জেনেটিক্যালিও হয়ে থাকে, বিশেষ করে যদি পরিবারের মধ্যে কারও হাঁপানি থাকে, তবে তা অন্যদের মধ্যেও এই রোগ হওয়ার ঝুঁকির প্রবণতা বাড়ে। আবার অনেক সময় বংশগত কারণেও হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে হাঁপানি রোগটি কিন্তু সারা যায় না, তবে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। অনেক ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব কিন্তু অ্যাজমাটিক, কিন্তু তাদের হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে থাকে বলে তারা জীবনের অনেক ক্ষেত্রে সফল।
আবার অনেকের অ্যালার্জিক হাঁপানিও হয় । যেমন-এক শহর থেকে অন্য শহরে গেলে, সেখানকার আবহাওয়া, পরিবেশ যদি আপনার শরীরে স্যুট না করে, তখন ইনহেলার নিতে হতে পারে। সেটা অবশ্য সাময়িক। এ ক্ষেত্রে স্থান পরিবর্তন হলে হাঁপানিও সেরে যায়।
ইনহেলার নেয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কী কী
- ইনহেলার নিলে বাচ্চাদের ওজন বাড়তে পারে।
- দীর্ঘদিন ইনহেলার ব্যবহারের ফলে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা তৈরি হতে পারে, যেমন-ফুসকুড়ি বা চুলকানি জাতীয় সমস্যা।
- কিছু ইনহেলার আছে, যেগুলো ব্যবহারের ফলে অনিদ্রা বা ঘুমের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, তাই এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শক্রমেই তা ব্যবহার করা উচিত।
- অনেক শিশুদের ইনহেলার ব্যবহারের পর শরীরে অস্থিরতা বা উত্তেজনা দেখা দিয়ে থাকে।
- কিছু কিছু ইনহেলার আছে, যেগুলো ব্যবহারের ফলে স্বল্প সময়ের জন্য বমি বমি ভাব হতে পারে।
- প্রচলিত কিছু ইনহেলার ব্যবহারের পর তা গলা ব্যথা বা গলা শুষ্ক হতে পারে। এক্ষেত্রে ইনহেলার ব্যবহারের পর মুখ ধুয়ে ফেললে স্বস্তি পাওয়া যায়।
- অনেকের ইনহেলার ব্যবহারের পর মাথা ব্যথার সৃষ্টি হয়, তবে তা স্বল্প সময়ের জন্য হয়ে থাকে।
- উচ্চ মাত্রা সম্পন্ন ইনহেলার ব্যবহারের ফলে অনেক সময় রক্তে পটাসিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে।
- ইনহেলার এমন একটি ড্রাগস, যদি এটা শুরু করা যায় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া তা বন্ধ করা ঠিক নয়।
সঠিক ইনহেলার প্রয়োগের পদ্ধতি কোনটি
প্রথমে ভালোভাবে ইনহেলারটি ঝাঁকিয়ে নিতে হবে। এবার ঢাকনাটি খুলে তা খাড়া করে মুখ থেকে অন্তত ১ থেকে ২ ইঞ্চি দূরে রাখতে হবে। আপনার মাথাটা একটু পেছনে হেলিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে ফুসফুস থেকে সব বাতাস বের করে দিতে হবে। এবার ইনহেলারটি চাপ দিয়ে ধীরে ধীরে লম্বা শ্বাসের সাহায্যে ওষুধ ফুসফুসে টেনে অন্তত ১০ সেকেন্ড দম বন্ধ করে রাখতে হবে। দ্রুত ও খুব জোরে টান দেওয়া চলবে। নাহলে বেশির ভাগ ওষুধ ফুসফুসে প্রবেশ না করে গলায় লেগে থাকবে।
এরপর কয়েক মিনিট স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস–প্রশ্বাস নেওয়ার পর ঠিক একইভাবে আরেকটি পাফ নিতে হবে। সাধারণত ইনহেলার ব্যবহারের পরে এর মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে ঢাকনা লাগিয়ে রাখতে হবে। তবে খেয়াল রাখবেন, ইনহেলার ব্যবহারের পরে কিন্তু ভালো করে কুলি করে মুখ ও জিহ্বা পরিষ্কার করে নিতে হবে।
সাধারণত ইনহেলারে কতটুকু ঔষধ আছে তা বোঝার জন্য এর ধাতব ক্যানিস্টারটি খুলে নিয়ে পানিতে ছেড়ে দিলে দেখতে পাবেন, যতটুকু খাড়াভাবে ডুববে, বুঝতে হবে ওষুধ ঠিক ততটুকুই আছে, যদি আপনার ব্যবহৃত ইনহেলারটি সম্পূর্ণ পানির ওপর ভাসতে থাকে, তাহলে বুঝবেন সেই বোতলে আর ইনহেলার অবশিষ্ট নেই।
ইনহেলার কতদিন ব্যবহার করতে হয়:
আসলে ইনহেলার কতদিন ব্যবহার করতে হয় বা করা যায় তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে রোগের ধরণের উপর এবং বলাবাহুল্য যে, তা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। কিছু কিছু সমস্যা আছে, যেমন-হাঁপানি বা সিওপিডির মতো সমস্যা থাকলে ইনহেলার আজীবন ব্যবহারের প্রয়োজন হয়ে থাকে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগের ধরণ বা তীব্রতার উপর নির্ভর করেই তা ব্যবহার করতে হয়ে থাকে। তবে ইনহেলার কতদিন ব্যবহার করতে হয় বা হবে তা মূলত নির্ভর করে একমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শের উপর। অর্থাৎ একজন চিকিৎসকই সিদ্ধান্ত দিতে পারেন, রোগের ধরণ বা এর উপসর্গ কতদিন ইনহেলার ব্যবহার করতে হবে।
ইনহেলার কতদিন ব্যবহার করতে হয় : শেষ কথা:
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ইনহেলার প্রচলিত আছে যেমন- প্রেসারাইজড মিটার ডোজ ইনহেলার বা পাম্প ইনহেলার (এমডিআই), ড্রাই পাউডার ইনহেলার (ডিপিআই), ব্রেথ একচুয়েটেড ইনহেলার (বিএআই) ইত্যাদি। তবে এগুলোর মধ্যে এমডিআই সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। আবার মিটার ডোজ ইনহেলারের সাহায্যে আরও অত্যাধুনিক ডিভাইস সংযুক্ত করে এর ব্যবহারকে বেশি সহজ করা সম্ভব, যেমন- সিনক্রোব্রিথ, জেরোস্ট্যাট ভিটি স্পেসার, মিনাইজারস্ট্যাট স্পেসার, বেবি মাস্ক, হাফ পাফ কিট ইত্যাদি। তবে এদের মধ্যে আবার স্পেসার বহুল ব্যবহৃত ডিভাইস। এগুলোর মধ্যে যে কোনটা ব্যবহার কর যেতে পারে। তবে প্রশ্ন থেকে যায় যে, প্রকৃতপক্ষে ইনহেলার কতদিন ব্যবহার করতে হয় বা করা যায়।
আরও পড়ুন: মাইগ্রেন হলে কি কি সমস্যা হতে পারে - প্রতিকারগুলি কি কি
আসলে ইনহেলার ব্যবহার করা কী নিরাপদ কিনা, এ্যালার্জি জনিত অসুখের সম্ভাব্য কারণসসূহ, ইনহেলার ব্যবহার বা ইনহেলার নেয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কী কী, সঠিক ইনহেলার প্রয়োগের পদ্ধতি কোনটি, ইনহেলার কতদিন ব্যবহার করতে হয় ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়েই আজকের আমাদের মূল প্রতিপাদ্য। আশা করছি, এগুলো যদি জেনে থাকলে
আপনাদের উপকারে আসবে।
এ
ছাড়াও পরবর্তীতে অন্য কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে সেটাও কমেন্ট করে জানাতে
পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে
পারেন। এতোক্ষণ আমাদের সাথে ইনহেলার কতদিন ব্যবহার করতে হয় বিষয়ক আলোচনায় সংযুক্ত থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url