ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো

পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ডাব আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতঃভাবে জড়িত। তাই এই ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো বা উপকার মিলবে তা জানতে হবে।
অনেকেই বলে ডাবের পানি খালি পেটে খেলে উপকার পাওয়া যায়, আবার কেউ কেউ বলে ভরা পেটে খেতে হবে। প্রকৃত অর্থে এই ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো সেসব বিষয়ে জানতে নিচের লেখাটি সম্পূর্ণ পড়তে হবে।

পোস্ট সূচিপত্র: ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো (When is it best to drink Coconut Water)
ভূমিকা
ডাবের পানিতে কি কি ভিটামিন আছে?
ডাবের পানির উপকারিতাসমূহ
ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো
ডাবের পানি খাওয়ার অপকারিতা
ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো-পরিশেষে

ভূমিকা:

ডাব এমন একটি ফল যা সারা বছরই যে কোন সময়ই আমরা খেতে পারি। তবে অধিকাংশ মানুষই পেটজনিত সমস্যায় বেশি ডাবের পানি খেয়ে থাকে, সেটা আমরা সকলেই জানি। প্রকৃত পক্ষে ডাব আসলে আমাদের শরীর ঠান্ডা এবং নিজেকে হাইড্রেটেড রাখতে ডাবের পানির জুরি নেই।

আরও পড়ুন: মধুর যত পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

আয়ুর্ব্বেদ শাস্ত্রে বলে, খালি পেটে জল, আর ভরা পেটে ফল। অর্থাৎ ডাব এমন একটি পুষ্টিকর খাবার যা শরীরের ভেতরে ও বাইরে দুটো দিকই ভালো রাখে। ডাব শরীরের উপকার ছাড়াও সৌন্দর্য চর্চায়ও দারুণ কাজ করে। সুতরাং এই ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো বা উচিত এমন বিষয় নিয়েই নিম্নে বর্ণিত হলো নানাবিধ পরামর্শ ও মতামত।

ডাবের পানিতে কি কি ভিটামিন আছে?

সাধারণত ডাবের পানিতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিস সি এবং সামান্য পরিমাণে আছে ভিটামিন বি অর্থাৎ রিবোফ্লাভিন (বি২)।

ডাবের পানির উপকারিতাসমূহ:

ডাবের পানি শরীর ঠান্ডা ও সতেজ রাখে:
বিশেষ করে গরমের দিনে ডাবের পানি খেলে শরীর দ্রুত ঠান্ডা হয় ও আরাম পাওয়া যায়। এ ছাড়াও রৌদ্রের প্রখরতায় শরীর ক্লান্ত হয়ে গেলে যদি সে সময় ডাবের পানি খাওয়া যায়, তাহলে তাতে স্বস্তি মেলে।

ডিহাইড্রেশনজনিত সমস্যায় সহায়তা:
ডাবের পানিতে পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও সোডিয়াম থাকায় তা শরীরে পানির ভারসাম্য ঠিক রাখতে সহায়তা করে, ফলে ডিহাইড্রেশনজনিত সমস্যা বা পেট পরিস্কার থাকে।

চোখের নিচে কালো দাগ ও ঠোঁট ফাঁটা দূর হয়:
নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে তাতে চোখের নিচে কালো দাগ দূর হয় এবং চোখের যদি কোনো ফোলা ভাব থাকে তাহলেও তা কমে যায়। এ ছাড়াও ডাবের পানিতে ভিটামিন বি অর্থাৎ রিবোফ্লাভিন (বি২) থাকায় তা ঠোঁট ফাটা বা ঠোঁটের নিচে কালচে ভার দূর করতে সহায়তা করে থাকে।

নখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি:
সাধারণত ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকায় তা নখের ভঙ্গুরতা ও উজ্জলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।

চুলের গোড়া মজবুত রাখতে সহায়তা:
আসলে নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে তা চুলের গোড়া মজবুত সহ ত্বকের জন্যও ভীষণ উপকারি। অর্থাৎ ডাবের পানিতে রয়েছে ভিটামিন এ ও সি।

আরও পড়ুন: পটলের বিচি খাওয়া ভালো না ক্ষতিকর

কিডনীর জন্য উপকারী:
ডাবের পানি পানের কারণে কিডনীর কার্যকারিতা মজবুত হয়, কেননা এতে রয়েছে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম।

হজমে সহায়তাকরণ:
নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে এটা শরীরের মেটাবলিজম বা বিপাকপ্রক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে, আর এতে শরীর ফিট থাকে।

ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো:

আসলে ডাবের পানি দিনের মধ্যে যে কোন সময়েই খাওয়া যায়। তবে সকালবেলা খালি পেটে ডাবের পানি খাওয়াটা সবথেকে ভালো বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে যদি খালি পেটে ডাবের পানি পান করলে তাতে শরীর সতেজ থাকে এবং হজমশক্তিরও বৃদ্ধি ঘটে। এ ছাড়াও শারীরিক ব্যায়াম করার ঘন্টাখানেক আগে বা ঘন্টাখানেক পরে ডাবের পানি পান করলে তাতে শরীর দ্রুত হাইড্রেট হয় এবং সেইসাথে ইলেক্টোলাইট এর ভারসাম্যও বজায় থাকে।

ডাবের পানি খাওয়ার অপকারিতা:

আমরা জানি যে, ডাবের পানি খাওয়া বেশিরভাগই শরীরের নানাবিধ উপকারিতা সাধিত হয়ে থাকে। কিন্তু তা অতিরিক্ত বা নিয়ম না জানার কারণে উপকারের বদলে দেখা দেয় অপকারিতা বা ক্ষতি হিসেবে। তাই ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো বা কখন ডাবের পানি খাওয়া ঠিক নয় ইত্যাদি সংক্রান্ত বিষয়ে নিম্নে বর্ণিত হলো:

শরীরের ক্যালোরির মাত্রা বাড়ে:
অর্থাৎ সাধারণত ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আমরা যদি অতিরিক্ত ডাবের পানি পান করি তাহলে তা হিতে বিপরীত ঘটতে পারে। কেননা অতিরিক্ত ডাবের পানি খাওয়ার কারণে তা শরীরের ক্যালোরির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তবে জেনে রাখা ভালো যে, অন্যান্য ফলের রসের থেকে ডাবের পানিতে চিনির পরিমাণ কম থাকে, কিন্তু তারপরেও অতিরিক্ত ডাবের পানি পানে নিমিষে বেড়ে যায় শরীরের ক্যালোরি।

কিডনীর সমস্যা তৈরি:
জেনে রাখা ভালো যে, ডাবের পানি খেলে কিডনির সমস্যা হয় না। তবে যাদের কিডনিজনিত রোগ আছে তাদের অবশ্যই ডাবের পানি খাওয়া একদম ঠিক নয়। কারণ কিডনি অকার্যকর হলে তা শরীরের অতিরিক্ত পটাশিয়াম বের হয় না। আর ডাবের পানিতে পটাশিয়াম থাকায় তা জমে থাকা পটাশিয়ামের সাথে মিশ্রণের ফলে কিডনি ও হৃদপৃন্ড দুটির জন্যই সমস্যা হয়ে থাকে।

রক্তচাপ বেড়ে যায়:
সাধারণত ডাবের পানিতে বেশি পরিমাণে সোডিয়াম থাকায় তাতে রক্তচাপ বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে যাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক ভাবেই বেশি, তাদেরকে অবশ্যই প্রতিদিন ডাবের পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি:
সাধারণত ডাবের পানিতে কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালোরি বেশি থাকায় তা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে যারা ডায়বেটিসজনিত সমস্যায় আক্রান্ত তাদের অবশ্যই ডাবের পানি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো-পরিশেষে:

যদিও ডাব দ্বারা আমাদের শরীরের অনেক সমস্যায় দূর হয়, তথাপি তা নিয়ন্ত্রণেও সচেতন হতে হবে। আসলে এই ফলটি কারো কাছ অত্যন্ত উপকৃত আবার কারো কাছে এটা উপকৃত নয়। যদি ডাব খাওয়ার কোন সময় থাকেনা, এটি যে কোন সময়ই খাওয়া যেতে পারে। তবে যাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা আছে তাদেরকে অবশ্যই সময় দেখেই তা খেতে হবে। তাই আজকের আর্টিকেলে ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো বা খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় তা উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, আশাকরি তা জানতে ও বুঝতে পেরেছেন।

আরও পড়ুন: গাজরের জুস খেলে কি কি উপকার হয়

সুতরাং ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো বিষয়ক আলোচনায় আপনার যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ প্রদান করতে চান, তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন এবং সেইসঙ্গে ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো বিষয়ক আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url