সিলেটে ঘোরার আকর্ষণীয় স্থান কোনগুলি?
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে সিলেট জেলা অবস্থিত। সিলেট বিভাগটি অপার সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি। তাই আজকে আমরা সিলেটে ঘোরার আকর্ষণীয় স্থান কোনগুলি? সে বিষয়ে জানবো।
মূলত ৪টি জেলা তথা-সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা নিয়ে সিলেট বিভাগ গঠিত। অনেক নৈসর্গিক, শৈল্পিক ও প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকনের ক্ষেত্র নিঃসন্দেহে সিলেট। তারই রেশ ধরে আজ আমরা সিলেটে ঘোরার আকর্ষণীয় স্থান কোনগুলি? তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।
পোস্ট সূচিপত্র: সিলেটে ঘোরার আকর্ষণীয় স্থান কোনগুলি? (What are the interesting places to visit in Sylhet?)
ভূমিকা
সিলেটে ঘোরার আকর্ষণীয় স্থান সমূহের বর্ণনা
সিলেটে ঘোরার আকর্ষণীয় স্থান কোনগুলি?-শেষ কথা
ভূমিকা:
সিলেটে ঘোরার আকর্ষণীয় স্থান কোনগুলি? বলতে সিলেট বিভাগে আসলে একাধিক ভ্রমণের স্থান রয়েছে। অর্থাৎ যতগুলি সৌন্দর্যের স্থান রয়েছে তা ঘুরতে গেলে/ভ্রমণ করতে চাইলে তা যেমন সময় সাপেক্ষ আবার ধৈর্য্যেরও প্রয়োজন। যাইহোক, সিলেট বিভাগের দর্শনীয় স্থানসমূহ গুলি নিম্নরূপ:
লালাখাল, রাতারগুল, বিছানাকান্দি, ভোলাগঞ্জ, লোভাছড়া, সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, পানথুমাই ঝর্ণা, লক্ষণছড়া, জাফলং, তামাবিল, জিতু মিয়ার বাড়ী, আলী আমজদের ঘড়ি, ক্কীন ব্রীজ, শ্রীমঙ্গল, আদমপুর বন, মাধবপুর লেক, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাগুরাছড়া খাসিয়াপুঞ্জি, টাঙ্গুয়ার হাওর, নীলাদ্রি লেক, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান, বারেকটিলা, লালঘাট ঝর্ণা, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, জিতু মিয়ার বাড়ী, হাকালুকি হাওর, ডিবির হাওর, চাঁন মিয়া আরারস বাগান, রাংপানি, জুগিরকান্দি মায়াবন, শুকতারা প্রকৃতি নিবাস, হযরত শাহ পরাণ (রাঃ) এর মাজার, খাদিমনগর ন্যাশনাল পার্ক, লাক্কাতুরা চা বাগান, কুলুমছড়া, মালনীছড়া চা বাগান, শুকতারা প্রকৃতি নিবাস, মণিপুরি রাজবাড়ি, লেক্সাস গার্ডের সিলেট ইত্যাদি।
সিলেটে ঘোরার আকর্ষণীয় স্থান সমূহের বর্ণনা:
লালাখাল: জৈন্তিয়া হিলসের ঠিক নীচের পাহাড়, যা প্রাকৃতিক বন, চা বাগান ও নদীঘেরা এক প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্যবালী। উল্লেখ্য লালাখাল থেকে সারীঘাট পর্যন্ত প্রায় ১২ কি.মি. পানির রঙ পান্না সবুজ হয় থকে।
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট: সিলেটে ঘোরার আকর্ষণীয় স্থান কোনগুলি? এর মধ্যে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট একটি যা বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন বা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এখানকার গাছগুলি ৪ থেকে ৭ মাস পানির নিচে থাকে। এই বনে রয়েছে বেত, কদম, হিজল, পিঠালি, অর্জুন, ছাতিম গুটি জাম,বটগাছ, মুর্তাসহ নানা জাতের জলসহিষ্ণু গাছ। এই বনে প্রবেশকালে আশেপাশে দেখতে পাবেন বানর, গুঁইসাপ, সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়িড়, ঢুপি, ঘুঘু, চিল এবং বাজপাখি সমূহ।
আরও পড়ুন: পার্বত্য চট্টগ্রামের যত দর্শনীয় স্থান ও নামসমূহ
বিছানাকান্দি: সিলেটে ঘোরার আকর্ষণীয় স্থান কোনগুলি? এর মধ্যে বিছানাকান্দি অন্যতম। বিছানাকান্দির মূল আকর্ষণ হলো পাহাড়, নদী, ঝর্ণা এবং নানারকম পাথরের এক সম্মিলিত মিলনরেখা। এই স্থানটি সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। বিছানাকান্দি ভ্রমণের সঠিক বা উপযুক্ত সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। বিছানাকান্দি যেতে হলে আপনাকে কোম্পনীগঞ্জ রোডে নেমে সালুটিকর থেকে এগিয়ে ডানে মোড় নিলেই পাবেন বঙ্গবীর। এবার এই বঙ্গবীর থেকে সামনে কিছুটা এগিয়ে বামে মোড় এবং তারপরে হাদারপাড়। বিছানাকান্দি এই হাদারপাড় এর একেবারে পাশেই অবস্থিত।
সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা: জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫/২০ মিনিট দূরত্বে সংগ্রামপুঞ্জি। এখানে পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরণার জল জমে এখানে পুকুরের মতো সৃষ্টি হয়েছে। তবে এই ঝরণার তিনটি ধাপ রয়েছে এবং এই ঝরণার তৃতীয় ধাপে আছে সুড়ঙ্গ যার শেষ এখনও অজানা।
পান্থুমাই ঝর্ণা: পান্থুমাই ঝর্ণাটি গোয়াইনহাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নে অবস্থিত একটি অত্যন্ত সুন্দর গ্রাম। পান্থুমাই ঝর্ণার নামকরণে কিছুটা বিভেদ আছে, কারণ কেউ বলেন ফাটাছড়ির ঝর্ণা আবার কেউ কেউ বলেন ডাকেন বড়হিল ঝর্ণা।
জাফলং: সিলেটে ঘোরার আকর্ষণীয় স্থান কোনগুলি? এর মধ্যে জাফলং নিঃসন্দেহে সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে জাফলং অন্যতম। এটি সিলেট এর গোয়াইনঘাট উপজেলার ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেষা এই স্থানটি। জাফলং-এ আপনি দেখতে পাবেন পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানিধারা, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, উচু উঁচু পাহাড়ে সাদা মেঘ যেন জাফলংকে সবার কাছে করে তোলে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। তবে জাফলং রূপের প্রকাশ ঘটে একে ঋতুতে একে রকম।
জিতু মিয়ার বাড়ী: খান বাহাদুর আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া ওরফে জিতু মিয়া ১ দশমিক ৩৬৫ একর জায়গাতে মুসলিম স্থাপত্য শৈলীর এই স্থাপনাটি নির্মাণ করেন। এই জিতু মিয়ার বাড়ী পরিদর্শনে আপনি ড্রয়িংরুমে তুরস্কের পশা, রুশ তুরস্কের যুদ্ধ, ব্রিটিশ রাজ পরিবারের রাজপুরুষদের বিভিন্ন আলোকচিত্র দেখতে পাবেন। প্রাকৃতিক পরিবেশ ঘোরাঘুরি করেও মজা পাবেন।
শ্রীমঙ্গল: সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের অন্তর্গত শ্রীমঙ্গল তথা চায়ের জন্য খ্যাত। পাহাড়, রেইন ফরেস্ট, হাওর আর বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে চা বাগান। শ্রীমঙ্গলে চা ছাড়াও রাবার, লেবু ও আনারস চাষ হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: পেয়ারা পাতার কি কোন গুণাবলী আছে? জেনে নিন
আদমপুর বন: মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং এই বনের একটি বিটের নাম হলো আদমপুর। যারা অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়, বন-জঙ্গল পছন্দ করেন তাদের জন্য আদমপুর বন একটি আদর্শ বনভূমি। বেশিরভাগ উঁচু-নিচু টিলা জুড়ে আদমপুরের জঙ্গল, মস্ত বড় বড় গাছ, চারিদিকে জঙ্গল, নিরিবিলি একটা অন্যরকম মুহুর্ত। এই বনে বিভিন্ন প্রজাতির বান, উল্লুক, মেছো বাঘ, মায়া হরিণ ইত্যাদি দেখতে পাবেন।
মাধবপুর লেক: সিলেটে ঘোরার আকর্ষণীয় স্থান কোনগুলি? বলতে মাধবপুর লেকটিও অত্যন্ত দর্শনীয় স্থান এবং এটি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এই লেকের সৌন্দর্য হচ্ছে তা সবসময় নীল ও সাদা রঙের পদ্ম ফুলে ছেয়ে থাকে। বলাবাহুল্য মাধবপুর লেকটি অত্যন্ত চওড়া।
নীলাদ্রি লেক: সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের টেকেরঘাট নামক গ্রামে নীলাদ্রি লেকটি অবস্থিত। এই লেকের আশে পাশে রয়েছে পাহাড় ও ছোট বড় অনেক টিলা এবং এর সঙ্গে দেখতে পাবেন লেকের অসাধারণ নীল পানি যা লেকটিতে করেছে মোহনীয় ও আকর্ষনীয়। অর্থাৎ সিলেটে ঘোরার আকর্ষণীয় স্থান কোনগুলি? এর মধ্যে নীলাদ্রি লেকটিও অত্যন্ত চমৎকার
যাদুকাটা নদী: যাদুকাটা নদীটি সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। যাদুকাটা নদীর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নদীর এক পাড়ে দেখা যায় সবুজ বৃক্ষরাজি সমন্বয়ে বারেক টিলা এবং অন্যদিকে দেখতে পাবেন খাসিয়া পাহাড়।
শিমুল বাগান: সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় যাদুকাটা নদীর সন্নিকটে মানিগাঁও গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় ১০০ বিঘার এই শিমুল বাগানটি। এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে বসন্তকালে অর্থাৎ ফাল্গুন মাসে ভ্রমণ করলে দেখা যায় গাছের ডালে ডালে শিমুল ফুটে আছে, যা দেখে মনে হবে লাল আগুনের ঝলকানি চোখে এসে লাগছে।
বারেক টি: সুনামগঞ্জ জেলার তাহিপুর উপজেলায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবস্থিত। চারিদিকে সবুজে বেষ্টিত পাহাড় এবং মেঘালয়ের খাসিয়া পাহাড় দেখা যায়। এখানে বারিক্কা টিলায় প্রায় ৪০টি আদিবাসী পরিবার বসবাস করে।
কুলুমছড়া: এই ঝর্ণাটি গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। মূলত এটি ভারতের ঝর্ণার একটি শেষ অংশ এবং মেঘালয় থেকে বয়ে আসা ঝর্ণার পানি থেকে এই কুলুমছড়া ঝর্ণার উৎপত্তি।
রাংপানি: সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার মোকামপুঞ্জি এলাকায় অবস্থিত একটি সীমান্তবর্তী নদী। অনেকেই একে শ্রীপুর পাথরকোয়ারি নামেও পরিচিত। এই রাংপানি নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতটাই সুন্দর যা সকলকেই মুগ্ধ করে তোলে।
সিলেটে ঘোরার আকর্ষণীয় স্থান কোনগুলি?-শেষ কথা:
সিলেটে ঘোরার আকর্ষণীয় স্থান কোনগুলি? হিসেবে অনেক দর্শনীয় স্থান আছে। আজকের আর্টিকেলে আমরা সবগুলোর বর্ণনা করতে পারলাম, তবে যদি আপনাদের এ বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকে, তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্টস বক্সে তা জানাবেন।
আসলে সিলেট বিভাগে বেশীর ভাগ, হাওর, বাওর, বিভিন্ন জলাশয় অবস্থিত। তাই বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক নৈসর্গিকতার অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে চাইলে সিলেট ভ্রমণ আপনাকে করতেই হবে। তবে ভ্রমণ করার আগে অবশ্যই একটি সঠিক পরিকল্পনা থাকাটা একান্তই আবশ্যক। আর অচেনা, অপরিচিত জায়গাতে গেলে অনেক উদীয়মান সমস্যা দেখা দিতে পারে, সেক্ষেত্রে আগে থেকেই সতর্কতামূলক তথ্যগুলি সংরক্ষণ করতে ভুলবেন না।
পরিশেষে সিলেটে ঘোরার আকর্ষণীয় স্থান কোনগুলি? আর্টিকেলটি আশা করি আপনাদের ভ্রমণ পিপাসাকে আরও বেগবান করতে সাহায্য করবে। এতোক্ষণ সিলেটে ঘোরার আকর্ষণীয় স্থান কোনগুলি? বিষয় আলোচনায় অংশগ্রহণ করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url