সকালে খালি পেটে জিরা পানি খেলে কি হয়
সাধারণত তরকারিতে আমরা অনেক ধরণের মসলা ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এর মধ্যে জিরা অন্যতম। তাই সকালে খালি পেটে জিরা পানি খেলে কি হয় বা জিরার পুষ্টিগুণ এবং জিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানাটা খুবই দরকার।
ছোট্ট এই মসলা জিরার অনেক গুণাবলী রয়েছে, যা খাবারের স্বাদ ও গন্ধ বাড়ানো থেকে হজম ক্ষমতা, পেটের অসুখ, অ্যাজমার সমস্যাসহ ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অত্যন্ত উপকারি। সুতরাং সকালে খালি পেটে জিরা পানি খেলে কি হয় বা জিরা খাওয়ার অন্যান্য নিয়মাদি আমাদের জানতে হবে।
পোস্ট সূচিপত্র: সকালে খালি পেটে জিরা পানি খেলে কি হয় (What happens if you drink cumin water on an empty stomach in the morning?)
সকালে খালি পেটে জিরা পানি খেলে কি হয় - পরিশেষে
জিরা কত প্রকার হয়ে থাকে?
জিরা মূলত ২ প্রকার, কালো জিরা ও সাদা জিরা। তবে বিশেষ কিছু রান্নার জন্য শাহী নামক জিরা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
জিরা কতটুকু খাওয়া উচিত?
সকালে খালি পেটে জিরা পানি খেলে কি হয় আলোচনায় আপনি যদি প্রতিদিন এক টেবিল চামচ (৫ গ্রাম) জিরা খেতে
পারেন সেটি নিরাপদ ও ঝুঁকিহীন। এক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল করতে হবে, যদি আপনি
চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন বা কোন ডাক্তারের অধীনে আছে, তাহলে অবশ্যই
ডাক্তারের পরামর্শ মেনে জিরা খাওয়া যুক্তিযুক্ত। কারণ অতিরিক্ত জিরা খেলে
তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। তবে রান্নায় জিরা ব্যবহারের
ক্ষেত্রে প্রতি ডিশে ১-২ চামচ জিরাই যথেষ্ট।
কিভাবে জিরা খাওয়া যায়:
- রাত্রে শোয়ার আগে ১ কাপ পানিরে মধ্য ১ কাপ জিরা দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে তা জিরা ছেঁকে নিয়ে শুধু পানিটা খালি পেটে পান করুন। আবার পানিটা ফেলে দিয়েও শুধু জিরা খেতে পারেন।
আরও পড়ুন: লবঙ্গে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও অপকারিতা
- যে কোন তরকারির মধ্যে জিরা মিশিয়ে রান্না করলে খাবারের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়।
- জিরা গুড়া করে পানিতে মিশিয়েও পান করা যেতে পারে।
কখন খাওয়া উচিত এই জিরা:
সকালে খালি পেটে জিরা পানি খেলে কি হয় এর ক্ষেত্রে আপনি যদি সকালে খালি পেটে জিরা পানি বা ভেজানো জিরা খেতে পারেন, তাহলে তা খুবই উপকারী। এ ছাড়াও দুপুরে
বা রাতে তরকারি বা খাবারের মধ্যে দিয়ে খেতে পারেন। এক্ষেত্রে একটি বিষয়
লক্ষ্যণীয় যে, যদি কখনো শরীরে অবসাদ বা দুশ্চিন্তা থাকে, বা মানসিক চাপে
ভুগছেন এমন সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে এক চিমটি জিরা মুখে দিয়ে চিবোতে
পারলে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।
জিরার পুষ্টিগুণসমূহ:
জিরায় আছে ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও খাদ্য আঁশ। এ ছাড়াও জিরা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ।
জিরা খাওয়ার উপকারিতা:
- জিরা আমাদের দেহের অস্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ হ্রাস করে ওজন কমাতে সহায়তা করে, এ ছাড়াও জিরা পানি এবং কলা যদি একসঙ্গে খেতে পারেন তাহলে হজম শক্তি বৃদ্ধি ঘটে এবং শরীরের ওজন কমাতে তা সহায়তা করে।
- জিরা আমাদের হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করে, অর্থাৎ খাবারের ক্ষেত্রে যদি হজমজিনিত কোন সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে এক গ্লাস জিরা পানি একবার খেয়ে দেখবেন।
- শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট কমাতে ২ টেবিল চামচ জিরা রাতের বেলা ভিজিয়ে রাখুন অথবা সকালে তা পানিতে সিদ্ধ করে তা ছেঁকে নিয়ে পান করতে পারেন। আপনি যদি এটি নিয়মিত পান করতে পারেন, তাহলে তা কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হবে।
- যাদের অ্যাসডিটি বা অম্বল জনিত সমস্যা আছে, তাদের জন্য জিরা পানি অত্যন্ত উপকৃত সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এক মহা ঔষধ।
- জিরাতে রয়েছে ভিটামিন ই ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ত্বককে সতেজ ও স্বাস্থ্যবান রাখতে সহায়তা করে থাকে।
- জিরা চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিসহ চুলেরও বৃদ্ধি ঘটায়। এ ছাড়াও ব্রণ বা ত্বকজনিত অন্য কোন সমস্যার ক্ষেত্রে জিরার পেস্ট বা তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
- জিরা হরমোনজনিত ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। জিরা প্রোজেস্টরন ও এস্ট্রোজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহয়ক ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে মহিলাদের ঋতুচক্রজনিত হরমোন সম্পর্কিত সমস্যার সমাধানে সহায়ক। এ ছাড়াও মহিলাদের হরমোনাল জনিত সমস্যায় সৃষ্ট ব্যথা বা অশ্বস্তি কমাতে জিরার জুরি নেই।
- জিরা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। কারণ এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট কামিনাল্ডিহাইড ও থাইমল শরীরকে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালস থেকে রক্ষা করে ও ক্ষতি কমায় সেলুলারের।
- সাধারণ সর্দি, কাশি বা ঠান্ডাজনিত সমস্যায় জিরার পানি বা জিরার গুড়া অনেক উপকারি।
- জিরা ডায়াবেটিসের সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। সেক্ষেত্রে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে নিয়মিত জিরা খেতে পারেন।
- নিয়মিত জিরা খেতে পারলে নিয়ন্ত্রণে থাকবে ডায়ারিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য জাতীয় সমস্যা। অর্থাৎ যারা আইবিএস-এ ভুক্তভোগী, তাদের জন্য ঘরোয়া বা প্রাকৃতিক উপদান জিরা খাওয়া যেতে পারে।
- জিরা পানি সেবনে কিডনির স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কারণ এটি শরীর হতে টক্সিন বের করে দেয় এবং ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- জিরা পানি লিভার ডিটক্সিফেকেশনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এপি পিত্তের উৎপাদন বাড়িয়ে শরীরকে ডিটক্সিফাইয়ের মাধ্যমে লিভারের ক্ষমতা বাড়ায়।
আরও পড়ুন: ব্যথানাশক ঔষধ দীর্ঘদিন খাওয়া যাবেনা
- যাদের অনিদ্রাজনিত সমস্যা আছে, তাদেরকে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক চামচ চটকানো কলার সঙ্গে আধা চামচ জিরার গুড়া মিশিয়ে খেয়ে নিন। কারণ জিরা ও কলা যদি একসঙ্গে খাওয়া যায় তাহলে মস্তিস্কে মেলাটোনিন নামে এক ধরণের কেমিক্যালের ক্ষরণ বেড়ে যায়। মূলত এই মেলাটোনিন কেমিক্যাল ভালো ঘুমের ক্ষেত্রে সহায়তা করে।
জিরার অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
- জিরা হজম প্রক্রিয়াতে সহায়ক হিসেবে কাজ করলেও মাঝে মধ্যে তাতে বিঘ্ন ঘটায় এই জিরা। জিরা খাওয়ার ফলে হঠাৎ করেই তা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল ট্র্যাকে গ্যাস বাড়ার প্রক্রিয়াকে সহজতর করে দেয়, ফলে বুক জ্বালা করতে পারে।
- দীর্ঘদিন ধরে জিরা খেলে তা লিভার এবং কিডনীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সেক্ষেত্রে পরিমাণ মতো জিরা খেতে হবে।
- গর্ভবতী নারীদের অতিরিক্ত জিরা খাওয়া থেকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অর্থাৎ গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত জিরা খাওয়ার ফলে গর্ভপাতের আশাঙ্কা দেখা দেয়।
- অতিরিক্ত জিরা খাওয়ার ফলে মহিলাদের পিরিয়ডকালীন জটিলতা দেখা দিয়ে থাকে এবং অতিরিক্ত রক্তও বের হয়ে যায়।
- অতিরিক্ত জিরা খাওয়ার ফলে চিন্তা চেতনায় ঘোলাটে ভাব চলে আসে। এবং পাশাপাশি তন্দ্রাচ্ছন্নতা বা বমি বমি ভাব আসতে পারে।
সকালে খালি পেটে জিরা পানি খেলে কি হয় - পরিশেষে:
সাধারণত আমরা তরকারিতে বিভিন্ন রকম মসলা ব্যবসা করে থাকি। কিন্তু যতগুলো মসলা ব্যবহার করি প্রত্যেকটি মসলারই বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা আমরা অনেকেই জানি না অথবা ভাবিনা। তবে আজকে শুধুমাত্র ক্ষুদ্র একটি মসলা জিরা এর বিষয়টি আলোচনায় আনা হয়েছে। তাই আজকে সকালে খালি পেটে জিরা পানি খেলে কি হয় বিষয়ক আর্টিকেলটি আপনাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাকে একটু অগ্রসর করার পাশাপাশি এর বিস্তারিত বিষয়গুলিও জানতে পারবেন। জিরা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়াদসিহ অন্য কোন বিষয়ে যদি কোন মন্তব্য, পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
আরও পড়ুন: করলা খাওয়ার নিয়ম - করলার পুষ্টিগুণাবলীসমূহ
আসলে আমরা কোন কোন তরকারিতে জিরা বাটা আবার কোন কোন তরকারিতে গোটা জিরা দিয়ে থাকি। কিন্তু এর বাইরেও জিরা পানি বা জিরার গুড়া খাওয়া যায় এবং কখন, কিভাবে, এর খাওয়ার প্রক্রিয়াটি কি ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের অস্পষ্ট ধারণা আছে। আজকের সকালে খালি পেটে জিরা পানি খেলে কি হয় বিষয়ক আর্টিকেল থেকে আশাকরি জিরার বিভিন্ন বিষয়াদি সম্পর্কে আপনাদের ধারণাটা অনেকই পরিস্কার হবে। পরিশেষে সকালে খালি পেটে জিরা পানি খেলে কি হয় বিষয়ক আলোচনায় দীর্ঘক্ষণ যুক্ত থাকার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url