রংপুরের দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি?

রংপুরের দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি? বলতে রংপুর জেলার ইতিহাস সমৃদ্ধ ও ঐতিহাসিক অনেক স্থাপনাসহ বিনোদনমূলক বিভিন্ন স্থান এখানে রয়েছে।
রংপুর জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ এর মধ্যে রংপুরের দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি? হিসেবে, যেমন-তাজহাট রাজবাড়ি, দেবী চৌধুরাণীর রাজবাড়ী, পায়রাবন্দ, লালদীঘি নয় গম্বুজ মসজিদ, ভিন্নজগত, সেনা প্রয়াস বিনোদন পার্ক, চিকলি ওয়াটার পার্ক, ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

পোস্ট সূচিপত্র: রংপুরের দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি? (What are the Tourist Attractions in Rangpur?)

তাজহাট জমিদার বাড়ি:

রংপুরের দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি? এর মধ্যে রংপুর জেলার মাহিগঞ্জের তাজহাট গ্রামে অবস্থিত তাজহা্ট জমিদার বাড়িটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যে মিশ্রিত এক সাক্ষী। বিশিষ্ট রত্ন ব্যবসায়ী মান্নালাল রায় অষ্টাদশ শতাব্দির শেষ দিকে ব্যবসায়িক কারণে মাহিগঞ্জে আসেন এবং বসবাস শুরু করেন। মান্নালাল রায় বসবাস করার সুবাদে এই তাজহাট জমিদারিটি প্রতিষ্ঠা করেন।  ১৮৯৭ খ্রি. প্রবল ভূমিকম্পে এ ভবনটির অনেকাংশই ধ্বংস হয়ে যায় এবং জমিদার মান্নালাল রায় গুরুতর আহত হয়ে মারা যান। এর পরবর্তী সময়ে মান্নালাল রায়ের দত্তক পুত্র গোপাল লাল রায় বাহাদুর জমিদারি পরিচালনা শুরু করেন এবং বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে গোপাল লাল রায় প্রায় ২০০০ জনবল নিয়োগের মাধ্যমে এই জমিদার বাড়িটি পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করেন। বলাবাহুল্য তাজহাট জমিদার বাড়িটি ১৯১৭ সালে সম্পূর্ণ রূপ লাভ করে এবং তৎকালীন সময়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় হয়।

আরও পড়ুন: নাটোর জেলার ইতিহাস - নাটোর জেলার কোনগুলো দর্শনীয় স্থান

ঢাকার আহসান মঞ্জিলের আদলে গড়া এই জমিদার বাড়ির চত্বরে রয়েছে গাছের সারি, বিশাল মাঠ এবং প্রাসাদের দুই পার্শ্বে আছে দুটি পুকুর। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন রকম ফুল, মেহগনি, কামিনী. আম ও কাঁঠাল গাছ। শ্বেত ও চুনা পাথর, লাল ইটের ব্যবহারে নির্মিত ৪ তলা বিশিষ্ট তাজহাট জমিদার বাড়িটির ৩য় ও ৪র্থ তলায় রয়েছে জমিদার গোপালের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র। এ ছাড়াও থাকার কক্ষ, স্নানঘর, অতিথিদের জন্য আলাদা কক্ষ। উল্লেখ্য, প্রাচীণ মুঘল স্থাপত্যের অনুকরণে নির্মিত তাজহাট জমিদার বাড়িতে ৩১টি সিঁড়ি আছে, যা ইতালীয় মার্বেল পাথরে তৈরি।
 
২০০৫ খ্রি. বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ তাজহাট জমিদার বাড়ির দ্বিতীয় তলায় রংপুর জাদুঘর স্থানান্তর করেন। উক্ত জাদুঘরে দশম ও একাদশ শতাব্দীল বেশ কিছু টেরাকোটা শিল্পকর্ম, মুঘল সমরাট আওরঙ্গজেবের সময়ের কুরআন, মহাভারত, রামায়ণসহ আরবি এবং সংস্কৃত ভাষায় লেখা প্রাচীন পান্ডুলিপি এবং কালো পাথরের বিষ্ণুর মূর্তি ও ৩০০টি মূল্যবান নিদর্শন।

দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ি:

রংপুরের দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি? এর মধ্যে ইতিহাস ও তথ্যনির্ভর স্থান হচ্ছে দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ি। রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলা রেলওয়ে ষ্টেশনের নিকটেই দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়িটি অবস্থিত। ১৭০৩-০৪ খ্রি. জমিদার অনন্ত রামের মাধ্যমে দেবী চৌধুরানী রাজবাড়ির গোড়াপত্তন ঘটে। তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশে বৃটিশরা ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রজা ও সাধারণ জনগণের উপর নানা অত্যাচার ও নিপীড়ন চালাতো। দেবী চৌধুরানী তৎকালীন ভারতবর্ষে প্রথম নারী হিসেবে অস্ত্র হাতে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন। উল্লেখ্য যে, সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর আনন্দ মঠ এবং দেবী চৌধুরানীর নামে দুটি করেছিলেন। সাহসী দেবী চৌধুরানীর কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরগুলি। তবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর মন্দিরে বিভিন্ন পূজা-অর্চনার আয়োজন করে থাকে। তবে উল্লেখ্য যে, দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়িটির কাচারী ঘর ও নাট মন্দিরটি পীরগাচা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

পায়রাবন্দ গ্রাম:

নারী জাগরণের অগ্রদূত ও মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের (রোকেয়া খাতুন) জন্মগ্রহণ করে ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার এই পায়রাবন্দ গ্রামে। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের পিতা তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার সাথে মিল রেখে মেয়েকে নিজ গৃহে আরবী ও উর্দু শেখানো হত। কিন্তু সম্ভাবনাময় রোকেয়া তাঁর বড় ভাই ইব্রাহীম সাবেরের কাছে গোপনে বাংলা ও ইংরেজি শিখতে শুরু করেন। তবে ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন বেগম রোকেয়া। উল্লেখ্য যে, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের স্বামী ছিলেন মুক্তমনা এবং তিনি রোকেয়াকে লেখালেখি করতে উৎসাহ প্রদান করেন। ১৯০২ খ্রিষ্টাবেদ ‘পিপাসা’ নামের একটি গল্পের মাধ্যমে সাহিত্য জগতে আবির্ভাব ঘটে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের।
 
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের বাড়ি সংলগ্ন সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩.১৫ একর জমির উপর বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই স্মৃতিকেন্দ্রের সম্মুখভাগে রয়েছে বেগম রোকেয়ার পিতলের তৈরি ভাস্কর্য। এ ছাড়াও রয়েছে নান্দনিক বাগান, অফিস ভবন, চার তলা ডরমেটরি ভবন, গবেষণা কক্ষ, লাইব্রেরি, গেস্ট হাউজ ইত্যাদি।

লালদিঘী নয় গম্বুজ মসজিদ:

রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহাসিক লালদিঘী নয় গম্বুজ মসজিদটি। মসজিদটির গায়ে কোন শিলালিপি না থাকায় ধারণা করা হয় ব্রিটিশ শাসনামলেই এই মসজিদটি নির্মান করা হয়। আবার অনেকে মনে করেন, শেষ মোগল যুগের স্থাপত্য শৈলীর সাথে মিল থাকায় এটি মোগল আমলের কোন সময়ে নির্মিত। বর্গাকৃতির লালদিঘী নয় গম্বুজ মসজিদটিতে রয়েঠে ৯টি গম্বুজ। গম্বুজগুলোর চূড়ায় আছে পদ্মফুলের ন্যায় শিরচূড়া ও গম্বুজের নিচের দিকে রয়েছে মারলন অলঙ্ককরণ। পশ্চিম দিক বাদে তিন দিকে ৩টি করে মোট ৯টি প্রবেশ পথ রয়েছে। তবে মসজিদের চারকোণে অষ্টাকোণাকৃতির কিউপলাযুক্ত মিনার লক্ষ্য করা যায়।

ভিন্নজগত: 

রংপুর জেলার অন্যতম বিনোদন স্পট হচ্ছে ভিন্নজগত। অর্থাৎ গঙ্গাচড়া উাপজেলার খলেয়া গুঞ্জিপুর এলাকায় প্রায় একশত একর জায়গার উপরে বিস্তৃতি দেশের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র ভিন্নজগত।
রংপুরের দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি? এর মধ্যে ভিন্নজগতে ঘুরে আসতে পারেন, যেখানে শোভা পায় দেশি-বিদেশি হাজারো বৃক্ষ, নানা জাতের পাখির কোলাহলে মুখরিত এক প্রাকৃতিক পরিবেশ, যার গাছের ছায়ায় আপনি সারাদিন ঘুরে বেড়াতে পারেন।

আরও পড়ুন: বগুড়া জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য - বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ

ভিন্নজগতে রয়েছে আধুনিক বিশ্বের বিস্ময় এবং দেশের প্রথম প্লানেটোরিয়াম। শিশুদের জন্য রয়েছে নানা রকমের জীবজন্তুর মূর্তি। বিনোদনের ক্ষেত্রে রয়েছে রোবট স্ক্রিল জোন, স্পেস জার্নি, জল তরঙ্গ, আজব গুহা, নৌকা ভ্রমণ, সি প্যারাডাইস, শাপলা চত্বর, সুইমিং পুল, স্পিনিং হেড, মেরি গো রাউন্ড, ফ্লাই হেলিকপ্টার, থ্রিডি মুভিসহ বীরশ্রেষ্ঠ এব ভাষা সৈনিকদের ভাস্কর্য। এ ছাড়াও মাছ ধরার ব্যবস্থা, নৌকা ভ্রমণ, ৫০০টি পৃথক পৃথক  পিকনিক করার ব্যবস্থা, ৯০০ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা এবং ৭টি কটেজ ও থ্রি স্টার মানের ড্রিম প্যালেস হোটেল। 

প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক:

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ২০১৩ সালে ঘাঘট নদীর দুই পাড়ে প্রায় ১১০০ একর জায়গার উপরে গড়ে তোলেন প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্কটি। অত্যন্ত নিরিবিলি এবং মনোরম পরিবেশের এই বিনোদন পার্কে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিকৃতি, কৃত্রিম সমুদ্র সৈকত, শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা, ফুলের বাগান এবং তিনটি ভিন্ন ভিন্ন নামে (তিস্তা, করতোয়া ও যমুনা) পিকনিক স্পট। এই পার্কটির বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ওষুধি, বনজ এবং নানা ফলজ বৃক্ষের সমাহার। নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থাও রয়েছে, যা আপনি ইচ্ছে করলে নৌকা ভ্রমণও করতে পারেন।

চিকলি ওয়াটার পার্ক:

রংপুর শহরের হনুমানতলায় অবস্থিত প্রায় ১০০ একজর জায়গা বিস্তৃত একটি জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র। এই পার্কটি দেশের প্রথম ভাসমান পার্ক হিসেবে বেশী পরিচিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা চিকলি ওয়াটার পার্ক। এই পার্কে দশনার্থীদের জন্য রয়েছে ওয়াটার রাইড, শিশুদের জন্য রয়েছে খেলার জায়গাসহ নাগরদোলার ব্যবস্থা।

রংপুরের দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি? - পরিশেষে: 

বৃহত্তর রংপুর বিভাগ একটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যগত পটভূমিকার বিমূর্ত সাক্ষী। রংপুর জেলায় যেমন রয়েছে বিনোদনমূলক নানা কেন্দ্র ঠিক তেমনি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নানা স্থাপনাও রয়েছে। বিনোদন প্রেমীরা প্রতি বছর রংপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে থাকেন। ‍মূলত বাংলাদেশের প্রতিটা জেলা বা বিভাগেই রয়েছে নানা ঐতিহ্য ও ইতিহাসের সম্পৃক্ততা। আসলে রংপুর জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ গুলো কি কি বা শুধুমাত্র রংপুরের দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি? তা জানতে অনেকের আগ্রহ রয়েছে, মূলত সেই লক্ষ্য নিয়েই আজকের আর্টিকেল।

আরও পড়ুন: সিলেটে ঘোরার আকর্ষণীয় স্থান কোনগুলি?

প্রতিটা দেশেরই ইতিহাস আছে এবং তা বিভিন্ন সময়ে বা সময়ের পটপরিবর্তনে সাক্ষী দিয়েছে। আর জানার আগ্রহটা মানুষের সেই আদিমকাল বা জন্মলগ্ন থেকেই বিদ্যমান। রংপুরের দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি? বা ইতিহাস নির্ভর স্থানগুলি যেমন, দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ি, তাজহাট জমিদার বাড়ি, লালদিঘী নয় গম্বুজ মসজিদ এবং বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের জন্মভূমি ঠিক তেমনই এই জেলায় রয়েছে নানা বিনোদন কেন্ত্র, যেমন-ভিন্নজগত, প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক, চিকলি ওয়াটার পার্ক ইত্যাদি। যাইহোক আজকের রংপুরের দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি? বিষয়ক আর্টিকেলটি যদি ভালো লাগে তবে তা শেয়ার করতে পারেন এবং সেইসঙ্গে এতদবিষয়ে যদি কোন পরামর্শ বা মন্তব্য থাকে তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন। পরিশেষে রংপুরের দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি? বিষয়ক আর্টিকেলে দীর্ঘক্ষণ আপনার যুক্ত থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।