বর্ষায় কিভাবে গাছের যত্ন নিতে হয়

সাধারণত অন্যান্য ঋতুর থেকে সম্পূর্ণই আলাদা বর্ষাকাল। তাই বর্ষায় কিভাবে গাছের যত্ন নিতে হয় সেটা জানাটাও জরুরী।
তাই বর্ষাকালে গাছের যত্ন নেয়ার ধরণটাও একটু আলাদা হবে বৈকি! আসলে বর্ষাকালে হয়তো গাছে পানি দেয়া লাগেনা, কিন্তু বর্ষায় কিভাবে গাছের যত্ন নিতে হয় বা অন্যান্য ঋতুর থেকে একটু বেশেই যত্ন নিতে হয়। তাই চলুন জেনে নিই বিষয়গুলি:

পোস্ট সূচিপত্র: বর্ষায় কিভাবে গাছের যত্ন নিতে হয় (How to take care of trees during the Monsoon)
গাছে অতিরিক্ত পানি না দেয়া
ক্যাকটাস জাতীয় গাছের বিশেষ যত্ন
বর্ষাকালে পানি নিষ্কাষণ ব্যবস্থা
বর্ষাকালে টবে মাটি দিতে হবে
গাছে বা টবে সার প্রয়োগ
বর্ষাকালে পোকামাকড়ের উপদ্রব দমানো
চারকোল গুড়া প্রয়োগ
গাছে সূর্যের আলো লাগাতে হবে
গাছে খুঁটি দেয়া
বর্ষাকালে গাছকে ট্রিম করা
বর্ষায় কিভাবে গাছের যত্ন নিতে হয়-শেষ কথা

গাছে অতিরিক্ত পানি না দেয়া:

যেহেতু বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিতেই গাছের টপ ভিজে থাকে সেহেতু এই সময়ে কোন গাছেই পানি দেয়ার প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ বর্ষায় কিভাবে গাছের যত্ন নিতে হয় বলতে সাধারণত বৃষ্টির পানিতে থাকে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, সালফেট এবং নাইট্রেট আয়রন, এগুলি গাছের জন্য খুবই উপকারী। সেজন্য বিশেষ করে বর্ষাকালে গাছ বেশি মোটাতাজা বা সুস্থ্য থাকে এবং ঝাঁকড়া হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: ছেলে ও মেয়ে শিশুর ৩০০+ নাম বাংলায় অর্থসহ

তবে আপনি যদি বারান্দায় বা ব্যালকনিতে কোন গাছ লাগিয়ে থাকেন, তাহলে দেখতে হবে সেই টবে বৃষ্টির পানি পড়ে কিনা, যদি না পড়ে তাহলে যে জায়গায় বৃষ্টির পানি পড়ছে এমন জায়গায় টবটি রাখতে পারেন, অথবা তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে আগে যেভাবে নিয়মিত পানি দিতেন সেভাবেই পানি দিতে পারেন। এক্ষেত্রে আরও ভালো হয়, যদি আপনি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে তা যদি টবে দিতে পারেন।

ক্যাকটাস জাতীয় গাছের বিশেষ যত্ন:

যদি আপনার সংরক্ষণে ক্যাকটাস প্রজাতীয় গাছ থাকে, তাহলে বর্ষার দিনে অবশ্যই সেগুলি বাড়ির বারান্দায় বা এমন স্থানে রাখুন সেখানে বৃষ্টির পানি না পড়ে। কারণ ক্যাকটাস গাছগুলি সাধারণত মরুভূমির গাছ হওয়াতে তাতে অতিরিক্ত পানি পড়লেই তা মরে যাবে।

বর্ষাকালে পানি নিষ্কাষণ ব্যবস্থা:

বারান্দা বা সেলফে রাখা টবগুলোতে পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা আছে কি না বা যে টবে আপনি গাছ লাগাবেন হতে পারে তা প্লাষ্টিকের টব বা যদি কোন বোতলেও গাছ লাগান সেক্ষেত্রে অবশ্যই আগে থেকে দেখে নিবেন তাতে নিচের দিকে কোন ছিদ্র বা ফুটো আছে কিনা. যদি ছিদ্র বা ফুটো না থাকে তাহলে অবশ্যই তা করে গাছ লাগাতে হবে।

আরও পড়ুন: বর্ষাকালে যেসব সবজি খাওয়া যেতে পারে

আসলে বর্ষায় কিভাবে গাছের যত্ন নিতে হয় হিসেবে উপরোক্ত নিয়মগুলো ফলো করতে হবে, তা ছাড়াও ট্রেতেও কোন গাছ লাগান, সেখানেও পানি নিষ্কাষণ ব্যবস্থা রাখতে হবে। কারণ অতিরিক্ত বৃষ্টি বা টবের পানি দেয়ার কারণে যদি ট্রেতে পানি জমে থাকে তাহলে সেখানে মশার উৎপত্তি হতে পারে, যা কাম্য নয়। অর্থাৎ, এক কথায় বলা যায়, বৃষ্টির সময়ে বড় টব বা ছোট টব প্রত্যেকটিতেই দেখতে হবে, যেন কোনমতেই পানি জমে না থাকে। আপনি যদি বহুতল বিশিষ্ট বাড়ীতে থাকেন, তাহলে যে বারান্দায় বা ব্যালকনিতে গাছ লাগান, সেই বারান্দায় খেয়াল করতে হবে যে পানি নিষ্কাষনের কোন ব্যবস্থা বা প্রয়োজন আছে কিনা। আসলে শুধু গাছ লাগালেই হবে না, আপনাকে গাছ লাগানোর আগে ও পরে বিভিন্ন বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

বর্ষাকালে টবে মাটি দিতে হবে:

একটা বিষয় খেয়াল করবেন যে, সাধারণত টবে প্রতিদিন পানি দেয়ার ফলে মাটির লেভেল নিচের দিকে নেমে যায়। এর ফলে যখন বৃষ্টির পানি পড়ে তখন সেই বৃষ্টির পানির সাথে মাটিও ধুয়ে যায়। আর গাছের জন্য সুনির্দিষ্ট মাটি না থাকলে গাছটিও ধীরে ধীরে মরে যায়। বর্ষায় কিভাবে গাছের যত্ন নিতে হয় হিসেবে এক্ষেত্রে যা করতে পারেন, তাহলো বর্ষা আসার আগেই টবগুলিতে মাটি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে আপনি ইচ্ছে করলে নারিকেলের ছোবড়াও দিয়ে রাখতে পারেন, কারণ নারিকেলের ছোবড়াও ভালো পানি শোষণ করে থাকে। আবার টবের উপরে পাথরের নুড়িও দিতে পারেন, এতে করে আপনার টবটি দেখতে সুন্দর লাগবে এবং সেইসঙ্গে পানি শোষণও বেশি হয় না।

গাছে বা টবে সার প্রয়োগ:

সাধারণত বর্ষাকালে গাছে বেশি সার দেয়ার প্রয়োজন হয় না, কারণ বৃষ্টির পানির উপাদান গুলিই গাছের জন্য যথেষ্ট। তবে আপনি ইচ্ছে করলে চা-পাতা, ডিমের খোসা তা তরকারির খোসা দিতে পারেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন বিশেষ করে বর্ষাকালে গাছের নিড়ানি না দেওয়াই ভালো, কারণ বৃষ্টির পানিতে মাটি প্রায়ই ভেজাই থাকে। আর একটি বিষয় স্মরণে রাখবেন, যে কোন সময়েই হোক না কেন, যখন গাছের যত্ন নিবেন, তখন অবশ্যই হাতে গ্লাভস পড়তে ভুলবেন না, কারণ মাটিতে বিভিন্ন পোকা-মাকড় বা কেঁচো থেকে ইনফেকশন হতে পারে।

বর্ষাকালে পোকামাকড়ের উপদ্রব দমানো:

বর্ষায় কিভাবে গাছের যত্ন নিতে হয় এর ক্ষেত্রে অবশ্যই গাছ বেশি ঘন করে লাগানো যাবে না। কারণ বেশি ঘন করে গাছ থাকলে পোকামাকড়ের উপদ্রবও বেড়ে যায়। তবে অনেকে কীটনাশক ব্যবহার করে থাকে, কিন্তু অনেক সময় কীটনাশক ব্যবহার করেও পোকামাকড় দমানো সম্ভব হয় না। তাই অর্গানিক উপায়ে আপনি ইচ্ছে করলে পোকামাকড় দমন করতে পারেন। যেমন-গাছের চারপাশে যদি কমলার খোসা, নিমের তেল, রসুন, হলুদ ইত্যাদি রেখে দিলে এ থেকে মুক্তি সম্ভব।

চারকোল গুড়া প্রয়োগ:

সাধারণত বর্ষাকালে বেশি ভিজে থাকার কারণে টবে শাওলা জন্মে। আর শাওলাও কিন্তু টবের মাটি থেকে খাদ্য রস শুষে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি চারকোল গুঁড়া টবের মাটির উপরে দিয়ে রাখতে পারেন।

গাছে সূর্যের আলো লাগাতে হবে:

বর্ষাকালে সারাদিন বৃষ্টি হওয়ার কারণে গাছে রোদ লাগে না। এক্ষেত্রে যেদিন রোদ উঠবে, ঠিক সেদিন টবগুলোতে রৌদ্রের আলোয় রাখতে পারেন।

গাছে খুঁটি দেয়া:

বেশি বৃষ্টি হওয়ার কারণে টবের মাটি ভিজা থাাকে, আর সে কারনেই কারণে গাছগুলি সাধারণত যে কোন দিক হেলে পড়ে। এজন্য আপনি গাছটি খুঁটি দিয়ে বেধে রাখতে পারেন।

বর্ষাকালে গাছকে ট্রিম করা:

বর্ষায় কিভাবে গাছের যত্ন নিতে হয় হিসেবে আপনি বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই গাছগুলি ট্রিম করে নিন। এতে গাছটিতে পোকামাকড়ের আনাগোনা কমবে, একটা গাছ থেকে আরেকটা গাছের দূরত্ব তৈরী হবে। সর্বোপরি পোকামাকড়ের উপদ্রবও কমে যাবে।

বর্ষায় কিভাবে গাছের যত্ন নিতে হয়-শেষ কথা:

আসলে অন্যান্য ঋতুর সাথে বর্ষাকালের পার্থক্য হলো এই সময়ে কিন্তু গাছপালার অত্যন্ত বৃদ্ধি ঘটে। অর্থাৎ বৃষ্টির পানিতে যেমন গোটা গাছ ভিজে ধুয়ে যায় আর এতে করে গাছে থাকা নানারকম পোকামাড়কগুলো সব পালিয়ে যায়। আর তারফলেই বর্ষাকালে গাছের বৃদ্ধি হয় প্রচুর। যাইহোক আজকের আর্টিকেলে বর্ষায় কিভাবে গাছের যত্ন নিতে হয় সে বিষয়গুলো উপরোক্ত আলোচনা থেকে জানতে পেরেছেন। মোটকথা গাছ প্রতিপালন করলে গাছের যত্ন নিতেই হবে, তবে বর্ষাকালে একটু বিশেষ যত্ন নিতে হয়। সাধারণত বর্ষাকালে গোবর সার, পচা পাতা ইত্যাদি অর্গানিক সারগুলো দিতে পারেন। বর্ষাকালে গাছ ঝাঁকড়া হয়, সেক্ষেত্রে ঝাকড়া গাছগুলির ডালপালা কেটে ফেলে গাছের গোড়ায় যাতে রোদ লাগে সে ব্যবস্থা করতে হবে।

আরও পড়ুন: আপনার সঙ্গী মিথ্যা বলছে কি না? তা বুঝবেন কিভাবে

এ ছাড়াও বিশেষ করে চারাগাছগুলি খোলা স্থানে না রেখে শেডের নিচে রাখতে হয়। বর্ষাকালে পোকামাড়কের উপদ্রব বেড়ে যায়, এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে নিম অয়েল, গোলমরিচ গুঁড়া, শুকনো মরিচের গুঁড়া ইত্যাদি দিতে পারেন। যদি এইসব প্রাকৃতিক কীটনাশকে কাজ না হয় তাহলে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির সাথে সাথে মাটির পুষ্টিও চলে যায় অনেকটা, তাই এসময়ে জৈব সার হিসেবে চায়ের পাতা রোদে শুকিয়ে তা গুঁড়ো করে দিতে পারেন, এ ছাড়াও ডিমের খোসা, হাড়ের গুঁড়া ইত্যাদি গাছের গোড়ায় দেয়া যেতে পারে। যাইহোক এতোক্ষণ বর্ষায় কিভাবে গাছের যত্ন নিতে হয় বিষয়ক আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ যুক্ত থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। বর্ষায় কিভাবে গাছের যত্ন নিতে হয় বিষয়ক কোন পরামর্শ/মন্তব্য থাকলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url