প্রতিদিন গ্রিন টি খেলে কি হয়? গ্রিন টি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া


আজকাল অনেকেই গ্রিন টি এর উপকারিতার জন্য সাধারণ চায়ের পরিবর্তে গ্রিন টি পানে আগ্রহী হচ্ছে। কিন্তু প্রতিদিন গ্রিন টি খেলে কি হয়? গ্রিন টি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি কি, গ্রিন-টি এর উপকারিতা, গ্রিন টি-তে কি কি উপাদান থাকে ইত্যাদি বিষয়গুলি জানতে নিচের লেখাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
মোট কথা,নিয়মিত গ্রিন টি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকার বয়ে আনতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন অতিরিক্ত পান করা না হয়। 

পেজ সূচিপত্র: প্রতিদিন গ্রিন টি খেলে কি হয়? গ্রিন টি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

প্রতিদিন গ্রিন টি খেলে কি হয়?
গ্রিন টি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
গ্রিন-টি এর উপকারিতা
গ্রিন টি-তে কি কি উপাদান থাকে
প্রতিদিন গ্রিন টি খেলে কি হয়? গ্রিন টি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া-শেষকথা

প্রতিদিন গ্রিন টি খেলে কি হয়?

  • নিয়মিত গ্রিন টি পানে হার্টের অসুখ এবং ক্যানসারের আশঙ্কা কমতে পারে। কারণ গ্রিন টি শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল বের করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে থাকে।
  • শরীরে নানাবিধ অসুখ প্রতিরোধে গ্রিন টি অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। অর্থাৎ যেহেতু গ্রিন টিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের উপস্থিতি বেশি, তাই স্বাভাবিকভাবেই তা রোগ-প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • নিয়মিত গ্রিন টি পানে শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখতে গ্রিন টি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ গ্রিন টি-তে পটাশিয়াম থাকায় তা শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে থাকে।
  • গ্রিন টি পানে ত্বক ও চুল ভালো থাকে। সাধারণত ত্বকের যত্নে ভিটামিন এ, সি এবং ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর এর সবগুলো উপাদানই গ্রিন টি-তে বিদ্যমান থাকায় তা নিয়মিত পানে ত্বকজনিত সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য গ্রিন টি অত্যন্ত উপকারী। অর্থাৎ এতে থাকা ক্যাটেচিন মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত যাদের ওজন বেশী তাদেরকে নিয়মিত গ্রিন টি পানে অভ্যস্ত হতে পারলে অনেক উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • নিয়মিত গ্রিন টি পানে শরীর দীর্ঘক্ষণ সচল থাকে। আসলে চা পান করলেই কিন্তু শরীরের মধ্যে একটা সতেজতা চলে আসে। আর এক্ষেত্রে যেহেতু গ্রিন টি অনেক উপাদান সমৃদ্ধ এবং শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী, তাই নিয়মিত গ্রিন টি পানে শরীরে দীর্ঘক্ষণ সতেজতা অনুভব করা যায়।
  • গ্রিন টি পান কররে মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। অর্থাৎ মুখের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস, দাঁতের ক্ষয়রোধ এবং সর্বোপরি মাড়ির সমস্যা কমাতে গ্রিন টি-তে থাকা ক্যাটেচিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

গ্রিন টি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ

  • বেশি পরিমাণে গ্রিন টি পান করা মোটেই উচিত নয়। কারণ অতিরিক্ত গ্রিন ট পানে মাথা ব্যথা হতে পারে। কারণ এই পানীয়তে প্রচুর পরিমাণে থাকে ক্যাফিন, যা অতিরিক্ত পানে মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে।
  • এ ছাড়াও গ্রিন টি-তে ক্যাফিন নামক উপাদান থাকার কারণে তা অতিরিক্ত পান করলে শরীরের হার্টবিট অর্থাৎ হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি ঘটেে এবং সেই সেইসঙ্গে অনিদ্রার মতো সমস্যাও তৈরি হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ ভেজানো চিনা বাদামের পুষ্টি গুণাবলী সমূহ

  • গ্রিন টি এর মধ্যে ট্যানিন উপাদান থাকায় তা খালি পেটে পান করা যাবে না। কারণ এই ট্যানিন পেটে জ্বালাপোড়া, বদহজম, গ্যাস, অ্যাসিডিটির মতো সমস্যাগুলো তৈরি করে থাকে। যদি একান্ত গ্রিন টি খেতে ইচ্ছে করে তাহলে খাদ্য গ্রহনের ২ ঘন্টা পরে তা পান করতে পারেন।
  • সাধারণত রাত্রে গ্রিন টি পান না করাই ভালো। কারণ এতে উপস্থিত ক্যাফেইন মানসিক চাপ বাড়াতে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে সাহায্য করে, যার ফলে ঘুম কম হতে পারে। তাই রাত্রে গ্রিন টি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
  • অনেকেই আছেন যারা রাতের খাবারের পর চা খেয়ে থাকেন। কিন্তু সেটা যদি হয় গ্রিন টি তাহলেই সমস্যা। কারণ এতে থাকা ট্যানিন খাবারে পাওয়া পুষ্টি উপদান হজম করতে সহায়ক নয়। মূলত ট্যানিন শরীরে জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, আয়রনের মতো পুষ্টি উপাদানগুলো ঠিকমতো প্রসেস বা শোষিত হয় না। যার ফলে রক্তাষ্পতা বা পুষ্টির ঘাটতে ঘটে থাকে।
  • সাধারণত যাদের আগে থেকেই শরীরে পেপটিক আলসার বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে সকালে খালি পেটে গ্রিন টি পান না করাই উত্তম। অর্থাৎ খালি পেটে গ্রিন টি খেলে এসব সমস্যাগুলো পুনরায় বেড়ে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রিন টি পান লিভারের জন্য ক্ষতির কারণ। অর্থাৎ এই পানীয়তে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা লিভারের জন্য ভালো নয়। তবে পরিমিত খেলে তেমন কোন একটা সমস্যা হয় না।
  • সাধারণত দিনে ৩-৪ কাপের বেশি গ্রিন টি পান করা ঠিক নয়। আবার কেউ কেউ বলেন, সারাদিনে ২-৩ কাপ। যাইহোক এর থেকে বেশি হলে সমস্যা বাড়তে পারে। আবার তা নিয়মিত সেবনে শরীরের উপকার হতে পারে কিন্তু অতিরিক্ত পানে অবশ্যই ক্ষতি সাধিত হয়ে থাকে।

গ্রিন-টি এর উপকারিতাঃ

বর্তমানে গ্রিন-টি এর উপকারিতা সম্পর্কে সবারই কম-বেশি জানা। সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে প্রতিদিন অন্তত এক কাপ গ্রিন টি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকগণ। কিন্তু অনেকেই আছেন, যারা সকালে খালি পেটে চা খেতে পছন্দ করে থাকেন। আবার এমনও আছেন, যারা অতিরিক্ত উপকার পাবার আশায় বেশি বেশি করে গ্রিন টি খেয়ে থাকেন, এটা মোটেই ঠিক নয়। কারণ যে কোন জিনিসই অতিরিক্ত ভালো নয়, আর সেটা আমরা বোধকরি সবাই বুঝি ও জানি।

আরও পড়ুনঃ চোখের শুষ্কতা এবং ক্লান্তি দূর করা যায় কিভাবে

সবকিছুই পরিমিত গ্রহণ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আসলে গ্রিন টি খেলে কি উপকারিত পাওয়া যায়, যেমন-ওজন নিয়ন্ত্রণ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখা, চুল ও ত্বক ভালো থাকে, হার্ট ভালো থাকে ইত্যাদি। কিন্তু প্রতিদিন যদি খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়া যায় তাহলে উপরোক্ত উপকারগুলির কোনটাই হবে না, বরং অপকার বা ক্ষতি হবে। সুতরাং প্রতিদিন গ্রিন টি খেলে কি হয়? গ্রিন টি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলি কি কি তা নিচের বর্ণনাগুলি থেকে জানতে পারবেন।

গ্রিন টি-তে কি কি উপাদান থাকেঃ

মূলত গ্রিন টি এর অনেক উপকারিতা রয়েছে, কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন চলেই আসে, তা হলো গ্রিন টি-এর তো অনেক পুষ্টিগুন এবং স্বাস্থ্য  উপকারিতা রয়েছে? কিন্তু কেন অথবা কি কি উপাদান থাকে, যার কারণে গ্রিন-টি পানে উপকারিতা পাওয়া যায়। আসলে গ্রিন টি-এর প্রধান উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যেমন ক্যাটেচিন। এই ক্যাটেচিন শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। এ ছাড়াও রয়েছে পলিফেনল, ক্যাফেইন, অ্যামিনো এসিড, ফ্লুরাইড, ভিটামিন এ, বি, বি৫, ডি, ই, সি, পেকটিন, স্যাপোনিন, ক্লোরোফিল, সেলুলোজ, ক্রোমিয়াম, জিংক, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি সমূহ। সুতরাং যে খাদ্যদ্রব্যে এতগুলি উপাদান সমৃদ্ধ সেটি অবশ্যই শরীরের জন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় উপদান নিঃসন্দেহে তা বলা যেতে পারে। অর্থাৎ গ্রিন টি-এর মধ্যে থাকা উপাদানগুলির জন্য অবশ্যই গ্রিন-টি পান করা যেতেই পারে।

প্রতিদিন গ্রিন টি খেলে কি হয়? গ্রিন টি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া-শেষকথাঃ

আসলে গ্রিন টি পান করার ক্ষেত্রে বেশকিছু নিয়ম রয়েছে, যেগুলো মেনে যদি গ্রিন টি পান করা যায়, তাহলে তা অবশ্যই শরীরের জন্য খুবই উপকারিতা বয়ে আনতে পারে। তবে গ্রিন টি পান করলে অবশ্যই চিনি বা মিষ্টি বাদ দিয়ে খেলে তা আরও ভালো। তবে অনেকেই আছে, যারা অতিরিক্ত স্বাদের জন্য লেবু বা পুদিনা পাতা যোগ করা যেতে পারে। তবে বর্তমানে খোলা চায়ের দোকানগুলিতে কিন্তু চা খেতে গেলে সাথে তারা পুদিনা পাতাসহ নানারকম উপাদান রাখে, যাতে চায়ের স্বাদও আরও সুন্দর ও ‍ভালো লাগে কেতে। সুতরাং প্রতিদিন গ্রিন টি খেলে কি হয়? গ্রিন টি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি কি, গ্রিন পানের উপকারিতা এবং সর্বোপরি গ্রিন টি-তে কি কি উপাদানসমূহ থাকে আশাকরি তা উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছেন।

আরও পড়ুন: শিশুদের রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল সমূহ

যাইহোক, মনে রাখতে হবে, কোনমতেই খালি পেটে গ্রিন টি পান করা যাবে না। কারণ এতে থাকা ট্যানিন পাকস্থলীর অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে দেয়ার কারণে শুরু হয় পেট ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্যর মত সমস্যা এবং তার সঙ্গে বমিভাব বা বমির মতো সমস্যারও সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই আজকের প্রতিদিন গ্রিন টি খেলে কি হয়? গ্রিন টি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলি কি কি সম্পর্কিত বিষয়ে যদি আপনার কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন এবং সেইসঙ্গে আজকের টপিকটির বিভিন্ন পরামর্শগুলির বিষয়ে আপনি উপকৃত হলে অবশ্যই তা অন্যদের শেয়ার করতে পারেন। সবশেষে প্রতিদিন গ্রিন টি খেলে কি হয়? গ্রিন টি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিষয়ক আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ সম্পৃক্ততা ও উপস্থিতির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Mithu Sarker
Mithu Sarker
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি। ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।