শিশুর খাবারে বাড়তি লবণ-চিনি, হতে পারে যে সমস্যাগুলো

আপনার শিশুর খাবারে বাড়তি লবণ-চিনি যোগ করছেন না তো প্রতিদিন, যদি করেই থাকেন, তাহলে হতে পারে যে সমস্যাগুলো তা নিম্নে বর্ণিত হলো।
সাধারণত শিশুদের একটি নির্দিষ্ট বয়স পার হওয়ার পরই শক্ত খাবার প্রদান করা হয়ে থাকে, এটা আমরা অনেকেই জানি। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে শক্ত খাবার প্রদানের পাশাপাশি শিশুর খাবারে বাড়তি লবণ-চিনি যোগ করছেন কিনা? যদি বাড়তি লবণ-চিনি যোগ করে থাকেন, তাহলে, হতে পারে যে সমস্যাগুলো তা জানতে নিচের বর্ণনাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

পোস্ট সূচিপত্র: শিশুর খাবারে বাড়তি লবণ-চিনি, হতে পারে যে সমস্যাগুলো (Excess salt and sugar in baby food, the problems it can cause)
ভূমিকা
শিশুদের লবণ দেয়ার সময় পরিমাণসমূহ
শিশুদের চিনি দেয়ার সময় পরিমাণসমূহ
শিশুর খাবারে বাড়তি লবণ-চিনি
শিশুদের খাদ্যে চিনির বিকল্প কি হতে পারে
চিকিৎসকের মতে শিশুকে কী খাওয়ানো উচিত
শিশুর খাবারে বাড়তি লবণ-চিনি, হতে পারে যে সমস্যাগুলো-পরিশেষে

ভূমিকা:

সাধারণত ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধই শিশুদের জন্য প্রকৃত এবং পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। তবে ৬ মাস বয়স পার হওযার পর তাদের সুষম খাদ্য প্রদান করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ সুষম খাদ্য হলো-শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানিসহ ছয়টি উপাদান। ছয় মাস বয়সের পর থেকে বুকের দুলের পাশাপাশি শিশুদের এই খাবারগুলো সরবরাহ করতে হয়। আর তাই এ সময়ে শিশুদের খাবারে লবণ বা চিনি যোগ করা যেতে পারে, তবে তা খুবই সামান্য।

আরও পড়ুন: শিশুদের রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল সমূহ

কারণ হলো, মায়ের বুকের দুধের মধ্যেও শিশু লবণ, চিনি এবং বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে থাকে। তবে, শিশুদের খাবারে লবণ যোগ করার সময় অবশ্যই শিশুর বয়স এবং ওজনের বিষয়টি মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনমতেই শিশুর খাবারে বাড়তি লবণ-চিনি দেয়া না হয়, আর যদি তা প্রদান করা হয়, তাহলে হতে পারে যে সমস্যাগুলো, যেগুলি শিশুদের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

শিশুদের লবণ দেয়ার সময় পরিমাণসমূহ:

  • সাধারণত ৬ মাস বয়সী শিশুদের খাদ্যে লবণ না দেয়াই যুক্তিযুক্ত। কারণ এই সময়ে শিশু মাতৃদুগ্ধ পান করে থাকে, ফলে তাতেই সে পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ ও চিনি গ্রহণ করে থাকে।
  • আবার ৭ থেকে ১২ মাস বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রেও লবণ না দেয়ার পরামর্শ প্রদান করা করা হয়ে থাকে, কেননা এই সময়ে শিশুদের কিডনি যথাযথভাবে কাজ শুরু করেনি।
  • তবে ১ থেকে ৩ বছর বয়সী শিশুদের জন্য সর্বোচ্চ ১ গ্রাম পর্যন্ত খাদ্যে লবণ দেয়া যেতে পারে।
  • আবার ৪ থেকে ৮ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ১.৫ গ্রাম পর্যন্ত খাদ্যের লবণ দেয়া যেতে পারে।

শিশুদের চিনি দেয়ার সময় পরিমাণসমূহ:

  • সাধারণত ০ থেকে ১২ মাস বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রেও চিনি না দেয়া ভালো। কারণ এ সময়ে তারা ফলমূলের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক চিনিই তাদের জন্য যথেষ্ট।ৎ
  • যেসব শিশুর বয়স ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে, তাদের অবশ্য প্রাকৃতিক চিনি দেয়া যেতে পারে, তবে আর্টিফিসিয়াল সুগার বা প্রক্রিয়াজাত চিনি তাদের খাদ্যে সরবরাহ না করাই উত্তম।
  • ৩ বছর এবং তৎপরবর্তী সময়ে শিশুদের অবশ্য প্রাকৃতিক চিনি, ফলমূল এবং বিভিন্ন শস্য খাদ্যে অন্তর্ভূক্তকরণের মাধ্যমে তা থেকে প্রাকৃতিক চিনি গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্ডি বা প্রক্রিয়াজাত চিনি পরিহার করা উচিত।

শিশুর খাবারে বাড়তি লবণ-চিনি:

শিশুর খাবারে বাড়তি লবণ-চিনি এড়িয়ে যেতে হবে। না হলে দেখা দিবে নানান সমস্যাবলী:

কিডনিতে পাথর হওয়া: আসলে লবণ থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম নিলে শরীর তা মূত্রের মাধ্যমে আরও বেশি ক্যালসিয়াম বের করে দিতে পারে। অর্থাৎ এই অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম কিডনির পাথর তৈরীতে সহায়তা করে থাকে।
উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি: শিশুদের খাদ্যে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করার ফলে প্রাপ্ত বয়স্ককালে শিশুদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
দাঁতের ক্ষয়জনিত সমস্যা: অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি গ্রহণ করার ফলে শিশুদের দাঁতের ক্ষতি হতে পারে আবার মুখের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়াসমূহ খাদ্য থেকে চিনি ব্যবহার করে দাঁতের ক্ষতি হয় এমন অ্যাসিড উৎপাদন করে।

আরও পড়ুন: মধুর যত পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

ডায়াবেটিসজনিত সমস্যা: শিশুদের অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের ফলে জীবনের পরবর্তী সময়ে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হতে পারে।
স্থুলতা বৃদ্ধি: অর্থাৎ অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের ফলে শরীরে পর্যাপ্ত ক্যালোরি জমা হয়ে তা চর্বিতে রূপান্তরিত হয়, আর এর ফলে শিশু পরবর্তী সময়ে স্থুলতা হয়ে উঠে।
শিশুদের খাদ্যে অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে সোডিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, আর এর ফলে অত্যধিক ক্যালসিয়াম শরীর থেকে নিষ্কাষিত হয়। এই কারণে শিশুদের হাড় ভঙ্গুর অর্থাৎ মজবুত হাড়ের সমস্যা দেখা দেয়।
ডিহাইড্রেশনজনিত সমস্যা: শিশুদের খাদ্যে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ফলে তা ডিহাইড্রেশনজনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়। কারণ শরীরে অতিরিক্ত লবণ প্রবেশ করার ফলে, তা শরীরকে প্রস্রাব ও ঘামের আকারে জল বিয়োজিত করায়। অর্থাৎ অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ফলে যে ডিহাইড্রেশনজনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়, তা হলো-কিডনির পাথর, জয়েন্ট ও পেশীর ক্ষতি, লিভারের ক্ষতি এবং সর্বোপরি কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সমস্যা।

শিশুদের খাদ্যে চিনির বিকল্প কি হতে পারে:

শিশুদের খাদ্যে চিনিক বিকল্প হিসেবে যে কোন ফলের ক্বাথ, আঙুরের রস এবং মধু। তবে অবশ্যই অন্তত ৪ মাস বয়সের কম শিশুদের তা দেয়া যাবে না।

চিকিৎসকের মতে শিশুকে কী খাওয়ানো উচিত:

চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, শিশুদের প্রথম ২ বছর কোন লবণ বা চিনি না দিয়ে প্রাকৃতিক মিষ্টি জাতীয় খাদ্য দিতে হবে। যেমন-কলা, আম অথবা সবজির আসল স্বাদও শিশুদের বোঝানো উচিত। আর ১ বছর বয়সের পরে ধীরে ধীরে সামান্য লবণ দেয়া যেতে পারে, তবে চিনি কিন্তু বিশেষ দিনে দিতে হবে।

শিশুর খাবারে বাড়তি লবণ-চিনি, হতে পারে যে সমস্যাগুলো-পরিশেষে:

সাধারণত স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু শিশুদের এই খাদ্যাভাস নিয়ে চিকিৎসক এবং বাড়ীর বয়োঃজেষ্ঠদের পরামর্শের মাঝে বাবা-মা সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা যে তারা কি করবে। কারণ শিশুর মঙ্গলই সবার লক্ষ্য। তাই শিশুর খাবারে বাড়তি লবণ-চিনি, হতে পারে যে সমস্যাগুলো বিষয়গুলো অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।

আরও পড়ুন: হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় যে সব পুষ্টি উপাদান

যাইহোক, শিশুর খাবারে বাড়তি লবণ-চিনি, হতে পারে যে সমস্যাগুলো বিষয়ক আলোচনায় আপনার যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে, তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আর যদি আজকের আলোচনার বিষয় থেকে আপনার কোন জ্ঞান আহররণের কোন নিমিত্ত পান, তাহলে অবশ্যই তা অন্যদের শেয়ার করতে পারেন। মনে রাখবেন, শিশুদের সঠিক খাবারের অভ্যাসই তাদের ভবিষ্যত জীবনের সুস্থ্য ভিত গড়ে তোলে। পরিশেষে শিশুর খাবারে বাড়তি লবণ-চিনি, হতে পারে যে সমস্যাগুলো বিষয়ক আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ সম্পৃক্ততার অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url