গ্লুকোজ খাওয়া কি নিরাপদ না ঝুঁকি

গ্লুকোজ পাউডার শরীরে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে থাকে। অর্থাৎ গ্লুকোজ শরীরের জন্য কতটা প্রয়োজন বা গ্লুকোজ খাওয়া কি নিরাপদ না ঝুঁকি তা জানতে হবে।
আসলে শরীরে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে চিকিৎসকগণ গ্লুকোজ খাওয়া পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে প্রতিটা জিনিসেরই খারাপ ভালো আছে, তাই অতিরিক্ত গ্লুকোজ খাওয়া কি নিরাপদ না ঝুঁকি সে বিষয়ে জানতে নিচের লেখাটি পড়তে হবে।

পোস্ট সূচিপত্র: গ্লুকোজ খাওয়া কি নিরাপদ না ঝুঁকি (Is it safe to eat glucose? Risks)
গ্লুকোজ কখন খাওয়া যেতে পারে
গ্লুকোজের উপকারিতাসমূহ
গ্লুকোজের ঝুঁকি বা অপকারিতাসমূহ
গ্ল‍ুকোজের বিকল্প ও করণীয়
গ্ল‍ুকোজ খাওয়া কি নিরাপদ না ঝুঁকি-শেষ কথা

গ্লুকোজ কখন খাওয়া যেতে পারে:

সাধারণত গ্লুকোজ (চিনি) হচ্ছে শক্তির একটি উৎস। অর্থা্ৎ গ্লুকোজ পাউডার খাদ্য গ্রেড ডেক্সট্রোজ মনোহাইড্রেট, যেগুলি পানিতে মিশিয়ে খেলে খুব দ্রুত রক্তে শোষিত হয়। তবে এটি নির্ভর করে শরীরের অবস্থার উপর।

আরও পড়ুন: ভেজানো চিনা বাদামের পুষ্টি গুণাবলী সমূহ

তবে রক্তে যখন গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায় বা শক্তি কমে গেছে বলে মনে হয়, শরীর দুর্বল লাগে বা ক্লান্তি অনুভব হয়, তখন গ্লুকোজ খাওয়া যেতে পারে। সাধারণত প্রচন্ড গরমে শরীর থেকে প্রচুর শক্তি বেরিয়ে যায়, সে সময় গ্লুকোজ পানি পান করলে শরীরে সতেজতা ফিরে আসে।

গ্লুকোজের উপকারিতাসমূহ:

  • গ্লুকোজ হলো শরীরের কোষের জ্বালানী বা শক্তির প্রধান উৎস।
  • খুব তাড়াতাড়ি এনার্জি বৃদ্ধিতে গ্লুকোজ পানি খুব দ্রুত কাজ করে থাকে।
  • শরীর দুর্বল বা ক্লান্ত লাগলে গ্লুকোজ পানি খাওয়াতে তা দ্রুত আরাম পাওয়া যায়।
  • যদি হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে, তখন গ্লুকোজ পানি খেলে খুব দ্রুত উপকার মেলে।
  • অসুস্থতা, অস্ত্রোপচার বা আঘাতজনিত সমস্যায় দ্রুত আরোগ্য লাভের ক্ষেত্রে গ্লুকোজ পানি আরোগ্য প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং দ্রুত হারানো শক্তির ঘাটতি পূরণ হয়।
  • শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সময় গ্লুকোজ পানি খুব দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে থাকে।
  • অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা স্মৃতিশক্তির মতো কাজ সম্পাদনের জন্য মস্তিস্ক গ্লুকোজের উপর অনেক বেশি নির্ভর করে।
  • গ্লুকোজ পানি পান করলে শরীরের পানিশূন্যতা দূর হয়।
  • চিকিৎসা শাস্ত্র অনুযায়ী ১ গ্রাম শর্করা থেকে প্রায় ৪ কিলো ক্যালরি তাপ ও শক্তি পাওয়া যায়।
  • সাধারণত শর্করা শরীরে থাকা প্রোটিনকে রক্ষা করে থাকে। যার কারণে শর্করা প্রোটিনকে ভাঙতে দেয়না। আর এই কারণে প্রোটিন ভেঙে তাপ উৎপাদন হতে শরীরকে বাধা দিয়ে থাকে গ্লুকোজ।
  • আবার শর্করা জাতীয় কিছু খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।

গ্লুকোজের ঝুঁকি বা অপকারিতাসমূহ:

  • যাদের ডায়াবেটিসজনিত সমস্যা আছে অর্থাৎ ব্লাড সুগার বেশি থাকলে এই পানীয় পান করা একেবারেই উচিত নয়।
  • হাইপার লিপিডিমিয়ার রোগীদের গ্লুকোজ থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • একজন সুস্থ্য ও স্বাভাবিক মানুষ যদি প্রতিদিন গ্লুকোজ খেতে থাকার ফলে পেটে মেদ জমে যায় এবং খুব তাড়াতাড়ি মুটিয়েও যায়।
  • সাধারণত ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের গ্লুকোজ পানি পান না করাই ভালো।
  • অতিরিক্ত গ্লুকোজ খাওয়ার ফলে তা দাঁতের ক্ষয় সৃষ্টিতে সহায়তা করে থাকে।

আরও পড়ুন: সকালের নাস্তা না করলে শরীরের যে ক্ষতি হতে পারে

  • যাদের হার্টের অসুখ এবং ডিমেনশিয়ার মতো জটিল রোগ রয়েছে, তাদের অতিরিক্ত পরিমাণে গ্লুকোজ সেবন না করাই ভালো।
  • যাদের ক্তে কোরেষ্টেরলের মাত্রা বেশি, তাদের ক্ষেত্রে গ্লুকোজ পানীয় না খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
  • যারা দীর্ঘক্ষণ বসে একটানা কাজ করে তাদের জন্য গ্লুকোজ পাউডার নিরাপদ নয়।
  • শিশুদের ক্ষেত্রেও গ্লুকোজ পানি নিরাপদ নয়। কারণ অতিরিক্ত মিষ্টতার কারণে শিশুরা তা ঘন ঘন খেয়ে ফেলে, যার শিশুদের দাঁত ক্ষয় থেকে শুরু করে মেদ জাতীয় অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত গ্ল‍ুকোজ গ্রহণে তা শরীরে কার্বোহাইড্রেটের হ্রাস করতে থাকে, যার ফলে ওজন কমে যাওয়ার পাশাপাশি শরীরের কর্মশক্তিও হ্রাস পেতে শুরু করে।

গ্ল‍ুকোজের বিকল্প ও করণীয়:

নিয়মিত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরী। কারণ পর্যাপ্ত পানি পানে শরীরের বিভিন্ন জটিলতা প্রতিরোথ করা সম্ভব হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ফলে প্রাকৃতিক চিনি থাকে, সুতরাং এক্ষেত্রে ফলের জুসও খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়াও অতিরিক্ত গরম বা পেটজনিত বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে ডাবের পানি সবচেয়ে বেশি উপকারী। কারণ ডাবের পানিতে খনিজ লবণ থাকে, যা শরীরকে লবণের ঘাটতি প্রতিরোধে সহায়তা করে। তা ছাড়াও প্রচন্ড গরমে শরীরের পানির ঘাটতি পূরণে ওআরএস স্যালাইন খুব চমৎকার কাজ করে থাকে।

গ্ল‍ুকোজ খাওয়া কি নিরাপদ না ঝুঁকি-শেষ কথা:

একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, গ্ল‍ুকোজ হচ্ছে এমারজেন্সি, এটি কিন্তু স্বাদ বা ভালো লাগার খাদ্য নয়। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তা খাওয়া উচিত। অর্থাৎ গ্ল‍ুকোজ খাওয়া কি নিরাপদ না ঝুঁকি হিসেবে প্রতিটা জিনিসেরই ভালো ও মন্দ থাকে। আমাদের বুদ্ধিমত্তা, পরিস্থিতি এবং প্রয়োজন শিখিয়ে দেয় যে, সেখান থেকে আমি কতটুকু নিব। গ্ল‍ুকোজ ঠান্ডা হওয়ার কারণে কখনোই তা রোদ থেকে এসে বা অনেক কাজ করার ফলে শরীর ঘেমে যায় এবং দীর্ঘক্ষণ কোন শারীরিক পরিশ্রম করেই সঙ্গে সঙ্গে গ্ল‍ুকোজ মেশানো পানি পান করবেন না। এতে করে ঠান্ডা বা সর্দি-কাশিজনিত সমস্যা তৈরী হতে পারে।

আরও পড়ুন: ডেউয়া ফল খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

যাইহোক আজকের গ্ল‍ুকোজ খাওয়া কি নিরাপদ না ঝুঁকি বিষয়ক আলোচনা থেকে যদি আপনি কিঞ্চিত উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে তা অবশ্যই শেয়ার করে দিন অন্যদের মাঝে। মূলত আমাদের চারপাশে বিভিন্ন ফল-ফলারি বিদ্যমান। শুধুমাত্র আমরা চেষ্টা করলেই যে কোন ফল দিয়ে বাড়িতে জুস তৈরি করে খেতে পারি। আর সবথেকে বড় বিষয় হলো, গ্ল‍ুকোজ অত্যন্ত দামী একটি খাদ্য। তাই প্রকৃতি সৃষ্ট বিভিন্ন ফলের জুস করে খেতে পারলে একদিকে যেমন তা স্বাস্থ্যসম্মত হয় তেমনি অন্যদিকে তা নানাপ্রকার ক্ষতির হাত থেকেও বাঁচা যায়। পরিশেষে গ্ল‍ুকোজ খাওয়া কি নিরাপদ না ঝুঁকি বিষয়ক আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতি এবং সম্পৃক্ততার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url