ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন, জেনে নিন এর নানান উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
ধুন্দল অনেকের নিকট একটি পরিচিত সবজি হলেও এটি প্রতিদিনের ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন, জেনে নিন এর নানান উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সহ ধুন্দল কখন খাওয়া উচিত এবং কিভাবে তা রান্না করা যায়। অর্থাৎ এই সমস্ত বিষয়াদি জানতে নিম্নের আলোচনাগুলি পড়তে থাকুন।
ধুন্দলের বৈজ্ঞানিক নাম Luffa Cylindrica। মূলত ধুন্দল একটি লম্বা ও সবুজ রঙের সবজি, যার স্বাদ হালকা এবং রান্না করলেই তা নরম হয়ে যায়।
পেজ সূচিপত্রঃ ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন, জেনে নিন এর নানান উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন
ধুন্দলের পুষ্টিগুণাবলীসমূহ
ধুন্দলের উপকারিতাসমূহ
ধুন্দল কখন খাওয়া উচিত
ধুন্দলের রান্না প্রক্রিয়াসমূহ
ধুন্দলের অপকারিতাগুলি কি কি
ধুন্দলের পাতা কি খাওয়া যায়
পরিশেষে
ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেনঃ
ধুন্দল খাদ্য তালিকায় রাখার অন্যতম কারণ হলো, ধুন্দলে রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন সি ও এ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফোলেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহ। কারণ ধুন্দল খেলে আপনার হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করা ছাড়াও ওজন কমানোর ক্ষেত্রে দারুণ কার্যকর। এছাড়াও নিয়মিত ধুন্দল খেলে তাতে ত্বক ও চুলের গোড়া মবজুত করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে, সেইসাথে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা, গরমের সময় শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা, কিডনি ও লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিজনিত সহায়তা করা ছাড়াও এটি শরীরের বাত ও জয়েন্টজনিত ব্যথায় দারুণ কার্যকরী। সুতরাং উপরোক্ত সমস্ত গুণাবলীগুলি যদি একটি সবজির মধ্যে বিদ্যমান থাকে, তাহলে কেন খাদ্য তালিকায় ধুন্দল সবজি হিসেবে রাখবেন না, নিজেই বিচার করুন।
ধুন্দলের পুষ্টিগুণাবলীসমূহঃ
মূলত ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন, জেনে নিন এর নানান উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, ভিটামিন সি ও এ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফোলেটসহ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য, হার্ট সুস্থ্য রাখে এবং ত্বক ও চুলকে সতেজ করে থাকে। অর্থাৎ এভাবে যদি ব্যাখ্যা করা যায়, তাহলে ধারণাটা আরও পরিস্কার হয়ে উঠবে আপনাদের কাছে। যেমন-
আরও পড়ুনঃ ছোট মাছ খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায়
১০০ গ্রাম একটি ধুন্দল সবজিতে যা রয়েছে-
জলীয় অংশ হচ্ছে ৯৩.৯৫ শতাংশ, এতে শক্তি আছে-১৪-২০ কিলো ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট আছে-৩.০ গ্রাম, প্রোটিন পাওয়া যাবে ০.৬ গ্রাম, ফ্যাট-০.১ গ্রাম, ফাইবার অংশ রয়েছে-০.৮ গ্রাম, এতে ভিটামিন সি রয়েছে ১০.১৩ মিলিগ্রাম, বিটা ক্যারোটিন আছে-১০০-১৫০ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম আছে-২০-২৫ মিলিগ্রাম, আয়রন বা লোহা রয়েছে-০.৩ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম রয়েছে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম।
ধুন্দলের উপকারিতাসমূহঃ
মূলত ধুন্দল সম্পর্কে জেনে নিন এর নানান উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ, অর্থাৎ নানান উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে হলে নিম্নে প্রদত্ত বর্ণনাগুলি পড়তে হবে, তাহলে আপনি বুঝতে ও জানতে পারবেন ধুন্দলের নানারকম উপকারিতা ও বিভিন্ন গুণাবলীসমুহ সম্পর্কেভ
ওজন কমাতে সহায়তাঃ
সাধারণত ধুন্দল একটি ক্যালোরি সমৃদ্ধ সবজি। অর্থাৎ ধুন্দল খাওয়ার ফলে পেট দীর্ঘ সময় ধরে ভরাট থাকে, ফলে তা খাওয়ার প্রবণতাকে কমিয়ে দেয়। যার কারণে শরীরের ওজনও ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তাঃ
আসলে ধুন্দলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ রয়েছে, যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে থাকে। অর্থাৎ যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সমস্যা ভুগে থাকেন, তাদের অবশ্যই নিয়মিত ধুন্দল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে এবং সেইসঙ্গে আপনার পরিপাকতন্ত্রও সুস্থ্য থাকবে।
ত্বক ও চুলের গোড়া মবজুত করেঃ
কারণ ধুন্দলে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদানটি ত্বকের কোষ সজীব রাখতে সহয়েতা করে থাকে এবং ভিটামিন সি ও বিটা ক্যারোটিন ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিসহ বার্ধক্যজনিত রেখা প্রতিরোধ করে। এ ছাড়াও এটি চুলের গোড়া মজবুতে সহায়তা করে থাকে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সহায়তাঃ
প্রকৃতপক্ষে ধুন্দলে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম। আর আমরা জানি যে, সাধারণত পটাশিয়াম শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। তাই ধুন্দল খেলে একদিকে যেমন শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করবে, তেমনি অন্যদিকে তা হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখতেও যথেষ্ট সহায়তা করে থাকে।
রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ
সাধারণত সর্দি-কাশি, সাধারণ ঠান্ডা এবং যে কোন সংক্রমণ প্রতিরোধে ধুন্দল অত্যন্ত চমৎকার কাজ করে থাকে। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন সি, যা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে থাকে। উল্লেখ্য যে, সর্দি-কাশি বা ঠান্ডা লাগা জনিত কারণগুলিতে ভিটামিন যুক্ত খাদ্য সামগ্রী বেশী করে খেতে হয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তাঃ
মূলত ধুন্দল রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায় না হঠাৎ করে, তাই ডায়াবেটিস রোগের জন্য এটি একটি নিরাপদ খাদ্য। কারণ ধুন্দলে রয়েছে শর্করা, যা ধীরে ধীরে রক্তে মিশে রক্তে গ্লুকোজ কমিয়ে দিয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ ডেউয়া ফল খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
গরমের সময় শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তাঃ
ধুন্দল গরমের সময় অত্যন্ত ভালো কাজ করে থাকে। অর্থাৎ গরমকালে ধুন্দল খেতে পারলে তা যেমন একদিকে শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে তেমনি শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করতে এবং হিট স্ট্রোকের মত জটিল রোগের আশংকাও কমে যায়।
ধুন্দল কিডনি ও লিভারে কার্যক্ষমতা বাড়ায়ঃ
ধুন্দলে ডিটক্সিফাইং উপাদান রয়েছে, যার ফলে নিয়মিত ধুন্দল খেলে তা দেহের মধ্যে জমে থাকা দুষিত পদার্থগুলি ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে বের যায়। এ ছাড়াও ধুন্দল খাওয়ার ফলে কিন্তু লিভার ও কিডনি সুস্থ্য রাখতে এটি প্রভূত সহায়তা করে থাকে।
বাত ও জয়েন্টজনিত ব্যথায় দারুণ কার্যকরীঃ
ধুন্দল বাত ও জয়েন্টজনিত ব্যথায় অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে যাদের বাত ও জয়েন্টের ব্যথাজনিত সমস্যায় ধুন্দল গাছের পাতা, শিকড় ও রস ব্যবহারের মাধ্যমে বিশেষ করে অস্থিসন্ধির ব্যথা, ফোলা ইত্যাদি জাতীয় সমস্যাগুলি কমাতে সহায়তা করে থাকে।
ধুন্দল কখন খাওয়া উচিতঃ
ধুন্দল দিনে বা রাতের খাবারের সাথে খাওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ দিনে খাবারের সাথে খেলে পেট ভরা থাকে, আর রাত্রে খাবারের সাতে খেলে হজম প্রক্রিয়া সহজ হয়। যেহেতু ধুন্দল একটি জলীয় সবজি হওয়ায় এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে, যা গরমের সময় শরীরকে ঠান্ডা রাখতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
ধুন্দলের রান্না প্রক্রিয়াসমূহঃ
ধুন্দল অনেকেই অনেক ভাবে রান্না করে থাকে। কেউ ভাজি করে, আবার কেউ কেউ মসুর ডালের মধ্যে গোল গোল করে ধুন্দল দিয়ে তা খেয়ে থাকে, অনেকেই ধুন্দল দিয়ে চিংড়ি, ধুন্দল ও পেঁয়াজের ভর্তা বানিয়েও খেয়ে থাকে, আবার অনেকে ধুন্দল দিয়ে সবজি খিঁচুড়ি বা স্যুপ তৈরি করেও খেয়ে থাকে। আবার অনেকে বিভিন্ন সবজির সাথে ধুন্দল দিয়েও তরকারি করে খেয়ে থাকে। কেউ কেউ ধুন্দল দিয়ে মাছের তরকারি রান্নাও করে থাকেন। তবে খেয়াল রাখবেন, ধুন্দল রান্না করার সময় যেন অতিরিক্ত তেল বা মশলা ব্যবহার না করা, রান্নাই অনেক সময় ধরে করা। কারণে এতে ধুন্দলের পুষ্টিগুণ কমে যেতে পারে।
ধুন্দলের অপকারিতাগুলি কি কিঃ
সাধারণত ধুন্দলের সরাসরি কোন অপকারিতা নাই, তবে এই সবজিটি অতিরিক্ত বেশী পরিমাণে খেয়ে ফেললে কিছু সমস্যা তৈরি হতে পারে। আবার যদি তা সঠিকভাবে না খাওয়া হয়, তাহলেও সমস্যা তৈরি হতে পারে। যেমন-যদি কখনো কেউ ধুন্দল বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেলে, সেক্ষেত্রে গ্যাস, পেট ফাঁপা বা বদহজমের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার কারও কারও ধুন্দল খেলে এলার্জি হতে পারে। বর্তমানে প্রত্যেকটি সবজির উৎপাদনে কীটনাশক ব্যবহার এক রকম নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ধুন্দল যদি সঠিকভাবে পরিস্কার না করা হয়, তাহলে ধুন্দলে ব্যবহৃত কীটনাশক অথবা অন্যান্য কোন রাসায়নিকের কারণে তা শরীরের জন্য মারাত্মক হুমকি বয়ে আনতে পারে।
ধুন্দলের পাতা কি খাওয়া যায়ঃ
ধুন্দলের পাতা ভর্তা করে অনেকেই খেয়ে থাকে। আবার থুন্দলের পাতা ভর্তার সাথে শুটকি মাছ মিশিয়েও তা খাওয়া যেতে পারে। অনেকেই আবার ধুন্দলের পাতা ভর্তা করে এর সাথে একটু তেঁতুল বা আম অথবা অন্য কোন টক ফল মিশিয়েও খেয়ে থাকেন।
ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন, জেনে নিন এর নানান উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ-পরিশেষেঃ
আসলে ধুন্দল যদিও আমাদের অনেকের নিকট নিরাপদ একটি সবজি, তথাপি যাদের পেটে গ্যাসের সমস্যা অথবা অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি রয়েছে, বিশেষ করে তাদের ক্ষেত্রে ধুন্দল সিদ্ধ অথবা ডালের সাথে খাওয়াই উত্তম। সুতরাং ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন, জেনে নিন এর নানান উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আলোচনাটি আশাকরি উপেরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছেন। মূলত ধুন্দল অনেকের নিকট একটি পরিচিত সবজি হলেও মূলত বর্ষাকালেই এই সবজিটি বেশি উৎপন্ন হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ যে কৌশলে চ্যাটজিপিটি হবে আপনার ব্যক্তিগত সহকারী
আবার যাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা আছে, তাদের এটি বেশি না খাওয়াই ভালো। বিশেষ করে শীতকালে বা ঠান্ডা আবহওয়ায় ধুন্দল না খাওয়াই ভালো। যাইহোক আজকের ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন, জেনে নিন এর নানান উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ বিষয়ে যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ প্রদান করতে চান, তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আসলে ধুন্দল শুধু পুষ্টিকর নয়, বরং এটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সবজি। পরিশেষে ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন, জেনে নিন এর নানান উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ বিষয়ক আলোচনা আপনার দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url