সুষম খাদ্য কী? কোনগুলোকে সুষম খাদ্য বলা হয়

দৈনন্দিন জীবনে সুস্থ্যভাবে আমাদের শরীর পরিচালনার জন্য নানা নানাবিধ খাদ্য সামগ্রীর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু এর মধ্যে সুষম খাদ্য কী? বা কোনগুলোকে সুষম খাদ্য বলা হয় তা আমাদের জানতে হবে।
সাধারণত আমরা খাদ্য গ্রহণ করে থাকি মুখের স্বাদ বা তৃপ্তির কারণে। কিন্তু এইসব খাদ্যগ্রহণ কতটা আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজন তা কিন্তু আমরা কেউ-ই ভাবিনা। কিন্তু আমরা যদি জেনে থাকি, সুষম খাদ্য কী? কোনগুলোকে সুষম খাদ্য বলা হয়, তাহলে প্রয়োজনানুযায়ী সুষম খাদ্য গ্রহণ করা আমাদের জন্য সহায়ক হবে।

পোস্ট সূচিপত্র: সুষম খাদ্য কী? কোনগুলোকে সুষম খাদ্য বলা হয় (What is a balanced diet? Which foods are considered balanced diets?)
সুষম খাদ্য কী বা কাকে বলে?
কোনগুলোকে সুষম খাদ্য বলা হয়ে থাকে?
শরীরের জন্য সুষম খাদ্য কেন প্রয়োজন?
সুষম খাদ্য কী? কোনগুলোকে সুষম খাদ্য বলা হয় - শেষ কথা

সুষম খাদ্য কী? বা কাকে সুষম খাদ্য বলে?

যে সমস্ত খাদ্য মানুষের প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম, এক কথায় তাদেরকেই সুষম খাদ্য বলা যেতে পারে। অর্থাৎ এমন খাদ্য হতে হবে যেখানে শর্করা (Carbohydrates), আমিষ (Protein), স্নেহজাতীয় (Fat) খাদ্য, ভিটামিন জাতীয় (Vitamins) খাদ্য, খনিজ লবণ জাতীয় (অর্থাৎ, Minerals) খাদ্য এবং পানি বা (Water)। সুতরাং সবকিছুই থাকলে তাকে আমরা সুষম খাদ্য বলতে পারি।

কোনগুলোকে সুষম খাদ্য বলা হয় থাকে:

আমরা জানি খাদ্যের ৬টি উপাদান। যেমন-শর্করা, আমিষ, স্নেহ বা চর্বি জাতীয় খাবার, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি। অর্থাৎ একজন মানুষের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় উপরোক্ত ৬টি উপাদান যদি সঠিক অনুপাতে উপস্থিত থাকে, তাকেই সুষম খাদ্য বা balanced diet বলা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: গন্ধভাদুলী পাতার উপকারিতা ও গুনাগুণ

অনেকেই মনে করেন যে, সব দামি খাবারের মধ্যেই রয়েছে সবথেকে বেশী পুষ্টিগুণ। কিন্তু আমাদের চারপাশে প্রকৃতি সৃষ্ট অনেক উপাদান আছে যা আমরা জানিনা অথবা জানার চেষ্টা করিনা। তাই, এখন আমরা জেনে নিব, কিভাবে সহজে ও সস্তায় সব খাদ্যের প্রয়োজনীয় উপাদান পাওয়া যেতে পারে।

শর্করা: আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনীয় খাদ্য শক্তির শতকরা ৫০-৬০ ভাগ শর্করা জাতীয় খাবার থেকে সংগৃহীত হয়ে থাকে। আর এই শর্করার ঘাটতি পূরণে আমরা চাল, গম, ভূট্টা, চিড়া, মুড়ি, চিনি, গুড়, আলু ইত্যাদি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় অনায়াসেই রাখতে পারি।
আমিষ: সাধারণ হিসেবে দেহের প্রতি কেজি ওজনের জন্য প্রতিদিন ০.৮৩ গ্রাম আমিষ গ্রহণ করা অতীব জরুরী। যা আমরা বেশীর ভাগ সময়ই খাদ্য তালিকায় রেখে থাকি। আমিষ সংগৃহীত হয়-মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, মটরশুঁটি, কাঁঠালের বিচি, কুমড়ার বিচি, সীমের বিচি, দেশী সব ধরণের ফল, সব ধরণের ডাল মিক্সড করে এবং বাদাম থেকে।
স্নেহ বা চর্বি জাতীয় খাবার: স্নেহ জাতীয় পদার্থ আমাদের শরীরে শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে থাকে। স্নেহ বা চর্বি জাতীয় খাবারগুলো হলো-ঘি, মাখন, বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ তেল, চর্বি, সরিষার তেল, সয়াবিন তেল, তিলের তেল, সূর্যমুখীর তেল, ও চিনা বাদাম ইত্যাদি।
ভিটামিন: যদিও আমরা জানি শরীরের প্রয়োজনে সব রকমের ভিটামিন প্রয়োজন আছে আর এই ভিটামিন আমাদের দেহ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভিটামিন খাদ্য হিসেবে আমরা পাকা পেঁপে, পেয়ারা, জাম্বুরা, আমড়া, লেবু, আমলকি, পুদিনা পাতা, সবুজ শাক, ধনে পাতা, মূলাশাক, সজনে পাতা ইত্যাদি।
মিনারেল বা খনিজ লবণ: একজন মানুষের শরীরের ওজনের মাত্র ০.০১ শতকরা মাত্রায় বিদ্যমান এই ট্রেস এলিমেন্টগুলো বিভিন্ন এনজাইম, হরমোন এবং কোষকলার অংশবিশেষ। সুতরাং শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলি যেমন-টাটকা ফলমূল, সবুজ শাকসবজি, দুধ, ডিম, ডাল, গোশত ইত্যাদিতে মিনারেল প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এ ছাড়াও ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লৌহজাতীয় উপাদান পেতে আমরা ছোট মাছ, শুকবো খাবার, শুকনো ফল, সরষে, সবজি, সবুজ শাক, কলার মোচা, কাচা কলা ইত্যাদিও খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি।

আরও পড়ুন: কাঁঠালের বিচির অসাধারণ পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

পানি: আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, একজন সুস্থ্য ও প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির দিনে ৮-১০ গ্লাস (৩-৫ লিটার) পানি দৈনিক পান করা প্রয়োজন। আসলে একজন ব্যক্তির এই পানির নির্ভর করে বয়স, ওজন, পরিশ্রম, ভৌগোলিক অবস্থান ও আবহাওয়ার উপর। শরীরের রক্ত তরল রাখতে এবং মলমূত্রের সাথে দূষিত পদার্থ বের করে দিতে পানির ভূমিকা অনস্বীকার্য।
সুষম খাদ্য কী ও কোনগুলোকে সুষম খাদ্য বলা হয় এবং সুষম খাদ্য গ্রহণের উপকারিতা এর আলোকে একজন মানুষের শরীরের জন্য সুষম খাদ্য প্রয়োজন হয় কেন?

শরীরের জন্য সুষম খাদ্য কেন প্রয়োজন?

  • সুষম খাদ্য কী? এবং কোনগুলোকে সুষম খাদ্য বলা হয় এবং সুষম খাদ্য গ্রহণের উপকারিতা অথবা প্রয়োজন মতো সুষম খাদ্যের ঘাটতির কারণে শিশুদের দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য্ বিকাশে বাধাগ্রস্ত হয়।
  • সুষম খাদ্যের অভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং নানা অপুষ্টিজনিত রোগ দেখা দেয়। অর্থাৎ, সুষম খাদ্য কী? এবং কোনগুলোকে সুষম খাদ্য বলা হয় এবং সুষম খাদ্য গ্রহণের উপকারিতা এর আলোকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
  • সুষম খাদ্য কী? এবং কোনগুলোকে সুষম খাদ্য বলা হয় এবং সুষম খাদ্য গ্রহণের উপকারিতা এর অভাবে শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে যা, হাই কোলেস্টেরল, হাই ব্লাড প্রেসার, ডায়বেটিস, হৃদরোগের সম্ভাবনাকে ইত্যাদিকে ত্বরান্বিত করে।
  • এ ছাড়াও সুষম খাদ্যের অভাবে শরীরে নানা ধরণের শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। সুষম খাদ্য কী। এবং কোনগুলোকে সুষম খাদ্য বলা হয় এবং সুষম খাদ্য গ্রহণের উপকারিতা এর ঘাটতির কারণে শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।

সুষম খাদ্য কী? কোনগুলোকে সুষম খাদ্য বলা হয় - শেষ কথা:

সুষম খাদ্য কী? এবং কোনগুলোকে সুষম খাদ্য বলা হয় বা সুষম খাদ্য গ্রহণের উপকারিতা কি তা উপরোক্ত বর্ণনা থেকে জানতে পেরেছেন। আসলে একটা জিনিস ভাবুন, সুস্থ্য, সুন্দর, সতেজ, রোগব্যধী ছাড়া যদি শরীরকে পরিচালনা করতে পারেন, তাহলে একদিকে আপনি নিজেই স্বাবলম্বী বা আত্মনির্ভর, কর্মঠ অথবা একজন সঠিক মানুষ হিসেবে চলাফেরা করতে পারবেন এবং সবথেকে বড় বিষয় হলো তা অন্যের সাহায্য ছাড়াই, তাহলে সেটাই ভালো নয়? আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক খাবারই খেয়ে থাকি, কিন্তু এটা ভাবিনা যে শরীরকে সুস্থ্য রাখতে হলে কোন খাদ্যগুলি গ্রহণ করা উচিত। আবার এটাও সত্য যে, শুধু খেলেই হবেনা, তার সঙ্গে শারীরিক পরিশ্রমটাও অত্যন্ত আবশ্যক। হাসি-ঠাট্টা-আনন্দ-বিনোদন সবকিছুই জীবনে চলার পথে দরকারী হয়ে থাকে। যাইহোক, নিজের জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা, বিচার-বিশ্লেষণ সবকিছুই নির্ভর করে সঠিক সিদ্ধান্ত বা আপনার সাফল্যের উপর।

আরও পড়ুন:  লবঙ্গে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও অপকারিতা

পরিশেষে সুষম খাদ্য কী? কোনগুলোকে সুষম খাদ্য বলা হয় বিষয়গুলো যদি জানতে পারেন, তাহলে তা অবশ্যই উপকারে আসবে। সবশেষে আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থতা কামনা করছি এবং সেইসঙ্গে সুষম খাদ্য কী? কোনগুলোকে সুষম খাদ্য বলা হয় বিষয়ক বর্ণনায় দীর্ঘক্ষণ সম্পৃক্ত থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url