দারুচিনি আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী
দারুচিনি আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী হিসেবে এর উপকারিতা, পুষ্টিগুণাবলী, বিভিন্ন অপকারিতাসমূহ এবং আমরা সাধারণত দারুচিনি কিভাবে খেয়ে থাকি ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের লেখাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
মূলত দারুচিনি খাবারে স্বাদ ও গন্ধ বাড়ানো সহ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
পেজ সূচিপত্রঃ দারুচিনি আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী
দারুচিনি আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী
দারুচিনির উপকারিতা
দারুচিনির পুষ্টিগুণাবলী
দারুচিনির অপকারিতাসমূহ
দারুচিনি কিভাবে খাওয়া হয়ে থাকে
পরিশেষে
দারুচিনি আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারীঃ
আসলে প্রতিটা মসলাই শরীরের কোন না কোন উপকারের সাথে জড়িত। ঠিক তেমনি দারুচিনিও শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং প্রয়োজনীয় একটি মসলা। অর্থাৎ দারুচিনিতে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাসমূহ। যেমন-এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমূহ, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, ভিটামিন, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, পটাশিয়াম, প্রোটিন, শর্করা, কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহ। যেগুলি আমাদের শরীরের হজমশক্তি উন্নত করাসহ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করা ছাড়াও শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়াও নিয়মিত খাদ্যাভাসে দারুচিনি যোগ করলে আরও যেসব উপকারিতা পাওয়া যায়, তা হলো প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে থাকে, শরীরের বিপাক ক্রিয়া বাড়াতে, ঠান্ডা বা কাশি ইত্যাদি সমস্যাগুলি উপশমে দারুণ সহায়তা করে থাকে দারুচিনি।
দারুচিনির উপকারিতাঃ
- মধু ও দারুচিনি গুঁড়া করে একসাথে মিশ্রিত করার পর, শরীরের যেসব স্থানে চুলকানি বা এলার্জিজনিত সমস্যা এবং ফোঁড়ার ক্ষতস্থানে নিয়মিত লাগানোর ফলে তা দ্রুত সেরে যায়। অর্থাৎ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে দারুচিনির দ্বারা উপকারিতা পাওয়া যায়।
- দারুচিনি আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী হিসেবে দারুচিনি হজমশক্তিকে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে। অর্থাৎ এর মধ্যে থাকা এনজাইমগুলিকে সক্রিয় করে তোলে। ফলে বদহজম, পেটফাঁপা এবং গ্যাসের সমস্যাও কমাতে সহায়তা করে থাকে।
- অনেক সময়ই শরীরের ভেতরে জ্বালা-যন্ত্রণা ও ব্যথা করে থাকে। নিয়মিত দারুচিনি খেলে তা এই সমস্ত সমস্যাগুলি থেকে পরিত্রাণ মেলে, কারণ দারুচিনিতে রয়েছে বিভিন্ন প্রদাহরোধী উপাদানসমূহ।
- নিয়মিত দারুচিনি খেলে অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় থাকে। আবার যাদের হজমজনিত সমস্যা ভুগে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রেও নিয়মিত দারুচিনি খেতে পারলে বিপাকক্রিয়া বা হজমের সমস্যা প্রাকৃতিকভাবেই দূর হয়ে যায়। কারণ দারুচিনিতে রয়েছে প্রিবায়োটিক উপাদান, যা হজমজনিত সমস্যা সমাধানে সহায়ক।
- দারুচিনিতে সিনামালডিহাইড নামক একটি উপাদান থাকায় তা ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
- দারুচিনি মস্তিস্কের বুদ্ধি বৃত্তিক কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে থাকে। মূলত এটি স্নায়ুক্ষয়জনিত নানা রোগসমূহ, যেমন-আলঝেইমার প্রতিরোধ করে। সর্বোপরি বিশেষজ্ঞগণের মতামত অনুযায়ী, যদি কেউ নিয়মিত দারুচিনি মেশানো পানি খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ঘটে।
- দারুচিনি ওজন কমাতে সহায়তা করে থাকে। অর্থাৎ দারুচিনি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের কারণে ক্ষুধা কমে যায়। আর তাছাড়া দারুচিনি পানি ওজন কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সর্বোপরি এটি বিকাপক্রিয়ার গতি বাড়িয়ে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি গলাতেও যথেষ্ট সহায়তা করে থাকে।
- দারুচিনির উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ অনেক, যেমন-দারুচিনি নারীদের মাসিকের সময় ব্যথা কমাতে সহায়তা করে থাকে। আবার এটি প্রজনন ও হরমোনজনিত পলিসিষ্টিক ওভারি সিনড্রোমের বিভিন্ন লক্ষণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে।
- দারুচিনির সুমিষ্ট সুগন্ধ মুহুর্তে যে কারও মেজাজ ভালো করে দিতে পারে। আবার এর পানীয় মানসিক অবসাদ কমিয়ে শরীরকে তরতাজা করতে পারে খুবই দ্রুত।
আরও পড়ুন: যে কৌশলে চ্যাটজিপিটি হবে আপনার ব্যক্তিগত সহকারী
- সাধারণত দারুচিনির মধ্যে প্রদাহরোধী এবং জীবাণুনাশক দুইটি উপাদান বিদ্যমান থাকায় তা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। মূলত এই দুই উপাদানের কারণে ত্বকে ব্রণ উঠতে বাধা পায় এবং বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমণ হতে দেয় না। এক কথায় বলা যায, দারুচিনি মেশানো পানি ত্বককে পরিস্কার রাখে।
- সাধারণত যাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যায় আক্রান্ত অথবা বিশেষ করে শীতকালে অনেকেরই সর্দি-কাশি ইত্যাদির প্রভাব দেখা দিয়ে থাকে। সুতরাং এরকম ক্ষেত্রে আপনি যদি দারুচিনি আর মধু মিশিয়ে খেতে পারেন, তাহলে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায়ে উপকার পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে।
- দারুচিনিতে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় তা দেহের কোষকে ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিক্যাল থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে থাকে। অর্থাৎ নিয়মিত দারুচিনি খেতে পারলে, তা শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ ক্ষতিকার ফ্রি রেডিক্যাল থেকে রক্ষা করতেও সহায়তা করে থাকে।
- সাধারণত দারুচিনি উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। আবার এটি হৃদযন্ত্রের জন্যও অত্যন্ত ভালো সহায়তা করে থাকে। এক্ষেত্রে সাধারণত যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের জন্য দারুচিনি একটি অত্যন্ত উপকারী উপাদান হতে পারে।
- দারুচিনির উপকারীতা হিসেবে দারুচিনি মেশানো পানিতে মানসিক চাপ কমে এবং ঘুম ভালো হয়। অর্থাৎ ঘুমের আগে দারুচিনি মেশানো এক গ্লাস দুধ পান করলে ভালো ঘুম হয় এবং মানসিক চাপও কমে যায়।
- দারুচিনি সাধারণত দাঁতের ব্যথা এবং মুখে ব্যাকটেরিয়ার অতিরিক্ত বৃদ্ধি বা নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধসহ অন্যান্য দাঁতের সমস্যা দূর করতে দারুচিনি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
- দারুচিনি ট্রাইগ্লিসারাইডের পাশাপাশি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এর ফলে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকিও অনেকাংশে কমে যায়।
দারুচিনির পুষ্টিগুণাবলীঃ
সাধারণত দারুচিনি আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী বা দারুচিনিতে ভিটামিনের পরিমাণ কেমন, তা নিম্নোক্ত বর্ণনাতে একটি স্বচ্ছ ধারণা আপনাদের তৈরি হবে।
যেমন-১০০ গ্রাম দারুচিনিতে রয়েছে-
যেমন-১০০ গ্রাম দারুচিনিতে রয়েছে-
- জলের পরিমাণ: ১০.৫৮ গ্রাম
- প্রোটিন রয়েছে: ৩.৯৯ গ্রাম
- ফ্যাট আছে: ১.২৪ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট রয়েছে: ৮০.৫৯ গ্রাম
- শর্করা রয়েছে: ২১৭ গ্রাম
- এনার্জি রয়েছে: ২৪৭ কিলো ক্যালরী
আরও পড়ুন: সকালের নাস্তা না করলে শরীরের যে ক্ষতি হতে পারে
- এ ছাড়াও রয়েছে ক্যালসিয়াম; ভিটামিন সি ও কে; ম্যাঙ্গানিজ; আয়রন; পটাশিয়াম এবং রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যার্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান সমূহ।
দারুচিনির অপকারিতাসমূহঃ
- সাধারণত একজন নারী গর্ভবতী হলে, তাদের নানারকম নিয়ম বা অনেক কিছু এড়িয়ে চলতে হয়ে থাকে। আর এক্ষেত্রে গর্ভবতী নারীদের কোনমতেই দারুচিনি না খাওয়াটা উত্তম, কেননা এটি তাদের গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত দারুচিনি খাওয়ার ফলে তা পাকস্থলীতে জ্বলুনি সৃষ্টি হতে পারে। অনেকেই আছেন, যারা বিশেষ কোন অনুষ্ঠানে দারুচিনি মিশ্রিত কোন তরকারি বেশি খেয়ে ফেললে তাতে পাকস্থলীতে জ্বলুনি সৃষ্টি হয়ে থাকে।
- আবার অতিরিক্ত দারুচিনি খাওয়ার ফলে তা লিভারেরও ক্ষতি করতে পারে। সাধারণত আপনি যদি নিয়মিত ভাবে অতিরিক্ত দারুচিনি খেতে থাকেন, তাহলে তার বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। আর এক্ষেত্রে তা লিভারের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে।
- সাধারণত যাদের সদ্য অস্ত্রোপচার হয়ে বা হবে এমন ব্যক্তিদের দারুচিনি না খাওয়াই ভালো। যদিও দারুচিনি রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে, তবে যাদের শরীরে সদ্য অস্ত্রোপাচার করা হয়েছে, এমন ব্যক্তিদের দারুচিনি না খাওয়াই যুক্তিসঙ্গত।
- দারুচিনিতে এ্যালার্জি আছে এমন ব্যক্তিদের দারুচিনি না খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এমন ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। অর্থাৎ কিছু ব্যক্তির দারুচিনিতে অ্যালার্জির বৃদ্ধি ঘটে, যেমন-মুখে জ্বালা করা বা মুখে ঘা হতে পারে।
- অতিরিক্ত দারুচিনি খাওয়ার ফলে কারও কারও হজম না হওয়ার কারণে পেটের সমস্যা, বমি বমি ভাব বা ডায়রিয়াও হতে পারে।
- যেহেতু দারুচিনি রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে, তাই ডায়াবেটিকস রোগীদের এই পানীয় খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
- সাধারণত দারুচিনিতে রক্ত পাতলা করার একটি প্রাকৃতিক উপাদান বিদ্যমান। তাই যারা অতিরিক্ত দারুচিনি খেতে থাকে, তাদের অবশ্য রক্তের গাঢ়তা কমে যেতে পারে বা রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই অতিরিক্ত বা নিয়মিত না খেয়ে বিরতি দিয়ে দারুচিনিজনিত খাবার গ্রহণ করাই ভালো।
দারুচিনি কিভাবে খাওয়া হয়ে থাকেঃ
আমাদের দেশে দারুচিনি নানাভাবে বা বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া হয়ে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম মাছ, বাংস, পোলাও, বিরিয়ানি, লাবড়া, তরিতরকারি, ক্ষীর, পায়েস, মিষ্টান্ন ইত্যাদি। তবে আরও অন্য কোন ভাবে দারুচিনি খাওয়া হয়ে থাকে, যেমন-দারুচিনি দিয়ে চা বানিয়ে, গরম বা ঠান্ডা পানির সাথে মিশিয়ে পান করা যেতে পারে, আবার অনেক সময় খাবারের স্বাদ ও গন্ধ বৃদ্ধির জন্য দারুচিনি গুড়া ছিটিয়ে দিয়েও তা খাওয়া হয়ে থাকে, অনেকেই আবার দুধের সাথে মিশিয়েও খেয়ে থাকে। দারুচিনি কিন্তু ত্বকের যত্নে দারুণ কার্যকরী বিশেষ করে তা ফেসমাস্ক হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে সবথেকে সতর্ক থাকতে হবে যে বিষয়ে, তাহলো দারুচিনি অতিরিক্ত পরিমাণে না খাওয়াই ভালো, কারণ তাতে লিভারের ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিসের রোগী, তাদের দারুচিনি খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
দারুচিনি আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী-পরিশেষেঃ
দারুচিনি একটি সুগন্ধি মসলা যা আমাদের সকলের নিকট অতি পরিচিত। আসলে দারুচিনি পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করাই উচিত। অর্থাৎ এককথায় বলতে গেলে, সব খাবারই খাওয়া যাবে, তবে তা পরিমাণ মত। তবে সাধারণত দিনে ১-২ গ্রাম দারুচিনি খাওয়া নিরাপদ। যাইহোক আজকের দারুচিনি আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী সম্পর্কে আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। তবে এ বিষয়ে যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে তাহলে তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।
আরও পড়ুন: ধুন্দলের উপকারিতা, ধুন্দল খাদ্য তালিকায় কেন রাখবেন
মূলত দারুচিনি বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা হয়। আবার গরম জলে দারুচিনি ও মধু এবং লেবুর মিশিয়ে খেলে তা বাতের ব্যথা হ্রাস করতে সহায়তা করে থাকে। আবার দারুচিনি দিয়ে চা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। পরিশেষে দারুচিনি আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী বিষয়ক আলোচনায় আপনার দীর্ঘক্ষন উপস্থিতি ও সম্পৃক্ততার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url