ভালো থাকার জন্য কী করতে হয়
প্রতিনিয়তই আমরা চিন্তা করি ভালো থাকবো, কিন্তু কিভাবে? আজকের আর্টিকেলে ভালো থাকার জন্য কী করতে হয় সে বিষয়গুলিই আলোচিত হবে।
জীবনের প্রতিটা মুহুর্তই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই চাই যে যার মত করে ভালো থাকুক এবং আমিও তা-ই চাই। কিন্তু চাইলেই কি সব চাওয়া আমার পাওয়াতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে? জীবনকে সুন্দর করে পেতে চাইলে প্রতিদিন আপনাকে কিছু না কিছু ভালো অভ্যাস বা গুণ অর্জন করতে হবে। তাই ভালো থাকার জন্য কী করতে হয়, তা জানতে নিম্নের বিষয়গুলি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
পোস্ট সূচিপত্র: ভালো থাকার জন্য কী করতে হয় (What to do to stay well)
নেতিবাচক চিন্তা করা যাবে না
অন্যের মতামত, কথা ও ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেয়া
নিজেকে কখনোই অন্যের সাথে তুলনা না করা
ইতিবাচক মনোভাব
সময়মতো খাবার ও ঘুমের অভ্যাস
নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন
রাগ প্রশমিত করুন
সহানুভুতিশীল হতে হবে
নিজেকে ভালোবাসুন
ভালো থাকার জন্য কী করতে হয়-পরিশেষে
নেতিবাচক চিন্তা করা যাবে না:
ভালো থাকার জন্য কী করতে হয় বলতে প্রথমেই আপনাকে নেতিবাচক কোন চিন্তা করা যাবে না। মনে করুন, আগামীকাল আপনার একটি চাকুরীর ভাইভা বা চাকুরীর পরীক্ষা অথবা ভোরে কোথাও যাবেন? কিন্তু আগের রাত্রে মাথার মধ্যে ভিড় করছে হাজারো দুশ্চিন্তা, টেনশন ইত্যাদি। যার অধিকাংশই নেতিবাচক দুশ্চিন্তা। এ ধরণের চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। প্রশ্ন হলো কিভাবে? না চাইলেও তো মাথার মধ্যে এসে যায়।
আরও পড়ুন: বর্ষাকালে নিজে সুস্থ্য থাকতে কি করবেন
এক্ষেত্রে আপনাকে ধীরস্থির ভাবে পরিস্থিতি ফেস করার জন্য মনোবল তৈরি করতে হবে। নিজের প্রতি আস্থা রাখতে হবে, পজিটিভ বা নেগেটিভ যাই হোক না কেন সেটা মেনে নেওয়ার মতো সাহস বা মানসিকতা আগে থেকেই তৈরি করতে হবে।, তাহলে দেখবেন, আপনি খুব স্বাভাবিক ও হাস্যোজ্জ্বল থাকবেন, অন্য কোন নেতিবাচক চিন্তা আপনাকে গ্রাস করতে পারবে না, আপনাকে দুর্বল করতে পারবে না। আপনার ভিতরে যে পোটেনশিয়ালিটি আছে সেগুলো নষ্ট হবে না।
অন্যের মতামত, কথা ও ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেয়া:
আমাদের অনেকের একটি বদ অভ্যাস হলো, আমরা শুধু নিজের সমস্যার কথাই বলে যায়, কিন্তু অপরের কোন সমস্যা শুনতে চাইনা বা অপরের কোন মতামতকে গুরুত্ব দেইনা এবং সেইসাথে আমার মতামতকে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টাটাও থাকে প্রবল। ভালো থাকার জন্য কী করতে হয় হিসেবে আপনাকে এটা ভাবতে হবে যে, যেমন আপনি বলছেন অপরজন শুনছে, ঠিক তেমনি অপরজন কোন বিষয়ে কোন কিছু বললে তা আপনারও শোনা উচিত। তার মতামতকেও গুরুত্ব দেয়া উচিত। যদি আপনি অন্যের মতামত বা ইচ্ছাকে গুরুত্ব প্রদান করেন, তাহলে সেও আপনার কথা বা কাজকে গুরুত্ব দিবে এবং দায়িত্বশীল আচরণ করবে। ধীরে ধীরে আপনার ঘনিষ্টজন হয়ে উঠবে, সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে। তবে হতে পারে সে পরিবারের কেউ, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী, পাড়া-প্রতিবেশী, চেনা-অচেনা যে কেউ। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনি, তারপরে ইংরেজি শেখার পত্তন।’ অর্থাৎ বাক্যটির ভাবার্থ আলাদা হলেও এক্ষেত্রে আমরা বলতে চাচ্ছি, আপনার নিজের ভিতরে আগে পরিবর্তন আনতে হবে, নাহলে অপরকে কিভাবে অনুপ্রাণিত করবেন।
নিজেকে কখনোই অন্যের সাথে তুলনা না করা:
মনে করুন আপনি দেখতে খুবই সুন্দর বা আপনার চুলগুলো খুবই লম্বা বা আপনি লম্বা বা যত্রতত্র টাকা বেশি খরচ করেন। কিন্তু আপনার সঙ্গ বা সাথীর মধ্যে এ ধরণের কোন মিল নেই। অর্থাৎ আপনার সাথীটি হয়তো বেটে, হয়তো কালো, হয়তো চুলগুলো ছোট, হয়তো খরচ করার সামর্থের মধ্যে নেই ইত্যাদি। কোন সময়ই এ বিষয়গুলি তুলনা করবেন না। কারণ সৃষ্টিকর্তা আপনাকে দিয়েছে, তাকেও দিয়েছে তবে তা অন্যভাবে। এক্ষেত্রে অহংকার বা নিজেকে ধন্য মনে করার কিছুই নেই। আবার অনেকে আছে, তারা মনে করেন, ওর এটা আছে, আমার কেন নেই; ও ওটা করলো, আমিও করবো, ও ওখানে গেলো কেন, আমিও যাব।
আরও পড়ুন: সিলেটে ঘোরার আকর্ষণীয় স্থান কোনগুলি?
এই ধরনের বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। মনে রাখবেন, সভার প্রতিভা একই রকম হয়না। কেউ খুব জোরে জোরে পড়তে পারি, আবার কেউ আস্তে আস্তে বা শব্দ ছাড়া শুদু চোখ দিয়েই পড়াশুনা করে। বাংলার বাঘ হিসেবে স্বীকৃত, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ছিলেন, যিনি একটি করে বইয়ের পাতা পড়তেন আর ছিড়তেন। জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলতেন, তার পড়া হয়ে গেছে।
ইতিবাচক মনোভাব:
ভালো থাকার জন্য কী করতে হয় এর ক্ষেত্রে আপনাকে ইতিবাচক মনোভাবের অধিকারী হতে হবে। অর্থাৎ আপনাকে এভাবে চিন্তা করতে হবে যে, আমি কাজটা যেভাবে সম্পন্ন করবো, তার ফলটাও ঠিক সেভাবেই হবে। মনে রাখবেন, প্রতিটি বিষয়েরই দুটি দিক থাকে, পজিটিভ ও নেগেটিভ। এক্ষেত্রে আপনাকে খুঁজে নিতে হবে পজিটিভ দিকগুলি। বিকৃত রুচি সম্পন্ন মানুষ পৃথিবীতে থাকবেই, সম্ভব হলে মানিয়ে চলুন আর না হলে তাকে এড়িয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
সময়মতো খাবার ও ঘুমের অভ্যাস:
সবসময় চেষ্টা করবেন, একটি নির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী চলার, বিশেষ করে খাবার ও ঘুম এই দুইটি মানুষের জন্য অত্যন্ত জরুরী। কেননা, রাত্রে যদি আপনার পর্যাপ্ত ঘুম না হয়, তাহলে তার প্রভাব কিন্তু সবক্ষেত্রেই পড়বে। ঠিক একইভাবে অনিয়মিত খাবার বা অতিমাত্রায় খাবার গ্রহণও শরীরে বিপাক প্রক্রিয়া তৈরী করতে পারে। সুস্থ্য থাকতে শারীরিক পরিশ্রম করুন, অর্থাৎ শারীরিক কোন ব্যায়াম অথবা ইয়োগা বা যোগাসন করতে পারেন, এতে করে আপনি অনেকটাই দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে পারবেন।
নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন:
অর্থাৎ ভালো থাকার জন্য কী করতে হয় হিসেবে আপনার নিজের প্রতি আস্থা হারানো যাবেনা। নিজেকে বোঝানোর ক্ষমতা আপনার মধ্যে আছে, তাই নেতিবাচকতা ঝেড়ে ফেলে এটা ভাবুন যে, দিন শেষে আপনিই জয়ী হবেন।
রাগ প্রশমিত করুন:
কথায় আছে, ‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’। আর রাগ কখনোই ভালো কিছু বয়ে আনেনা। তাই যে কোনো সিদ্ধান্তেই মাথা ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করুন। রাগের বশবর্তী হয়ে অন্যের ক্ষতি করা বা রাগের মাথায় হঠাৎ করেই কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা বোকামির কাজ। ধর্ম শাসন অনুসারে, রাগ প্রশমিত করে মাথা ঠান্ডা করে বিষয়টি নিয়ে ১০ বার ভাবুন, তারপরে সিদ্ধান্ত নিন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘সে ব্যক্তি শক্তিশারী নয়, যে ব্যক্তি কুস্তি লড়ে অন্যকে ধরাশায়ী করে, বরং প্রকৃতপক্ষে সে ব্যক্তিই শক্তিশালী, যে রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারে।’ (বুখারি ৬৮০৯)
সহানুভুতিশীল হতে হবে:
সামাজিক ভাবে ভালো থাকতে হলে, নিজের রাগ অন্যের ওপর দেখানো যাবে না। অনেক সময় আমরা সামান্য কিছু বিষয়ে আমরা রেগে যাই, এটা মোটেই ঠিক নয়। কারণ অন্যের প্রতি সহানুভুতিশীল থাকাটাও ভালো থাকার একটি বিষয়।
নিজেকে ভালোবাসুন:
ভালো থাকার জন্য কী করতে হয় হিসেবে সর্বপ্রথম নিজেকে ভালোবাসতে শিখুন। হাজার কাজের মাঝে নিজের জন্য একটু সময় বের করে নিন। নিজের শখের বিষয়গুলো চর্চা করুন। নিজেকে আপনার পছন্দের কোন কাজে ব্যস্ত রাখুন।
ভালো থাকার জন্য কী করতে হয়-পরিশেষে:
আসলে ভালো থাকতে হলে সর্বাগ্রে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। যেমন-গত কাতার বিশ্বকাপে খেয়াল করবেন, জাপানিরা খেলা শেষে গোটা গ্যালারিটা নিজের উদ্যোগেই তারা পরিস্কার করে। কি দরকার ছিল তাদের টাইম ওয়েস্ট করার। আবার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ের আগে প্রত্যেকটি তরুণ-তরুণী কিন্তু যৌন বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকে, বলা যায় এটি একটি বাধ্যতামূলক বিষয়, যার খরচ বহন করে খ্রিস্টান মিশনারী সংস্থাগুলো। তাই, ভালো থাকার জন্য কী করতে হয় বলতে অনেক কিছুই সম্ভব, যদি সেটা মন থেকে করতে চান।
আরও পড়ুন: ব্যথানাশক ঔষধ দীর্ঘদিন খাওয়া যাবেনা
যাইহোক, আজকের আর্টিকেলে ভালো থাকার জন্য কী করতে হয় বিষয়ক আলোচনায় যদি কোন মন্তব্য/পরামর্শ থাকে তাহলে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। ভালো থাকার জন্য কী করতে হয় আলোচনায় দীর্ঘক্ষণ থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url